ইসরাইলের হাতে আটক হয়েছেন বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। বুধবার তাকে আটক করা হয়। শহিদুল আলম ‘কনশান্স’ নামের একটি জাহাজে রয়েছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমি শহীদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী এবং লেখক। আমাদের সমুদ্রে আটক করা হয়েছে এবং আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সক্রিয় সহযোগিতা এবং সহায়তায় যারা গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার সকল কমরেড এবং বন্ধুদের কাছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করছি।
এদিকে গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের কনভয়ে আক্রমণ করেছে এবং গাজার দিকে যাত্রা করার সময় বেশ কয়েকটি জাহাজকে আটক করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় যাওয়ার পথে কমপক্ষে দুটি জাহাজে উঠে পড়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের পাশে অবস্থিত স্বপ্ননিবাস হোস্টেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হোস্টেলের পরিচালিকার বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর ওই ছাত্রীকে রুমে আটকে রাখার ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থানায় অভিযোগ জানালে পুলিশ এসে পরিচালিকাকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
তিনি জানান, ওই রাতে তার এক আত্মীয় স্বপ্ননিবাস হোস্টেলে দেখা করতে আসেন। বিষয়টি জানার পর হোস্টেলের পরিচালক অতিরিক্ত এক হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় পরিচালক ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলেন এবং তাকে রুমে আটকে রাখেন।
তিনি আরও বলেন, আমার ওপর শারীরিকভাবে হামলা করা হয়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে বন্ধুরা আমাকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও পরিচালিকা বাধা দেন।
এ ঘটনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী শেরেবাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে সঙ্গে নিয়ে হোস্টেলে যান। তারা পরিচালিকার গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এ উপস্থিত ছিলেন জিয়াউর রহমান হলের ভিপি, সূর্যসেন হলের ভিপি এবং হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলের সমাজসেবা সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হোস্টেলের পরিচালিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীর চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা ফ্রিডম ফ্লোটিলার সবগুলো জাহাজ আটক করেছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটক যাত্রীরা সবাই সুস্থ্য ও নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। খবর আল জাজিরার।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানিয়েছে, আজ (বুধবার) তিনটি ছোট জাহাজে আক্রমণ করে ইসরাইল। এই তিনটিতে আক্রমণের আগে ইসরাইলি সেনাবাহিনী দ্য কনশেনস নামে একটি জাহাজে হামলা চালায়। এতে সাংবাদিক, ডাক্তার ও অধিকর্মীসহ ৯৩ জন যাত্রী ছিলেন।
সব যাত্রীকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এফএফসি।
ইসরাইল জানিয়েছে, গাজার ওপর আরোপ করা সমুদ্র অবরোধ ভাঙার চেষ্টাকারী একটি নতুন নৌবহরকে আটকে দেয়া হয়েছে। তাদের জাহাজ এবং যাত্রীদের আটক করে একটি ইসরাইলি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ‘নৌ অবরোধ ভেঙে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের আরেকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জাহাজ এবং যাত্রীদের একটি ইসরাইলি বন্দরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সকল যাত্রী নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন। যাত্রীদের দ্রুত নির্বাসিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
টাইমস অব ইসরাইল জানায়, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের নৌবহরে নয়টি জাহাজ রয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করে নৌবহরটি।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে অর্ন্তবর্তী সরকারের বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রালয়ের বর্তমান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আসবে বলে সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে । এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। পরে সড়ক পথে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইলে উদ্যোশে রওনা দেন।
বন্দরনগর ভৈরব একটি বাণিজ্য এলাকা হওয়ায় আশেপাশের কয়েক জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রেনে চড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ রেলওয়ে স্টেশন সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। তাছাড়া শহরের ঘোড়াকান্দা পলাশের মোড় এলাকায় অবস্থিত ৩টি স্কুল রয়েছে এতে প্রায় হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। শহরের অন্যতম ব্যস্ত স্টেশনে যাওয়ার সড়কটির পাশে ঘোড়াকান্দা পলাশ মোড়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ টন ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়ক দিয়েই চলাচল করা ট্রেনের যাত্রী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। পৌর শহরের ১২টি ওয়ার্ডে ময়লা আবর্জনা সড়কের পাশে অবস্থিত রেলওয়ের একটি বড় পুকুরে ফেলা হচ্ছে। এতে পুঁকুরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভরাট হয়ে গেছে আবর্জনায়।
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি পৌর প্রশাসক যেন অতি দ্রুত জনবহুল এলাকা থেকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ অন্যত্র সরিয়ে নির্ধারিত জায়গায় ফেলেন। এতে এলাকাবাসীসহ পথচারীরা দুর্গন্ধের ভোগান্তি থেকে মুক্ত পাবে।
এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, এতদিন ধরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের পাশে ময়লার স্তূপের কারণে পথচারীরা নাক চেপে চলাচল করতে হয়েছে। কিন্তু আজকে সরকারের একজন উপদেষ্টা আসবে বলে কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। তছাড়া ময়লার স্তূপ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্লিসিং পাউডার ছড়ানো হয়েছে যেন দুর্গন্ধ না ছড়ায়।
পৌর শহরের ঘোড়াকান্দা এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে এই সড়ক দিয়ে যেতে হয়। সড়কটির পাশে রেলের পুকুরে অবাধে ময়লা আর্বজনা ফেলে ভরাট করছে। এতে ময়লা আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়ে জনমনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে ভৈরব পৌরসভার কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর মো.রফিকুল ইসলাম রোকন জানান, পৌরসভার নির্দিষ্ট ডাপিং ব্যবস্থা না থাকায় শহরের ময়লা আর্বজনা সড়কের পাশে রেলের জায়গায় ফেলতে হয়। আমরা প্রতিদিনই ময়লা আর্বজনা স্তূপে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়ে থাকে। আজকে সরকারের রেলপথ উপদেষ্টা আসবেন বলে কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। যাতে ভৈরবে আগত অতিথিদের চোখে না পড়ে।
ইঞ্জিন বিকল হয়ে সাগরে ভাসতে থাকা ২৬ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। ওই জেলেরা একটি ট্রলারে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ৫ দিন ধরে সাগরে ভাসছিল। যদিও গত ৪ অক্টোবর থেকে সাগরে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার সিয়াম উল হক। তবে তিনি তাৎক্ষণিক বিস্তারিত জানাতে পারেননি।
প্রসঙ্গত, সাগরে মা ইলিশ সংরক্ষনে ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কাজ করছে নৌ বাহিনীর ১৭টি যুদ্ধ জাহাজ। জাহাজগুলো বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলসহ ৯টি জেলায় কাজ করছে।
জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর বনানী এলাকায় মো. শাহজাহান হত্যা মামলায় বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (৮ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমানের আদালত তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
অপর আসামিরা হলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, এদিন সকালে কারাগারে থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক মো. ইয়াছির আরাফাত আসামিদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। আদালতে ওঠানোর সময় তাদের প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গতবছরের ১৯ জুলাই ঢাকার একটি কারখানার কর্মী মো. শাহজাহান মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এসময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এসময় শাহজাহান বুকে ও পেটে দুইটি গুলিবিদ্ধ হন। চার দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর নিহতের মা সাজেদা বনানী থানায় ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল মাঠে নেমেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বয়জার রহমানের নেতৃত্বে অনুসন্ধান দলটি গঠিত হয়েছে।
অন্য দুই সদস্য হলেন, অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজি সেলের ডা. ফয়সাল তালুকদার এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ডা. তায়ফুর রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলটি রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কয়েকটি এলাকায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত খামারি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরের পর এবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাতেও দুই ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মর্ণেয়া ইউনিয়নের মৌভাষা গ্রামের ওই দুই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, মৌভাষা এলাকা কাউনিয়ার হারাগাছ সংলগ্ন। হারাগাছে যেহেতু অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাই এই দুই রোগীকেও সন্দেহভাজন হিসেবে নমুনা পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধি দলটি সোমবার (৬ অক্টোবর) রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সেখানে খামারি আমিনুল ইসলামের তিনটি গরু মারা যাওয়ার পর সেগুলো পুঁতে ফেলা হয়েছে। মৃত গরুগুলো যে গাছের পাতা খেয়েছিল, তারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দলটি কাউনিয়ার ঠাকুরদাস, পীরগাছার আনন্দী ধনীরাম ও মাইটাইল গ্রাম পরিদর্শন করেন। পীরগাছার এসব এলাকায় দুই নারী-পুরুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু গবাদিপশুও আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলেও জানা গেছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বয়জার রহমান বলেন, গবাদিপশুর সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টিতেই অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ পাওয়া গেছে। আরও কিছু নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। আমরা ঘাস ও মাটির নমুনাও সংগ্রহ করেছি, সেগুলো পরীক্ষার পর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ডা. বয়জার রহমান আরও বলেন, আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া হয়। আক্রান্ত এলাকা শনাক্ত হলে ‘রিং মডেল’ অনুসারে ওই অঞ্চল ও আশপাশে টিকাদান কর্মসূচি চালানো হয়, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে সিরাজগঞ্জের পর এবার এত বিস্তৃত এলাকায় অ্যানথ্রাক্স ছড়ানো উদ্বেগজনক। আক্রান্ত সব এলাকার গবাদিপশুকে টিকাদান নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুসন্ধান দল বুধবার (৮ অক্টোবর) রংপুরের মিঠাপুকুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
উজানের পাহাড়ী ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কয়েক দিন বাড়ছিল। এতে জেলার ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদ-নদীতে দেখা গেছে ভারত থেকে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি। যা ছিল বেশিরভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন এবং লালচে রঙের। দেখতে লালচে হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে ‘রক্ত চন্দন’ বা ‘লাল চন্দন কাঠ’ ভেবে বিক্রি করছেন।
রোববার (৫ অক্টোবর) ভোর থেকেই কালজানি নদী হয়ে দুধকুমার নদী ও চিলমারীর ব্রক্ষ্মপুত্র নদে আসাম থেকে এসব কাঠ ভেসে আসতে শুরু করে। উৎসুক জনতা ভোর থেকেই নৌকা ও বাঁশের ভেলায় নেমে পড়ে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতায়। কেউ সাঁতরে, কেউ বাঁশের ভেলা বানিয়ে কাঠগুলো নদীর স্রোত থেকে ধরে তীরে তুলতে শুরু করেন। তীরে তুলেই অনেকে বিক্রি শুরু করে।
এসব গাছের গুঁড়ি ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরও চড়া।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গাছের গুঁড়ি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম চাওয়া হয়েছে। তবে মালিক পক্ষ জানিয়েছে, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিলে বিক্রি করবে।
নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জের দামাল গ্রামের আব্দুল মোতালেব (৬০) বলেন, চারজন মিলে ৫০ ফুটের মতো একটা লাল গাছ তুলেছি। এটা দেখতে একদম চন্দন কাঠের মতো। আমরা দাম চেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজারে দিলে বিক্রি করে দেব।
এদিকে অনেকে এই কাঠের গুঁড়িগুলো জ্বালানি হিসেবেও কিনছেন। কালজানি নদীর পাড়ের বাসিন্দা আজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, আমার খড়ির গোলা আছে। একেকটা গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। কেটে বিক্রি করব জ্বালানি কাঠ হিসেবে।
ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া (৬২) বলেন, রোববার রাত থেকে পরিবার নিয়ে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছুটা রাখব রান্নার করার জন্য। আর বাকিটা বিক্রি করব।
জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে রঙ পরিবর্তিত হয়ে লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোনো নমুনাই এসব কাঠে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগই পচা কাঠ।
তিনি আরও বলেন, বনাঞ্চল পরিষ্কার করতে ভারতে নদীতে ফেলে দেওয়া কাঠগুলো স্রোতের টানে কুড়িগ্রামের দিকে ভেসে এসেছে। মানুষ না বুঝেই এগুলো চন্দন ভেবে কিনছে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, প্রায় সব কাঠেই ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলে এই যৌগগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের মাধ্যমে লালচে বা বাদামি রঙ তৈরি করে। এ কারণে সাধারণ কাঠও চন্দন কাঠের মতো রঙ ধারণ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, চন্দন কাঠের বিশেষ গন্ধ থাকে, যা শুকনো কাঠ কেটে ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো ধরনের গন্ধ বা তেলীয় উপাদান নেই যা প্রমাণ করে এগুলো সাধারণ গাছের কাঠ।
মন্তব্য