২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ধাক্কা কাটিয়ে বছরের শেষার্ধে দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক গতি এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রকাশনা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট–এর সর্বশেষ সংস্করণে বলা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৪.০ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪.৮ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’-এর অংশ। প্রতিবছর দুবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সম্ভাবনা এবং দেশগুলোর নীতিগত চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নীতির কারণে বৈদেশিক চাপ কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে এবং চলতি হিসাব ঘাটতি কমেছে। এছাড়া, রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
কঠোর মুদ্রানীতি, প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের কম আমদানি কর এবং ভালো ফলনের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কম রাজস্ব আদায়, বেশি ভর্তুকি এবং ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বাজেট ঘাটতি সম্প্রসারিত হয়েছে।
তবে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত সত্ত্বেও দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরেছে প্রতিবেদনটি।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে। মোট শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ কমে ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, যেখানে নারীরা বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। শ্রমবাজারের বাইরে থাকা ৩০ লাখ অতিরিক্ত কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ২৪ লাখ নারী।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন, ‘অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে এবং আরও ভালো ও বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সাহসী সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগোতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি কমানো, নগরায়ণের পরিকল্পনা করা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা।’
গত দুই দশকে শিল্পখাতের চাকরি ঢাকায় ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি আঞ্চলিকভাবে সমান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে। এতে দেশব্যাপী সার্বজনীন চাকরি সৃষ্টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একই দিনে সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনের সহ-প্রকাশনা হিসেবে ‘চাকরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় দেশগুলোকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা সর্বাধিকভাবে কাজে লাগানো এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য বাণিজ্য বাধা কমানোর মাধ্যমে দেশগুলো উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এবং অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তির জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এখনো বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খুব বেশি উন্মুক্ত নয়। অনেক খাতে উচ্চ শুল্ক থাকায় সেগুলোতে চাকরি কমছে। অন্যদিকে, কম শুল্কযুক্ত খাত, যেমন: সেবা খাত, গত দশকে নতুন চাকরির বড় অংশ তৈরি করেছে।
এছাড়া, উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমশক্তির বড় অংশ নিম্নদক্ষ, কৃষিভিত্তিক ও শ্রমনির্ভর খাতে নিয়োজিত; তবে এআই মানবশ্রমের পরিপূরক হিসেবে নতুন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্গ বলেন, ‘বাণিজ্য উন্মুক্ততা ও এআই গ্রহণের গতি বাড়ানো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য রূপান্তরমূলক হতে পারে। কর্মীদের প্রতিষ্ঠান, খাত ও অঞ্চলভিত্তিক স্থানান্তর সহজ করতে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি—যা উৎপাদনশীল খাতে সম্পদ প্রবাহ বাড়াবে এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে ত্বরান্বিত করবে।’
জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর বনানী এলাকায় মো. শাহজাহান হত্যা মামলায় বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (৮ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমানের আদালত তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
অপর আসামিরা হলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, এদিন সকালে কারাগারে থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক মো. ইয়াছির আরাফাত আসামিদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। আদালতে ওঠানোর সময় তাদের প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গতবছরের ১৯ জুলাই ঢাকার একটি কারখানার কর্মী মো. শাহজাহান মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এসময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এসময় শাহজাহান বুকে ও পেটে দুইটি গুলিবিদ্ধ হন। চার দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর নিহতের মা সাজেদা বনানী থানায় ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল মাঠে নেমেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বয়জার রহমানের নেতৃত্বে অনুসন্ধান দলটি গঠিত হয়েছে।
অন্য দুই সদস্য হলেন, অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজি সেলের ডা. ফয়সাল তালুকদার এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ডা. তায়ফুর রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলটি রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কয়েকটি এলাকায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত খামারি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরের পর এবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাতেও দুই ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মর্ণেয়া ইউনিয়নের মৌভাষা গ্রামের ওই দুই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, মৌভাষা এলাকা কাউনিয়ার হারাগাছ সংলগ্ন। হারাগাছে যেহেতু অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাই এই দুই রোগীকেও সন্দেহভাজন হিসেবে নমুনা পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধি দলটি সোমবার (৬ অক্টোবর) রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সেখানে খামারি আমিনুল ইসলামের তিনটি গরু মারা যাওয়ার পর সেগুলো পুঁতে ফেলা হয়েছে। মৃত গরুগুলো যে গাছের পাতা খেয়েছিল, তারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দলটি কাউনিয়ার ঠাকুরদাস, পীরগাছার আনন্দী ধনীরাম ও মাইটাইল গ্রাম পরিদর্শন করেন। পীরগাছার এসব এলাকায় দুই নারী-পুরুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু গবাদিপশুও আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলেও জানা গেছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বয়জার রহমান বলেন, গবাদিপশুর সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টিতেই অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ পাওয়া গেছে। আরও কিছু নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। আমরা ঘাস ও মাটির নমুনাও সংগ্রহ করেছি, সেগুলো পরীক্ষার পর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ডা. বয়জার রহমান আরও বলেন, আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া হয়। আক্রান্ত এলাকা শনাক্ত হলে ‘রিং মডেল’ অনুসারে ওই অঞ্চল ও আশপাশে টিকাদান কর্মসূচি চালানো হয়, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে সিরাজগঞ্জের পর এবার এত বিস্তৃত এলাকায় অ্যানথ্রাক্স ছড়ানো উদ্বেগজনক। আক্রান্ত সব এলাকার গবাদিপশুকে টিকাদান নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুসন্ধান দল বুধবার (৮ অক্টোবর) রংপুরের মিঠাপুকুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
ইসরাইলের হাতে আটক হয়েছেন বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। বুধবার তাকে আটক করা হয়। শহিদুল আলম ‘কনশান্স’ নামের একটি জাহাজে রয়েছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমি শহীদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী এবং লেখক। আমাদের সমুদ্রে আটক করা হয়েছে এবং আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সক্রিয় সহযোগিতা এবং সহায়তায় যারা গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার সকল কমরেড এবং বন্ধুদের কাছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করছি।
এদিকে গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের কনভয়ে আক্রমণ করেছে এবং গাজার দিকে যাত্রা করার সময় বেশ কয়েকটি জাহাজকে আটক করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় যাওয়ার পথে কমপক্ষে দুটি জাহাজে উঠে পড়েছে।
উজানের পাহাড়ী ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কয়েক দিন বাড়ছিল। এতে জেলার ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদ-নদীতে দেখা গেছে ভারত থেকে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি। যা ছিল বেশিরভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন এবং লালচে রঙের। দেখতে লালচে হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে ‘রক্ত চন্দন’ বা ‘লাল চন্দন কাঠ’ ভেবে বিক্রি করছেন।
রোববার (৫ অক্টোবর) ভোর থেকেই কালজানি নদী হয়ে দুধকুমার নদী ও চিলমারীর ব্রক্ষ্মপুত্র নদে আসাম থেকে এসব কাঠ ভেসে আসতে শুরু করে। উৎসুক জনতা ভোর থেকেই নৌকা ও বাঁশের ভেলায় নেমে পড়ে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতায়। কেউ সাঁতরে, কেউ বাঁশের ভেলা বানিয়ে কাঠগুলো নদীর স্রোত থেকে ধরে তীরে তুলতে শুরু করেন। তীরে তুলেই অনেকে বিক্রি শুরু করে।
এসব গাছের গুঁড়ি ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরও চড়া।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গাছের গুঁড়ি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম চাওয়া হয়েছে। তবে মালিক পক্ষ জানিয়েছে, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিলে বিক্রি করবে।
নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জের দামাল গ্রামের আব্দুল মোতালেব (৬০) বলেন, চারজন মিলে ৫০ ফুটের মতো একটা লাল গাছ তুলেছি। এটা দেখতে একদম চন্দন কাঠের মতো। আমরা দাম চেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজারে দিলে বিক্রি করে দেব।
এদিকে অনেকে এই কাঠের গুঁড়িগুলো জ্বালানি হিসেবেও কিনছেন। কালজানি নদীর পাড়ের বাসিন্দা আজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, আমার খড়ির গোলা আছে। একেকটা গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। কেটে বিক্রি করব জ্বালানি কাঠ হিসেবে।
ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া (৬২) বলেন, রোববার রাত থেকে পরিবার নিয়ে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছুটা রাখব রান্নার করার জন্য। আর বাকিটা বিক্রি করব।
জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে রঙ পরিবর্তিত হয়ে লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোনো নমুনাই এসব কাঠে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগই পচা কাঠ।
তিনি আরও বলেন, বনাঞ্চল পরিষ্কার করতে ভারতে নদীতে ফেলে দেওয়া কাঠগুলো স্রোতের টানে কুড়িগ্রামের দিকে ভেসে এসেছে। মানুষ না বুঝেই এগুলো চন্দন ভেবে কিনছে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, প্রায় সব কাঠেই ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলে এই যৌগগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের মাধ্যমে লালচে বা বাদামি রঙ তৈরি করে। এ কারণে সাধারণ কাঠও চন্দন কাঠের মতো রঙ ধারণ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, চন্দন কাঠের বিশেষ গন্ধ থাকে, যা শুকনো কাঠ কেটে ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো ধরনের গন্ধ বা তেলীয় উপাদান নেই যা প্রমাণ করে এগুলো সাধারণ গাছের কাঠ।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো আজও জেরা করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ জেরা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন এই স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। জুলাই গণহত্যা নিয়ে সাক্ষীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে নিজের মক্কেলদের পক্ষে বিভিন্ন সাফাই প্রশ্ন করেন আমির হোসেন। আন্দোলনকারীদের বাধ্য হয়েই পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে যুক্তি খণ্ডন করেন। দিনভর জেরা করলেও শেষ না হওয়ায় আজ পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহ, মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর এ জেরা শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। তিনি এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম বা সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড ও ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিনও বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি নিজের জব্দ করা জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। এমনকি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি। তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে। এ ছাড়া বিবিসি, আল-জাজিরা, আমার দেশে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের জবানবন্দি শুরু হয়। ওইদিন তার জব্দ করা ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্টের নির্মমতা ফুটে ওঠে। সবমিলিয়ে ২৫ কার্যদিবসে শেখ হাসিনার মামলায় মোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষ হলেই যুক্তিতর্ক ও রায়ের দিকে এগোবে।
২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন আমির হোসেন।
মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজের দায় স্বীকার করে আগেই হয়েছেন রাজসাক্ষী। এ ছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামের রাউজানে সড়ক দুর্ঘটনায় মাওলানা সোহেল চৌধুরী (৫০) নামের এক হেফাজত নেতার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এতে সকাল থেকে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে, আটকা পড়েছে শত শত গাড়ি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘তারা (হেফাজত নেতাকর্মীরা) সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এর আগে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলের দিকে রাউজান উপজেলার নবীন সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হেফাজত নেতার মৃত্যু হয়।
সোহেল চৌধুরী মোটরসাইকেল চালিয়ে রাউজান উপজেলার নবীন সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা অতিক্রম করার সময় পেছন থেকে আসা একটি বাস তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন মাওলানা সোহেল। পরে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, নিহত সোহেল চৌধুরী জন্মস্থান সন্দ্বীপ উপজেলায় হলেও তিনি দীর্ঘ বছর ধরে রাউজান পৌরসভার মেডিকেল গেট এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
ইউনেসকোর ৪৩তম সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেসকো) ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফ্রান্সে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা।
নির্বাচনে তিনি জাপানের রাষ্ট্রদূত তাকেহিরো কানোকে ৩০-২৭ ভোটে পরাজিত করেন। বাংলাদেশ, জাপান, ভারত ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্র প্রার্থিতা দিলেও গত সেপ্টেম্বরে ভারত ও কোরিয়া তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়।
বাংলাদেশের ইউনেসকো সদস্য পদের ৫৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদে নির্বাচিত হলেন, যা দেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। আসন্ন ৪৩তম সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
এই অর্জনে ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং ফ্রান্স-বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (এফবিজেএ), বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ), বিএনপি ফ্রান্স শাখা, বাংলাদেশি নাগরিক পরিষদ ফ্রান্স, এনসিপি ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্স ফ্রান্স শাখা ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী প্রবাসী ঐক্য (বিএনডিএ) বিভিন্ন সংগঠন একযোগে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে।
মন্তব্য