পঞ্চগড় জেলার স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রবিন্দু ১০০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। জেলার পাঁচটি উপজেলার হাজারও মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে ছুটে আসে এই হাসপাতালে।
ভর্তি ও বহির্বিভাগ মিলে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসলেও, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় বিপাকে পড়ছেন রোগীরা।
জরুরি সেবা সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নেন এই হাসপাতালে।
আধুনিক সদর হাসপাতাল, পঞ্চগড় এ চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ৩৭টির বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ২২ জন। ১৫টি পদ শূন্য।
এর মধ্যে মেডিসিন কনসালটেন্ট, গাইনি কনসালটেন্টের পদ ও শূন্য রয়েছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদও শূন্য রয়েছে, একজন মেডিকেল অফিসারকে সাময়িকভাবে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাই মেডিকেল অফিসারেরও সংকট প্রকট। প্রায় ১০টির মতো মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে।
বহির্বিভাগে প্রতিদিনই প্রায় ১২০০-১৪০০ রোগী সেবা নিচ্ছে, এর মধ্যে মহিলা রোগী সবচেয়ে বেশি প্রায় ৬০০-৮০০, পুরুষ প্রায় ৩০০-৪০০, শিশু প্রায় ৩০০।
চিকিৎসককে একাধিক ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে হয়, যা বাস্তবে অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে শিশু বিভাগ, মেডিসিন, গাইনি ও সার্জারি বিভাগে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি থাকায় সেখানে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হলেও, নার্স ও সেবা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় জটিল রোগীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে।
ডা. মো. রহিমুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে ডাক্তার সংকট বহুদিনের সমস্যা। আমাদের এখানে ৩৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন। তা ছাড়া স্পেশালাইজড ডাক্তারও খুব কম। ফলে আমাদের চিকিৎসকদের একাধিক বিভাগে কাজ করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত নতুন ডাক্তার নিয়োগ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
পঞ্চগড় জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই সমস্যা বিরাজ করছে। জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া ও সদর উপজেলায় সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার সংখ্যা খুবই সীমিত। ফলে সেবার মান স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের প্রত্যন্ত জেলা হিসেবে পঞ্চগড়ে চিকিৎসক নিয়োগে অনীহা দেখা যায়। অনেকে পদায়ন পেলেও যোগ দিতে চান না, আবার কেউ যোগ দিয়ে কিছুদিন পর বদলি হয়ে যান। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই এ জেলায় ডাক্তার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকলে আধুনিক হাসপাতাল থাকার কোনো সুফলই জনগণ পাচ্ছে না। দ্রুত ডাক্তার নিয়োগ এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি তুলেছেন তারা।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে এখনকার বাস্তব চিত্র- দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় রোগী, ব্যস্ত নার্স ও সেবিকারা, আর একদিকে হিমশিম খাওয়া স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক।
স্বাস্থ্যসেবার এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। যদিও ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে; কিন্তু ডাক্তারও সরঞ্জাম নেই। এসব না থাকায় এ পর্যন্ত হাসপাতাল চালু হয়নি।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই ইউনিয়নের বালিজুড়ি এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষক পরিবারের বাড়িঘর রক্ষায় কৃষকদের ব্যক্তিগত জায়গা থেকে বালু নিলাম প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
সোমবার দুপুরে উপজেলার বালিজুড়ি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
বালিজুড়ি গ্রামের সৈয়দ সুলতান বলেন, আমাদের জমিতে ডকুমেন্ট করে বালু রাখার জন্য তখন অনুমতি দিয়েছিলাম। তৎকালীন পার্শ্ববর্তী ফুলপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাছেল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নদী খননকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেন। সেসময় বলা হয় নদীর বালু ফেলার জন্য জায়গা দিলে আমাদের বাড়িঘর নদী ভাঙন ও পানি ওঠা থেকে রক্ষা পাবে। আমরা লিখিতভাবে তখন বালু ফেলার অনুমতি দেই। প্রায় ৩ বছর হলো আমরা এর সুফল ভোগ করছিলাম। এখন বন্যায় আমাদের ঘরে পানি ওঠে না। বৃষ্টির পানি উঠলে আমরা সেই বালু রাখার জায়গাতে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারি। কিন্তু কিছুদিন আগে প্রশাসন আমাদের জমিতে রাখা বালু নিলামে বিক্রি করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শহিদুল ইসলাম বলেন, বালিজুড়ি গ্রামের অংশটি ৩ নদীর মোহনায় অবস্থিত। একদিকে কংশ ও খড়িয়া নদী। অন্যদিকে বটকালী খাল। ফলে প্রতিবছর বন্যায় আমাদের এলাকাটির বাড়িঘরে ঢলের পানি এসে ব্যাপক ক্ষতি হতো। তবে ৩ বছর আগে আমরা আমাদের ফসলি জমিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বালু রাখার অনুমতি দেই। নইলে নদী খননের বালু ফেলার জায়গা ছিলনা। বালু রাখার ফলে এখন কংস নদীর ভাঙন থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু আমরা হঠাৎ জানতে পারি এই বালু নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হবে। নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু নিলামের আগেই আমরা লিখিতভাবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে অবগত করেছিলাম। কিন্তু জনগনের কষ্টের কথা চিন্তা না করে প্রশাসন বালু নিলাম দিয়েছেন।
স্থানীয় হাজি এমদাদ হোসেন বলেন, এখানে কখনো প্রশাসন থেকে কেউ না এসেই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করে বালু নিলাম দিয়েছে। যদি বালু নিয়ে যায় তাহলে আমরা এলাকার সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে আবারো নদীর পানি উঠে যাবে। নদীর পাড় ভেঙে বিলিন হয়ে যাবে এই গ্রাম। আমরা আশা করবো প্রশাসন সরজমিনে এসে তদন্ত করে নিলাম বাতিল করবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলীনূর খান বলেন, নিয়ম মেনেই আমরা বালু নিলাম করেছি। তবে এ বিষয়ে নিলামের আগে আমাদের কেউ আপত্তি জানায়নি। যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসে তাহালে আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিব।
বরগুনার আমতলী উপজেলায় বিএনপির মিছিলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার আমতলী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাহাত প্যাদা বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করলে ওই রাতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- আমতলী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির, এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত রসুল অপু।
জানা যায়, গত বছর ২২ অক্টোবর রাতে আমতলী সরকারি কলেজের সামনে থেকে পৌর, উপজেলা ও কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি উপজেলা সড়কের কার্তিক মণ্ডলের বাড়ির সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় প্রায় এক বছর পর ছাত্রদল নেতা রাহাত প্যাদা বাদী হয়ে সোমবার ৬৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে রাতে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতাকে নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, বিএনপির মিছিলে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সোমবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আজ সোমবার রিয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এই চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও অভিবাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরব সরকারের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বলে আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথমবারের মতো সাধারণ কর্মী নিয়োগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি। এর আগে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হতো অনানুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৭৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ করছেন, যা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
এর আগে, ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাই ও স্বীকৃতি সংক্রান্ত দুটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে সাধারণ কর্মী নিয়োগে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি, যা প্রবাসী কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিক থেকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এখন বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে দক্ষ, আধা-দক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই, নিরাপদ অভিবাসন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, আকামা নবায়ন, এবং সময়মতো এক্সিট ভিসা প্রদানের বিষয়গুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়িত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে, আকামা নবায়নের দায়িত্ব নিয়োগকর্তারা যথাযথভাবে পালন করে এবং দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা যেন দ্রুত এক্সিট ভিসা পায়।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী প্রেরণের আগে আমরা প্রশিক্ষণ ও স্কিল সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করব। এর মাধ্যমে সৌদি আরব আরও গুণগত শ্রমশক্তি পাবে।’
জবাবে সৌদি মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার অংশীদার। এই চুক্তি শুধু নিয়োগ নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।’
তিনি কর্মী কল্যাণ, দক্ষতা উন্নয়ন, এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মন্ত্রণালয়কে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, কর্মী নিয়োগে ডিজিটাল যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু, নারী কর্মীদের সুরক্ষা এবং অবৈধ দালাল চক্র দমনে যৌথ মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দেলওয়ার হোসেন, মিশন উপপ্রধান এস. এম. নাজমুল হাসান, শ্রম কাউন্সেলর মুহাম্মাদ রেজায়ে রাব্বী, সৌদি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তি কার্যকর হলে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন, যারা বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীরা দক্ষতা অনুযায়ী ভালো বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে কর্মীদের জন্য একটি যৌথ অনলাইন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে, যেখানে নিয়োগ ও কর্মচুক্তির তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
এই ঐতিহাসিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দক্ষ কর্মী রপ্তানি শুধু রেমিট্যান্স বাড়াবে না, এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।’ সূত্র: বাসস
পরশুরামের রিকশাচালক সাগর আহমেদের ছেলে সাহাব উদ্দিন বলেন, আমি ১২০ টাকায় আবেদন করে পুলিশে চাকরি পেয়েছি, কাউকে কোনো উৎকোচ (ঘুষ) প্রদান করতে হয়নি। এ জন্য তিনি পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। সিএনজি চালক ইকবাল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার পিতা সিএনজি চালক। আমি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। আমার ঘুষ দেওয়ার মতো অর্থ নেই, পুলিশে স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি।
কৃষক আব্দুল মতিন ছেলে আবু বকর ছিদ্দিক জানান, তারা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে একটি কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করেন। মাত্র ১২০ টাকা ফি’তে অনলাইনে আবেদন করে কনস্টেবল পদে সুযোগ পেয়ে যাবেন, তা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, যদিও আগে বিভিন্ন লেনদেনের কথা শোনা যেত। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়েছি। আমাদের এই আনন্দ বলে বোঝানোর মতো না।’
গত শনিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ লাইনের গ্রিল শেডে পুলিশে কনস্টেবল পদে চুড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ২০ জন রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশে যাওয়ার পূর্বে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছি। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কাউকে এক টাকাও দিতে হয়নি। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০জনের কাছে সরাসরি জানতে চান- কাওকে টাকা দিয়েছে কি না, তারা সবাই জানায়, কাউকে টাকা দিতে হয়নি।
পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, আপনারা সবাই চাকরি জীবনে সততার সাথে চাকরি করবেন। মানুষকে সেবা দিবেন। আপনারা পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন। উত্তীর্ণ ২০ জনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পুলিশ সুপার।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেছেন, ফরিদপুরে পদ্মা নদী ভাঙন রোধে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগামীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সর্বপ্রথম ফরিদপুরের পদ্মা নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মা নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় নদী ভাঙন রোধে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘদিন যাবত পদ্মা নদী ভাঙনের কারণে নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ৪ থেকে ৫টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ঘরবাড়ি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে কয়েকশ’ পরিবার, এদের মধ্যে অনেকেই ছেলে সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়, আবার কেউ আছেন ভাড়া বাড়িতে। এলাকাবাসীর দাবি ছিল দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অবশিষ্ট গ্রামটুকু হারিয়ে যাবে পদ্মা নদীর ভাঙনে।
বিষয়টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফের নজরে আসলে সোমবার সকালে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙন কবলিত ৮৬ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজের উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিকী মিতুল, জেলা কৃষক দলের সভাপতি রেজাউল ইসলাম, নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুস্তাকুজ্জামান মোস্তাক, নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলমাস মন্ডল, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহরুখ ফয়সাল নিলয়, যুবদল নেতা পারভেজ বেপারী, ছাত্রদল নেতা সাইদুল ইসলামসহ বিএনপি সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
পরে ভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবসীদের সাথে নিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার মতো বরুড়া উপজেলার বাতাইছড়ি ইউনিয়নের তালুকপাড়াতে আখ চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন তারা। উৎপাদন ব্যয় বাদ দিয়েও দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় আখ চাষে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি। কৃষি বিভাগ বলছে, আখ চাষ সম্প্রসারণে সরকারি প্রকল্প নেওয়া হবে, পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি জরিপ মৌসুমে কুমিল্লার মুরাদনগর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, বিপাড়া, চান্দিনা, দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রাম, লাঙ্গল কোট, লালমাই, বরুড়াসহ ১০ উপজেলায় প্রায় ৩০০ শত হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০০ শত হেক্টর জমি।
অন্য জেলার তুলনায় আখ চাষ একসময় খুবই কম ছিল। তবে গত কয়েক বছরে লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষক আখ চাষে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে উঁচু জমি ও বেলে-দোয়াশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা হোসেন মিয়া।
বরুড়া উপজেলার বাতাইছড়ি ইউনিয়নের তালুকপাড়া গ্রামের কৃষক ইয়াছিন, খোকন মেম্বার, খায়ের মেম্বার, ফারুক আহম্মেদ,তা রু মিয়া, আলী নেওয়াজ তাদের নিজ ধানি জমিতে গত কয়েক বছর যাবত আখ চাষ শুরু করেন। আখ ফলনে কৃষক ইয়াছিন জানান, গত বছর ১ লাখ টাকা খরচ করে এবার প্রায় ৩ লাখ টাকার আখ বিক্রি করেন। চলতি বছরেও তার আখের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং ভালো দামের আশায় রয়েছেন তিনি। বর্তমানে বাজারে প্রতি পিস আখ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এ আখ চিবিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি গুড় তৈরির জন্যও বেশ জনপ্রিয়।
কৃষক খোকন মেম্বার বলেন ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় বেশি দাম পাওয়ায় আমরা খুশি।’
এলাকার আরেক কৃষক তারুমিয়া জানান, ‘আগে শুধু ধান করতাম। কিন্তু ধানে তেমন লাভ নেই। এখন আখ করে দেখছি খরচ কম, লাভ বেশি। তাই আগামীতে আরও বেশি জমিতে আখ চাষ করব। ৯ মাসে ফলন আসে, আমাদের এলাকায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে এবার রংবিলাস ২০৮ নম্বর ও ৫৩২ নম্বর জাতের আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব আখ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে কুমিল্লা জেলা ও ঢাকা, চট্টগ্রামের খুচরা ব্যবসায়ীরা জমিতে কন্টাক করে ক্রয় করে প্রতিকানি ৩-৪ লাখ টাকা। এতে ধারণা করা হয় প্রতি ১০০ আখ ৪০০০-৫০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে জমিতে।
স্থানীয় আখ বিক্রেতা খায়ের বলেন, ‘এলাকায় এখন আখের প্রচুর চাহিদা। বাজারে তুললেই বিক্রি হয়ে যায়। প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকা দরে আখ বিক্রি করছি। এই আখ কার্তিক অগ্রহায়ণে রোপণ করা হয়, যত্ন দিয়ে কীটনাশক ছিটানোর পরে দীর্ঘ ৯ মাস অপেক্ষা করে ফলন বিক্রির জন্য রেডি হয়। এই ফলনে কৃষকরা খুশি কারণ অল্প খরচে তিনগুণ লাভ। তাই চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, আখ একটি অর্থকরী ফসল। একসময় আখ চাষ হারিয়ে যাচ্ছিল, তবে গত দুই বছর থেকে আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি উপজেলায় আখ চাষ হচ্ছে। কৃষকরা আরও বেশি করে আখ চাষে আগ্রহী হন সে জন্য প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বজ্রপাতে এক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। সোমবার দুপুরে সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নে মোকাবিল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবু আব্দুল্লা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি জমিতে তিনি ধানের মধ্যে ঘাস কাটতে গেছেন, তখন প্রচুর বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়। তখন কোনো একসময় তিনি মারা যান।
ইউপি সদস্য আবু আব্দুল্লা জানান, সকাল থেকে অনেক খুজাঁখুজি হয় ফজলুর রহমানকে। পরিবারের সদস্যরা জানান ধানি জমিতে গেছেন। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে কৃষি জমির মধ্যে ওনার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে আমরা বাড়িতে নিয়ে আসি।
মৃত্যুট কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুখের পুরো অংশ কালো হয়ে গেছে। বজ্রপাতে তিনি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন এ প্রতিবেদককে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ‘মৃত্যুর বিষয়টি শুনে আমি রওয়ানা হয়েছি। তবে কি কারণে মৃত্যু হয়েছে আমি এখনও নিশ্চিত না।’
মন্তব্য