আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। মা ইলিশ রক্ষায় এসময় বিশেষ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা জানান, ইলিশের স্থায়ী উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রধান প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ক ইলিশের নিরাপদে ডিম দেওয়া নিশ্চিত করা এবং সারাদেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর ঘোষণা করেছে, চলতি বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক ১৪৩২) পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ফরিদা আখতার জানান, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন এবং অমাবস্যার পরের তিন দিনসহ মোট ২২ দিন এ অভিযান চলবে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএফআরই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রজনন মৌসুমে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুটি পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এবারের কর্মসূচি ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, ঘোষিত সময় নদীতে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।
উপদেষ্টা জানান, মোট ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেওয়া হবে। পরিবার প্রতি বরাদ্দ থাকবে ২৫ কেজি চাল। পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫,৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হবে। একইসঙ্গে সমুদ্র উপকূল ও মোহনায় টানা ২২ দিন ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
উপদেষ্টা ফরিদা আরও বলেন, গত বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনে মোট ২,১৬৯টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৯,৮১৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেসময় ৫৪.৮৬ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ, ৬১২.১১ লাখ মিটার জাল ধ্বংস এবং ৭৫.২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
পাকিস্তানকে কাছে টানছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত কেবল তাকিয়েই দেখছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক দ্রুত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। আর তাতে ভারতের ওপর কূটনৈতিকভাবে চাপ বাড়ছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনির ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি, খনিজ ও কৃষি খাতে বিনিয়োগসহ কৌশলগত
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, মুনির ট্রাম্পকে বিরল খনিজে ভরা একটি বাক্স উপহার দেন।
এর আগে জুলাইতে পাকিস্তানের জন্য শুল্ক কমানোর চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যার প্রশংসা করেন শাহবাজ। তিনি ট্রাম্পকে ‘শান্তির মানুষ’ আখ্যা দিয়ে গত মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামাতে ভূমিকা রাখার কৃতিত্বও দেন। মুনির তো ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন।
তবে ভারত এসব দাবি অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্প কোনো ভূমিকা রাখেননি। বরং ট্রাম্প ওই সময় ভারতের উদ্দেশে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘একদিন হয়তো ভারত পাকিস্তানের তেল কিনবে।’ এতে নয়াদিল্লি আরও অস্বস্তিতে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে ভাটা
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা গেলেও এবার সম্পর্ক তলানিতে। ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ওয়াশিংটনের প্রতি ভারতের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ভারতীয় বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত মনে করেন, মার্কিন কৌশল যদি পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে এগোয়, তবে ভারত তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে। এতে কোয়াডের মতো মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পাকিস্তানের নতুন সমীকরণ
সম্প্রতি পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যেকোনো এক দেশের ওপর আক্রমণ মানেই উভয়ের ওপর আক্রমণ।’
এটি ভারতের জন্য একটি বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান কেবল অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তাৎক্ষণিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে।
ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর বলেন, ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক লেনদেনের চোখে দেখেন, কৌশলগত মিত্র হিসেবে নয়। পাকিস্তান ছোটোখাটো ছাড় দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, তবে এ সম্পর্ক অস্থায়ী এবং অবিশ্বস্ত।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মট্টুর মতে, ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে চক্রাকারে ঘটে। স্নায়ুযুদ্ধ, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পর এখন আবার পশ্চিম এশিয়া–মধ্য এশিয়ার অস্থিরতায় পাকিস্তানকে কাজে লাগাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার তারা পাকিস্তানের দ্বিচারিতা সম্পর্কে বেশি সচেতন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের প্রতি বিনিয়োগ আগের চেয়ে গভীর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) এর প্রথম সভা আজ নগর ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া এঁর সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের "সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততকরণ নির্দেশিকা" এর আলোকে গঠিত সিএলসিসির ৭১ জন সদস্য উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) সভায় আলোচনাপূর্বক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারে। এ সভায় সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক বিবরণীসহ বার্ষিক অর্জন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নাগরিক জরিপ, সামাজিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ, সিটি কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মান উন্নয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের যথাযথভাবে সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচিত হতে পারে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "জুলাই পরবর্তী নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে সিএলসিসি কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাদের মাধ্যমে সরাসরি নাগরিকদের মতামতের প্রতিফলন হয়।" এ সময় প্রশাসক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে জনগণকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সদস্যবৃন্দ ডিএসসিসির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সিটি কর্পোরেশন নাগরিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং মিস নাউকু আনজাই, টিম লিডার, সিফরসি২ উপস্থিত ছিলেন।
তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের প্রবণতা উদ্বেগজনক আকারে বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৬ শতাংশ) ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে। তাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়সে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করেছেন। একই সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের হারও এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলক বেশি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা বলছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং প্রতি চারজনের একজন গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশন করেছেন।
জানা গেছে, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় আইসিডিডিআরবি প্রায় ২৪ মাসব্যাপী এই গবেষণা পরিচালনা করে, যা বাংলাদেশে পরিচালিত প্রথম এমন কোনো গবেষণা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি কড়াইল ও মিরপুর বস্তি এবং গাজীপুরের টঙ্গী বস্তিতে আইসিডিডিআরবির আর্বান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইলেন্সের আওতাধীন এলাকায় পরিচালিত হয়। ১৫-২৭ বছর বয়সি মোট ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী গার্মেন্ট শ্রমিককে এই গবেষণাটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর এদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানানো হয়, গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন ৪৯ শতাংশ শ্রমিক, যা দুই বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ নারীর; গবেষণা শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে। একই সময়ে পরিবার পরিকল্পনায় লিঙ্গ সমতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা ঘর ও কর্মস্থল দুই জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গত ১২ মাসে স্বামীর সহিংসতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যৌন সহিংসতা ছাড়া অন্য সব ধরনের সহিংসতা গত দুই বছরে বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতার প্রবণতা উল্টোদিকে গেছে— গবেষণার শুরুতে যেখানে প্রায় ৪৮ শতাংশ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, গবেষণার শেষ দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে।
তবে সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও খুব কম সংখ্যক নারী আনুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চাইছেন। গবেষণার শুরুতে যেখানে ৩৫ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিকভাবে (পরিবার বা বন্ধুদের কাছে) সাহায্য চাইতেন, গবেষণার শেষ দিকে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২১ শতাংশে। কর্মক্ষেত্রের সহিংসতার ঘটনাতেও মাত্র এক-পঞ্চমাংশ নারী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, এবং দুই বছর পরেও এ হার অপরিবর্তিত থাকে।
তরুণ বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে কিছু নিয়ামকও চিহ্নিত হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, যারা সন্তান ধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাদের কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম। এছাড়া যারা প্রথম গর্ভধারণের আগে গার্মেন্ট খাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম।
অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণার উপাত্ত বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন মাত্রা স্বামীর সহিংসতাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশি থাকলে মানসিক ও যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। মতামত প্রকাশের ক্ষমতা থাকলে যৌন সহিংসতা কমে। আবার চলাচলে স্বাধীনতা থাকলে শারীরিক সহিংসতার ঝুঁকিও কমে যায়।
ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিকল্পনা ও গবেষণা) সহকারী পরিচালক ডা. সেকেন্দার আলী মোল্লা, পপুলেশন কাউন্সিল বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক ডা. উবাইদুর রব, বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন এবং মেরী স্টোপস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও স্বতন্ত্র গবেষক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ।
বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শমূলক সেবা বৃদ্ধির কাজ চলছে। তবে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলে তারা শুধু পরিবারে নয়, কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত হতে পারেন। গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামীকাল বুধবার থেকে টানা চার দিন বন্ধ থাকবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ছুটি শেষে আগামী রবিবার থেকে কর্মস্থলে ফিরবে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এর মধ্যে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শনিবার খোলা থাকায় কর্মীরা চার দিনের পরিবর্তে এক দিন কম ছুটির সুবিধা পেতে যাচ্ছেন।
তবে এই ছুটিতে খোলা থাকবে জরুরি সেবাসমূহ। এসব সেবায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঞ্চিত হবে ছুটি থেকে। জরুরি পরিষেবা যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতার বহির্ভূত থাকবে।
এছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীগণ এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে।
চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীগণ এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটি ভোগ করবেন না।
একই সঙ্গে জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১ অক্টোবর নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকবে। ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিজয়া দশমী উপলক্ষে একদিন ছুটি থাকবে।
এরপর ৩ অক্টোবর শুক্রবার ও ৪ অক্টোবর শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
একই সঙ্গে বন্ধ থাকবে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, ছুটি শেষে রোববার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে। অন্য দিনের মতো ব্যাংকের কার্যক্রমও এদিন থেকে শুরু হবে।
এ ছাড়া দুর্গাপূজাসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় উৎসবের কারণে ছুটিতে আছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে দেশি-বিদেশি শক্তি বাধা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, সেই ষড়যন্ত্র যে হচ্ছে, সেটি দৃশ্যমান।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই যে প্রক্রিয়া, তাতে বাধা সৃষ্টি করার জন্য কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে, সেটা দৃশ্যমান। এখানে আন্তর্জাতিক মহল থাকতে পারে, দেশি-বিদেশি শক্তি থাকতে পারে, সেটা আমরা অনুমান করতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ সংকল্পবদ্ধ। এখানে গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করবে এবং কোনোরকম ষড়যন্ত্র করবে, সে দেশেই হোক, বিদেশেই হোক—তাদের তারা প্রতিহত করবে।’
এ সময় পিআর পদ্ধতির দাবি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা পিআর মনে করি জনসংযোগ। এখন সবাই জনসংযোগে আছে। আমরা সেই পিআর-এ বিশ্বাস করি!’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগে আছেন। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করে—তাহলে জনগণ তাদের চিহ্নিত করবে এবং রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা আছে।’
শারদীয় দুর্গাপূজায় এখন পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৯টি ঘটনা আমলে নিয়েছে পুলিশ। এসব ঘটনায় দায়ের করা ১৫টি মামলায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, কম ঝুঁকিপূর্ণ বা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে না প্রত্যেকটি পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা কড়া নজরদারি রেখেছি। যাতে করে যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতি বজায় থাকে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে।
মঙ্গলবার(৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পূজা নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, পূজা নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৩১ হাজার ৬০৬টি মণ্ডপ রয়েছে। সেখানে দুই-একটি ঘটনা ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবেই পূজা উদযাপন হচ্ছে। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশের তালিকা অনুসারে, সারাদেশে পূজা মণ্ডপে ছোট-খাটো ৪৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো জিডি হয়েছে যা পরবর্তী সময়ে মামলা হবে। এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, চট্টগ্রামে জামায়াত কর্মী সেজে হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তিনি জামায়াত কর্মী নয় বলে জানা গেছে। এছাড়া পূজামণ্ডপের গেটের কাপড় ছিড়ে ফেলা, হাত দিয়ে প্রতিমা ভাঙা,পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদককে মারধর, সিলেট কোম্পানীগঞ্জ পূজামণ্ডপে পুলিশ ও আনসারের ওপর অতর্কিত হামলাসহ বেশকিছু ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা সার্বিকভাবে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে নানান ধরনের গুজব তৈরি হয়। যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। অনেক সময় পুরনো ভিডিও কিংবা পুরোনো কোনো ঘটনা যেখানে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে সেগুলো আবার নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। এসব অপ্রীতিকর বিষয়েও আমরা ও আমাদের সাইবার ইউনিট চেষ্টা করছে, যাতে ঘটনাগুলো তুলনা করে সবাইকে জানানো যে এটা একটি পুরোনো ঘটনা। যাতে সবাই শান্ত থাকে।
পুলিশের কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে কিনা? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, অভ্যন্তরীণভাবেও আমরা সতর্ক। পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট (পিআইও) টিম আছে। তারা দেখছে। যে কোনো মাধ্যমে খবর পেলেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সদস্যরা, ঘটনা শোনেন, নিষ্পত্তি করেন। কেউ সংক্ষুব্ধ থাকলে কথাবার্তা বলা হচ্ছে।
আইজিপি বলেন, গ্রেপ্তারদের কারো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে যেমন গাজীপুরে প্রতীমা তৈরির সময় দেখতে গিয়ে ধমক খেয়ে এসে পরে ইগোকেন্দ্রিক প্রতীমা ভাঙচুর করেছেন। অনেকে প্রতীমা ভাংচুরের জড়িতদের স্বজনরা মানসিক ভারসাম্যহীন বলছেন।
মন্তব্য