বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন বিনিয়োগকারী ও স্ন্যাপচ্যাটের সাবেক প্রধান কৌশলগত কর্মকর্তা (সিএসও) ইমরান খান সাক্ষাৎ করেছেন।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার তিনি সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ে ইমরান খান বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ইমরান খানের বর্তমানের বয়স ৪৮ বছর। তিনি ১৮ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং প্রযুক্তি কোম্পানিতে বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি আলেফ হোল্ডিং-এর বোর্ড চেয়ারম্যান।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল ফিনটেক, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক ব্যবসা খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। ইমরান খান বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে ইউনূসের আজীবন মিশন তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে এবং এখনই মাতৃভূমিতে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়।
তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি আপনার কাজের একজন বড় ভক্ত। আপনি আমাদের জাতীয় গর্ব।’
জেপি মরগান ও ক্রেডিট সুইসে বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা ইমরান আলিবাবার রেকর্ড ভাঙা আইপিও-তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান। পরবর্তীকালে স্ন্যাপচ্যাটের সিএসও হিসেবে কয়েক মাসের মধ্যেই কোম্পানির মূল্য শূন্য থেকে ৭২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেন।
আলোচনায় ইমরান খান জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁর ভাষায়, ‘সময়টি অনুকূল। নিয়ন্ত্রক পরিবেশ এখন আরও সহায়ক হয়েছে।’
তিনি বিশেষভাবে ফিনটেক খাতের দ্রুত বিকাশ নিয়ে আশা প্রকাশ করেন এবং সঠিক সুযোগ তৈরি হলে বিনিয়োগের আশ্বাস দেন। ‘বাংলাদেশ একটি ফ্রন্টিয়ার মার্কেট। এখানে ফিনটেক খাতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বিপুল। তরুণ জনগোষ্ঠী বিশাল এবং সুযোগ সীমাহীন।’
ইমরান খান ২০১৮ সালে প্রাইম অ্যাসেট নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা মূলত প্রযুক্তি-নির্ভর রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া খাতে বিশেষ বিনিয়োগ করে, বিশেষ করে ফিনটেক ক্ষেত্রে। তাঁর পোর্টফোলিওতে পেমেন্টস, ডিজিটাল অবকাঠামোসহ একাধিক খাত রয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস ইমরান খানকে শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যেন তিনি নিজে এসে বিনিয়োগ সম্ভাবনা ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে পারেন। জবাবে ইমরান খান আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনার কথা জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণদের জন্য আপনার মতো রোল মডেল প্রয়োজন। দেশে এখন উদ্দীপনামূলক সময় চলছে—আপনি নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন।’
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রতি তাঁদের মোট বিনিয়োগের এক শতাংশ সামাজিক ব্যবসায় ব্যয় করার অথবা সমমনাদের অংশগ্রহণে একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন। ইমরান খান এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং এতে ভবিষ্যতে সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, একদিকে অনেক মানুষ খাদ্যের অভাবে অনাহারে থাকছে, অন্যদিকে উৎপাদিত বিপুল খাদ্যের একটি বড় অংশ অপচয় হচ্ছে- যা দুঃখজনক।
উপদেষ্টা আজ সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত “Towards Zero Food Waste and Loss: Building a Sustainable Food Value Chain in Bangladesh” -শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ১৯৯৬ সাল থেকে খাদ্যের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছে। তখন খাদ্য প্রাপ্ততা বড় বিষয় ছিল। এখন খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে পুষ্টিও যুক্ত হয়েছে। দেশে বর্তমানে মাছের উৎপাদন সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে যেখানে প্রাকৃতিক উৎস থেকে ৬০ শতাংশ ও চাষ থেকে ৪০ শতাংশ আসতো বর্তমানে চাষ থেকে আসছে ৬০ শতাংশ ও প্রাকৃতিক উৎস থেকে ৪০ শতাংশ। আর তাই প্রাকৃতিক মাছ নষ্ট হওয়া প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতের পণ্য পচনশীল হওয়ায় সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না হওয়ায় কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন। ফলে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসসহ নানা খাদ্যপণ্য অপচয়ের শিকার হচ্ছে।
মৎস্য উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য খাতে অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ জাল ব্যবহার, লক্ষ্যভিত্তিক মাছ ধরা এবং অপ্রচলিত প্রজাতি বাজারজাতের অভাবে বিপুল পরিমাণ মাছ ফেলে দিতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মাছের বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে; একসময় ২৬৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত, এখন তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এটি দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি সুরক্ষা ও জনগণের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন করেন বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. অ্যান্ডায়ার্স কার্লসেন ( Mr. Anders Karlsen), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর ডেপুটি প্রতিনিধি মি. দিয়া সানু ( Mr. Dia Sanou), ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)-এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. জেসে উড ( Mr. Jsse Wood) । অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইয়াসিন।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে যমুনা সেতুর বর্তমান রেললেনের সঠিক ব্যবহারের জন্য ডেক সংস্কার ও সংশ্লিষ্ট কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই, বিশদ নকশা প্রণয়ন এবং ভবিষ্যতে একটি নতুন অ্যানেক্স সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও আইইউটি-ডেভকন জেভি-এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় উভয় পক্ষের মধ্যে মোট ১৪,২৯,৮৫,৪০৫.৪১ (চৌদ্দ কোটি ঊনত্রিশ লক্ষ পঁচাশি হাজার চারশত পাঁচ টাকা একচল্লিশ পয়সা) টাকার আর্থিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। উক্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, সচিব, সেতু বিভাগ ও নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এর পক্ষে প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো: ফেরদাউস এবং আইইউটি-ডেভকন জেভি-এর পক্ষে অধ্যাপক ড. শাকিল মোহাম্মদ রিফাত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আইইউটি-ডেভকন জেভি-এর প্রতিনিধিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তির আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি যমুনা সেতুর ডেকের ওপর অবস্থিত সকল কম্পোনেন্ট পুনর্বিন্যাস করে বর্তমান ৬.৩১৫মিটার প্রশস্তের দুই-লেন একমুখী ট্রাফিক-কে ৭.৩০মিটার প্রশস্তের দুই-লেন একমুখী ট্রাফিক-এ পরিণত করার কাজে কারিগরী পরামর্শ প্রদান করবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষা প্রতিবেদন ও নকশা প্রণয়নসহ কাজটি বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগের বিওকিউ, কারিগরী স্পেসিফিকেশনসহ দরপত্র দলিল প্রস্তুত ও নির্মাণ কাজ তদারকিতে সহায়তা গ্রহণ করা হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব বলেন, দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে জনদুর্ভোগ লাঘবের বিষয়ে মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান-এর সদয় নির্দেশনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে সেতুর বর্তমান রেললেনের ডেক সংস্কার এবং সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কাজের যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই করে সেতুর গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে কার্যকর ও নিরাপদ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হবে। এর ফলে সেতুর ওপর এবং সংযুক্ত এপ্রোচ রোডে বিশেষ করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সময় যে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে সচিব আরও বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান ট্র্যাফিকের চাপ এবং পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে উন্নত ও দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যমুনা নদীর উপর বিদ্যমান সেতুর পাশে একটি নতুন অ্যানেক্স সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করা হবে। এই যাচাইয়ে নতুন সেতুর সম্ভাব্য স্থান, কারিগরি চ্যালেঞ্জ, অর্থনৈতিক প্রভাব এবং পরিবেশগত দিকগুলি নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, আনোয়ারায় ১ হাজার মেট্রিকটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি খাদ্যগুদাম আছে আরও ৫শ মেট্রিকটন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি হয়েছে। আশাকরি আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ সময় তিনি প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে জোর দেন। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় আনোয়ারার সদরে নির্মাধীণ ৫০০ মেট্রিকটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে আসেন তিনি কথা বলেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারা, সাতকানিয়া ও সন্দ্বীপে ৩টি প্রজেক্টে ১০কোটি ৭৪লাখ ৩৩হাজার ৩২টাকায় তিন উপজেলায় ৩টি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের জুলাই মাসে।
পরিদর্শনে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম কায়সার আলী,
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ রিয়াদ কামাল রনি, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার, আনোয়ারা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জান্নাতুল আকসা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ বছর নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা নিয়ে কোথাও কোনো শঙ্কা নেই।
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মোট ২ লাখ ৩ হাজার ৫৬৪ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া ৭০ হাজার পুলিশ, ১ লক্ষ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও ৪৩০ প্লাটুন বিজিবি'র সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়াও প্রত্যেকটি পূজা মণ্ডপে মনিটরিং কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির সমাধানে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
এ সময় পূজাকে ঘিরে গুজব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, কোর কমিটির বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, খাগড়াছড়ির উদ্ভূত পরিস্থিতি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি একেবারে নিচে নেমে গিয়েছিল। আপনাদের রেমিট্যান্সই তা বাঁচিয়েছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পেছনে আপনাদের রেমিট্যান্সই মূল চালিকা শক্তি।’
শনিবার ম্যানহাটনের নিউইয়র্ক মেরিয়ট মার্কুইসে (১৫৩৫ ব্রডওয়ে) অনুষ্ঠিত ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিজ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ আয়োজনে অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।
তরুণদের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত তরুণ জনশক্তি রয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করে এ মানবসম্পদ কাজে লাগাতে এবং বাংলাদেশকে উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা এখন বাংলাদেশের অংশ। আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিনিয়োগ ও ধারণা নিয়ে আসুন।’
তিনি আশ্বাস দেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।
আঞ্চলিক অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাত রাজ্য সমুদ্রবন্দরের অভাবে স্থলবেষ্টিত। যদি আমরা তাদের জন্য সমুদ্র উন্মুক্ত করি, সবাই উপকৃত হবে। সুযোগ নিশ্চিত হলে সবাই বাংলাদেশমুখী হবে।’
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস জানান, ইতোমধ্যে সামুদ্রিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বহু অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রস্তুত।’
পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। তিনি জানান, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। গত এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দ্বিগুণ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আশিক চৌধুরী ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রবাসীদের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে ‘হারনেসিং ডায়াসপোরা অ্যাজ আ ন্যাশনাল অ্যাসেট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। এটি পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
আলোচনায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের সম্পদ এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তারা বড় ভূমিকা রেখেছেন।
আরেকটি প্যানেল সেশন পরিচালনা করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। আলোচনায় বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকীবুর রহমান এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ড. তাসনিম জারা বক্তব্য দেন।
তাসনিম জারা তার বক্তৃতায় নারী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার ওপর জোর দেন, যেখানে সবার অংশগ্রহণ ও মতামত থাকবে। তিনি বলেন, ‘যখন সবাই একসঙ্গে কাজ করে, ইতিহাস বদলায়। আমরা একসঙ্গে ইতিহাস বদলাবো।’
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানটি নানা আয়োজনমুখর ছিল। এতে ছিল প্লেনারি সেশন, নতুন ডিজিটাল অ্যাপ উদ্বোধন এবং প্রবাসী সম্পৃক্ততা। এতে প্রবাসীরা তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও উদ্বেগ ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি নীতিনির্ধারক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংলাপের সুযোগ পান। অনুষ্ঠানে ‘শুভেচ্ছা অ্যাপ’ উদ্বোধন করা হয়।
‘এনআরবি কানেক্ট ডে’ ছিল এক বিশেষ সমাবেশ, যেখানে ব্যবসা, একাডেমিয়া, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি ও সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি একত্রিত হন। এতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনুসন্ধান, নাগরিক সেবা গ্রহণ এবং টেকসই সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা জোরদারের সুযোগ তৈরি হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কাজ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
সিইসি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কাজ করা খুবই ডিফিকাল্ট। পার্টিকুলারলি যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে দেশটা যাচ্ছে, আপনি কাজ আদায় করে নেওয়া কিছু কিছু পক্ষের লোকের জন্য খুবই সুবিধা, আর বেশির ভাগ পক্ষের লোকের জন্য ডিফিকাল্ট। এই সিচুয়েশনে এখন দেশ দাঁড়ায় আছে।’
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিইসি নাসির উদ্দিন। ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
কাজ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু এসব সামাল দিতে হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পূর্ণ আস্থা আছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কোনো বেআইনি নির্দেশনা দেওয়া হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, কোনো বেআইনি নির্দেশনা তাঁরা দেবেন না। কারও পক্ষে কাজ করার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতিকে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, এই বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমান কমিশন ঐতিহাসিকভাবে অনেকগুলো নতুন কাজ হাতে নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা নতুন ভিত্তি দেওয়ার জন্য কাজ করছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, একবাক্যে সবাইকে শিকার করতে হবে, নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের অনেক অনীহা। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে অনেক অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন বিষয়ে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই এখন আর ভালো নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান খেলোয়াড় উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, এতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিগত দিনে নির্বাচন কর্মকর্তারা যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ। তিনি বলেন, বিগত দিনে অনেকেই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আবার অনেক নির্বাচন কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়েও কাজ করেছেন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড শক্ত হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ১০ মাস ১০ দিনে কমিশন প্রমাণ করেছে, নির্বাচন কমিশন শক্ত মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কমিশন কারও প্রতি অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করেনি, করবে না।
ভোটার তালিকায় অনেক মৃত ভোটার আছেন উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এখনো তালিকায় অনেক মৃত ভোটার থেকে গেছেন। প্রতিদিনের জন্ম ও মৃত্যুর হার দেখলে এটা বোঝা যায়। তিনি নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য হালনাগাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়া। নির্বাচন কমিশনের ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বাধার কথা উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, একটি হলো এআই প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যটি প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ। কমিশন এই বাধাকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করবেন। এ ছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বদলি নিয়ে তদবির না করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসি সচিব।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন। তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত আছেন বলে নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন।
মন্তব্য