বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কাজ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
সিইসি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কাজ করা খুবই ডিফিকাল্ট। পার্টিকুলারলি যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে দেশটা যাচ্ছে, আপনি কাজ আদায় করে নেওয়া কিছু কিছু পক্ষের লোকের জন্য খুবই সুবিধা, আর বেশির ভাগ পক্ষের লোকের জন্য ডিফিকাল্ট। এই সিচুয়েশনে এখন দেশ দাঁড়ায় আছে।’
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিইসি নাসির উদ্দিন। ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
কাজ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু এসব সামাল দিতে হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পূর্ণ আস্থা আছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কোনো বেআইনি নির্দেশনা দেওয়া হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, কোনো বেআইনি নির্দেশনা তাঁরা দেবেন না। কারও পক্ষে কাজ করার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতিকে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, এই বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমান কমিশন ঐতিহাসিকভাবে অনেকগুলো নতুন কাজ হাতে নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা নতুন ভিত্তি দেওয়ার জন্য কাজ করছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, একবাক্যে সবাইকে শিকার করতে হবে, নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের অনেক অনীহা। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে অনেক অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন বিষয়ে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই এখন আর ভালো নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান খেলোয়াড় উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, এতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিগত দিনে নির্বাচন কর্মকর্তারা যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ। তিনি বলেন, বিগত দিনে অনেকেই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আবার অনেক নির্বাচন কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়েও কাজ করেছেন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড শক্ত হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ১০ মাস ১০ দিনে কমিশন প্রমাণ করেছে, নির্বাচন কমিশন শক্ত মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কমিশন কারও প্রতি অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করেনি, করবে না।
ভোটার তালিকায় অনেক মৃত ভোটার আছেন উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এখনো তালিকায় অনেক মৃত ভোটার থেকে গেছেন। প্রতিদিনের জন্ম ও মৃত্যুর হার দেখলে এটা বোঝা যায়। তিনি নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য হালনাগাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়া। নির্বাচন কমিশনের ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বাধার কথা উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, একটি হলো এআই প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যটি প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ। কমিশন এই বাধাকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করবেন। এ ছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বদলি নিয়ে তদবির না করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসি সচিব।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন। তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত আছেন বলে নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন।
ফরিদপুর ও কুমিল্লা নামে নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ প্রতিষ্ঠার পথে এগোচ্ছে সরকার। সেই সঙ্গে নতুন দুটি উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রি নিকার সচিব কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং সেখানেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
সূত্র মতে, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নিকার বৈঠক হতে পারে।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রি-নিকার বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লা শহরের নামেই নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ এবং নতুন দুটি উপজেলা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ গঠন এবং কুমিল্লা বিভাগের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর নাম প্রস্তাব করেছে।
বর্তমানে দেশে মোট ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৫ সালে ময়মনসিংহকে বিভাগ হিসেবে উন্নীত করেছে সরকার।
এর পাশাপাশি কুমিল্লার মুরাদনগর ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ভেঙে নতুন দুটি উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা থানাধীন ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে ‘বাঙ্গরা উপজেলা’ এবং ফটিকছড়ি ভেঙে ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ নামে উপজেলা সৃষ্টির খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার অধীনে মোট ২২টি ইউনিয়ন রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নিকার বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা বিভাগ’ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে ‘মেঘনা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উঠলেও চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কায় বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব স্থগিত রাখা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতেও নতুন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে শুক্রবার নিউইয়র্কে তাঁর হোটেল স্যুইটে একত্রিত হন বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা।
তাঁরা বাংলাদেশকে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিজামি গঞ্জাভি আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবারগার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এনজিআইসি’র নামকরণ করা হয়েছে খ্যাতনামা একাদশ শতকের পারস্য কবি নিজামি গঞ্জাভির নামে।
উচ্চপর্যায়ের এই দলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিভ ও পেতার স্তোইয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক রপ্রেসিডেন্ট ম্লাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, একাধিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি ও এনজিআইসি’র সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি-এর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা।
নেতৃবৃন্দ অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও আজীবন দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আমরা আপনার পাশে আছি।’
তাঁরা উল্লেখ করেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি, শোষণ ও কু-শাসনের কারণে দেশটি এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
বিভিন্ন নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে জানাবেন।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফরকারী কেরি কেনেডি দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আপনাদের অর্জন অসাধারণ।’
জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভিয়ার জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘আপনাদের প্রয়োজন হলে আমরা আছি।’
সম্মেলনে প্রফেসর ইউনূস এভাবে অপ্রত্যাশিত সমর্থন পেয়ে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আপনাদের একসঙ্গে আমাদের সমর্থনে দাঁড়ানো সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি একেবারেই মুগ্ধ।’
তিনি বাংলাদেশের অবস্থা তুলনা করেন একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে ফেরার সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, ‘দেশটি গত ১৬ বছর ধরে একটি ভূমিকম্পের মধ্যে ছিল। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯।’
প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, সীমিত সম্পদের কারণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ‘মানুষ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের অবশ্যই তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে—তারা একটি নতুন বাংলাদেশ খুঁজছে।’
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন করার আহ্বান জানান। প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমাদের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। আপনাদের পরামর্শ, সহযোগিতা ও নৈতিক শক্তি আমাদের জন্য অমূল্য।’
সভায় এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত বুধবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সংস্থার সদর দপ্তরে দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ এবং এর আগে গত বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব ও কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনমান অনুসরণ করেই এই বিচার পরিচালিত হচ্ছে। বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও তিনি (হাসিনা) উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী মন্তব্য করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা প্রত্যর্পণ চেয়েছি।’
বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ানভুক্তির প্রচেষ্টা, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল-ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ পাওয়ার উদ্যোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ মাসে আমরা (অন্তর্বর্তী সরকার) অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছি।’
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে আমাদের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখন তারা ফেব্রুয়ারির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।’
বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই চার্টারে সই করবে বলে আশা করা হচ্ছে বলেও ফিনিশ প্রেসিডেন্টকে জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ও শেহবাজ শরীফের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, পাকিস্তানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী বন্যা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পাকিস্তানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যায় এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির জন্য গভীর শোক প্রকাশ এবং আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শরীফ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এ ধরনের বিপর্যয়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ১১টি কমিশনের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার দেশকে অর্থবহ রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং দলগুলো ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে, যেখানে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়বস্তুগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
উভয় নেতা আলোচনা করেন যে সম্প্রতি কয়েক বছরে সার্ক কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী শরীফ ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ইতালিয়ান বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং বলেন দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বিস্তারের বড় সম্ভাবনা রয়ে গেছে।
উভয় নেতা বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অভিবাসন চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বাংলাদেশে সম্ভাব্য সফর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অভিবাসন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ইতালির পক্ষ থেকে ঢাকার সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, যাতে দুদেশের জন্য নিরাপদ অভিবাসনের পথ নিশ্চিত করা যায়।
তিনি মানবপাচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন, যা ভূমধ্যসাগরে শত শত মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই মানবপাচারের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ এবং নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকর করেছে।
তিনি বলেন, ‘মানবপাচার রোধে আরও সমন্বিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রয়োজন।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশ ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের পথে রয়েছে, এরপর তিনি তার পূর্ববর্তী ভূমিকায় ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী মেলোনি অধ্যাপক ইউনূসের গত ১৪ মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা এবং নিশ্চিত করেন যে ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দেশ যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সমর্থন জানাবে।
দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও গঠনমূলক আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী মেলোনি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠানোর অঙ্গীকার করেন।
সূত্র: বাসস/ইউএনবি
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।
আগামী বছর রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমার্ধে নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা জোরে-সোরে নিচ্ছি।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এখন নিউইয়র্কে আছেন। আপনারা দেখেছেন, যার সাথে উনি দেখা করছেন তাকেই বলছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আমি গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। একটা সুন্দর নির্বাচন, ঐতিহাসিক নির্বাচন দিতে চাই। উনার ওই কথাগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা কিন্তু কাজ করছি। একবার একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন যাতে হয়। আর এই ঐতিহাসিক নির্বাচন কিন্তু আপনাদের (গণমাধ্যম) ছাড়া পারবো না। আমরা যতো ভালোই করি না কেন, এখন আপনারা যদি উল্টোটা বলেন, তাহলে সব শেষ, বরবাদ হয়ে যাবে।’
গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের (গণমাধ্যমের) সহযোগিতা লাগবে।
আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে আপনারা একটু মানুষকে বুঝাবেন। আমরা কারো কথায় চলতে চাই না। আমরা বিবেকের তাড়নায় চলি। আইন অনুযায়ী চলতে চাই। সংবিধান অনুযায়ী চলতে চাই এবং একটা সরল সোজা পথে চলতে চাই, কোনো বাঁকা পথে নয়। কাউকে কোনো ফেভার করার জন্য না। নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চাই। এই জিনিসটা, আমাদের বক্তব্যটা আপনারা সবার কাছে একটু তুলে ধরবেন।’
রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল হলো আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার। তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মন্তব্য প্রতিবেদন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সব খেলোয়াড়রা যদি ফাউল করার নিয়তে মাঠে নামে তাহলে রেফারির পক্ষে তো এই ম্যাচ পণ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। সুতরাং খেলোয়াড়দের তো ফাউল করার নিয়ত থেকে একটু দূরে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, যাতে ফাউল না করতে পারেন তার যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা নিব ইনশাআল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি আমাদের যারা স্টেক হোল্ডার যারা খেলবেন ইলেকশনের মাঠে, তারা সব ফাউল করার নিয়তে নামবেন না।
তারা একটা সুন্দর নির্বাচনের নিয়তেই নামবেন। একটা ভালো নির্বাচনের নিয়তে নামবেন, এ বিশ্বাস আমার আছে। কারণ, একটা বিশাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু এই অবস্থায় আছি। একটা ক্রান্তি লগ্নে আছি।
উনারা জানেন, সুতরাং কেউ আমাকে কেউ এ পর্যন্ত বলেন নাই যে, আমি ফাউল খেলার নিয়তে ইলেকশনে যাব। ইলেকশনে ভোট ডাকাতি করব, সন্ত্রাস করব এমন কেউ বা কোনো রাজনীতিবিদ বলেন নাই। সুতরাং আমি ধরে নিচ্ছি যে, উনারা সুন্দরভাবে সহযোগিতা করবে। তবে সরকার উনাদের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, চার থেকে পাঁচ জন নেতা আমেরিকাও গেছেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সাথে ওখানেও তো আলাপ-আলোচনা করার একটা সুযোগ পাবেন। আমার কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা আছে। এটা আমার সব সময় ছিল।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।
আগামী বছর রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমার্ধে নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা জোরে-সোরে নিচ্ছি।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এখন নিউইয়র্কে আছেন। আপনারা দেখেছেন, যার সাথে উনি দেখা করছেন তাকেই বলছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আমি গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। একটা সুন্দর নির্বাচন, ঐতিহাসিক নির্বাচন দিতে চাই। উনার ওই কথাগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা কিন্তু কাজ করছি। একবার একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন যাতে হয়। আর এই ঐতিহাসিক নির্বাচন কিন্তু আপনাদের (গণমাধ্যম) ছাড়া পারবো না। আমরা যতো ভালোই করি না কেন, এখন আপনারা যদি উল্টোটা বলেন, তাহলে সব শেষ, বরবাদ হয়ে যাবে।’
গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের (গণমাধ্যমের) সহযোগিতা লাগবে।
আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে আপনারা একটু মানুষকে বুঝাবেন। আমরা কারো কথায় চলতে চাই না। আমরা বিবেকের তাড়নায় চলি। আইন অনুযায়ী চলতে চাই। সংবিধান অনুযায়ী চলতে চাই এবং একটা সরল সোজা পথে চলতে চাই, কোনো বাঁকা পথে নয়। কাউকে কোনো ফেভার করার জন্য না। নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চাই। এই জিনিসটা, আমাদের বক্তব্যটা আপনারা সবার কাছে একটু তুলে ধরবেন।’
রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল হলো আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার। তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মন্তব্য প্রতিবেদন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সব খেলোয়াড়রা যদি ফাউল করার নিয়তে মাঠে নামে তাহলে রেফারির পক্ষে তো এই ম্যাচ পণ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। সুতরাং খেলোয়াড়দের তো ফাউল করার নিয়ত থেকে একটু দূরে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, যাতে ফাউল না করতে পারেন তার যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা নিব ইনশাআল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি আমাদের যারা স্টেক হোল্ডার যারা খেলবেন ইলেকশনের মাঠে, তারা সব ফাউল করার নিয়তে নামবেন না।
তারা একটা সুন্দর নির্বাচনের নিয়তেই নামবেন। একটা ভালো নির্বাচনের নিয়তে নামবেন, এ বিশ্বাস আমার আছে। কারণ, একটা বিশাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু এই অবস্থায় আছি। একটা ক্রান্তি লগ্নে আছি।
উনারা জানেন, সুতরাং কেউ আমাকে কেউ এ পর্যন্ত বলেন নাই যে, আমি ফাউল খেলার নিয়তে ইলেকশনে যাব। ইলেকশনে ভোট ডাকাতি করব, সন্ত্রাস করব এমন কেউ বা কোনো রাজনীতিবিদ বলেন নাই। সুতরাং আমি ধরে নিচ্ছি যে, উনারা সুন্দরভাবে সহযোগিতা করবে। তবে সরকার উনাদের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, চার থেকে পাঁচ জন নেতা আমেরিকাও গেছেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সাথে ওখানেও তো আলাপ-আলোচনা করার একটা সুযোগ পাবেন। আমার কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা আছে। এটা আমার সব সময় ছিল।
জুলাই আন্দোলনকারীদের অবস্থান ড্রোনের মাধ্যমে নির্ণয় করে, ছত্রীসেনা ব্যবহার করে হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং ও গুলিবর্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার ৪টি ফোনকলের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়।
শেখ হাসিনার এই চারটি ফোনালাপের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে একটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দুটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের একটি ফোনালাপ রয়েছে।
এতে জুলাই আন্দোলন দমনে লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহার করা, আন্দোলনকারীদের তালিকা করে পাকড়াও করা, রাজাকার ট্যাগ দিয়ে তাদের ফাঁসি দেয়া ও মেরে ফেলা, ছত্রীসেনা ব্যবহার করে বোম্বিং করা, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপানো, তাদের জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে প্রপাগাণ্ডা ছড়ানোসহ আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সব পরিকল্পনার কথা উঠে আসে।
‘আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়েছি। এখন লিথাল ওয়েপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে এমন কথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে তার এই নির্দেশনা ছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন এই মামলার স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং অফিসার ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইবুনাল-১ এ দেয়া তার সাক্ষ্যর জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তিনি এই মামলার ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
কথপোকথনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলেন তাপস। এর মধ্যেই শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিটিআরসি-বিটিভি পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন ইন্টারনেট বন্ধ। মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি যা যা পোড়াতে... আমাদের সেতু ভবন পুড়িয়েছে।’
তখন তাপস বলেন, রাতের বেলায় আরও ব্যাপক আক্রমণ করবে। কারণ আমি দেখলাম রাস্তায় রাস্তায় ওরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। এ সময় জায়গার নাম জানতে চান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিত্তোরে বনানী-গুলশানের কথা উল্লেখ করেন সাবেক এই মেয়র।
পরে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ফোনালাপে শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, যা যা পোড়াতে। ওরা পুড়িয়ে দিলো সেতু ভবন।’ তার মানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পুড়িয়ে অন্য স্থাপনা পোড়ানো হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন এই মামলার স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং অফিসার ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইবুনাল-১ এ দেয়া তার সাক্ষ্যর জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তিনি এই মামলার ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তানভীর জোহা বলেন, তিনি মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে বিটিআরসি, এনটিএমসি, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর হতে বিভিন্ন অডিও ক্লিপ,ভিডিও ফুটেজ, সিডিআর, আইপিটিআর, সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ বিধি মোতাবেক মামলার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এতে শেখ হাসিনার ৬৯টি কথোপকথনের রেকর্ডও রয়েছে। যাতে আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলন দমনে তার পরিকল্পনা ও নির্দেশনার কথা জানাচ্ছিলেন।
এসব ফোনালাপে স্পষ্ট করেই মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়ার কথা বলতে শোনা যায়। আন্দোলনকারীদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই যেন গুলি করা হয় এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
এছাড়া সকালে রাজসাক্ষী হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তার উপস্থিতিতেই সাক্ষীরা জবানবন্দি দেন।
শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথন
হাসানুল হক ইনু: আমি মনে করি যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আর কি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং শনির আখড়াতে...।
শেখ হাসিনা: না, রামপুরা ক্লিয়ার। শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে।
ইনু: শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই...।
শেখ হাসিনা: খালি মোল্লা না, সেখানে অনেক মাদ্রাসা। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে বলেছি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা ছত্রীসেনা নামাচ্ছি।
ইনু: ওহ, আচ্ছা।
শেখ হাসিনা: আমি বলছি, ক্যাজুয়ালটির দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে৷ কারণ, দুই পাশ দিয়ে ধরবে... ম্যাসেজটা দিয়ে দিতে পারেন।
ইনু: আচ্ছা।
শেখ হাসিনা: ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে। ঠিক আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। হেলিকপ্টার যাক, ওপর দিয়ে মারবে।
ইনু: আচ্ছা, ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আর কি।
হাসিনা: হুম।
শেখ তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপ
শেখ হাসিনা: দরকার নাই, ওটা দরকার নাই। আমি সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলছি, ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে! এখনতো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে, ইয়ে হচ্ছে মানে, কয়েক জায়গায়।
তাপস: তাহলে ওই কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে?
শেখ হাসিনা: সবগুলোকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি রাতে।
তাপস: হ্যাঁ, পাকড়াও, পাকড়াও করলে ওদেরকে...
শেখ হাসিনা: না, ওটা বলা হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, সবাইকে বলা হইছে যে যেখান থেকে যে কয়টা পারবা ধইরা ফেলো।
তাপস : জ্বি
শেখ হাসিনা: না, ওটা বলা আছে। আর যেখানে গেদারিং দেখবে সেখানে ওই ওপর থেকে, এখন ওপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হইছে কয়েকটা জায়গায়।
তাপস: জ্বি
শেখ হাসিনা:…হইয়া গেছে।
তাপস: জ্বি, জ্বি, মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় ওরা যাচ্ছে একটা—আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলল।
শেখ হাসিনা: মোহাম্মদপুর থানার দিকে?
তাপস: হ্যাঁ।
শেখ হাসিনা: ওখানে পাঠাইয়া দিক র্যাবকে।
তাপস: জ্বি, তাহলে আপনার নির্দেশনা লাগবে, তিনি এখনো মানে…
শেখ হাসিনা: আমার নির্দেশনা দেয়া আছে, ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি এখন, এখন লেথাল উইপেন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।
মন্তব্য