সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির আর্থসামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাটে সুফলভোগীদের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের আয়োজনে এ হাসপাতাল চত্বরে বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মহির উদ্দিন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফসিয়া জাহান, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা জানান, সরকারের এ উদ্যোগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে ২০০ জন সুফলভোগীদের মাঝে ছাগল তুলে দেন অতিথিরা।
জুলাই আন্দোলনকারীদের অবস্থান ড্রোনের মাধ্যমে নির্ণয় করে, ছত্রীসেনা ব্যবহার করে হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং ও গুলিবর্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার ৪টি ফোনকলের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়।
শেখ হাসিনার এই চারটি ফোনালাপের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে একটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দুটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের একটি ফোনালাপ রয়েছে।
এতে জুলাই আন্দোলন দমনে লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহার করা, আন্দোলনকারীদের তালিকা করে পাকড়াও করা, রাজাকার ট্যাগ দিয়ে তাদের ফাঁসি দেয়া ও মেরে ফেলা, ছত্রীসেনা ব্যবহার করে বোম্বিং করা, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপানো, তাদের জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে প্রপাগাণ্ডা ছড়ানোসহ আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সব পরিকল্পনার কথা উঠে আসে।
‘আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়েছি। এখন লিথাল ওয়েপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে এমন কথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে তার এই নির্দেশনা ছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন এই মামলার স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং অফিসার ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইবুনাল-১ এ দেয়া তার সাক্ষ্যর জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তিনি এই মামলার ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
কথপোকথনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলেন তাপস। এর মধ্যেই শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিটিআরসি-বিটিভি পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন ইন্টারনেট বন্ধ। মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি যা যা পোড়াতে... আমাদের সেতু ভবন পুড়িয়েছে।’
তখন তাপস বলেন, রাতের বেলায় আরও ব্যাপক আক্রমণ করবে। কারণ আমি দেখলাম রাস্তায় রাস্তায় ওরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। এ সময় জায়গার নাম জানতে চান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিত্তোরে বনানী-গুলশানের কথা উল্লেখ করেন সাবেক এই মেয়র।
পরে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ফোনালাপে শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, যা যা পোড়াতে। ওরা পুড়িয়ে দিলো সেতু ভবন।’ তার মানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পুড়িয়ে অন্য স্থাপনা পোড়ানো হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন এই মামলার স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং অফিসার ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইবুনাল-১ এ দেয়া তার সাক্ষ্যর জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তিনি এই মামলার ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তানভীর জোহা বলেন, তিনি মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে বিটিআরসি, এনটিএমসি, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর হতে বিভিন্ন অডিও ক্লিপ,ভিডিও ফুটেজ, সিডিআর, আইপিটিআর, সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ বিধি মোতাবেক মামলার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এতে শেখ হাসিনার ৬৯টি কথোপকথনের রেকর্ডও রয়েছে। যাতে আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলন দমনে তার পরিকল্পনা ও নির্দেশনার কথা জানাচ্ছিলেন।
এসব ফোনালাপে স্পষ্ট করেই মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়ার কথা বলতে শোনা যায়। আন্দোলনকারীদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই যেন গুলি করা হয় এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
এছাড়া সকালে রাজসাক্ষী হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তার উপস্থিতিতেই সাক্ষীরা জবানবন্দি দেন।
শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথন
হাসানুল হক ইনু: আমি মনে করি যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আর কি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং শনির আখড়াতে...।
শেখ হাসিনা: না, রামপুরা ক্লিয়ার। শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে।
ইনু: শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই...।
শেখ হাসিনা: খালি মোল্লা না, সেখানে অনেক মাদ্রাসা। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে বলেছি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা ছত্রীসেনা নামাচ্ছি।
ইনু: ওহ, আচ্ছা।
শেখ হাসিনা: আমি বলছি, ক্যাজুয়ালটির দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে৷ কারণ, দুই পাশ দিয়ে ধরবে... ম্যাসেজটা দিয়ে দিতে পারেন।
ইনু: আচ্ছা।
শেখ হাসিনা: ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে। ঠিক আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। হেলিকপ্টার যাক, ওপর দিয়ে মারবে।
ইনু: আচ্ছা, ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আর কি।
হাসিনা: হুম।
শেখ তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপ
শেখ হাসিনা: দরকার নাই, ওটা দরকার নাই। আমি সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলছি, ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে! এখনতো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে, ইয়ে হচ্ছে মানে, কয়েক জায়গায়।
তাপস: তাহলে ওই কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে?
শেখ হাসিনা: সবগুলোকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি রাতে।
তাপস: হ্যাঁ, পাকড়াও, পাকড়াও করলে ওদেরকে...
শেখ হাসিনা: না, ওটা বলা হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, সবাইকে বলা হইছে যে যেখান থেকে যে কয়টা পারবা ধইরা ফেলো।
তাপস : জ্বি
শেখ হাসিনা: না, ওটা বলা আছে। আর যেখানে গেদারিং দেখবে সেখানে ওই ওপর থেকে, এখন ওপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হইছে কয়েকটা জায়গায়।
তাপস: জ্বি
শেখ হাসিনা:…হইয়া গেছে।
তাপস: জ্বি, জ্বি, মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় ওরা যাচ্ছে একটা—আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলল।
শেখ হাসিনা: মোহাম্মদপুর থানার দিকে?
তাপস: হ্যাঁ।
শেখ হাসিনা: ওখানে পাঠাইয়া দিক র্যাবকে।
তাপস: জ্বি, তাহলে আপনার নির্দেশনা লাগবে, তিনি এখনো মানে…
শেখ হাসিনা: আমার নির্দেশনা দেয়া আছে, ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি এখন, এখন লেথাল উইপেন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আজ বুধবার ঢাকার তথ্য ভবনে ‘সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড গঠন এবং সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ (খসড়া)’ বিষয়ক আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আগামী দশ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে লিখিত মতামত ও প্রস্তাব প্রদানের জন্য সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নের সঙ্গে একাধিক মন্ত্রণালয় জড়িত। মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো সমাধানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রদানের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মাহফুজ আলম বলেন, সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যায় যে অসংগতি রয়েছে, তা দূর করতে হবে। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানো হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বিজ্ঞাপন খাতে বকেয়া টাকা পরিশোধে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিগত সরকারের আমলে বিজ্ঞাপন খাতে বকেয়া টাকার পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ ৩৬ কোটি টাকা। বিজ্ঞাপন খাতের এই বকেয়া টাকা পরিশোধে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ভালো বেতন নিশ্চিত করা গেলে গণমাধ্যমে বিদ্যমান অনেক সমস্যা কেটে যাবে। তিনি সাংবাদিকদের বেতন যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদ্যমান আইনে সাংবাদিকদের শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা আর শ্রমিক হিসেবে থাকতে চান না। সাংবাদিকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের কর্তৃত্ব একাধিক মন্ত্রণালয়ে না রেখে শুধু তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে রাখার পক্ষে মত দেন তারা।
আলোচনাসভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যেখানে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন সুবিধা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করেছে।
সরাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগ, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য প্রায় ২৫ হাজার সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। চট্টগ্রাম জেলার উপজেলাসমূহে জলস্তরের (Water table) উচ্চতা খুবই নিচে চলে যাওয়ায় এবং নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে জনগণ সুপেয় পানি হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকিতে স্থাপিত গভীর নলকূপসমূহ জনগণের মাঝে সুপেয় পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে।
বিশেষ করে সীতাকুন্ড উপজেলায় মাটির নিচে পাথরের স্তর থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চরম পানি সংকটের সম্মুখিন হয়েছে ওই এলাকার মানুষ। বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি Hydraulic Rig পদ্ধতি ব্যবহার করে সীতাকুন্ড উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। এতে জনগণের সুপেয় পানির অভাব পূরণ হয়েছে এবং উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নলকূপ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় কমিউনিটি বেসড ওয়াটার সাপ্লাই স্কীম এবং রুরাল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কীমের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কাজ চলমান রয়েছে। সর্বোপরি এ প্রকল্পের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জনগণের জন্য সহজলভ্য এবং নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।
পিইডিপি-৪ প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০০টি ওয়াশব্লক নির্মাণ এবং ১,১৩৫টি সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় মাটির নিচে পাথুরে স্তর থাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব ছিল না। এতে করে বিদ্যালয়ে সুপেয় পানি বা স্যানিটেশন ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ী থেকে পানি নিয়ে আসতে হত। এ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর ব্যবস্থাপনায় Hydraulic জরম পদ্ধতি ব্যবহার করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়।
তছাড়া বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এবং বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দ্বীপেও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ওয়াশব্লক নির্মাণ ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কোমলমতি শিশুদের স্যানিটেশন সুবিধা উন্নত করার জন্য এবং নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর তদারকিতে উক্ত কাজসমূহ সম্পন্ন করা হয়।
মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-এর আওতায় ১৪,৭০০টি টুইনপিট ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে, যা স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে এবং জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। তাছাড়া ৫টি Large Piped Water Supply Scheme এর কাজ চলমান রয়েছে এবং ২৬৬ Small Piped Water Supply Scheme এর মাধ্যমে জনগণের মাঝে সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিটি Small Piped Water Supply Scheme এর মাধ্যমে ৩০-৪০ টি পরিবার পানি পাচ্ছে। তাছাড়া জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে ৪২ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে নতুন টয়লেট নির্মাণ, ২৮টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং ৬৩ টি হ্যান্ড ওয়াশিং বেসিন নির্মাণ করে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে ৬,৩৩৬টি রেইন ওয়াটার হার্ভোস্টিং ও ৬৩০ টি রেইন ওয়াটার ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বৃষ্টির পানি সঞ্চয়ের মাধ্যমে পানি সংকট মোকাবেলা করতে সহায়তা করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে উপকূলীয় জনগণের পানির অভাব দূর করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার জনগণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে, যা পানিবাহিত রোগের প্রতিরোধ এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
৩২ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় সাতকানিয়া পৌরসভায় জনগণের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪০টি কমিউনিটি ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ৪৭টি কমিউনিটি বিন নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও পাম্প হাউজ নির্মাণ করেছে।
বাংলাদেশে ৩০টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় বাঁশখালী ও চন্দনাইশ পৌরসভায় ইমপ্রুভড হাউসহোল্ড টয়লেট নির্মাণ করা হয়। এতে জনগণের স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। তাছাড়া উক্ত পৌরসভাসমূহে ড্রেন নির্মাণের কাজ ও চলমান রয়েছে। তাছাড়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ দুটি পৌরসভার জনগণের মাঝে পানি সরবরাহ আরম্ভ হবে।
প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, যেমন দূরবর্তী অঞ্চলে টিউবওয়েল স্থাপন এবং স্যানিটেশন সুবিধার জন্য অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি। তবে এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন চট্টগ্রাম জেলার জনগণের জীবনযাত্রায় একটি বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এ অঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সাধারণ জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।
শতাধিক চৌবাচ্চায় লাল, নীল, হলুদ, সাদা, কালো আর কমলা রঙের মাছের ঝলকানি। রঙিন এই মাছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন আগত দর্শনার্থীরা। শখের বশে শুরু হলেও আজ সেটিই পরিণত হয়েছে এক সফলতার গল্পে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার প্রজেশ্বর চন্দ্র জয় এখন রঙিন মাছ চাষ করে হয়েছেন লাখপতি। জয়ের সাফল্য দেখে রঙিন মাছ চাষে স্বপ্ন দেখছেন কুমিল্লার তরুণরা।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে জয় বেছে নেন ভিন্ন পথ। ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে মাত্র ১ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয়ে দুটি ড্রামে শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। প্রথমে ছিল শুধু শখ, কিন্তু বর্তমানে তা রূপ নিয়েছে বাণিজ্যিক খামারে। বুড়িচং উপজেলার মণিপুর ও নাঙ্গলকোটে তার রয়েছে তিনটি খামার, ‘আর বি ফিস ফার্ম’ নামে, যেখানে চাষ হচ্ছে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মাছ।
তার হ্যাচারিতে এখন ৯০ প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন হয়। দূর-দূরান্ত থেকে শৌখিন মানুষ এসে রঙিন মাছের পোনা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ঘরের অ্যাকুরিয়ামে শোভা পায় জয়ের হ্যাচারির রঙিন মাছ।
তখন অনেকেই জয়ের কাজ দেখে হাসাহাসি করে। তবে দীর্ঘ পরিশ্রম আর একাগ্রতায় তিনটি হ্যাচারির মালিক হন জয়। দুটি তার গ্রামের বাড়ি নাঙলকোটে। আরেকটি বুড়িচং উপজেলার কাবিলা-মণিপুর এলাকায়। তার হ্যাচারিতে রঙিন মাছের পোনার মধ্যে রয়েছে এলবাইনো ব্লুটুপাস, গ্রীন বেনবেল্ট, ডাম্বু মোজাইক, এলবাইনো পিঙ্ক মোজাইক, গ্লুকই, ফরকে গোল্ড, ব্লু মেটাল, ব্লু হেড সামুরাই, রেড ড্রাগন, গ্রীন ড্রাগন, আরটিপি, লবস্টার বা ক্রে ফিস, মুনটেল বেলুনমলি।
জয় বলেন, ‘হ্যাচারির মধ্যে ৪৪টি হাউসে নিয়ম করে মাছের পোনাকে যত্নআত্তি করতে হয়। সকাল-বিকেল অক্সিজেন চেক করে খাবার দিতে হয়।’ পোনা পরিচর্যাকারী রাকিব উল্লাহ জানান, ‘নিয়ম করে হ্যাচারিতে অক্সিজেন দিতে হয়। তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে পোনার খাবার দিতে হয়। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে পোনা মরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।’
স্থানীয় আবদুর রশীদ নামে এক বাসিন্দা জানান, ‘দূর-দূরান্ত থেকে শৌখিন লোকজন এসে মাছের পোনা কিনে নিয়ে যায়।’ ক্রেতা আবুল খায়ের জানান, ‘তিনি মাছের পোনা কিনে নিয়েছেন। সাশ্রয়ী দামে পোনা কিনেছেন। বাড়তি হিসেবে হ্যাচারি থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।’ জয়ের এমন সাফল্য দেখে তরুণরা এখন রঙিন মাছের পোনা উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছে।
আরেক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, ‘কুমিল্লা ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা যেমন; চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহীতে যা তার এই উৎপাদিত মাছের পোনা। এছাড় অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বিক্রি হচ্ছে তার মাছ।’
রঙিন মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বাসার অ্যাকুরিয়াম সাজাতে প্রতিদিনই ক্রেতারা ভিড় করছেন জয়ের খামারে। উদ্যোক্তা হিসেবে জয়ের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় অনেক তরুণ এখন নতুন খামার গড়ে তোলার কথা ভাবছেন।
হ্যাচারির মালিক প্রজেশ্বর চন্দ্র জয় বলেন, শুরুতে অনেকেই হাসাহাসি করেন। ধীরে ধীরে যখন সফলতা এসে ধরা দিতে লাগল তখন সমালোচনাকারীরা আমার হ্যাচারিতে এসে বিনিয়োগ করতে চায়। তবে রঙিন মাছের পোনা উৎপাদনে শেখার কোনো শেষ নেই বললেন হ্যাচারির মালিক জয়। তাই শুধু হ্যাচারি করলেই হবে না, প্রতিনিয়ত শেখতে হবে।
রঙিন মাছের পোনা উৎপাদনে শুধু সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেনি বরং জয় এখন এলাকার তরুণদের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার প্রতিক।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, কুমিল্লা দেশের মৎস্য উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রঙিন মাছ চাষের সম্ভাবনা।
মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, জয় একটি অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে। তরুণরা চাইলে খুব সহজেই এ খাত থেকে লাভবান হতে পারবেন। সে জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পরমার্শ দিতে প্রস্তুত আছে মৎস্য কর্মকর্তারা।
শখের বশে শুরু হলেও আজ রঙিন মাছ চাষ প্রজেশ্বর চন্দ্র জয়ের জীবনে এনেছে সাফল্য। শুধু নিজেই নয়, আশপাশের তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করছেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা পেলে রঙিন মাছ চাষে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় রপ্তানি শিল্পে পরিণত হতে পারে।
কৃষিকাজের আড়ালে বাংলা মদ উৎপাদন ও বিক্রি করে নিজের নাম লিখিয়েছেন কালো তালিকায়। এলাকার ছোট থেকে বড় সর্ব মহলে পরিচিত নাম কামাল হোসেন। কেরানীগঞ্জ উপজেলার রোহিতপুর ইউনিয়নের পোড়াহাটি গ্রামের ফয়েজ উদ্দীনের ছেলে কামাল যিনি দীর্ঘদিন ধরে একই পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে শুধু নামেই পরিচিতি পাননি হয়েছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। মদের টাকায় পারিবারিকভাবে সচ্ছলতার পাশাপাশি বাড়িতে গড়ে তুলেছেন আলিসান ভবন। মদের কারখানার সামনেই নির্মিত ভবন থেকেই দেখভাল করেন নিজ সাম্রাজ্যের।
এলাকাবাসী বলছে তার কারণে এলাকার যুবকরা বিপদগামী হচ্ছে। এলাকাবাসী প্রশাসন সবাই যেনেও বাধা দেওয়া হয় না এই অবৈধ কাজে। তার কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন একই এলাকার রবি, হান্নান ও গফফার। পুলিশ ফাঁড়ির পেছনেই বিশাল মদের কারখানা দীর্ঘদিন যাবত কী করে চলছে এর উপযুক্ত জবাব নেই ফাঁড়িতে দায়িত্বরত কর্মকর্তার। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ (সার্কেল) মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন কবির জানান, পুলিশ ফাঁড়ির কাছে কিংবা দূরে মদের কারখানা কোথাও থাকবে না। তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন সোনাকান্দা আদর্শ পুলিশ ফাঁড়ির ৫০০ গজের ভেতরে পোড়াহাটি এলাকায় একটি ধইঞ্চা খেতে দুটি ড্রামের চুলায় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে মদ। পাশেই বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে কাঁচা মদ ভর্তি ২০-২৫টি ড্রাম। কোথাও কম পচা কোথাও আবার বেশি। কিছু পলিথিন ভর্তি রেডি বাংলা মদ। স্থানীয় যুবসমাজ খেতের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করছে মদের ড্রাম।
স্থানীয় যুবক জহিরুল ইসলাম জানান, কামাল ও তার সহযোগীরা প্রায় ৮-১০ বছর যাবত এ কাজ করে আসছে। এলাকাবাসী ও প্রশাসনের অসহযোগীয় আমরা চক্রটিকে ধরতে পারছিলাম না। অবশেষে গ্রামের যুবসমাজ একত্র হয়ে ১৫-২০ ড্রাম মদ উদ্ধার করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনে ধ্বংস করেছি। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সরকারি ইস্পাহানি কলেজের শিক্ষক আসকর আলী জানান, এমন জঘন্য ব্যক্তি কোনো এলাকায় থাকলে সে এলাকা ভালো থাকতে পারে না। আমরা মাদক কারবারি কামালের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।
তবে অভিযুক্ত কামালের ছেলে জানিয়েছেন, বাবাকে বারবার বলার পরও তাকে ফেরানো যায়নি। আর বাড়ি বাবার নয় নিজেদের টাকায় করেছেন বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল হক ডাবলু জানান, স্থানীয় লোকজন কিছু বাংলা মদ উদ্ধার করে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একসময় নওগাঁ শহরের অলিগলিতে প্রতিদিন ভেসে আসত প্যাডেল চালিত রিকশার পরিচিত ‘ক্রিং ক্রিং’ আর ‘টুং টাং’ বেলের শব্দ। সেই রিকশার চাকা ঘুরে চলত শত শত পরিবারের জীবনযাপন। কিন্তু সময়ের পালাবদলে সেই ঐতিহ্য প্রায় বিলুপ্তির পথে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও লাভজনক আয়ের আশায় শহরের প্রায় সব রিকশাচালকই এখন ঝুঁকছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দিকে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রতি ঝুঁকছে চালকরা:
প্যাডেল রিকশায় পরিশ্রম বেশি হলেও আয় কম। পক্ষান্তরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে কম শ্রমে বেশি আয়ের সুযোগ থাকায় অনেকেই বদলে ফেলেছেন পেশার ধরন। ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলে অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
প্যাডেল রিকশার চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন আর প্যাডেলের রিকশায় উঠতে চায় না। তাই বেশির ভাগ সময় অলস বসে থাকতে হয়। আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় হতো, এখন সেটা ৮০-১০০ টাকায় নেমে এসেছে। এত অল্প আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক মিঠু হোসেন জানান, রিকশায় খাটুনি বেশি, অথচ আয় কম। অটোরিকশা চালিয়ে দিনে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। কিস্তিতে কেনা যায় বলেও অনেকের পক্ষে এটি সহজলভ্য।
উৎপাদন বাড়ছে, ব্যয়ও বাড়ছে:
নওগাঁয় বর্তমানে প্রায় ৫০টি কারখানায় প্রতি মাসে গড়ে ২৫০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তৈরি হচ্ছে। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে অনেক গুণ। রড ও শিটের দাম বিগত দুই বছরে বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ।
শরিফুল ইসলাম নামের একজন কারখানা মালিক জানান, একটি অটোরিকশার ফ্রেম বা বডি তৈরিতে খরচ পড়ে অন্তত ৮০ হাজার টাকা। ব্যাটারিসহ পুরো অটোরিকশার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অনেক সময় এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কাজ করতে হয়, কারণ ব্যাংক ঋণ পেতে হলে জমি বা ঘরের কাগজ লাগে, যা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত:
নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাহিদা বাড়ায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারখানার সংখ্যাও বেড়েছে। শিল্প সম্ভাবনা আরও বাড়াতে কারিগরি প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে বিসিক।’
হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য:
যেখানে এক সময় অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে একমাত্র ভরসা ছিল প্যাডেল চালিত রিকশা, সেখানে এখন তা অতীত হতে চলেছে। শহরে বর্তমানে হাতে গোনা মাত্র ৩টি প্যাডেল রিকশা দেখা যায়, যার চালকরাও অধিকাংশই বয়সে প্রবীণ। একসময় যে রিকশাগুলোর নির্মাণে ব্যস্ত ছিল ৫০টিরও বেশি কারখানা, যার মাসিক উৎপাদন ব্যয় প্রায় ২ কোটি টাকা। এখন সেগুলোও ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে স্মৃতিতে।
এক সময়ের অপরিহার্য বাহন হয়তো আগামী প্রজন্মের কাছে রয়ে যাবে কেবল ইতিহাসের পাতায় কিংবা জাদুঘরের প্রদর্শনীতে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিগ ডাটা অ্যানালিটিক্স এবং জলবায়ু পরিবর্তন, রিমোট সেন্সিং ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্ব খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক (কিউনি) এবং সিটি কলেজ অব নিউইয়র্ক (সিসিএনওয়াইর) সাথে কাজ করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ট্রেনিং প্রোগ্রাম, জয়েন্ট ডিগ্রি প্রোগ্রাম, বিভিন্ন ধরনের গবেষণা এবং ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যৌথ এক্সপোজার সফর নিয়ে কাজ করবে দুই বিশ্ববিদ্যালয়।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সম্প্রতি সিটি কলেজ অব নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট বউড্রেউর সাথে এসব বিষয়ে যৌথ অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। এ সময় সিটি কলেজ অব নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট, ডিন ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ ভূগোল, পরিবেশ বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য বিভাগ এবং বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ তৈরি করবে।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে সিটি কলেজ অব নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষের আগ্রহের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই যৌথ অংশীদারিত্ব শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয় বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, উচ্চশিক্ষায় প্রচুর বিনিয়োগ লাগে, যা সরকারের পক্ষে বহন করা কঠিন। তাই উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সাবেক শিক্ষার্থীদের অ্যালামনাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি জানান, সিটি কলেজ অব নিউইয়র্কের সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কলেজের পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব সংস্কার করেছে। সেখানে এখন ফোটন নিয়ে গবেষণা চলছে।
প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য সাবেক শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। তাদের সবাইকে একত্র করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এটি আলোর মুখ দেখবে। এই সংগঠন ভবিষ্যতে দেশের উচ্চশিক্ষায় বড় অবদান রাখবে বলে আশা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের।
মন্তব্য