গাড়িচালকের বাড়িতে বস্তায় বস্তায় নথি রেখেও শেষ রক্ষা হয়নি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের। স্ত্রী রুখমিলা জামানের গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের (৫০) বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৩ বস্তা নথি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব নথিতে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এই পাঁচ দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
রোববার ভোরে কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা শিকলবাহায় গাড়িচালক ইলিয়াসের বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় জাবেদের দুই ‘মাস্টারমাইন্ড’ আরামিট পিএলসির এজিএম উৎপল পাল ও আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে দুদক। আদালতের মঞ্জুর করা পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই অভিযান চালানো হয়।
সেখান থেকে ২৩ বস্তা নথি জব্দ করা হয়। এসব নথিতে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের তথ্য পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে তার সম্পদের তথ্য পেয়েছিলাম। আজ (রোববার) আরও পাঁচটি দেশের পেয়েছি। আমরা অভিযানে বিপুল পরিমাণ নথি জব্দ করেছি। সেগুলো এখনো সব যাচাই-বাছাই করতে পারিনি। যাচাই-বাছাইয়ের পর আরও তথ্য পেতে পারি।’
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। তার বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।
ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি
এদিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিশ’ জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আবদুর রহমান এ আদেশ দিয়েছেন। বিদেশে থাকা ৫৮২টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি হস্তান্তর ঠেকাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোকাররম হোসাইন জানান, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে জাবেদ ও তার স্ত্রী এসব ফ্ল্যাট-বাড়ি বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন বলে দুদক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। হস্তান্তর ঠেকাতে জাবেদ ও তার স্ত্রীর নামে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়।
তিনি বলেন, আবেদনটি আদালত মঞ্জুর করেছেন। এখন এটি পুলিশ সদরদপ্তরে যাবে। সেখান থেকে পুলিশ ইন্টারপোল বরাবর রেড নোটিশ জারির আবেদন করবে।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে-১ একটি মামলা করেন। মামলায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় দুদক গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদনটি করেছিল। আদালত প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। তার বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) এর নিজস্ব অর্থায়নে দুটি আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্যে বিএসসি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি এর মধ্যে জাহাজ সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেল আয়োজিত এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে দেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে এটি একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। নতুন দুই জাহাজ বিএসসিতে যুক্ত হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা আয় বাড়বে। বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা প্রায় ১,২০,০০০ ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপিংয়ের সম্মান অর্জন করবে।
বিএসসির বহরে যুক্ত হতে যাওয়া জাহাজগুলোতে- জ্বালানি খরচ হ্রাস ও পরিচালন দক্ষতা বেশি; প্রধান ইঞ্জিন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরিবেশ দুষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়; নকশা ও প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ডসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার নির্ধারিত সর্বশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে। জাহাজে উচ্চমানের ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান লাইসেন্সে জাহাজগুলো চীনে উৎপাদন করা হয়েছে। স্পেনের পাম্প ও নরওয়ের কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রথম জাহাজ অক্টোবর ২০২৫ এবং দ্বিতীয় জাহাজ ডিসেম্বর ২০২৫-এ বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির জন্য আরেও তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে বিএসসির জন্য পাঁচটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন এই জাহাজগুলো যুক্ত হলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন কেবল আয়ের দিক থেকেই লাভবান হবে না, বরং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাজারে ‘গ্রিন শিপিং নেশন’ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবধরনের সবজির দামই নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বর্তমানে নবীনগর সদর বাজারে শিম প্রতি কেজি ২২০-২৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০-২২০ টাকা, টমেটো ১১০-১২০ টাকা, উস্তে ৯০-১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, পটল ৮০-৮৫ টাকা, বরবটি ৬৫-৭০ টাকা, কাকরোল ৮০-৯০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, মুলা ৬০-৬৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬৫-৮০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কচুর মুখি ৪০ টাকা এবং আলু ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম কাঁচামরিচ ও শিমের।
সবজির দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নবীনগর সদর বাজারে আসা ক্রেতা আলম মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের আয় সীমিত। এত দামে বাজার করা অসম্ভব। বাজেট ভেঙে গেছে।’ তবে স্বস্তির বিষয় হলো- আলুর দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালে রয়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাদের দাবি- মূলত পাইকারি বাজারের উপর নির্ভর করেই সবজির দাম ওঠানামা করে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে মরিচ ও সিমের উৎপাদন কমেছে। তাই সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কিছু কাঁচামরিচ ভারত থেকেও আমদানি করা হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরবরাহ চেইনে ত্রুটি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজির দাম বেড়েছে। তারা মনে করেন, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষ্যে ফেনী শহরে আনন্দমুখর শান্তির পদযাত্রা হয়েছে। ‘সংঘাত নয়, শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার শহরের ভাষা শহীদ সালাম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বেলুন উড়িয়ে পদযাত্রার উদ্বোধন করেন।
পিএফজি সমন্বয়ক মোরশেদ হোসেনের পরিচালনায় বর্ণাঢ্য আয়োজন করে পিস ফ্যাসিলেটেটর গ্রুপ (পিএফজি) ও ইয়ুথ পিস অ্যাম্বাসেডর গ্রুপ (ওয়াইপিএজি)। পদযাত্রার অগ্রভাগে নারী নেত্রী নুর তানজিলা রহমান, মাওলানা আরফান উদ্দিন, পুরোহিত নারায়ন চক্রবর্তী, ফেনী ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সভাপতি দিলু সরকার, বৌদ্ধধর্মের গুরু প্রীতিময় ভিক্ষুর অংশগ্রহণ সম্প্রীতির বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠে।
পদযাত্রায় নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মলয় কান্তি সাহা, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান মেহেবুব, জামায়াতের জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, ফেনী ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব ও সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক জেলা কমিটির সদস্য ডা. তবারক উল্যাহ চৌধুরী বায়েজীদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন খান, জেলা মহিলা দল সভাপতি জুলেখা আক্তার ডেইজী, জামায়াতের জেলা প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আবদুর রহীম, এবি পার্টির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম বাদল, জেলা সভাপতি আহসান উল্যাহ, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া ও একেএম আবদুর রহীম, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি শুকদেব নাথ তপন ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট পার্থ পাল চৌধুরী প্রমুখ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস শান্তি-সম্প্রীতির। আবহমানকাল থেকে দেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রে বসবাস করছে। আমরা চাই সকল শ্রেণি-পেশার সকল ধর্মের এবং সকল স্তরের মানুষ একত্রিতভাবে কাজ করুন। নাগরিকের যে দায়িত্ব বা অধিকার সবাই পালন করুন।’
শারদীয় দুর্গাপূজার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। পূজার আমেজ ঘনিয়ে আসতেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শুরু হয়েছে উৎসবের কেনাকাটার ধুম। শহরের বড় বড় বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান পর্যন্ত এখন জমজমাট কেনাবেচা চলছে। পূজাকে ঘিরে বাজারগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
রোববার সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিভিন্ন বিপণীবিতানগুলো ঘুরে দেখা যায়, পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, ইমিটেশনের গয়না ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। বিপণিবিতানের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ছিল নিম্নবিত্ত মানুষের চোখে পড়ার মতো আনাগোনা।
ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। তারা জানান, শেষ সময়ে ভিড় এড়াতে আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।
ভুড়ভুড়িয়া চা-বাগান থেকে শপিং করতে আসা দিপা ভৌমিক জানান, ‘দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছরই পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক ও উপহার কিনি। এবারও পরিবারের সবাইকে নিয়ে মার্কেটে এসেছি।’
কেনাকাটা করতে আসা রুপন নামের এক ক্রেতা জানান, ‘পূজাকে ঘিরে তার রয়েছে বিশেষ উচ্ছ্বাস। শেষ মুহূর্তের ভিড় আর হুড়োহুড়ি এড়াতেই এখনই কেনাকাটা সেরে নিচ্ছি। আসলে পূজার আনন্দ কেবল মণ্ডপে ঘোরাঘুরিতেই সীমাবদ্ধ নয়, কেনাকাটার মধ্যেও থাকে উৎসবের আসল রঙ। এ মুহূর্তে বাজারে ভিড় তুলনামূলক কম, তাই স্বাচ্ছন্দ্যে পছন্দমতো জিনিস কেনা যাচ্ছে। তবে কয়েকদিন পর যখন মানুষের ঢল নামবে, তখন এভাবে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করা আর সম্ভব হবে না।’
অন্যদিকে শহরের স্বর্ণ অলঙ্কারের দোকানগুলোতেও বিক্রি বাড়ছে সমানতালে। নারীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন চুড়ি, মালা, আংটি, গলার হার ও প্রসাধনী সামগ্রী। বিক্রেতা পঞ্চম হাজরা জানান, পোশাকের পাশাপাশি মেয়েদের স্বর্ন অলঙ্কার, সিঁদুর ও অন্যান্য অনুষঙ্গের চাহিদাও বেড়েছে।
স্টেশন রোডের মদিনা মার্কেটের ‘গীতাশ্রী বস্ত্রালয়ের বিক্রেতা লিটন অধিকারী জানান, ‘এবার ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ডিজাইনের কামিজ, কুর্তি, থ্রি পিছ, ঘের দেওয়া জামা, বিভিন্ন ধরনের থানকাপড় ও নারীদের জন্য জামদানীসহ বিভিন্ন ধরনের বেনারশী সফট কাতান, তসর, বিভিন্ন ধরণের সিল্ক শাড়ি, জর্জেট শাড়ি, হাফসিল্ক, দুপিয়ান শাড়ি এবং দেশি তাঁতের শাড়িও এনেছি। আজ ক্রেতা সমাগম অনেক বেশি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আশা করছি, এ বছর ব্যবসা বেশ সফল হবে।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘আমাদের চা শ্রমিকদের পূজার কেনাকাটা এখনও শুরু হয়নি। আজ সোমবারে চা বাগানগুলোতে উৎসব ভাতা-বোনাস পাওয়ার পর চা শ্রমিকরা পূজার কেনাকাটা করবেন।’
শহরের বিপণিবিতান ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে এখন বইছে উৎসবের হাওয়া। পূজার দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। জমে উঠেছে শ্রীমঙ্গলের শারদীয় দুর্গাপূজার কেনাকাটা।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পূজামন্ডপ, বিপণিবিতান ও জনসমাগমস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। আমরা চাই, পূজা ঘিরে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অশান্তির ঘটনা না ঘটে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসলাম উদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আসন্ন দুর্গাপূজাকে ঘিরে শহরের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ নজরদারি রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা তৎপর। পূজার সময় যাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে কেনাকাটা ও উৎসব পালন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সকল ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে মানব কল্যাণ, শান্তি ও দেশপ্রেম। তিনি আজ রবিবার ( ২১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশান- বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন কর্তৃক শুভ মহালয়া ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সকল ধর্মই আমাদেরকে অন্যায়, অবিচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা যোগায়। আমাদেরকে আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়। মানবসেবা ও দেশাত্মবোধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আবহমানকাল ধরে শারদীয় দুর্গাপূজা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়ে আসছে। এটি শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, বাংলাদেশের সকলের উৎসব। এ উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে মানুষে মানুষে নিবিড় বন্ধন রচিত হয়, সমাজের সকল মানবসৃষ্ট ভেদাভেদ, বৈষম্য দূরীভূত হয় এবং সকলের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরিত হয়।
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টা সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীকে উষ্ণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব দেশব্যাপী আনন্দমুখর পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন । একই সাথে দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে যেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহল অপচেষ্টা চালাতে না পারে সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে গুলশান- বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন এর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আছিম পাটুলি ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ী লাঙ্গল শিমুল পাকা রাস্তা ভায়া শ্রীফুলিয়া রাস্তার নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
জানাগেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮১ টাকা বরাদ্দে জঙ্গলবাড়ী লাঙ্গল শিমুল পাকা রাস্তা ভায়া শ্রীফুলিয়া ৬১১ মিটার রাস্তার কার্যাদেশ পায় ফাহাদ এন্টারপ্রাইজ নামীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি মোতাবেক ২০২৪ সালের ২৯ জুন কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়েও কাজ সমাপ্ত করেননি প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণ সংক্রান্তে সময় বাড়িয়েও যথাসময়ে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্থানীয়রা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। যার দরুন দ্রুত কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত ৬ মে ঠিকাদারকে লিখিত চিঠি দিয়ে অবহিত করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, এ প্রকল্পের রাস্তায় কোন সাইনবোর্ড নেই। রাস্তার শুরুতেই নিচু জায়গাতে মাটি ভরাট না করায় পুকুরের পানি ও রাস্তা প্রায় একাকার হওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে। পুকুরে প্যালাসাইডিং থাকলেও সেগুলোও তলিয়ে গেছে। ডব্লিউ বিএম (মেকাডম) এর কাজে উন্নত মানের পিকেট ইট ব্যবহার না করে নাম্বারহীন ইটের খোয়া দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তার কাজে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজে শুরু থেকেই অনিয়ম করছেন। মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা মানেনি। এছাড়ও এএস (এগ্রিগেট সেন্ট) এ খোয়া বালির মিশ্রিত লেয়ারেও নিম্নমানের কাজ করা হয়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও তাদের ভূমিকা অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ বলেও জানায় এলাকাবাসী।
শিক্ষার্থী শুভ ও ইফাদ বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়ম রুখে দিতেই আমরা জুলাই আন্দোলন করেছি, আমাদের এ সামান্যতম রাস্তাতেও সেই অনিয়মই করা হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখ জনক। ঠিকাদারের অনিয়ম নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তিনি কাজ বন্ধ করে দেন।
ইয়াহইয়া হাসান বলেন, রাস্তার নির্মাণ কাজে প্রথম থেকেই অনিয়ম করা হচ্ছে। কেউ কিছু বললে ঠিকাদার কাজ অফ করে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই আচরণ করে আমাদের ভোগাচ্ছেন। রাস্তার তদারকির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব সাহেবও ঠিকাদারের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। তিনি কাজের মান নিয়ে কোন কিছু না বলার কথাও বলেন। তবে তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান জানান তিনি এলাকার লোকজনকে কিছুই বলেননি।
অধ্যক্ষ মাওলানা ইসমাইল হোসেন বলেন, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় আমরা প্রতিবাদ করি। যার ফলে ঠিকাদার রাস্তার কাজ ফেলে রেখে চলে গেছে। সেইসাথে তিনি এ রাস্তার কাজ করবেন না বলে হুমকি দেন । এর আগওে তার অনিয়ম নিয়ে কথা বললে তিনি সেইম আচরণ করেন। ঠিকাদারের কারণে গত দুই বছর ধরে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কথা বললেই কাজ বন্ধ করে দেয়।
রমজান আলী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। কেউ কথা কইলেই কাজ না করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে আবার কাজ শুরু করে। তিনি একরকম আমাদেরকে ব্ল্যেকমেইল করেই কাজ করতেছেন। মেকাডমের কাজে যেই খোয়া দিচ্ছে তা স্থানীয় ভাটার ফেলে দেওয়া খোয়া। পা দিয়ে চাপা দিলেই তা ভেঙ্গে যায়। উর্ধ্বতন কর্তৃপপক্ষ যদি রিপোর্ট দেয় ঠিকাদারের কাজ সিডিউল মাফিক হচ্ছে তাহলে আমাদের আর কোন কথা নেই। তিনি কাজের অনিয়ম বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মোতালেব মিয়া বলেন, কাজের সিডিউলে রাস্তার নিচু যায়গায় ভরাট করতে প্রায় ৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে। ঠিকাদার বাহির থেকে কোন মাটিই আনেননি। বরংচ নিচু জায়গায় নিচু রেখেই রাস্তার কাজ শুরু করেছেন। ঠিকাদারের অনিয়মই যেনো এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এবিষয়ে ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্ষা থাকায় সিরামিক্সের ইট নিতে পারেননি, তাই লোকাল ভাটার খোয়া নেওয়া হয়েছিল। বর্ষা উঠলেই মাটির কাজ ও সিরামিক্সের ইট দিয়েই কাজ করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন জানান, ঠিকাদারকে মাটির কাজ শেষ করে রাস্তার কাজ করতে বলেছি। অতিদ্রুত নিম্নমাণের খোয়াগুলো রাস্তা থেকে সরিয়ে ভালো খোয়া দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য