চট্টগ্রামে অভিযানেও থামছে না ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরি ও বিক্রি। এমনকি মানুষের মরণব্যাধি রোগ প্রতিরোধকারী মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। মুনাফালোভী কিছু অসাধু চক্র ও খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করে বাজারজাত করছে। মানহীন এসব খাবার তৈরিতে তারা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও সোডাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করে, যা ওই খাদ্যের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে লিভার ও কিডনি নষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এছাড়া ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও থাকছে। জরিমানার পরও এসব চক্রের সদস্যরা ফের যুক্ত হচ্ছে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযানের পরে শাস্তি পাওয়া ওই ব্যবসায়িকে ফলোআপে রাখতে হবে। এছাড়া এসব অপরাধের জন্য শাস্তির পরিমানও বাড়াতে হবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবর) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের দৈনিক বাংলাকে বলেন, অতি মুনাফালাভের কারণে ব্যবসায়ীরা বারবার একই অপরাধ করে থাকেন। তাই অভিযানের পর জরিমানা বা শাস্তি পাওয়া প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িকে ফলোআপে রাখতে হবে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যেও পাইকারি ও খুচরা মার্কেটগুলোতে তদারকি বা অভিযান বাড়তে হবে।
তিনি বলেন, অভিযানে কোনো প্রতিষ্ঠানের অপরাধ নজরে আসার পর যে পরিমাণ শাস্তি বা জরিমানা হওয়ার কথা সে পরিমাণ হয় না। যা হয় তা অতি নগণ্য। তাই এসব অতি মুনাফালোভীদের আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তাই শাস্তি বা জরিমানার পরিমাণও বাড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে নতুন নতুন কারখানা হলে সেগুলোর সঠিক তথ্য আমরা পাই না। যার কারণে তারা এ অবৈধ ব্যবসা করার সুযোগ নেয়।
জরিমানার পরও এসব চক্রের সদস্যরা ফের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে তারা সুযোগ নেন। তাই প্রশাসনের সকল স্তর থেকে এদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে সাধারাণ ভোক্তারা উপকৃত হবেন।
অন্যদিকে অনুমোদনহীন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে নগরের বড় বড় ফার্মেসিগুলো। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযানে জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না এদের ভেজাল খাদ্য তৈরি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপচেষ্টা।
গত সোমবার নগরীর বহদ্দারহাট খাজা রোড, মাইজপাড়া এলাকায় সততা প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার নামে এক প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালায়। অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের আড়ালে নকল স্টারিং পাওয়ার অয়ের তৈরি করছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। একই অভিযানে ওই এলাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে জয়নাব মেডিকেল হল ও জননী মেডিসিন হলকে পাঁচ হাজার টাকা কওে জরিমানা করা হয়। এছাড়া আল হাসান নামে এক বেকারি প্রতিষ্ঠানে মেয়াদবিহীন মিষ্টান্ন বিক্রির অপরাধে জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট নগরীর বায়েজিদ থানার চন্দ্রনগর এলাকায় সাদিয়াস কিচেনের কারখানায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ তৈরি, ফ্রিজে কাচা ও রান্নাকৃত খাদ্য একত্রে রাখা, লেবেলবিহীন খাদ্য সংরক্ষণ, রান্নাঘরের পাশে মুরগি পালন, খাদ্যকর্মীদের ইউনিফর্ম না থাকা ও বিভিন্ন লাইসেন্স সনদ দেখাতে না পারায় সাদিয়াস কিচেনকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গত ৯ জুলাই বুধবার নগরের কোতোয়ালি থানাধীন স্টেশন রোড এলাকায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় গুলিস্তান হোটেল ও আজাদী হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায়। এ সময় তেলাপোকার উপদ্রব ও অস্বাস্থ্যকর রান্নাঘরের পরিবেশ, খাদ্যেপচা ডিম ব্যবহার করার দায়ে এ দুই প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিনে ওই এলাকার দুই ফার্মেসিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির দায়ে জরিমানা করা হয়। তবে ভোক্তার অভিযোগ, অভিযান চালালেও থামাতে পারছে না এসব চক্রকে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বৃষ্টি নুনিয়া (২০) নামে এক তরুণী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার উপজেলার পৌর এলাকার সিন্দুরখান রোডের নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। বৃষ্টি ওই এলাকার হীরালাল নুনিয়ার মেয়ে।
শ্রীমঙ্গল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। গত মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সঙ্গে খাবার খেয়ে নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান বৃষ্টি। রাতের কোনো একসময় পরিবারের অজান্তে তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাসার ছাদের মন্দিরের পিলারের সাথে ফাঁস দেন। রাত আড়াইটার দিকে তার মা ডাকতে গেলে কক্ষে তাকে না পেয়ে ছাদে গিয়ে ওই অবস্থায় দেখতে পান এবং পরে পুলিশকে খবর দেন।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
সাতক্ষীরায় পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে আব্দুস সামাদ (৫২) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে তাকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক মাসের সাজা দেওয়া হয়। তিনি সাতক্ষীরা পৌরসভার রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরায় পুলিশের ট্রেইনিং রিক্রুট কনস্টেবল পদের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষার পর আব্দুস সামাদ বেশ কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আব্দুস সামাদকে শহরের সঙ্গীতা মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠানো হয়।
ফটিকছড়ি উপজেলর কাঞ্চন নগর ইউনিয়নে ধুরুং নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে দুইশত বছরের পুরোনো কবরস্থান ও বসতভিটা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধুরুং নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে নদীপাড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে বসতভিটাসহ শতবর্ষী কবরস্থান বিলীন হতে চলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাঞ্চননগর গ্রামের আবদুল হাকিম কেরানীবাড়ী-সংলগ্ন বিশাল কবরস্থানের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা ভেঙে পার্শ্ববর্তী ধুরুং নদীতে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্বনামধন্য ধন্য আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব হজরত অছিউদ্দিন শাহর মাজারও রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান ধুরুং নদীর পাড়ঘেঁষা শতবর্ষী এ কবরস্থানে বছর দুয়েক আগেও শতাধিক কবর ছিল। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা এখানে জিয়ারত করতে আসত।
কিন্তু নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়ে কবরস্থানটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।
এ স্থানটিতে খাল এমনভাবে ভেঙেছে, এখানে যে কিছুদিন আগেও কবরস্থান ছিল, তা বোঝার উপায় নেই। বর্তমানে অনেক কবরের স্মৃতি চিহ্ন পর্যন্ত মুছে গেছে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সাথে কথা হলে তারা নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন প্রভাবশালী একটি মহল নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারনে ভাঙন মাত্রা আগের চাইতে বেড়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপ্রকৌশলী সোহাগ তালুকদার বলেন, নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে বেড়িবাঁধ রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কাঞ্চন নগর ইউপির প্রশাসক মো. নজরুল ইসলম ড্রেজার মেশিন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে বলেন ভাঙনকবলিত কবরস্থানটি শীঘ্রই পরিদর্শন করা হবে।
পঞ্চগড় জেলার সর্বত্র এখন দেখা যাচ্ছে কচুরিপানার ফুল ফুটে থাকার অপূর্ব দৃশ্য। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের পুকুরগুলোতে যেন সৌন্দর্যের নতুন আবেশ ছড়িয়ে দিয়েছে এই বেগুনি রঙের ফুল। শহরের তুলনায় গ্রাম-গঞ্জেই কচুরিপানার ফুল বেশি দেখা যায়।
প্রকৃতিপ্রেমী অনেকে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে কচুরিপানার ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। পুকুরে কচুরিপানার সারি ভেসে থেকে জলে ফুটন্ত ফুলগুলো যেন ছোট ছোট বাগানের মতো দৃশ্য তৈরি করছে। নদীতে কচুরিপানা ভেসে গেলেও পুকুরে থেকে যায় বলে সেখানে ফুল ফোটার সৌন্দর্য অনেক বেশি মনোমুগ্ধকর হয়।
কচুরিপানাকে সাধারণত অনেকে পানি পরিশোধনের কাজে ব্যবহার করেন। তবে বর্ষার এই সময়ে যখন এক সাথে ফুল ফোটে, তখন পুরো পুকুরপাড় রঙিন হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা জানান, গ্রামীণ পরিবেশে এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক বিনোদনের জায়গা তৈরি করে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি ভ্রমণপিপাসুরাও এখন কচুরিপানার ফুল দেখতে আসছেন। পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায় অনেক তরুণ-তরুণীকে। কেউ কেউ বলছেন, ‘প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আমাদের গ্রামবাংলার আসল পরিচয়।’
প্রকৃতিবিদদের মতে, কচুরিপানার ফুল সাধারণত বর্ষা ও শরৎকালে বেশি ফোটে। সূর্যের আলো ও পানির স্থিরতার কারণে পুকুরেই এরা বেশি ফুটে থাকে। যা স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও এক অনন্য দৃশ্য তৈরি করে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, ‘নদীভাঙন রোধে জায়গায় জায়গায় কিছু বালুর বস্তা ও ব্লক ফেলা হয়। কিন্তু এতে কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যায় না। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ফলে ভাঙন রোধের বদলে মানুষ আরও বিপদে পড়ে।’
তিনি অভিযোগ করেন, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙনের শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। অথচ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বুধবার মুন্সীগঞ্জের দিঘিরপাড় বাজারে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. রিপন বলেন, পদ্মা-মেঘনায় অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি পদ্মার তীরে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণকে বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যারা বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হারিয়েছে, তাদের সরকারি জমিতে পুনর্বাসন করা উচিত। এছাড়া বাঁধ নির্মাণ কাজের ধীরগতি, অবৈধ বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ড. রিপন বলেন, দেশে এক বছর ধরে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। ফলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, পানিসম্পদ উপদেষ্টা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেননি, অথচ এটি তার দায়িত্ব ছিল। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। এই কয়েক মাস থাকতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হবে। কুচক্রী মহল চায় দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত না হোক। তবে বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে এবং ইউনূস সরকারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। মানববন্ধনে সর্বস্তরের জনগণ ছাড়াও স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত এবং অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দোয়া অনুষ্ঠান হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দীন খানের সভাপতিত্বে দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদুল হক। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্য সচিব মো. মফিজ উদ্দিনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ নান্নু, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা। এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রবিউল ইসলাম, সিরাজ উদ্দিন মাস্টার, মোজাম্মেল হক, রফিকুল আলম খান, সিরাজ উদ্দিন, কাপাসিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আফজাল হোসাইন, সদস্য সচিব সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাহীন, কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন প্রমুখ। দোয়া অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করেন। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাপাসিয়া উপজেলা মডেল মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান।
দোয়া অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিগত দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপির শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তৎকালীন কাপাসিয়ার কৃতিসন্তান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ মুক্তিযোদ্ধাদের ভবন নির্মাণের জন্য ইট এবং টাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তখন দায়িত্বশীলরা তা লুটপাট করে খেয়েছে। তারপর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিন পর একটি সুষ্ঠু পরিবেশে মুক্তিযোদ্ধারা একত্র হতে পেরে তারা অত্যন্ত খুশি। দীর্ঘ ৭ বছর যাবত নতুন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করে ভবনটি উপজেলা ডায়াবেটিস সেন্টারকে ভাড়ার ভিত্তিতে দেওয়ার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট গাজীপুর জেলা কমান্ড ৭ সদস্যবিশিষ্ট কাপাসিয়া উপজেলা কমান্ড আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।
কখনো কি শুনেছেন, প্রজার ভয়ে রাজা নিরুদ্দেশ? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এমন ঘটনাই ঘটেছিল নওগাঁয়।
সদর উপজেলার দুবলহাটির জমিদার রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে সাধারণ কৃষকদের পক্ষ নিয়ে এক সাহসী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন আস্তান মোল্লা। তিনিই আজ নওগাঁবাসীর কাছে কৃষক বিদ্রোহের কিংবদন্তি। জমিদারের অত্যাচার ছিল সীমাহীন। অতিরিক্ত খাজনা, জোরপূর্বক ফসল ও গৃহপালিত পশু ছিনিয়ে নেওয়া, এমনকি সুন্দরী মেয়েদের অপহরণ-প্রজাদের ওপর একের পর এক নিপীড়ন চলতো। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রজারা এসব নিপীড়নের শিকার হতো। এমন এক সময়, সমাজে আবির্ভাব ঘটে আস্তান মোল্লার-যিনি প্রজাদের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
প্রচলিত আছে, ১৮৯৩ সালে রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫০-৬০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার কৃষককে সংগঠিত করে বিদ্রোহ গড়ে তোলেন আস্তান মোল্লা। তার নেতৃত্বে সাত বছরব্যাপী চলা এই আন্দোলনের ফলে জমিদারকে খাজনা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। ১৯৩২ সালে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ন্যায্যতার দাবি নিয়ে নওগাঁ আদালতে ‘শান্তি মামলা’ করেন, যার রায় যায় কৃষকদের পক্ষে। তদন্তের জন্য সেটেলমেন্ট অফিস থেকে পাঠানো হয় কাজী মাহিউদ্দিন নামে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যিনি কৃষকদের দাবি বৈধ বলে রায় দেন। ফলে জমিদারের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। পরাজয়ের শঙ্কায় রাজা একপর্যায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান, কখনো কলকাতা, কখনো অন্য প্রদেশে। শেষ পর্যন্ত তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন।
জানা যায়, আস্তান মোল্লার জন্ম ১৮৫০ সালে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের হাঁসাইগাড়ী গ্রামে এক কৃষক পরিবারে। তিনি ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে বড়। পিতার নাম ছিল আসফদি মোল্লা। ১৯৪০ সালে ৯০ বছর বয়সে নওগাঁ সদর হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বসতভিটা এখনো গ্রামে রয়েছে, তবে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায়।
ইতিহাস বলছে, রাজা মুসলিম প্রজাদের কোরবানি, গাভী দিয়ে হালচাষ এবং ধর্মীয় অধিকারেও হস্তক্ষেপ করতেন। একবার জমিদারের আত্মীয় শশীভূষণ মাদী ঘোড়ার গাড়িতে চড়লে, আস্তান মোল্লা প্রশ্ন করেছিলেন—"প্রজাদের মাদী গরু দিয়ে হালচাষ নিষিদ্ধ, অথচ আপনি মাদী ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ান কিভাবে?"—প্রশ্ন শুনে শশীভূষণ সটকে পড়েন।
১৯৩১ সালে ভয়াবহ বন্যায় জমি ডুবে গেলে কচুরিপানা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি নদীর বাঁধ কেটে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। জমিদারের বাধার কারণে কেউ সাহস পাচ্ছিল না। তখন আস্তান মোল্লা নিজেই মহকুমা প্রশাসক অন্নদাশংকর রায়কে সঙ্গে নিয়ে প্রজাদের নিয়ে বাঁধ কেটে দেন। পরে সেই বাঁধ নবনির্মাণের সময় উদ্বোধন করেন প্রশাসক নিজেই। এটি ছিল একটি অনন্য উদাহরণ প্রশাসন ও কৃষকের সম্মিলিত প্রয়াসের।
চিরস্মরণীয় বীর:
১৯৯২ সালে তার নামে প্রতিষ্ঠিত হয় “আস্তান মোল্লা কলেজ”। এখানে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স। শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ৫৬ জন।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “তিনি ছিলেন প্রজাদের প্রকৃত বন্ধু, ৭ বছরব্যাপী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি জমিদারের দুঃশাসনের অবসান ঘটান।”
প্রবীণ লেখক আতাউল হক সিদ্দিকী বলেন, “আস্তান মোল্লা ছিলেন সাধারণ কৃষকের প্রতিনিধি। গায়ে ফতুয়া, পরনে লুঙ্গি, মাথায় টুপি, মুখে হালকা দাঁড়ি এভাবেই খালি পায়ে চলাফেরা করতেন। তার সাহসিকতা ও নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়।
স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
স্থানীয় সংগঠন একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম.এম রাসেল জানান, “দুবলহাটির গোয়ালী থেকে কাঠখৈইর পর্যন্ত সড়কটিতে আস্তান মোল্লার জীবনী সংবলিত স্মৃতিফলক স্থাপন করা দরকার, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার অবদানের কথা জানতে পারে।
পরিশেষে বলতে হয়, আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে নওগাঁয় এক কৃষক এসেছিলেন মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে। রাজা পালিয়েছেন, জমিদার শাসন ভেঙেছে, কিন্তু আস্তান মোল্লা থেকে গেছেন মানুষের হৃদয়ে—একটি কৃষক বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে। তার সাহস, নেতৃত্ব, আইনগত লড়াই এবং মানবিক চিন্তার জন্য আজও তিনি নওগাঁবাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় হয়ে আছেন।
মন্তব্য