উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (BNFE) ২০০৫ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্ত বয়স্কদের সাক্ষরতা, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা, জীবনমুখী দক্ষতায় সক্ষম করে তোলা এবং জীবনব্যাপী শিখার সুযোগ সৃষ্টি করা—এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।
রূপকল্প (Vision): শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ ও সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিকরণ।
অভিলক্ষ্য (Mission): বিদ্যালয় বহির্ভূত, ঝরেপড়া ও শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বয়সভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, কার্যকর সাক্ষরতা, প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা এবং সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়তা করা।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো বিএনকিউএফ মানদণ্ড অনুযায়ী প্রাক-বৃত্তিমূলক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে শিক্ষার্থীদের প্রাক-বৃত্তিমূলক স্তরের প্রশিক্ষণ শেষে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব অ্যাসেসরের মূল্যায়ন করা হয় এবং ৮ম শ্রেণি সমমান প্রি-ভোকেশনাল কোর্সের সনদায়ন করা হয়।
সাম্প্রতিক কার্যক্রম
১) আউট অব স্কুল চিলড্রেন কার্যক্রম (২০১৮-২০২৪)
ক) দেশের বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের জন্য নন-ফরমাল প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
খ) ১০ লক্ষ শিশুকে পুনরায় মূলধারার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ।
গ) ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে সমাপ্তি ঘোষণা।
২) মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) (ফেব্রুয়ারি ২০১৪-জুন ২০২২)
ক) ১৫-৪৫ বছর বয়সী প্রায় ৪৫ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ককে মৌলিক সাক্ষরতা ও জীবন-দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান।
খ) শিক্ষার্থীদের আয়-উপার্জনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সহায়তা।
৩) বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (SKILFO) পাইলট: (সেপ্টেম্বর ২০২৩-জুন ২০২৫)
ক) কক্সবাজার জেলায় ৬,৮২৫ কিশোর-কিশোরীকে ১৩টি ট্রেডে মৌলিক সাক্ষরতা, গণনা দক্ষতা ও জীবিকায়ন প্রশিক্ষণ।
খ) প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ।
বর্তমান কার্যক্রম
৪. কার্যকর সাক্ষরতা ও ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ (প্রাক-বৃত্তিমূলক পর্যায়) প্রোগ্রাম
দেশের ৬৪ জেলার সদর উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র বিশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘কার্যকর সাক্ষরতা ও ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ (প্রাক-বৃত্তিমূলক পর্যায়)’ শীর্ষক কোর্স বাস্তবায়নে বিভিন্ন কারণে স্কুল হতে ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরীদের (১৫-২৪ বছর ৮ম শ্রেণি উত্তীর্ণ নয়) প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ (BNQF অনুযায়ী NSC Level-1 এর নিচে) প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি জেলায় সর্বোচ্চ চারটি ট্রেডে ৪৬০ ঘণ্টার (১০০ ঘণ্টা লিটারেসি ও ৩৬০ ঘণ্টার স্কিল) প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি জেলায় ৮০ জন করে ৬৪ জেলায় ৫১২০ জন শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে এ প্রশিক্ষণ পাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ক) দেশের ৬৪টি জেলায় সাক্ষরতা ও জীবনদক্ষতা প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ।
খ) আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রামের সম্প্রসারণ করে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা।
গ) Alternative Learning Opportunity for Out of School children (ALO) প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচিত ৬৪টি উপজেলায় বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০-১৪ বছর বয়সী ১৯,২০০ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য ৫ম গ্রেড পর্যন্ত মৌলিক শিক্ষা প্রদান (Back to School) এবং ১৫-২৪ বছর বয়সী ১৯,২০০ জনকে জীবিকায়ন দক্ষতা প্রদান করা হবে।
ঘ) দেশের ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলায় বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (SKILFO) প্রকল্পের বিস্তৃতি, যাতে তিন বছরে ১,০০,০০০ কিশোর-কিশোরীকে দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা প্রদান করা হবে।
ঙ) জীবনব্যাপী শিক্ষা (Lifelong Learning)-এর জন্য উদ্ভাবনী শিক্ষা মডেল চালু করা।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড সম্পর্কিত তথ্য :
২৩ ফাল্গুন ১৪২৩ বঙ্গাব্দ/০৭ মার্চ ২০১৭ ব্রিস্টাব্দ তারিখে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪ এর ধারা ১৬(১) অনুযায়ী ১৩ জন সদস্যের সমন্বয়ে “উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড” গঠন করা হয়। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত প্রাক-বৃত্তিমূলক স্তরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে মূল্যায়ন ও সনদায়ন এই বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলায় বাস্তবায়নকৃত স্কিলফো প্রকল্পের ৬৮২৫ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ও মূল্যায়নের কাজ এই বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত শিক্ষার্থীদের সনদায়নের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন অকুপেশনে নিজস্ব সনদায়িত অ্যাসেসর রয়েছেন ৫৫ জন, মাস্টার ট্রেইনার রয়েছেন ২১ জন, প্রি-ভোকেশনাল ম্যানেজার রয়েছেন ২৫ জন। ভবিষ্যতে এই পরিসর আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে উত্তেজিত জনতা গণধোলাই দিয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বৈরাগীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বেশ কিছু দিন যাবৎ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ১০-১২ জন ছাত্রীকে ক্লাস চলাকালে ডেকে কাছে বসিয়ে শিক্ষক কামাল হোসেন তাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন এবং অশালীন আচরণ করেন। এ সময় তিনি ছাত্রীদের তাদের ‘হিজাব’ খুলে আসতেও বলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
ঘটনার পর ছাত্রীরা বিষয়টি পরিবারের কাছে জানালে অভিভাবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সোমবার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষক কামাল হোসেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে স্থানীয়রা তাকে ঘিরে ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সংবাদ পেয়ে মরিচা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিএনপি সভাপতি সাইদুর রহমান বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষককে অফিস কক্ষ থেকে বের করে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা কামাল হোসেনকে ঘিরে ফেলে এবং তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে গণধোলাই দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শিক্ষক কামাল হোসেন দৌড়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে বৈরাগীর চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তুলে হামলা করেছে। তবে এই ঘটনাটি নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ এলাকাবাসী বসে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি এবং ইতোমধ্যে আমাদের কয়েকজন অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত শেষে যদি দোষ প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ বলেন, ফোনে আমি এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। খবর পাওয়ার পরই আমাদের থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়োন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিভাবক ও স্থানীয়রা দ্রুত বিচার ও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কুমিল্লা নগরের ভাড়া বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তার মায়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
সোমবার সকাল সাতটার দিকে নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরী এলাকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি টের পান নিহতের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহিনুল ইসলাম।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৫২) ও তার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন (২৩)।
নিহত সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে পড়তেন। প্রায় চার বছর ধরে কালিয়াজুরী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তাঁরা। তাহমিনা বেগম দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী।
নিহতের বড় ছেলে আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (ফয়সাল) বলেন, ‘রোববার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে বাসায় এসে দেখি দরজা খোলা। একটি টুল দিয়ে দরজা মিলিয়ে রাখা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করে দেখি লাইট বন্ধ। লাইট অন করতেই দেখি বোনের কক্ষে তার নিথর দেহ পড়ে আছে আর মায়ের কক্ষে মায়ের নিথর দেহ। আমরা জানি না কে বা কারা আমার মা ও বোনকে হত্যা করেছে। আমি সঠিক তদন্ত এবং খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমাদের তেমন কোনো শত্রু ছিল না। কারা এভাবে আমাদেরকে নিঃস্ব করল জানি না।’
পুলিশ জানায়, রাতে নিহত সুমাইয়ার বড় ভাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আজ সকালে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে কীভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। অবস্থা দেখে ধারণা করা হচ্ছে তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আমরা পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। নিহত ব্যক্তিদের বাসায় তেমন কিছু খোয়া যায়নি।’
ওসি আরও বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিদের শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। মেয়েটির গলায় একটি দাগ দেখা গেছে। আর মায়ের একটি চোখ রক্তাক্ত ছিল। যেই ভবনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেই ভবনের নিচতলায় একটি স্কুল ছিল। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি, সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ধরনের উদ্যোগ সাংবাদিকদের পেশাগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। সোমবার (৮ই সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে গ্রুপ বিমা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স পিএলসির সঙ্গে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রায় দুই হাজার সদস্যের মধ্যে বিমা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, বেসরকারি খাতকেও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বিমা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সাংবাদিকদের কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি তিন মাস পরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিককে কল্যাণ অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। উপদেষ্টা জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মপরিধি বাড়ানো হয়েছে।
মাহফুজ আলম বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া লেজিসলেটিভ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নেও সরকার কাজ করছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানে যাঁরা ত্যাগস্বীকার করেছেন, তাঁদের লড়াইয়ের গল্প জনগণের নিকট তুলে ধরতে হবে। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের অবদান গণমাধ্যমে প্রচার করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ, ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজিম উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক দৈনিক বাংলার চতুর্থতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রশাসন, পেশাজীবী সংগঠন থেকে শুরু করে সাংবাদিক কে ছিলোনা এই অনুষ্ঠানে। জমকালো এ অনুষ্ঠানটি যেনো মিলনমেলায় পরিণত হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে গ্রিন গার্ডেনে কেক কেটে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। পরে দৈনিক বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে বক্তারা আলোতপাত করেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সাহসীকতার সাথে সৎ ও স্বচ্চ সাংবাদিকতা করার আহবান জানান তিনি। পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার জন্য উদাত্ত আহবান জানান তিনি। ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা দৈনিক বাংলার কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছোটকালে যখন বাসায় পত্রিকা রাখতেন, তখন বাবাকে দেখতাম দৈনিক বাংলা পত্রিকা রাখতে। ছাত্র জীবনেও বিভিন্ন জায়গায় দৈনিক বাংলা দেখতাম। দৈনিক বাংলা ছিল একটা ব্র্যান্ড। দৈনিক বাংলার নামে এখনো ঢাকায় একটি জায়গার নাম রয়েছে।
তিনি বলেন, দৈনিক বাংলা একটি জাতীয় দৈনিক এবং এই পত্রিকার নিউজের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই আবেগের বসে কোন নিউজ না করে সত্য উদঘাটনমূলক নিউজ করার জন্য জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ আহবান জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক বাংলা পত্রিকার সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি মো. লতিফ আহমেদ আকাশ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য অকিলউদ্দিন ভুইয়া, মো. কবির হোসেন, নুরহোসেন, বাবুল হোসেন, ব্যবসায়ি মোহাম্মদ আলী, মো. রুবেল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ফারহান, সম্রাট আকবরসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধিরা।
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন থেকে একটা সংসদীয় আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রতিবাদে সকাল থেকে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বাগেরহাটের ১৬টি দূরপাল্লার রুট সহ আন্তজেলা কোনো রুটে কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। এদিকে জরুরি প্রয়োজনে যারা পথে নেমেছেন তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। হরতাল চলাকালে জেলা ও উপজেলার সব নির্বাচন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সড়ক মহাসড়কে যানবাহন না চলায় সড়ক পথে মংলা বন্দরের মালা মালামাল নেওয়ার কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংক বীমা ও সরকারি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। থেকে থেকে বিক্ষিপ্ত জনতা সড়কে নেমে এসে পিকেটিং করছে।
সকাল সাতটার পর শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, দশানী মোড়, খান জাহান আলী (রহ.) মাজার মোড়, মুনিগঞ্জ সেতু ও দড়াটানা টোল প্লাজা,মোংলা বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। তবে শহরে সীমিত আকারে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যান চলতে দেখা গেছে। একই অবস্থা চলছে জেলা নয়টি উপজেলা সহ সমুদ্র বন্দর মোংলা এলাকায় এতে করে সারা দেশের সঙ্গে বাগেরহাট ও মংলা বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
হরতালের কারণে শহরের অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জজ আদালতসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত জেলার কোথাও অপ্রিতিকর ঘটনা বা ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়নি।
ইলিশ মাছ রপ্তানি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তাণি ২ শাখার উপসচিব এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়,প্রতিবছরের ন্যায় চলতি ২০২৫ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১,২০০ (এক হাজার দুইশত) মে.টন ইলিশ ভারতে শর্তসাপেক্ষে রপ্তানির জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সে আলোকে আগ্রহী রপ্তানিকারকগণের নিকট হতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে (১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকাল ৫টা পর্যন্ত) হার্ড কপিতে আবেদন আহবান করা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র, মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সসহ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি দাখিল করতে হবে।
প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ১২.৫ মার্কিন ডলার সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে যারা আহবান ব্যতিরেকেই আবেদন করেছেন, তাদেরকেও নতুনভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের কর্মকাণ্ডে এসেছে বহুমুখী সাফল্য। সংস্কার ও বিশেষ কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌ যোগাযোগ সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি রাজস্ব আয়েও হয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি। আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নৌপরিবহন খাতে গত এক বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন, কার্যক্রম ও উন্নয়ন সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে নৌপরিবহন খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট রাজস্ব আয় ৬৫৭৫.৯৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৯.৪০৮% বেশি। একই সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২২২৩.৩৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২১.৮১% বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আয় করেছে ৫২২৭.৫৫ কোটি টাকা, তন্মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ১৭৬১.৯৭ কোটি টাকা । চট্টগ্রাম বন্দর গত অর্থ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ (৩২,৯৬,০৬৭টি) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৪% এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ৬.০৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ২০ বছর যাবৎ পড়ে থাকা ৩৯৭টি গাড়ী অপসারণ করা হয়েছে এবং নিলামযোগ্য ১০ হাজার TEUs কন্টেইনার অপসারণের কার্যক্রম চলমান আছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক কর্তৃক নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেশনে যাওয়ার পর পূর্বের তুলনায় দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সময় এবং ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আন্তর্জাতিক রুটে ৫টি জাহাজ পরিচালনা করে ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে যা বিএসসি’র ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কর্তৃক শেয়ারহোল্ডারদের ২৫% লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থার সংস্কারমূলক কার্যক্রমে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই প্রথম বারের মতো জাইকার কারিগরি সহায়তায় ন্যাশনাল পোর্টস স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা হচ্ছে। ২৮ আগস্ট, ২০২৫ তারিখ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অকার্যকর ৩টি স্থলবন্দর বন্ধ এবং ১টি স্থলবন্দর এর অপারেশনাল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ৩৬৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৯.৮০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে যার মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা। এছাড়াও, কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী হতে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৬৩ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নৌরুটে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের জন্য কিলোমিটার প্রতি নৌরুটের ভাড়া সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সন্দ্বীপ ও হাতিয়াকে নতুন নদীবন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ১৫টি স্থাপনা এবং নৌযানের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। দেশের বিচ্ছিন্ন জনপদ যেমন কুতুবদিয়া, ভাসানচর ইত্যাদি এলাকার সাথে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। চর কুকরিমুকরি, কচ্ছপিয়া, ঢালচর, কলাতলী রুটে নৌ চলাচল চালু করা হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে দুটি আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও তিনটি জাহাজ ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল, নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রায় ২৪৩৮১.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে একনেক কর্তৃক মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য ৬৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
দেশীয় অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরসহ অন্যান্য স্থলবন্দর আধুনিকায়নের ফলে বন্দরের সক্ষমতা, নিরাপত্তা ও কার্যক্রমে গুণগত উন্নয়ন হয়েছে। মোংলায় এবং চট্টগ্রামের মাঝের চরে ফ্রি ইকোনমিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পায়রা বন্দরের অবকাঠামো ও টার্মিনাল নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে; ২০২৬ সালের জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন চালু হবে।
মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প, বিআইডব্লিউটিএ’র মিঠামইন প্রকল্প, বিআইডব্লিউটিএ’র ৩৫ ড্রেজার প্রকল্প, মেরিন একাডেমির সিমুলেটর প্রকল্প, পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিং প্রকল্পসমূহ থেকে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ যাচাই-বাছাইপূর্বক ২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
গত ৫৪ বছরে প্রথমবারের মতো নৌযানের ডাটাবেইজ তৈরির লক্ষ্যে নৌশুমারির জন্য বিবিএস এর সাথে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪ সালের UNCTAD রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাহাজ মালিকদের তালিকায় ৩৫তম স্থান অর্জন করে।
দেশের নৌকেন্দ্রীক পর্যটন সুবিধা বিকশিত করার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পর্যটনের উদ্দেশ্যে ১২৫ বছরের পুরাতন স্টিমার পিএস মাহসুদ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫ জলযান প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীতব্য সী-ট্রাক/ক্রুজ শীপ চালু এবং শিমুলিয়াতে একটি গ্রীণ পোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সেবা সম্প্রসারণে, বাঁশবাড়িয়া (সীতাকুন্ড)-সন্দ্বীপ (গুপ্তছড়া) রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সী-ট্রাক সার্ভিস চালু করা হয়েছে এবং বিভিন্ন নদীপথে নাব্যতা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে গতি সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি, পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে বিশ্বমানের শিপিং কোম্পানি মেডিটেরিনিয়ান শিপিং কোম্পানি (MSC) বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা শিগগিরই দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) হিসেবে যুক্ত হবে।
বিশেষ চুক্তি ও সহযোগিতা ক্ষেত্রে গত এক বছরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মেরিটাইম শিক্ষা ও সার্টিফিকেটের পারস্পরিক স্বীকৃতি চুক্তি এবং ফিলিপাইনের মেরিটাইম একাডেমির সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, এ সময় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন সংস্থায় হাজারেরও অধিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার নাবিকের সাইন অন সম্পন্ন হয়েছে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মেরিন একাডেমি ও মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে জনবল নিয়োগ, অত্যাধুনিক সিমুলেটর সংগ্রহ ও পাঠ্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিমুলিয়ায় একটি ড্রেজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউটি, মাদারীপুরের নিজস্ব ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো নাবিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের জন্য মেরিন একাডেমিগুলোতে স্কলারশিপ চালু করায় বাংলাদেশের সামুদ্রিক শিক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও প্রসারিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ মেয়াদে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের সি-ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনেও (২০২৬-২৭ মেয়াদ) সি-ক্যাটাগরিতে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং আইএমওভুক্ত অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন চেয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
নৌপরিবহন খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং বন্দর ও শিপিং খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি—এসব কার্যক্রম আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে আশাবাদ ব্যক্ত করেদন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য