জয়পুরহাটে ঋণের বোঝা সইতে না পেরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারুক হোসেন নামে এক সহকারী শিক্ষক। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সান্তাহার রেলওয়ে থানাকে জানায়।
নিহত ফারুক হোসেন (৫০) কালাই উপজেলার হারুঞ্জা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি উপজেলার হারুঞ্জা পূর্বপাড়া এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে।
পরিবার জানায়, ফারুক হোসেন দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিস রোগে ভুগছিলেন। একহাত সম্পূর্ণ অবশ থাকায় স্বাভাবিক চলাফেরা করতেও তার কষ্ট হতো। অসুস্থতার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা ও ব্যয়বহুল ওষুধের খরচ চালাতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন এনজিও, সমবায় সমিতি ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে একাধিকবার ঋণ গ্রহণ করেন। অভাব-অনটনের কারণে তার মাসিক বেতনের বেশিরভাগ অংশই কিস্তি ও উচ্চ সুদের ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়ে যেত। ফলে সংসার চালাতে গিয়ে তাকে চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ না দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। গত বুধবার বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির পর বাড়িতে ফিরে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি বাইরে বের হয়ে যান। পরে জয়পুরহাট শহর হয়ে পাঁচবিবি যাওয়ার পথে পুরানাপৈল রেলগেটে গিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন।
নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঋণের বোঝা আর মানসিক চাপ সইতে না পেরে এই পথ বেছে নিয়েছে। এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কিভাবে চলব? ওরা বাবাকে হারাল, আমি স্বামীকে হারালাম।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তামবিরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাপ দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার এবং সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা করে প্রায় এক বছর আগে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পরেও, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার ইসরাইল সরকার গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। জিম্মিদের লাশ হস্তান্তরে হামাসকে চাপ দিতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেলআবিব।
আল জাজিরার সাংবাদিক আলি হার্ব বলেন, সাহায্য বন্ধ করা যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও লঙ্ঘন।
আইসিসির সংবিধান অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য জিনিসপত্র থেকে বঞ্চিত করা নিষিদ্ধ। এরমধ্যে জেনেভা কনভেনশনের অধীনে ত্রাণ সরবরাহে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তাছাড়া, জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসরাইল গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি অবরোধের সময় যুদ্ধের নীতি হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করায়, শিশুদের ওপর এর ভয়ানক প্রভাব পড়েছে। যার ফলে অনাহার, তীব্র অপুষ্টির আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, কলেরা এবং দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অপুষ্টিতে মৃত্যু হারও বেড়েছে।
যুদ্ধবিরতির পরেও, ইসরাইল গাজায় সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে ভূখণ্ডে মানবিক সংকটের জন্য হামাস এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য পক্ষকে দায়ী করেছে তারা।
দেশ গড়ার বড় সুযোগ রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা কর্তৃক এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন৷
মির্জা ফখরুল বলেন, বড় একটা অভ্যুত্থানের পর বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলবার। অথচ আমরা দেখছি রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন। আমরা চারদিকে দেখছি অনৈক্যের সুর। এতে হতাশ হয়ে পড়ছি।
রাজনীতিকে সুন্দর করতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতির মধ্যে যদি সৌন্দর্য না আনা যায়, সততা না আনা যায়, রাজনীতির মধ্যে যদি স্বপ্ন পূরণ করবার ও লক্ষ্যে দৌড় দেবার ইচ্ছা তৈরি করা না যায় -রাজনীতি কখনোই সুন্দর হবে না।
তিনি বলেন, রাজনীতি যদি হয় ব্যক্তিগত স্বার্থে সম্পদ তৈরি করা-তাহলে মানুষের ঘৃণা ছাড়া আর কিছু যুক্ত করতে পারবে না। আর সেটা রাজনীতি সুন্দর করতে পারে না।
অনুষ্ঠানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাব সভাপতি প্রফেসর ডা. সরকার মাহবুব আলম, মোশাররফ হোসেন পুস্তি, মো. মফিজুর রহমান প্রমুখ।
অনলাইন পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত গ্রুপ, অ্যাডমিন ও অর্থ লেনদেনকারী প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
‘টেলিগ্রামে হাজারো তরুণীর নগ্ন ভিডিও বিক্রি’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত রোববার (১৯ অক্টোবর) এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন।
আদেশে ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে একজন চৌকস ও দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারক আদেশে, তদন্তকালে উৎঘাটিত তথ্য ও ঘটনার আলোকে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উভয় সংবাদদাতাকে তদন্তকালে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পরিদর্শক রুকনুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে শনিবার একটি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘টেলিগ্রামে হাজারো তরুণীর নগ্ন ভিডিও বিক্রি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদটি বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। জনস্বার্থ বিবেচনায় এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (১)(সি) ধারায় বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আদালত থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়।
সারা দেশে সাম্প্রতিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাঠপর্যায়ের শিক্ষা অফিসগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক মো. খালিদ হোসেন এ নির্দেশনায় সই করেছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব অধিদপ্তর, দপ্তর, অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার আগে নিজ নিজ রুমের সব বৈদ্যুতিক সুইচ, লাইট, ফ্যান ও কম্পিউটার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এসির প্লাগ খুলে রাখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
নোটিশে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিস ত্যাগের আগে এসব বিষয় যাচাই করে সতর্কতামূলক ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানানো হয়। এটি সরকারি-বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষ, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাউশির সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর এ উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর।
সম্প্রতি মিরপুরের শিয়ালবাড়ির রাসায়নিকের গুদামে আগুনে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার একটি তোয়ালে কারখানায় লাগা আগুন প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। আর সবশেষে গত ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য পে-কমিশন গঠন করেছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে এই কমিশন।
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরু থেকেই সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন কাঠামোর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। নতুন কাঠামোয় শুধু বেতন নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ভাতায় বড় পরিবর্তন আসছে। সেইসঙ্গে জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হলে কিছু সুবিধা বাতিল হতে পারে।
‘সাকল্য বেতন’ বা ‘পারিশ্রমিক’ নামে একটি বিকল্প বেতন কাঠামো গঠনের কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যেখানে বর্তমান কাঠামোর কোনো ভাতা বা আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধা থাকবে না। এই প্রস্তাবিত কাঠামো এরই মধ্যে অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে চালু রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন কমিটির সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে সরকারি কর্মচারীরা যে সম্মানী বা ভাতা নিচ্ছেন, তা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কর্মকর্তারা নিজ নিজ পদের দায়িত্ব পালনের জন্য আলাদাভাবে এই সম্মানী নিচ্ছেন, ফলে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই সুবিধা বাতিলের প্রস্তাবও কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পে-কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে, তা সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। ডিসেম্বরে চলতি বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, পে-কমিশনের গেজেট প্রকাশের ওপর এ বাস্তবায়ন নির্ভর করবে। তবে আগামী বছরের শুরুতে এটি কার্যকর হতে পারে।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। ওই স্কেলের বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তখন সর্বোচ্চ গ্রেড-১-এ মূল বেতন ১৯৫ শতাংশ (৪০ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকা) বাড়ানো হয়। আর সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে ২০১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ হাজার থেকে করা হয় ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
অর্থ আত্মসাতের দুই পৃথক মামলায় ফটিকছড়ির এক সাবেক এনজিও সচিবকে মোট ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখের বেশি টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত।
সোমবার (২০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এই দুটি মামলার রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন ফটিকছড়ি উপজেলার সৈয়দ হাসানুজ্জামান লোটন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, লোটন এনজিও সংস্থার সচিব থাকাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে দুই দফায় অর্থ আত্মসাৎ করেন। প্রথম মামলায় (স্পেশাল মামলা নং ৯/১৪, ফটিকছড়ি থানার মামলা নং ০৯(০৫)০৩) তিনি ৭৯ হাজার ১৭০ টাকা আত্মসাৎ করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় তাঁকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও আত্মসাৎ করা সমপরিমাণ অর্থদণ্ড দেন।
একই দিনে ঘোষিত দ্বিতীয় রায়ে (স্পেশাল মামলা নং ৪/১৪) লোটনকে একই ধারায় আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলায় অভিযোগ ছিল, তিনি এনজিওর সচিব থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন।
প্রথম মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ছিলেন মো. রেজাউল করিম রনি এবং দ্বিতীয় মামলায় পিপি ছিলেন মুহাম্মদ কবির হোসাইন। দুজনেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। রায় ঘোষণার পর আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে কেউ পার পাবে না এই রায় তারই প্রমাণ। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।
আদালত সূত্র আরও জানায়, একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মসাতের একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুটি মামলার নিষ্পত্তি হলো।
বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি কার্গো ওয়ারহাউসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ আমদানি পণ্য পুড়ে গেছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে কয়েক ঘণ্টা পরও ধোঁয়ায় ঢেকে ছিল পুরো এলাকা। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে ততক্ষণে কোটি টাকার পণ্য ভস্মীভূত হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগুনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিভিন্ন সিএনএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্ট ও ক্ষুদ্র আমদানিকারকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পরপরই ওয়ারহাউসের ভেতরে প্রচণ্ড ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ প্রথমে বিষয়টিকে ছোটখাটো শর্ট সার্কিট ভেবে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কেমিক্যাল ও কাপড়ের অংশে পৌঁছালে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ইমুট্রান্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (আমদানি রপ্তানি শাখার ইনচার্জ) হাসান জানান, তাদের চারটি ডকুমেন্টসহ এই ১৩ হাজার ডলারের কনসাইনমেন্টটি পুড়ে গেছে।
তিনি জানান, বড় শিপমেন্ট হওয়ায় এটির ইনস্যুরেন্স করা ছিল।
তিনি বলেন, এতো বড় শিপমেন্ট সাধারণত ইনস্যুরেন্স করা থাকে। তবে ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, এয়ারবিলসহ প্রয়োজনীয় সব নথি আগুনে পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া এখন অনেক জটিল হয়ে গেছে।
হাসান বলেন, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট সাধারণত ইনস্যুরেন্স করা হয় এবং এটি বায়ার বা আমদানিকারকের চাহিদামতোই করা হয়ে থাকে। ইনস্যুরেন্স থাকলে আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানির আইন অনুযায়ী ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তখন এই ক্ষতিপূরণ বহন করে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তাদের বায়ারদের এই ক্ষতির কথা জানানো হয়েছে, তবে এখনো ক্ষতিপূরণ বা ক্লেইম বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশ্ন
রয়্যাল ক্লিয়ারিং হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের মালামালের অবস্থা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারণ সংশ্লিষ্ট সব নথি ও তথ্যসংগ্রহ ব্যবস্থা পুড়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এটি দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল এলাকা। এখান থেকে সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। অথচ এমন স্থানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় এতটা অবহেলা অগ্রহণযোগ্য।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের শুরুতে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা এড়ানো যেত।
তৌফিক আহমেদ নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত এজেন্ট বলেন, আগুন প্রথমে ছোট ছিল, কিন্তু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কেমিক্যালের অংশে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মনে হচ্ছে ওয়ারহাউসে কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।
ওয়ারহাউসটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে বহুদিন ধরেই অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বিপুল পরিমাণ দাহ্য পণ্য সংরক্ষণের পরও এখানে জরুরি ফায়ার এক্সটিংগুইশার, হাইড্রেন্ট বা প্রশিক্ষিত কর্মী ছিল না।
পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি
২০১৩ সালেও একই স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। তখন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি সীমিত ছিল।
পুরোনো কর্মীরা বলছেন, আগের ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবে হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুরোনো কর্মচারী বলেন, তখনও ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভয়াবহ। তখন সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মতো আগুন ছিল। সময় মত বুঝতে পারা এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে তখন এতো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবার দুদিন লেগে গেল।
দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব
অগ্নিকাণ্ডে শুধু পণ্য নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো সিএনএফ কর্মীর জীবিকা। এই খাতে প্রায় ৩০–৪০ হাজার মানুষ দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। কাজ বন্ধ থাকলে আয়ও বন্ধ। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, তদন্ত ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। তবে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, কতটুকু ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেলা ২টা ২০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের সাত ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে শতাধিক আমদানি-রপ্তানি পণ্য, গার্মেন্টসের কাঁচামাল ও বিভিন্ন কনসাইনমেন্ট সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে বিমানবন্দরের পণ্য পরিবহন কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য