চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। পরিদর্শনকালে আহত শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে চমেক হাসপাতালে যান উপদেষ্টা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীকের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও এ সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন। এ ছাড়া তিনি আহতদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশনা দেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এখানে এরূপ সংঘর্ষের ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীদের নতুন কোনো চক্রান্ত বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনুরোধ জানান।’
এ সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) ডা. কাজী সাইফুল ইসলাম আজিম, অতিরিক্ত পরিচালক (ফিন্যান্স) ডা. দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদ আহসান খালিদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়ায় আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষক সমাজ। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির উঠতি ধান, পাট, ভুট্টা, সবজি, কলা ও মরিচের ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যার পানিতে প্রায় সব আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের চোখের সামনে স্বপ্নের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভবিষ্যৎ। বছরের অধিকাংশ খাদ্য চাহিদা পূরণে যে ধানের ওপর চরবাসী নির্ভর করেন, সেই ধান এখন পানির নিচে। বিশেষ করে ধানগাছ ডুবে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। চিলমারী ইউনিয়নের একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে আকস্মিক এই বন্যায় ধান, পাট, ভুট্টা, কলা, সবজি ও মরিচ সব ফসলই ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেননি বলেও জানান তারা। চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পদ্মার চরের প্রায় সব আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা কৃষকদের চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলেছে।’
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সবধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।
এদিকে, কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল করিম জানান, এবারের বন্যায় জেলার মোট ১ হাজার ২৯৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির শিকার হয়েছে। যার মধ্যে দৌলতপুরেই ১ হাজার ১ হেক্টর। কৃষকদের সহায়তায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
বর্তমানে কুষ্টিয়ার বন্যাক্রান্ত কৃষকদের মুখে শুধু একটাই কথা ‘ফসল না উঠলে পরিবার চলবে কীভাবে?’ এ সংকটময় মুহূর্তে কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে জরুরি হয়ে পড়েছে সরকারি সহায়তা, প্রণোদনা ও কৃষি ভর্তুকি।
অবশেষে মারা গেলেন মেহেরপুর জেলা প্রমিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সুস্মিতা খাতুন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুস্মিতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সে মেহেরপুর জেলা নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। সুস্মিতা মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের নাতনি। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টনে জেলা পর্যায়ে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
মাসখানেক আগে ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর পর মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করালে পরে যশোর হাসপাতালে নেয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে যশোর থেকে ঢাকায় নেওয়া হলে সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনের কারণে কিডনিতে জটিলতা দেখা দেয়, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়।
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজি দরের ৩ বস্তা চাল খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগে এক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার উপজেলার কবিরহাট পৌরসভার ঘোষবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওজি উল্যাহ কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের জগদানন্দ গ্রামের মৃত দুধা মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, গত সরকার পতনের পর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের ডিলার নেন বিএনপি নেতা ওজি উল্যাহ। এর পর থেকে স্থানীয় লোকজন তার বিরুদ্ধে কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। পরবর্তীতে গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন তিন বস্তা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল খোলা বাজারে বিক্রির সময় আটক করে। খবর পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। একপর্যায়ে সেখান থেকে ৪৩ বস্তা চাল জব্দ করে ইউনিয়ন সচিবের জিম্মায় রাখে। অভিযোগ রয়েছে, ডিলার ওজি উল্যাহ চাল বিতরণের স্থান পরিবর্তন করে এসব অনিয়ম করে আসছে। সোমরার এ ঘটনায় উপজেলা উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. ছালেহ উদ্দিন বাদী হয়ে কবিরহাট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন।
কবিরহাট থানার ওসি শাহীন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা নেওয়া হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে নোয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদী ও মরা পদ্মায় ছেয়ে গেছে কারেন্ট জাল ও চায়না দোয়ারী। এছাড়াও পদ্মা নদী ও নদীর শাখা খাল বিল ও জলাশয়ে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী শুরু হয়েছে মাছ শিকারের প্রতিযোগিতা। ফলে ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। জানা গেছে, পদ্মা নদী সহ খাল বিলে চায়না দোয়ারী ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ, পোনা মাছ ও ডিমওয়ালা মা মাছ শিকার করা হচ্ছে। এছাড়া সব প্রকার দেশীয় প্রজাতির মাছ, পোকামাকড়, ব্যাঙ, সাপ, কুচিয়া মারা পড়ছে এই সব মরণ ফাঁদে। সেইসঙ্গে রক্ষা পাচ্ছে না বিপন্ন জলজ প্রাণীও। এ কারণে নদীতে বিলুপ্তর পথে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণী।
সচেতন মহলের দাবি, পদ্মা নদীতে অবাধে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করা বন্ধ না করলে আগামীতে নদী থেকে বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও দেশি মাছগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। যা আগামী প্রজন্মের কাছে শুধু ছবিতে ও গল্পেই শোভা পাবে। তারা আরো বলেন, নদীতে তেমন কোন অভিযান হয়না, নদীর আশপাশের যে সমস্ত বাড়ি রয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছে চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল রয়েছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেন না।
একাধিক জেলেরা বলেন, স্থানীয় কিছু অসাধু জেলেদের কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ সহ জলজ প্রাণীগুলো। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে আটকা পড়ে জাটকা ইলিশ, ডিমওয়ালা মা মাছ। যার কারণে ডিম ছাড়তে না পারায় ইলিশ সহ দেশি প্রজাতির মাছ আর দেশে দেখতে পাব না। এসব অবৈধ মাছ শিকার করার মরণ ফাঁদগুলো অতি দ্রুত নদীতে ও হাট বাজারে অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করা প্রয়োজন।
গোয়ালন্দ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়, নদী, খাল বিলে যে সমস্ত অবৈধ জাল ব্যবহিত হচ্ছে তা সম্পন্ন নিষিদ্ধ। এরমধ্যে চায়না দুয়ারী জাল ব্যাপকভাবে ব্যবহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীতে অভিযান দিয়ে চায়না দুয়ারিও কারেন্ট জাল জব্দ করে নদীর পাড়ে জনসম্মুখে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী ব্যবহার যাতে না করে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালের রামপুর এলাকায় চেচুয়া ও গলহর বিলে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। চেচুয়া ও গলহর বিল দুটি এখন যেন রূপকথার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। বিলের চারদিকে ফুটে থাকা হাজারো শাপলা ফুল যেন এক লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী। এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
স্থানীয়দের মতে, বর্ষার সময় ওই বিলের সৌন্দর্য পূর্ণতা পায়। সাদা, লাল এবং গোলাপি শাপলার পাপড়ি সূর্যের আলোয় ঝলমল করে, যা মনকে এক অনাবিল শান্তি এনে দেয়। ভোর সকালে বিলের মধ্য দিয়ে নৌকা বা ডিঙি নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে শাপলা ফুল স্পর্শ করার অভিজ্ঞতা মানুষদেরকে মুগ্ধ করেছে।
স্থানীয়রা বলছে, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। শুধু স্থানীয়রাই নয়, ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। বিলের পাশে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। যেখানে হালকা খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
গলহর বিলের শাপলা ফুল দেখতে আসা শারমিন সুলতানা বলেন ‘শহরে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। এখানকার স্নিগ্ধ ও শান্ত পরিবেশ আমাদের মনকে সতেজ করে তুলেছে। আমি প্রতিবছর ফুলগুলো দেখতে আসি।’
কলেজ শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি শুধু একটি বিল নয়, যেন প্রকৃতির এক অসাধারণ চিত্রকর্ম। আমরা আশা করি, এই সৌন্দর্য চিরকাল টিকে থাকবে।’ পর্যটকদের কাছ থেকে নৌকার ভাড়া বেশি নেওয়ার তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিশোরগঞ্জ থেকে ফুল দেখতে আসা পর্যটক কাঞ্চন মিয়া বলেন ত্রিশালের ওই দুটি বিল প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে একটি সুন্দর সেতুবন্ধনও তৈরি করছে।
মাগুরা এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি আশরাফুজ্জামান হিসাম ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। ২০২৪ সালে মাগুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা বোমা বিস্ফোরণ হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করেন। গত সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে।
আটক আশরাফুজ্জামান হিসাম মাগুরা জেলার পৌর এলাকার জামরুল তলা নিবাসী মৃত আসাদুজ্জামানের ছেলে। হিসাম মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী জানান, গত সোমবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানতে পারে মাগুরা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই আশরাফুজ্জামান হিসাম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়া যাবে। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের একটি দল চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়। সে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গায় আসে। ট্রেন থেকে নামার পর পুলিশ তাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গায় আসে। তিনি আরো জানান, তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ অন্য আইনে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ হিসামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাগুরা সদর থানার নিকট হস্তান্তর করেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) প্রশাসনের ১৪ কর্মকর্তার নিয়োগে বড় অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক তানভীর আহমেদকে এ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো চিঠিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রশাসনিক অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ছাড়পত্র, আবেদনকারীদের তালিকা ও বাছাই কমিটির নথি জমা দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী নেতা, সাংসদ, সচিব ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে কর্মকর্তারা নিয়োগ পান। বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে কর্মকর্তাদের নাম, পদবি এবং টাকার অঙ্ক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাজবির হোসেন সুমন ২০ লাখ, সহকারী রেজিস্ট্রার অ্যানি চক্রবর্তী ২০ লাখ, উপপরিচালক বেল্লাল হোসেন ১২ লাখ, সহকারী পরিচালক রাশেদুল করিম ৮ লাখ, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তুহিন সিকদার ১৮ লাখ, উপপরিচালক রাজিব মিয়া ২০ লাখ, প্রকিউরমেন্ট কর্মকর্তা মশিউর রহমান ১৭ লাখ, ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান ইলিয়াছ ১৮ লাখ, ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ২০ লাখ, সহকারী পরিচালক নাদিমুজ্জামান ১২ লাখ, ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা আখিনুর বেগম ১০ লাখ, সহকারী পরিচালক আবু সুয়েম ১৮ লাখ, টেকনিক্যাল কর্মকর্তা মাধব চন্দ্র দাস ২০ লাখ, উপপরিচালক (অডিট) মনিরুজ্জামান খান রাজনৈতিক কোটা।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকায় প্রশিক্ষণে থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘দুদকের অনুরোধ অনুযায়ী নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে একসঙ্গে অনেক তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে আমরা কিছুটা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি।’
দক্ষিণবঙ্গের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পবিপ্রবি শিক্ষার্থীবান্ধব ও গবেষণায় পেয়েছ সাফল্য। কিন্তু গত আওয়ামী সরকারের সময় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণরা মনে করেন, টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা কখনো যোগ্যতা বা নৈতিকতার প্রতীক হতে পারেন না। এতে একদিকে দক্ষ মানবসম্পদ বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য বাংলাদেশের নতুন কোনো ঘটনা নয়। বরং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের অন্যতম বড় ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব, ঘুষ ও আত্মীয়কোটা। ফলে মেধাবী প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, প্রশাসনিক কাঠামোতে দুর্নীতির শেকড় গভীর হচ্ছে, রাষ্ট্র দক্ষ মানবসম্পদ হারাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না মানসম্মত সেবা ও গবেষণা সহায়তা।
শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ একবাক্যে বলছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। ঘুষ দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
তাদের মতে, শুধু তদন্ত নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া বিকল্প নেই। অন্যথায় মেধা ও নৈতিকতার পরিবর্তে দুর্নীতি ও অর্থশক্তিই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেবে।
পবিপ্রবির নিয়োগ অনিয়মের ঘটনা শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়; বরং বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতের গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। এখনই যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আগামী প্রজন্মের শিক্ষা, গবেষণা ও নৈতিকতা সবকিছুই বিপন্ন হয়ে পড়বে।
মন্তব্য