প্রকৃতিতে এখন ভাদ্র মাস। অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টি। খাল-বিল ও জলাশয় পানিতে পরিপূর্ণ। পানিতে মাছের ঝাঁকের বিচরণ। আর তাইতো জেলে ও শৌখিন মানুষদের পাল্লা দিয়ে চলছে মাছ শিকার।
সর্বত্র বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের ধুম পড়েছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বড়রাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বড়শি ফেলে মাছ ধরছেন। সৌখিন মাছ শিকারিরা বলছেন, বড়শি দিয়ে মাছ শিকার মানে মনের সৌখিনতার পাশাপাশি একঘেয়ামি কর্মজীবনের ক্লান্তি দূর করে মনের উৎফুল্লতার প্রকাশ ঘটানো। এ জন্যই মূলত শখের বশে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে বসেন সৌখিন এসব মাছ শিকারিরা।
উপজেলার বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়ে অন্য বছরের তুলনায় এবছর মাছ শিকারে বেশি আগ্রহী হয়ে নিজের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনসহ বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন সৌখিন এসব মাছ শিকারিরা। পাড়া-মহল্লার শিশু কিশোররাও দীর্ঘসময় ধরে দেখছেন মাছ শিকার করা।
মাছ শিকারিরা জানালেন, বড়শিতে ওঠা মাছ কেউ বিক্রি করেন, কেউ বাড়ি নিয়ে গিয়ে রান্নার পর পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করে খান। বিশেষ ধরনের তৈরি টোপে বড়শিতে ধরাও পড়ে একের পর এক মাছ।
খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে গেলে দেখা মিলছে মাছ শিকারিদের এ উৎসব। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ঝাঁকি জাল, টানা জাল, ঠেলা জাল, বেল, পেতে রাখা জাল, চাঁই, বড়শিসহ আরও নাম না জানা অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলেরা। এই মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চমূল্যে। রাজধানী শহর থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরাই মাছের বড় ক্রেতা। বড়শিতে ধরা পড়ে রুই, কারফু, ছোট কাতল, শোল মাছসহ বিভিন্ন মাঝারি ও বড় প্রজাতির মাছ।
উপজেলার নগরপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা হয় সফিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বর্ষার পানিতে বড়শিতে মাছ ধরতে এসেছেন সাতারকুল থেকে। তাঁর শখ মাছ শিকার। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বড়শিতে মাছ শিকার করেন।
জালাল মিয়া বলেন, বড়শিতে মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ কিছু খাবার। যে খাবারের লোভে মাছেরা বড়শির কাছে আসে খাবারের আশায়। প্রতিদিনই তিনি এক-দুটি করে বড় মাছ শিকার করেন। তবে এতে কষ্টও হয় অনেক।
বড়শিতে মাছ ধরার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য ধরতে শেখা। সারা দিন চলে যাবে মাছ আসবে না, কিন্তু হঠাৎ করেই শেষ বেলায় এসে ধরা দেবে বড় আকারের মাছ, জানান আবুল কাজী।
মো. মোকাম্মেল বলেন, ‘মাছ মাইরাই সংসার চালাই। বাইরা মাস (বর্ষাকাল) আইলে বিলে যখন পানি আসে, তখন ডুলা বইরা মাছ দইরা বাজারে নিয়া বেচি। যে কয় টেহা পাই হেইডা দিয়া সংসার চালাই। হারা বছর এই সময়ডার লাইগাই অপেক্ষা করি।’
রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় জলাশয়-বিলে জলাশয়গুলো ভরে উঠেছে দেশীয় জাতের ছোট-বড় মাছে। উপজেলার বিভিন্ন বিলে দিনরাত মাছ শিকার করছেন জেলে ও শৌখিন মাছ শিকারিরা। জেলেরা এর ওপর নির্ভর করে তাঁদের সংসার চালিয়ে থাকেন। কিন্তু কিছু কিছু অসৎ জেলে চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করায় দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার আজ হুমকির মুখে। বহুবার অভিযান পরিচালনা করেছি। তার পরেও তাঁরা তা ব্যবহার করছেন, যা আইনত দ-নীয়।’
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জলাধার প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার। এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। সুতরাং প্রকৃতিকে রক্ষা করে এর থেকে সর্বোচ্চ সম্পদ আহরণই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজি দরের ৩ বস্তা চাল খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগে এক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার উপজেলার কবিরহাট পৌরসভার ঘোষবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওজি উল্যাহ কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের জগদানন্দ গ্রামের মৃত দুধা মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, গত সরকার পতনের পর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের ডিলার নেন বিএনপি নেতা ওজি উল্যাহ। এর পর থেকে স্থানীয় লোকজন তার বিরুদ্ধে কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। পরবর্তীতে গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন তিন বস্তা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল খোলা বাজারে বিক্রির সময় আটক করে। খবর পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। একপর্যায়ে সেখান থেকে ৪৩ বস্তা চাল জব্দ করে ইউনিয়ন সচিবের জিম্মায় রাখে। অভিযোগ রয়েছে, ডিলার ওজি উল্যাহ চাল বিতরণের স্থান পরিবর্তন করে এসব অনিয়ম করে আসছে। সোমরার এ ঘটনায় উপজেলা উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. ছালেহ উদ্দিন বাদী হয়ে কবিরহাট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন।
কবিরহাট থানার ওসি শাহীন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা নেওয়া হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে নোয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদী ও মরা পদ্মায় ছেয়ে গেছে কারেন্ট জাল ও চায়না দোয়ারী। এছাড়াও পদ্মা নদী ও নদীর শাখা খাল বিল ও জলাশয়ে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী শুরু হয়েছে মাছ শিকারের প্রতিযোগিতা। ফলে ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। জানা গেছে, পদ্মা নদী সহ খাল বিলে চায়না দোয়ারী ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ, পোনা মাছ ও ডিমওয়ালা মা মাছ শিকার করা হচ্ছে। এছাড়া সব প্রকার দেশীয় প্রজাতির মাছ, পোকামাকড়, ব্যাঙ, সাপ, কুচিয়া মারা পড়ছে এই সব মরণ ফাঁদে। সেইসঙ্গে রক্ষা পাচ্ছে না বিপন্ন জলজ প্রাণীও। এ কারণে নদীতে বিলুপ্তর পথে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণী।
সচেতন মহলের দাবি, পদ্মা নদীতে অবাধে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করা বন্ধ না করলে আগামীতে নদী থেকে বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও দেশি মাছগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। যা আগামী প্রজন্মের কাছে শুধু ছবিতে ও গল্পেই শোভা পাবে। তারা আরো বলেন, নদীতে তেমন কোন অভিযান হয়না, নদীর আশপাশের যে সমস্ত বাড়ি রয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছে চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল রয়েছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেন না।
একাধিক জেলেরা বলেন, স্থানীয় কিছু অসাধু জেলেদের কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ সহ জলজ প্রাণীগুলো। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে আটকা পড়ে জাটকা ইলিশ, ডিমওয়ালা মা মাছ। যার কারণে ডিম ছাড়তে না পারায় ইলিশ সহ দেশি প্রজাতির মাছ আর দেশে দেখতে পাব না। এসব অবৈধ মাছ শিকার করার মরণ ফাঁদগুলো অতি দ্রুত নদীতে ও হাট বাজারে অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করা প্রয়োজন।
গোয়ালন্দ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়, নদী, খাল বিলে যে সমস্ত অবৈধ জাল ব্যবহিত হচ্ছে তা সম্পন্ন নিষিদ্ধ। এরমধ্যে চায়না দুয়ারী জাল ব্যাপকভাবে ব্যবহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীতে অভিযান দিয়ে চায়না দুয়ারিও কারেন্ট জাল জব্দ করে নদীর পাড়ে জনসম্মুখে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী ব্যবহার যাতে না করে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালের রামপুর এলাকায় চেচুয়া ও গলহর বিলে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। চেচুয়া ও গলহর বিল দুটি এখন যেন রূপকথার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। বিলের চারদিকে ফুটে থাকা হাজারো শাপলা ফুল যেন এক লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী। এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
স্থানীয়দের মতে, বর্ষার সময় ওই বিলের সৌন্দর্য পূর্ণতা পায়। সাদা, লাল এবং গোলাপি শাপলার পাপড়ি সূর্যের আলোয় ঝলমল করে, যা মনকে এক অনাবিল শান্তি এনে দেয়। ভোর সকালে বিলের মধ্য দিয়ে নৌকা বা ডিঙি নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে শাপলা ফুল স্পর্শ করার অভিজ্ঞতা মানুষদেরকে মুগ্ধ করেছে।
স্থানীয়রা বলছে, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। শুধু স্থানীয়রাই নয়, ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। বিলের পাশে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। যেখানে হালকা খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
গলহর বিলের শাপলা ফুল দেখতে আসা শারমিন সুলতানা বলেন ‘শহরে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। এখানকার স্নিগ্ধ ও শান্ত পরিবেশ আমাদের মনকে সতেজ করে তুলেছে। আমি প্রতিবছর ফুলগুলো দেখতে আসি।’
কলেজ শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি শুধু একটি বিল নয়, যেন প্রকৃতির এক অসাধারণ চিত্রকর্ম। আমরা আশা করি, এই সৌন্দর্য চিরকাল টিকে থাকবে।’ পর্যটকদের কাছ থেকে নৌকার ভাড়া বেশি নেওয়ার তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিশোরগঞ্জ থেকে ফুল দেখতে আসা পর্যটক কাঞ্চন মিয়া বলেন ত্রিশালের ওই দুটি বিল প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে একটি সুন্দর সেতুবন্ধনও তৈরি করছে।
মাগুরা এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি আশরাফুজ্জামান হিসাম ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। ২০২৪ সালে মাগুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা বোমা বিস্ফোরণ হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করেন। গত সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে।
আটক আশরাফুজ্জামান হিসাম মাগুরা জেলার পৌর এলাকার জামরুল তলা নিবাসী মৃত আসাদুজ্জামানের ছেলে। হিসাম মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী জানান, গত সোমবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানতে পারে মাগুরা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই আশরাফুজ্জামান হিসাম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়া যাবে। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের একটি দল চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়। সে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গায় আসে। ট্রেন থেকে নামার পর পুলিশ তাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গায় আসে। তিনি আরো জানান, তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ অন্য আইনে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ হিসামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাগুরা সদর থানার নিকট হস্তান্তর করেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) প্রশাসনের ১৪ কর্মকর্তার নিয়োগে বড় অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক তানভীর আহমেদকে এ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো চিঠিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রশাসনিক অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ছাড়পত্র, আবেদনকারীদের তালিকা ও বাছাই কমিটির নথি জমা দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী নেতা, সাংসদ, সচিব ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে কর্মকর্তারা নিয়োগ পান। বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে কর্মকর্তাদের নাম, পদবি এবং টাকার অঙ্ক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাজবির হোসেন সুমন ২০ লাখ, সহকারী রেজিস্ট্রার অ্যানি চক্রবর্তী ২০ লাখ, উপপরিচালক বেল্লাল হোসেন ১২ লাখ, সহকারী পরিচালক রাশেদুল করিম ৮ লাখ, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তুহিন সিকদার ১৮ লাখ, উপপরিচালক রাজিব মিয়া ২০ লাখ, প্রকিউরমেন্ট কর্মকর্তা মশিউর রহমান ১৭ লাখ, ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান ইলিয়াছ ১৮ লাখ, ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ২০ লাখ, সহকারী পরিচালক নাদিমুজ্জামান ১২ লাখ, ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা আখিনুর বেগম ১০ লাখ, সহকারী পরিচালক আবু সুয়েম ১৮ লাখ, টেকনিক্যাল কর্মকর্তা মাধব চন্দ্র দাস ২০ লাখ, উপপরিচালক (অডিট) মনিরুজ্জামান খান রাজনৈতিক কোটা।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকায় প্রশিক্ষণে থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘দুদকের অনুরোধ অনুযায়ী নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে একসঙ্গে অনেক তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে আমরা কিছুটা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি।’
দক্ষিণবঙ্গের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পবিপ্রবি শিক্ষার্থীবান্ধব ও গবেষণায় পেয়েছ সাফল্য। কিন্তু গত আওয়ামী সরকারের সময় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণরা মনে করেন, টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা কখনো যোগ্যতা বা নৈতিকতার প্রতীক হতে পারেন না। এতে একদিকে দক্ষ মানবসম্পদ বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য বাংলাদেশের নতুন কোনো ঘটনা নয়। বরং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের অন্যতম বড় ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব, ঘুষ ও আত্মীয়কোটা। ফলে মেধাবী প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, প্রশাসনিক কাঠামোতে দুর্নীতির শেকড় গভীর হচ্ছে, রাষ্ট্র দক্ষ মানবসম্পদ হারাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না মানসম্মত সেবা ও গবেষণা সহায়তা।
শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ একবাক্যে বলছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। ঘুষ দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
তাদের মতে, শুধু তদন্ত নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া বিকল্প নেই। অন্যথায় মেধা ও নৈতিকতার পরিবর্তে দুর্নীতি ও অর্থশক্তিই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেবে।
পবিপ্রবির নিয়োগ অনিয়মের ঘটনা শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়; বরং বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতের গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। এখনই যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আগামী প্রজন্মের শিক্ষা, গবেষণা ও নৈতিকতা সবকিছুই বিপন্ন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক পদে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিলেন বর্তমান সভাপতি ও সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সিলেট জেলা স্টেডিয়াম পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, দেশের প্রয়োজনে আরো কাজ করার লক্ষ্যেই তার এই সিদ্ধান্ত। বুলবুল বলেন, ‘অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আমরা নির্বাচন করব। একটা সঠিক নির্বাচন হবে। এখানে সভাপতি নির্বাচিত হয় না, পরিচালকরা নির্বাচিত হন। সেটা প্রথম লক্ষ্য এবং সেখানে থাকার চেষ্টা করব।’
বুলবুল বলেন, ‘দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে আরো বেশি ভূমিকা রাখার ইচ্ছা থেকেই আমি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছি। গত তিন মাস জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। তবে এবার সরাসরি নির্বাচন করেই ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের প্রয়োজনে কাজ করতে চাই।’
এর আগে গত ২৮ আগস্টও দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সে সময় বুলবুল বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত যে ইচ্ছা… আমি হঠাৎ করে এখানে এসেছি এবং একটা দায়িত্ব নিয়েছি। আমার স্থায়ী সব কিছু ছিল (আইসিসিতে)। দেশের জন্য সব ছেড়ে এসেছি। যত দিন সম্ভব দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত আর আমার হাতে নেই।’
আগামী ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন।
ছক্কা, ছক্কা আর ছক্কা…বাংলাদেশ দল এখন প্রচুর ছক্কা মারে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট থেকে একটু দূরে থাকলে কথাটা শুনে একটু খটকাই লাগতে পারে যে কারও। বাংলাদেশ কি সত্যিই এত বেশি ছক্কা মারে যে তা আবার আলাদা করে বলারও মতো? হ্যাঁ, ঘটনা আসলেই তা–ই।
পরিসংখ্যান দেখুন, এ বছর টি–টোয়েন্টিতে ছক্কা মারায় টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে তৃতীয় ২২ ম্যাচে ১০৯ ছক্কা মেরেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ আর পাকিস্তান ২৫ ম্যাচ খেলে মেরেছে ১৩০টি ছক্কা।
দল হিসেবে তো বটেই, বাংলাদেশের এখনকার ব্যাটসম্যানরা ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে ছক্কা মারার রেকর্ডের দিক থেকেও। গত বছর বাংলাদেশ ২৪ ম্যাচে ১২২টা ছক্কা মেরেছিল—সেটিই ছিল কোনো পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো এক শর বেশি ছক্কা মারার ঘটনা। কিন্তু ওই রেকর্ড ভেঙে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপারই বলা যায়। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচেই ১০৯টি ছক্কা মেরেছে বাংলাদেশ। দুই বছর ধরে বাংলাদেশের এত ছক্কা মারার কারিগরদের মধ্যে দুজন তো কাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ছক্কা মারার তালিকার ওপরে ওঠা নিয়ে কাড়াকাড়িই করলেন একরকম!
এক পঞ্জিকাবর্ষে এত দিন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা ছিল জাকের আলির। ২০২৪ সালে ১৭ ইনিংসে ২১ ছক্কা মেরেছিলেন। তাঁর রেকর্ড কাল ফল মেকেরিনের বলে ছক্কা মেরে ভেঙে দেন পারভেজ হোসেন। সেটিই ছিল তাঁর ইনিংসের একমাত্র ছক্কা, এরপর আউট হয়ে যান।
তখনো ক্রিজে তাঁর উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী তানজিদ অপরাজিত। তানজিদ ম্যাচটা শুরু করেছিলেন ২১ ছক্কা নিয়ে, তাঁকেও হাতছানি দিয়ে ডাকছিল রেকর্ড। পারভেজ আউট হওয়ার পর টানা দুই ছক্কায় তাঁকে ছাড়িয়ে যান তানজিদ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনেও আসেন তানজিদ।
তাঁর কাছেই জানতে চাওয়া, ছক্কা মারার পরিকল্পনা নিয়েই কি মাঠে যান? তানজিদের উত্তর, ‘ও আর আমি স্বাভাবিক ব্যাটিং করি উইকেটে গেলে। উইকেট যে রকম আচরণ করে, কীভাবে উইকেট পারমিট করে, সেই অনুযায়ী কীভাবে খেলা যায়, তা ভাবি। দুজনের যোগাযোগটাও ভালো। আর ইন্টেন্টটা ভালো থাকে।’ তানজিদের সঙ্গে পারভেজের জুটিই এখন ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের ভরসা। দুজন একসঙ্গে খেলছেন অনূর্ধ্ব–১৯ পর্যায় থেকেই। এখন তাঁরা জাতীয় দলেও থিতু হয়েছেন। দুজনের মধ্যে রসায়নের কথাটা আলাদা করেও বললেন তানজিদ, ‘দুজনে কথা বলে কী করলে ভালো হয়, কীভাবে পরিকল্পনা করলে, কোন বোলারকে আমরা টার্গেট করব। এ জিনিসগুলো আমার সঙ্গে ওর ভালো কথা হয়।’
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন আক্রমণাত্মক ক্রিকেটকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। যেটির একটা ছাপ তো ছক্কার রেকর্ড দেখেও টের পাওয়া যায়। শরীরী ভাষা আর ক্রিকেটারদের কথাবার্তায়ও তা স্পষ্ট। এখন কি দল হিসেবে বাংলাদেশের ‘ইন্টেন্ট’ বদলে গেছে এই সংস্করণে?
তানজিদের উত্তর, ‘আমাদের পুরো দলকে একদম স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, যে যার মতো খেলতে পারবে। যার যে ভূমিকা আছে, সেটা কীভাবে মাঠে করতে পারে, এই জিনিসটা সবাইকে পরিষ্কার করা আছে দলের পক্ষ থেকে।’
এই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে উন্নতি করতেই নিয়ে আসা হয়েছে পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডকে। ২৮ দিনের চুক্তি শেষে ৩ সেপ্টেম্বর ফিরে যাবেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে ব্যাটসম্যানরা কী শিখলেন, তা স্বাভাবিকভাবেই সবার কৌতূহলের বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তানজিদ এমনিতেই এত ছক্কা মারেন, পাওয়ার হিটিংয়ের কৌশল তাঁর জন্য কার্যকর হওয়ার কথা আরও।
মন্তব্য