কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনের বাফার হুক ও হোস পাইপ ভেঙে ইঞ্জিন থেকে ১৯টি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মাঝপথে বগিগুলো রেখেই চট্টগ্রাম পৌঁছে যায় ইঞ্জিন। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে পটিয়ার কমলমুন্সির হাট স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা পর্যন্ত বগিগুলো রেললাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থেকে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন পাঠানো হয়।
ট্রেনটিতে প্রায় ৯০০ যাত্রী ছিলেন। হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দীর্ঘ সময় ভোগান্তির শিকার হন তারা। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসার পর কমল মুন্সির হাট স্টেশনে পৌঁছালে ইঞ্জিনের বাফার হুক ও হোস পাইপ ভেঙে যায়। এতে বগিগুলো থেকে ইঞ্জিন আলাদা হয়ে যায়। এ সময় চালক ইঞ্জিন নিয়ে চট্টগ্রামের দিকে চলে যান, আর যাত্রীবাহী বগিগুলো স্টেশনেই দাঁড়িয়ে থাকে। পরে বগিগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে রাত ১১টার দিকে পাহাড়তলী থেকে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন পাঠানো হয়।
পটিয়া রেল স্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ পাভেল জানান, উদ্ধারকারী ইঞ্জিন পৌঁছালে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এর আগে, গত ২৬ জুলাই কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড ব্রেক বগির হুক ভেঙে গিয়ে মূল ট্রেন থেকে বগিটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার গোমদণ্ডী স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ৩০ মিনিট ট্রেনটি সেখানে আটকে ছিল। পরে বিচ্ছিন্ন বগি ফেলে মূল ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় রেলওয়ের যান্ত্রিক ত্রুটি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। পরিদর্শনকালে আহত শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে চমেক হাসপাতালে যান উপদেষ্টা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীকের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও এ সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন। এ ছাড়া তিনি আহতদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশনা দেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এখানে এরূপ সংঘর্ষের ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীদের নতুন কোনো চক্রান্ত বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনুরোধ জানান।’
এ সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) ডা. কাজী সাইফুল ইসলাম আজিম, অতিরিক্ত পরিচালক (ফিন্যান্স) ডা. দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদ আহসান খালিদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ভোলার চরফ্যাশনের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় সাতজন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও একজন জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ জেলের নাম মো. মিজানুর রহমান (৩১)। তিনি উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রহিজলের ছেলে।
ট্রলারের মালিক খোরশেদ মাঝি জানান, গত রবিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় আটজন জেলেকে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে বের হন তারা। জাল ফেলার পর সেটি তুলতে গেলে সোমবার রাত ১১ টার দিকে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। পরে অন্য ট্রলারের সহায়তায় সাতজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও মিজানুরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ জেলের খবরে তার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা ও স্বজনরা এখন তাকিয়ে আছেন সাগরের দিকে হয়তো কোনো এক অলৌকিক ভরসায় ফিরবেন তাদের মিজানুর।
সামরাজ ঘাটের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন পাটোয়ারী জানান, বিষয়টি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, খবর পেয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। নিখোঁজ জেলেকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি ঢামেক হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি নুরের শারীরিক অবস্থার ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
মির্জা ফখরুল নুরের চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন এবং দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত করতে চিকিৎসার বিষয়ে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
এ সময় মহাসচিবের সাথে ছিলেন বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন।
এর আগে রাজধানীর কাকরাইলে ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানকে দেখতে গিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। গতকাল রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় দুষ্কৃতিকারীদের হামলার শিকার হন খন্দকার লুৎফর রহমান।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকায় বিষখালী নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে মাটি নিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটার মালিক। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় প্রায় ৬৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের অনুমোদন নেই। অধিকাংশ ভাটা নদীতীরবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠায় মালিকরা নদীর চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত এক মাস ধরে কাকচিড়া ও বাইনচটকি এলাকায় আরএসবি ও আল মামুন এন্টারপ্রাইজের চারটি ইটভাটায় ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। নদী থেকে বেকু দিয়ে মাটি কাটার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, আরএসবি ইটভাটার একটি বার্জে বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ ফুট দূরে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছিল। গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হওয়ায় মাটি কাটা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উসকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভাটা মালিক কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে।
নদীর তীরে গভীর গর্ত করে মাটি তুলে পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রকল্পের নামে মাছ চাষ দেখিয়ে প্রশাসনকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে ভাটা মালিকরা। এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, নদীর তীর থেকে কিসলু মিয়া মাটি কেটে নিচ্ছেন। এতে ভাঙন হলে আমরা গরিব মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাব।
অন্য বাসিন্দা সুজন হাওলাদার জানান, আমাদের এলাকা ভাঙনকবলিত। ভাটা মালিকরা নদীর পাড় কেটে নিলে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে সময় লাগবে না।
এছাড়া, কবরস্থানের জায়গা দখল করে ইটভাটা তৈরির অভিযোগ উঠেছে কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, নদীর তীরের ১৫ থেকে ২০টি কবরের ওপরে ইটের স্তুপ ফেলে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে।
অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. লিটন বলেন, আমরা যে জমি থেকে মাটি নিচ্ছি তা ক্রয়কৃত। এটি সরকারের জমি নয়।
বরগুনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আরএসবি ইটভাটার মালিক আবদুর রাজ্জাক কিসলু দাবি করেন, ‘যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তা রেকর্ডীয় জমি। দলিল ও খতিয়ান দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
তবে পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদীতীর কেটে মাটি নেওয়ায় ভাঙন বাড়ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে পরিবেশ, মৎস্যসম্পদ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নীরবতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ইটভাটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা দ্রুত ইটভাটা উচ্ছেদ ও নদী দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
বরগুনা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক নির্মল কুমার রায় বলেন, ‘নদীর তীর কেটে মাটি নেওয়া হলে তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অভিযান চলছে। কেউ নদীর চর থেকে মাটি কাটায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর উত্তরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মো. ফুয়াদ হাসান হৃদয় (২৫) নামে এক মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৫টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার জসিম উদ্দিন রোড ফ্লাইওভারের ঢালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পরে সকাল সোয়া ৮টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফুয়াদকে মৃত ঘোষণা করেন।
২৫ বছর বয়সী এই যুবক হোসেন গ্রুপে কর্মরত ছিলেন। তিনি নওগাঁ সদরের ফাইজুর রহমানের ছেলে।
রাজীব নামে এক পথচারী জানিয়েছেন, ফ্লাইওভারের ঢালে সিএনজি, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলের চালক ফুয়াদ ছিটকে রাস্তার একপাশে পড়ে যান। তিনিসহ কয়েকজন পথচারী মিলে ফুয়াদকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ফুয়াদের মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ ও বৈশ্বিক ঐক্য ও সহমর্মিতা জরুরি। আমাদের হাতে সীমিত সময় ও সম্পদ রয়েছে, তাই যৌথভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সংকট কেবল টিকে থাকার প্রশ্ন নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও বহু রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথেও জড়িত।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে সুইজারল্যান্ড দূতাবাস আয়োজিত "বায়োফিলিয়া: মানুষ, জলবায়ু ও সংস্কৃতির পুনঃসংযোগ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থান ও বদ্বীপ দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের জনগণ সাহসিকতার সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলা করছে, কিন্তু পর্যাপ্ত প্রশমন কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহায়তা না থাকায় সক্ষমতা বারবার সীমায় এসে ঠেকছে। অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা এখনো প্রত্যাশিত মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে না।
উপদেষ্টা উন্নয়ন সহযোগীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, সহায়তা নীতি পুনর্বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে আরও কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংকট যত বড়ই হোক, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে শক্তি হিসেবে ধারণ করে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে নিয়ে সমাধানের পথে এগিয়ে যাব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স করিন হেনচোজ পিগনানি, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (IFAD)-এর প্রতিনিধি ভ্যালান্টাইন আচাচো এবং বাগেরহাটের শরণখোলার লাবনী আক্তার।
পরে উপদেষ্টা জলবায় ঝুঁকি মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রদর্শনীর জন্য আয়োজিত মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষার্থী ও জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন।
প্রকৃতিতে এখন ভাদ্র মাস। অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টি। খাল-বিল ও জলাশয় পানিতে পরিপূর্ণ। পানিতে মাছের ঝাঁকের বিচরণ। আর তাইতো জেলে ও শৌখিন মানুষদের পাল্লা দিয়ে চলছে মাছ শিকার।
সর্বত্র বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের ধুম পড়েছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বড়রাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বড়শি ফেলে মাছ ধরছেন। সৌখিন মাছ শিকারিরা বলছেন, বড়শি দিয়ে মাছ শিকার মানে মনের সৌখিনতার পাশাপাশি একঘেয়ামি কর্মজীবনের ক্লান্তি দূর করে মনের উৎফুল্লতার প্রকাশ ঘটানো। এ জন্যই মূলত শখের বশে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে বসেন সৌখিন এসব মাছ শিকারিরা।
উপজেলার বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়ে অন্য বছরের তুলনায় এবছর মাছ শিকারে বেশি আগ্রহী হয়ে নিজের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনসহ বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন সৌখিন এসব মাছ শিকারিরা। পাড়া-মহল্লার শিশু কিশোররাও দীর্ঘসময় ধরে দেখছেন মাছ শিকার করা।
মাছ শিকারিরা জানালেন, বড়শিতে ওঠা মাছ কেউ বিক্রি করেন, কেউ বাড়ি নিয়ে গিয়ে রান্নার পর পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করে খান। বিশেষ ধরনের তৈরি টোপে বড়শিতে ধরাও পড়ে একের পর এক মাছ।
খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে গেলে দেখা মিলছে মাছ শিকারিদের এ উৎসব। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ঝাঁকি জাল, টানা জাল, ঠেলা জাল, বেল, পেতে রাখা জাল, চাঁই, বড়শিসহ আরও নাম না জানা অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলেরা। এই মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চমূল্যে। রাজধানী শহর থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরাই মাছের বড় ক্রেতা। বড়শিতে ধরা পড়ে রুই, কারফু, ছোট কাতল, শোল মাছসহ বিভিন্ন মাঝারি ও বড় প্রজাতির মাছ।
উপজেলার নগরপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা হয় সফিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বর্ষার পানিতে বড়শিতে মাছ ধরতে এসেছেন সাতারকুল থেকে। তাঁর শখ মাছ শিকার। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বড়শিতে মাছ শিকার করেন।
জালাল মিয়া বলেন, বড়শিতে মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ কিছু খাবার। যে খাবারের লোভে মাছেরা বড়শির কাছে আসে খাবারের আশায়। প্রতিদিনই তিনি এক-দুটি করে বড় মাছ শিকার করেন। তবে এতে কষ্টও হয় অনেক।
বড়শিতে মাছ ধরার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য ধরতে শেখা। সারা দিন চলে যাবে মাছ আসবে না, কিন্তু হঠাৎ করেই শেষ বেলায় এসে ধরা দেবে বড় আকারের মাছ, জানান আবুল কাজী।
মো. মোকাম্মেল বলেন, ‘মাছ মাইরাই সংসার চালাই। বাইরা মাস (বর্ষাকাল) আইলে বিলে যখন পানি আসে, তখন ডুলা বইরা মাছ দইরা বাজারে নিয়া বেচি। যে কয় টেহা পাই হেইডা দিয়া সংসার চালাই। হারা বছর এই সময়ডার লাইগাই অপেক্ষা করি।’
রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় জলাশয়-বিলে জলাশয়গুলো ভরে উঠেছে দেশীয় জাতের ছোট-বড় মাছে। উপজেলার বিভিন্ন বিলে দিনরাত মাছ শিকার করছেন জেলে ও শৌখিন মাছ শিকারিরা। জেলেরা এর ওপর নির্ভর করে তাঁদের সংসার চালিয়ে থাকেন। কিন্তু কিছু কিছু অসৎ জেলে চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করায় দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার আজ হুমকির মুখে। বহুবার অভিযান পরিচালনা করেছি। তার পরেও তাঁরা তা ব্যবহার করছেন, যা আইনত দ-নীয়।’
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জলাধার প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার। এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। সুতরাং প্রকৃতিকে রক্ষা করে এর থেকে সর্বোচ্চ সম্পদ আহরণই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
মন্তব্য