কেউ কেউ চোখ মুছছেন, কেউবা আঁকড়ে ধরছেন প্রিয় শিক্ষকের হাত, কেউ আবার নিঃশব্দে ফেলছেন অশ্রু। চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে বিদায়ের বিষণ্ণ সুর। আর সেই সুরের মাঝে ফুলের পাঁপড়ি বর্ষণের সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে করে এগিয়ে চলছেন একজন শিক্ষক । এমনই এক আবেগঘন পরিবেশে রাজকীয় বিদায় জানানো হলো আনোয়ারা উপজেলার বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মাওলানা কাজী মো. আবুল কালামকে।
দীর্ঘ ৪১ বছর সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা শেষে কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেন এই বরেণ্য শিক্ষক। শুধু শিক্ষক নন, ছিলেন একজন অভিভাবকতুল্য মানুষ, শিক্ষার্থীদের আদর্শ, সহকর্মীদের প্রেরণার উৎস।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই মাদ্রাসা চত্বরে এক ভিন্ন রকম পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বিদায়ী শিক্ষককে ঘিরে আয়োজিত হয় নানা কর্মসূচি। শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর একে একে হামদ-নাত, আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিদায়ী শিক্ষক মাওলানা কাজী মো. আবুল কালাম ১৯৮৪ সালে আনোয়ারার স্বনামধন্য বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় পাঠদান শুরু করেন। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার নিষ্ঠা, ধর্মীয় জ্ঞান এবং নৈতিক শিক্ষা দিয়ে হাজারও শিক্ষার্থীর জীবন গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। তার হাত ধরে অনেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন।
এমন শিক্ষকের বিদায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জানে আলম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক আমাদের পিতার সমতুল্য। আমার পিতা আমাদের জন্ম দিলেও শিক্ষকরা আমাদের জীবন দিয়েছেন। শিক্ষকদের শাসন আমাদের চলার পথকে মসৃণ করে। আমাদের এই শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর খুব পছন্দের একজন ছিলেন যার কারণে সবাই তার বিদায়ী শোকার্ত।
বিদায়ী শিক্ষক মাওলানা কাজী মো. আবুল কালাম জানান, জীবনের বৃহৎ একটি অংশ এই প্রতিষ্ঠানে কাটিয়েছি। চেষ্টা করেছি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব এবং শিক্ষার্থীদের হক যথাযথভাবে পালন করতে। হয়তো আনুষ্ঠানিক এই প্রতিষ্ঠানে আর ক্লাস নেওয়া হবে না; কিন্তু আমৃত্যু যদি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে থাকতে পারতাম সেটাই হতো আমার জন্য বড় পাওয়া।
বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালক অধ্যক্ষ কাজী মো. আবদুল হান্নান বলেন, আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষক, আমার সহকর্মী দীর্ঘ ৪১ বছর তার শিক্ষকতা জীবন শেষ করেছেন। আমরা চেয়েছি তার বিদায়টা সম্মানজনক করতে। আমার দেখেছি যেসব শিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেয় তাদের একটি ছাতা, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে বিদায় দিত যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং অসম্মানজনক। তাই ব্যতিক্রম কিছু করার প্রয়াস থেকে এই আয়োজন।
এদিন দিনব্যাপী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফেরদৌস হোসেন, প্রধান আলোচক হিসেবে পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ওসমান গণি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অন্যানের মধ্যে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকরা, পরিচালনা কমিটি সদস্য ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড় জেলায় গ্রাম ও শহরে সব জায়গায় তাল ফলের দোকান দেখা যায়। তাল ক্রেতাদের দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। ভাদ্র মাসে তাল ফল গাছে পাকে। দোকানে প্রতি পিছ তাল ফল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা।
চারিদিকে তালের সুমিষ্ট ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘরে ঘরে তালের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায় পঞ্চগড় জেলায়। প্রতিটি বাড়ীতে কমবেশি সবাই এ সময়ে তাল পিঠা তৈরি করে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেয়ে থাকে এবং আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠিয়ে দেন।
তালের সরু চাকলি পিঠা, কলাপাতা পোড়া পিঠা, তালের বড়া, বিবিখানা পিঠা এবং তালের চুষি পিঠার মতো সুস্বাদু পিঠার সহজ রেসিপি তৈরি করা হয়।
চায়ের দোকানে এবং হোটেলে পাওয়া যায় তালের পিঠা, প্রতি পিছ তালের পিঠার দাম ১০ টাকা। সন্ধ্যার পরে বিভন্ন জায়গা থেকে তালে পিঠা খেতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় হোটেল গুলোতে।
রাজমহল পূর্ব বাগান আলিম মাদ্রাসা প্রভাষক মোছা: জারজিস আরা বেগম তিনি জানান, প্রতি বছরেরই পরিবারের জন্য তাল পিঠা তৈরি করে থাকি। তারই ধারাবাহিক হিসেবে এ বছরও তাল পিঠা তৈরি করি। তাল পিঠার তৈরি করার জন্য প্রথমে তাল সংগ্রহ করা হয়, তার পর ফল থেকে রস বের করে সাথে চালের আটা, চিনি অথবা গুড়, নারিকেল মিক্সার করে তেলে ভেজে তালের বিভিন্ন পিঠা তৈরি করা হয়। হালকা ঠান্ডা করে পিঠা খেতে সুস্বাদু। তিনি আরো জানান, ছেলে-মেয়েরা তাল পিঠা খাওয়ার উদ্দেশ্যে নানা-নানীর বাড়ীতে ছুটে যান।
অভাবের সংসারের মাহিন্দ্রা চালক বাবার মেয়ে তন্দ্রা আক্তারী (১৮)। একটি সরকারি চাকরি ছিল তার জন্য দুঃসাধ্য। মাহিন্দ্রা চালক বাবার স্বপ্ন পূরণে আর পরিবারের অস্বচ্ছলতার মাঝে তার যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তার মতো এ বছরে ফরিদপুরে আরও ২২ জন মাত্র ২২০ টাকায় সরকারি ফির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। অস্বচ্ছল পরিবারের বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের সারথি যেন প্রত্যেকেই।
ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে পুলিশের কনস্টেবল পদে ফরিদপুর থেকে ১২১১ জন আবেদন করেন। এরপর প্রতিটি কঠিন ধাপ অতিক্রম করে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩৪৩ জন এবং ২৮ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল জানিয়েছেন- প্রত্যেকেই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে।
তাদের মধ্যে তন্দ্রা আক্তারী একমাত্র নারী কনস্টেবল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সে ফরিদপুর জেলা সদরের ঘনশ্যামপুর গ্রামের তোরাব বিশ্বাসের মেয়ে। তার এমন খবরে হাসি ফুটেছে বাবা-মা সহ আত্মীয়-স্বজনদের মুখে।
আবেগাপ্লুত হয়ে তন্দ্রা আক্তারী বলেন- একজন মাহিন্দ্রা চালকের মেয়ে পুলিশে চাকরি মানে অনেক কিছু। মানুষ বলাবলি করেছিল টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। আমার বাবার পক্ষে ৮/১০ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি দেয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়েছে, মাত্র ২২০ টাকার বিনিময়ে চাকরিটা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে আমার বাবার পাশে দাড়াতে পেরে আমি গর্বিত। গত মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে গিয়ে দেখা যায়, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ২৩ জন একত্রে জড়ো হয়েছে। সেসময় ট্রাক চালক বাবার ছেলে তামীম মন্ডল চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সে জেলা শহরের রঘুনন্দন এলাকার ট্রাক চালক সুমন মন্ডলের ছেলে। মাত্র ২২০ টাকায় চাকরি হওয়ার ও বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প তুলে ধরে সে।
২৩ জনের মধ্যে অধিকাংশের গল্পটা যেন অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের। মৌখিক পরীক্ষায় বন্ধুর পোশাক ধার করে অংশগ্রহণ করেছিল সিয়াম মোল্যা। তার বাবা লাবলু মোল্যা পেশায় একজন কৃষি শ্রমিক। অনুভূতি জানিয়ে সিয়াম বলেন, ছোট সময় থেকে স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করে পড়ালেখা করেছি। তাই আজ আমার মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে, এ সাফল্য আমার বাবার হাত ধরেই পেয়েছি।
এসব বিষয়ে কথা হয় ফরিদপুরের পুলিশ ট্রেইনি কনস্টেবল পদের নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন- পুলিশের নিয়োগে অনেক সময় নানা বিষয় নিয়ে অভিযোগ উঠলেও ফরিদপুরে মেধা, যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে। আমরা কারও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে নিয়োগও দেইনি। যারা নিয়োগ পেয়েছে প্রত্যেকেরই মেধা ও যোগ্যতার অনুসারে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নবাগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মো. নাহিদুল হক গত মঙ্গলবার যোগদান করেছেন। তিনি ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি এর আগে শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। মো. নাহিদুল হক ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। যোগদানের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনীমসহ সুশীল সমাজ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিদুল হক জানান, সরকারি যথাযথ নিয়মনীতি ও ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ভূমি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিতামূলক ও সহজীকরণ সেবা নিশ্চিত করতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন।
জলাবদ্ধতা দূর করতে খালের উপর শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি খাস জমি উদ্ধার করেছে সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রশাসন। এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাত।
জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই থেকে ৩ সেপ্টেম্বর সোনাইমুড়ূী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।প্রায় শতাধিক খালের উপর নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ২ একর ৮০ শতাংশ সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে অবৈধ দখলদার ৭ জনকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নগদ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। খালের উপর প্রায় অর্ধশতাধিক বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা যায়, সোনাইমুড়ী বাজারের জোড়পোল,ম ডেল হাই স্কুল রোড, (নোয়াখালী- ঢাকা) উপজেলা পরিষদের সামনে মহাসড়কের পাশে, আমিশাপাড়া সড়কের পাশে, নান্দিয়া পাড়া বাজার,কাশিপুর বাজার, নদনা ও কালুয়াই এলাকায় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সরকারি খাস জমি উদ্ধার অবৈধ দখলদার মুক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওই খাস জমির ওপর কিছু দুষ্কৃতকারী অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিল।এতে এই এলাকার পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বন্যা দেখা দেয়। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে জেলা প্রশাসক নোয়াখালীর সরাসরি নির্দেশনায় জমি উদ্ধারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাত।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার জানান, উপজেলা নিচু এলাকা হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধা সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন খাল নালায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে ও বাঁধ দিয়ে কিছু অসাধু লোকজন জলাবদ্ধ সৃষ্টি করে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বীন আল জান্নাত বলেন, এ এলাকার মানুষ অত্যন্ত ভালো মনের অধিকারী। অনেকেই বলার পর অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। "সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিটিএলপি)"-এর আওতায় উপজেলার ৪টি প্রান্তিক পরিবারের মাঝে বকনা, ষাঁড় বাছুরসহ গবাদিপশু পালনের বিভিন্ন সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। বুধবার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সহায়তা সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উপকারভোগীদের হাতে সহায়তার সরঞ্জাম তুলে দেন কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকিয়া সরোয়ার লিমা।
প্রকল্পের আওতায় উপজেলার চারটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারকে স্বাবলম্বী করার জন্য বেছে নেওয়া হয়। উপকারভোগীরা হলেন—তুলসী রানী পাল, মানিক পাল, শেখর কুমার চন্দ্র এবং জগু বর্মন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচিত চারটি পরিবারের মধ্যে দুটি পরিবারকে একটি করে বকনা (তরুণী গাভী) এবং বাকি দুটি পরিবারকে একটি করে ষাঁড় বাছুর দেওয়া হয়েছে। গবাদিপশু সঠিকভাবে লালন-পালনের জন্য প্রতিটি পরিবারকে আরও দেওয়া হয়েছে ১২৫ কেজি দানাদার খাদ্য, ৪টি ফ্লোর ম্যাট এবং শেড বা চালা তৈরির জন্য ৫টি টিন ও ৪টি পিলার। এই সমন্বিত সহায়তার উদ্দেশ্য হলো, উপকারভোগীরা যেন কোনো প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পশু পালন শুরু করতে পারেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, "পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করতে সরকার এই বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় বকনা বা ষাঁড় বাছুর পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম সরকারিভাবেই সরবরাহ করা হয়। আমরা আশাবাদী, এই সহায়তার মাধ্যমে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী ধীরে ধীরে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।"
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নওদা জোয়াড়ী ও গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা গ্রামের সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে নওদা জোয়াড়ী ও চাপিলা আঞ্চলিক সড়কে দুই গ্রামের শতাধিক মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বক্তারা জানান, প্রায় ১ হাজার বিঘা আবাদি জমি বছরের পর বছর ধরে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়ে স্থানীয় কৃষকরা দারুণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পাশাপাশি সাম্প্রতিক বর্ষণে পানির স্তর বেড়ে দুই গ্রামের শতাধিক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে যাতায়াত—সবকিছুই এখন ব্যাহত হচ্ছে।
মানববন্ধনে নওদা জোয়াড়ী গ্রামের কৃষক ও জয় কৃষির বাড়ির স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন প্রামানিক বলেন, প্রতিবার বর্ষায় আমাদের জমির ফসল নষ্ট হয়। এবারও প্রায় সাত বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে পারিনি। এখন আবার বাড়িতেও পানি উঠেছে।
চাপিলা গ্রামের গৃহবধূ রহিমা খাতুন বলেন, ঘরের ভেতর হাঁটু সমান পানি জমে আছে। চুলায় রান্না করা যাচ্ছে না। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও কষ্ট হচ্ছে।
আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হলো পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জমি ও বাড়িঘর দুটোই ডুবে যাচ্ছে আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাই।
মানববন্ধনের বিষয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে কুমিল্লা রেঞ্জ পরিদর্শন শেষে আয়োজিত দরবারে বক্তব্য রাখেন। তিনি আনসার-ভিডিপি সদস্যদেরকে নিজস্ব সক্ষমতা ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে জাতির সেবায় আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, যোগ্য সদস্য নির্বাচন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গড়ে তোলার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন এব দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। মহাপরিচালক বাহিনীর নবগৃহীত ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’-কে সুবহৎ এই বাহিনীর বিশাল স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের জীবিকা উন্নয়ন ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থানের এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে উল্লেখ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় আনসার ও ভিডিপির অবদানের কথা স্মরণ করে মহাপরিচালক বলেন, “দেশের পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যদের পাশাপাশি হিল আনসার-ভিডিপি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। সমতলেও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের মান পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি নিবেদিত ও সুশৃঙ্খল।” বাহিনীর শৃঙ্খলার মানোন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাহিনীর শৃঙ্খলা আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।” তিনি আরও জানান, বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অঙ্গীভূত সাধারণ আনসারদের রেশন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাহিনীর সদস্যদের আস্হা অর্জন সংশ্লিষ্ট পেশাদরিত্ব আগামীতে কল্যাণকর পদক্ষেপ গ্রহনের পথকে সুগম করবে, যা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের দায়িত্ব কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়; আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের মাটি ও মানুষের সেবায় ৬০ লক্ষাধিক ভিডিপি সদস্যকে গুণগতভাবে কাজে লাগানো। দুর্যোগ ও জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে সুবৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সদস্যের এই বাহিনীকে সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে ভুমিকা রাখার উদ্যোগই আর্থসামাজিক সমৃদ্ধির মূল পথ।”
সঞ্জীবন প্রকল্প প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, “সঞ্জীবন প্রকল্প কেবল একটি কর্মসূচি নয়, এটি প্রান্তিক কর্মহীন জনগোষ্ঠীর উত্তরনের আলোকবর্তিকা। এ প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতিকে জাগ্রত করবে এবং দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ছিন্ন করে সমাজকে মুক্তির পথে এগিয়ে নেবে।”
উক্ত সভায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কুমিল্লা রেঞ্জ পরিচালক মোঃ মাহবুবুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য