সম্প্রতি চীন সফর শেষে দেশে ফিরেই গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সার্জিস আলমসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
রোববার (৩১ আগস্ট) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরের খোঁজ নিতে যান এনসিপি নেতারা। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে পৌঁছান তারা।
এনসিপি নেতারা নুরের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ সময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিবসহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষের পর আল রাজী টাওয়ারের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন নুরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ঘটনাস্থল থেকে নুরকে উদ্ধার করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ২৩০ জন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল রোববার ২০২৫ সালের সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরবর্তী সময়ে উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসারদের মাধ্যমে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি এবং মৃত বা অযোগ্য ভোটার কর্তন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
ইসি সচিব জানান, এই সময়ে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪২ নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৪ হাজার ১৯২ জন, নারী ৪৩ হাজার ৪৪৪ জন এবং হিজড়া ৬ জন।
অন্যদিকে কর্তন করা হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জন ভোটারকে। এর মধ্যে পুরুষ ৬৫৩ জন এবং নারী ৩৮৫ জন।
নির্বাচন কমিশন আশা করছে, নতুন অন্তর্ভুক্তি ও কর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা আরও নির্ভুল ও হালনাগাদ হবে।
দূষিত বায়ুদূষণ বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫ বছর ৫ মাস কমিয়ে দিচ্ছে। বিষাক্ত বায়ুর এই প্রভাব রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে তীব্র। বায়ুদূষণ এই শহরের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস কমিয়ে দেয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশকে বায়ুদূষণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ হলো আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বহিরাগত হুমকি। বাংলাদেশে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের সবাই এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট দূষণের বার্ষিক গড় মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) এবং দেশের জাতীয় সীমা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়ই ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় এই মাত্রা ৭৬ মাইক্রোগ্রামের ওপরে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে চললে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বেশি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমার সন্দেহ আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে বায়ু দূষণ এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি শনাক্ত করার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি খালি চোখেই দেখা যায়।’
বাংলাদেশের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ‘ধোঁয়াশা’ একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তাদের ঢেকে রাখে এই ‘ধোঁয়াশা’। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো, দূষণ যেগুলো চোখ দেখতে পায় না: কণা পদার্থ, PM2.5 — ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম প্রশস্ত বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণা- এগুলো ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহের গভীরে প্রবেশ করে মারত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে PM2.5-এর মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ই কেবল এই মাত্রা কমেছিল। কিন্তু সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত বছরের AQLI রিপোর্টে, আমাদের গড় আয়ু ৪.৮ বছর কমেছে, এবং এই বছর তা ৫.৫ বছর হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এটি দেখায় যে, রাষ্ট্র তার জনগণের সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেনি, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকারও এই প্রতিবেদনের ফলাফলের সঙ্গে একমত। রাষ্ট্র এখানে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে তালিকাভুক্ত করেন, বিশেষত ইটের জন্য কয়লা বা কাঠ পোড়ানো।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এই যানবাহনগুলোর অনেকগুলো যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলে। এটি বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে। খোলা জায়গায় পোড়ানোসহ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও একটি বড় কারণ।’
সর্বশেষ বায়ুদূষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বছরের শেষ নাগাদ তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কাজটি সহজ নয়, তবুও পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান ব্যবস্থাপনার পরিচালক ড. জিয়াউল হক স্বীকার করেছেন, ‘বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস’ বাংলাদেশের পরিবেশে বিদ্যমান।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা থেকে ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই খাতে আমরা এখনো কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছি না।’
ড. জিয়াউল হক বলেন, ‘যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনব। তাদের কারখানার চুল্লিতে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং আমাদের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্গমনের ফলাফল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করব। ‘বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু’ প্রকল্পের আওতায় আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।’
যদিও দূষণের সমস্ত উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবুও কিছু উৎস এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষণ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ৩৫ শতাংশ বায়ু দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বায়ু দূষণের ২৯ শতাংশই বর্জ্য এবং জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কারণে হয়। আমরা এই সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা সেখানেই আছে।’
সূত্র: আরব নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষ দিকে ভারত সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনাটি তিনি বাতিল করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইনে শনিবার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে এ দাবি করা হয়েছে। কোয়াড সম্মেলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে সফরটির পরিকল্পনা ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণটির নাম ‘দ্য নোবেল প্রাইজ অ্যান্ড আ টেস্টি ফোন কল: হাউ দ্য ট্রাম্প-মোদি রিলেশনশিপ আনরাভেল্ড’ (নোবেল পুরস্কার ও এক তিক্ত ফোনকল: ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কের যেভাবে অবনতি হলো)।
এই বিশ্লেষণে ট্রাম্পের সফরসূচির বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, ‘ট্রাম্প (গত ১৭ জুন ফোনালাপে) মোদিকে বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসবেন। কিন্তু শরতে ট্রাম্পের ভারত সফরের এই পরিকল্পনা এখন আর নেই।’
নিউইয়র্ক টাইমসের এই দাবির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পরদিন কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক আয়োজন করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। সেই বৈঠকেই চলতি বছরের শেষের দিকে ভারতে কোয়াডের শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
কিন্তু গত কয়েক মাসে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এই বিশ্লেষণে ট্রাম্প ও মোদির সম্পর্ক কীভাবে অবনতি হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছিলেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাত বন্ধে তিনি মধ্যস্থতা করেছেন। পাকিস্তান ট্রাম্পের মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করলেও ভারত তা অস্বীকার করে আসছিল। তা সত্ত্বেও গত ১৭ জুন মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্প সেই দাবির পুনরাবৃত্তি করেন। নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, এতে মোদির ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।
এই ফোনালাপের আগে ওই মাসেই কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭–এর শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে মোদি-ট্রাম্প বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প আগেভাগে দেশে ফেরায় তাদের পূর্বনির্ধারিত সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। মূলত এই নির্বারিত বৈঠক না হওয়ায় ১৭ জুন তারা ফোনালাপ করেছিলেন। কিন্তু ৩৫ মিনিটের এই ফোনালাপ দুই নেতার সম্পর্ক ভালো করার পরিবর্তে আরও তিক্ত করেছে।
তবে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার পেছনে ভারতের পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্কও বড় ভূমিকা রেখেছে। গত বৃহস্পতিবার এই শুল্ক কার্যকর শুরু হয়েছে।
দেশে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। আগস্ট মাসে অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। জুলাই মাসে এর সংখ্যা ছিল ৫১। গণপিটুনিতে আগস্টে ২৩ জন নিহত ও ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জুলাই মাসে এমন ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১৬ জন।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) আগস্ট মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
গতকাল রোববার এমএসএফ গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে।
দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজেরা তথ্যানুসন্ধান করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে এমএসএফ।
গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ১০ জনকে চুরির অভিযোগে, ৪ জনকে সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ৩ জনকে ডাকাতির অভিযোগে, ১ নারীসহ ২ জনকে পূর্বশত্রুতার জেরে, ১ জন মাদক মামলার অভিযুক্ত, ২ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ও ১ জনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে হত্যা করা হয়।
সাংবাদিক নির্যাতন
আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে জুলাইয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ১ জন হত্যা এবং ৩৬ জন সাংবাদিক আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৩ জন সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনা ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মানহানির মামলা।
জুলাই মাসে সাংবাদিকদের ওপর ১৯টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন।
আগস্ট মাসে ৩৩টি সাংবাদিক নির্যাতন–সংক্রান্ত ঘটনায় ৭টি বিএনপি, ৬টিতে পুলিশ, ৩টি ঘটনায় শিক্ষক, ৫টি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনী, ২টিতে চোরাকারবারি, ১টি ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলার শিকার, ১টিতে এনজিও, ১টিতে পেশকার, ৪টিতে দুষ্কৃতকারী, ১টিতে পত্রিকা অফিস এবং ২টিতে সাময়িক কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল।
আগস্ট মাসের ৭ তারিখ রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। তার মারা যাওয়া নিশ্চিত হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এমএসএফের সাইদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়নের কোনো ঘটনার প্রতিকার হয় না। প্রতিকার করারও কেউ নেই। গণমাধ্যমকর্মীরা পুলিশের কাছে যেতে পারেন না। আবার স্থানীয়ভাবে কোনো অভিভাবক গোছের কারও কাছে গিয়ে প্রতিকার পাবেন এমন অবস্থাও নেই।
রাজনৈতিক সহিংসতা
আগস্ট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। তাদের মধ্যে দুজন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ এবং সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সহিংসতার ৩৮টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে ২৩টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৫টি, এনসিপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বে ২টি, বিএনপি-এনসিপি দ্বন্দ্বে ১টি, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে ২টি, আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষে ১টি, আওয়ামী লীগ-গণপরিষদ ১টি, জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষের ২টি, গণঅধিকার পরিষদ–পুলিশের ১টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
আগস্ট মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যু কমেনি। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী আগস্টে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল মোট ১০। এ মাসে ৩ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ জন হাজতি, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন হাজতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে ১ জন হাজতি, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ১ জন হাজতি, নড়াইল কারাগারে ১ জন হাজতি এবং রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, রাঙামাটি জেলা কারাগার ও শরীয়তপুর জেলা কারাগারে একজন করে কয়েদি মারা যান।
সংখ্যালঘু নির্যাতন
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের জীবনমান, সহাবস্থান, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তায় সরকার ও প্রশাসনের দ্রুত ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপের অভাবে তাদের ওপর সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের মূলনীতির পরিপন্থি।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট ২টি, ধর্ষণের ১টি, জমি দখলের ঘটনা ১টি, ১টি গুজব এবং ৩টি ঘটনায় কটূক্তির অভিযোগে ৩ জন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর দিকে পরিকল্পনাবিহীন দেয়াল নির্মাণে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতঘর ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা এবং জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ৩টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৪৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
ধর্ষণের শিকার ৪৭ জনের মধ্যে ১১ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী রয়েছে, অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬ জন কিশোরী ও ৯ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন শিশু ও ১ জন কিশোরী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৪টি, যৌন হয়রানি ২১টি, শারীরিক নির্যাতনের ৯৪টি ঘটনা ঘটেছে।
আজ ১ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান শহীদ হন। এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দলের চেয়ারপারসন। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। তিনি ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই দক্ষতার সঙ্গে দল পরিচালনা করছেন তিনি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ছয়টায় বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ করা হবে। জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এতে অংশ নেবেন বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। এদিন দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালি হবে।
দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া এক বাণীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের অধিকার আদায়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই বর্তমানে বিএনপির মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে জনগণকে একত্রিত করার লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। দিনটি বাংলাদেশি মানুষের জন্য আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রেরণার। দলটি দেশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার পরপরই একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সেই সময়ের আওয়ামী শাসন ব্যবস্থায় সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে ১০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তৎকালীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বাকশাল কায়েম করে স্বৈরশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে এবং বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে।
শহীদ জিয়াউর রহমান পুনরায় বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করেন এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি বিগত ৪৭ বছরে কয়েকবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘নানামুখী চক্রান্তের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএনপি অতন্দ্র প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অসংখ্য নেতাকর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
তিনি ৮০’র দশকে ৯ বছরের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির আপসহীন ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দৃঢ় করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি বারবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তাই আজ বিএনপি সমধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দলের আদর্শিক ভিত্তি উদারনীতি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতি উদারপন্থি রাজনীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অগ্রগতি এনেছে। এর ফলে দেশীয় অর্থনীতি শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা অটুট রেখে বিএনপি দেশের সেবায় নিবেদিত থাকবে। যারা দলের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে আইনের শাসন, স্বাধীন মত প্রকাশ, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই বিএনপির অঙ্গীকার।’
তারেক রহমান দেশের গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি রোধেও গুরুত্বারোপ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া গতকাল রোববার পর্যন্ত এই সংঘর্ষে প্রায় ১৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
এক অফিস আদেশে বলা হয়, যেহেতু অদ্য ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টায় স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরস্পর মুখোমুখি ও আক্রমণাত্মক হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে পক্ষসমূহ আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।
সেহেতু, আমি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন, সম্পদ রক্ষা ও শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে অদ্য দুপুর ২টা থেকে ১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করলাম। ওই সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশী অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম। ১৪৪ ধারা জারির পর বিকাল ৪ টায় সংঘর্ষ এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে।
জানা গেছে, গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী ২নং গেটসংলগ্ন এলাকায় রাত ১২টায় বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান মেয়েটিকে মারধর করে। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর নাম সাকিফা খাতুন। এরপর আশেপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তা দেখে এগিয়ে যায়। তখন সেই নারী শিক্ষার্থী তার এক ছেলে বন্ধুকে মুঠোফোনে ডেকে আনলে তাকেও লাঞ্চিত করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
পরে স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য লোকজন জড়ো করার ঘটনা ঘটে। এসময় ২ নং গেটসংলগ্ন বাচামিয়ার দোকানের সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে হামলা চালায় স্থানীয়রা। এতে অন্তত ৭০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। যার মধ্যে ২৪ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছিল। পরে সারারাত ধরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করে। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে গতকাল রোববার সকাল এগারোটায় আবারও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় ২য় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এবং উপাচার্যসহ আরও ১০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
হামলায় আহতদের দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর টার্গেট করে আক্রমণ করা হয়েছে। যেটি পুঁজি করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী হানিফ গং। যারা গণঅভ্যুত্থানের কারণে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার দখল হারিয়েছে। পুরো হামলায় ধারাল অস্ত্র, রাম দা, চাপাতি, ছুরি, বটি ও দা ব্যবহার ও সরবরাহ করেছে তাদের প্রশিক্ষিত লোকরা।
ঘটনার প্রেক্ষিতে উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমার ছাত্ররা আহত হয়েছে। প্রত্যেকটা ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপিয়েছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা। আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন। আমাদের প্রক্টর, প্রো-ভিসি (অ্যাকাডেমিক) আহত, আমাদের প্রায় সব শিক্ষক-ছাত্র আহত। আমরা মেডিকেলে জায়গা দিতে পারছি না।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বেলায়েত হোসেন জানান, বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫১ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। আরও অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসা আহত শিক্ষার্থীদের কারও মাথায় জখম, কারও শরীর রক্তাক্ত, কেউ হাতে কিংবা শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত পেয়েছেন।
রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই ছাত্রকে ভবনের ছাদে কুপিয়ে সেখান থেকে ফেলে দেওয়া হয়। দুই ছাত্রের মধ্যে একজনের নাম রাজিউর রহমান রাজু। তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তবে বিভাগের নাম জানা যায়নি। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। পরে কয়েক শিক্ষার্থী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের কথা বিবেচনায় নিয়ে রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের গতকাল রোববার পরীক্ষা ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে চবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে বহিষ্কার করেছে দলটি। রোববার বিকেলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য গঠনতন্ত্রের বিধান মোতাবেক বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে, রোববার সকালে চবির শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিল তিনি।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী মোড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এরপর জিরো পয়েন্টে এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছেন সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন— “কেউ যদি নির্বাচনের কোন বিকল্প নিয়ে ভাবে সেটা হবে এই জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
প্রফেসর ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজন করা। প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বারবার উল্লেখ করেছেন যে, এ নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচন। ”
তিনি আরও জানান, বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আলী রিয়াজ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার প্রধান উপদেষ্টাকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
শফিকুল আলম বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকগুলো খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্যাপনের বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে কেউ যেন দেশে ষড়যন্ত্র বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে এবং প্রয়োজন হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।
মন্তব্য