নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের এক চালককে হত্যা করে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে সুবর্ণচরের চরজব্বার ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের নুর ইসলাম মিয়ার বাড়ির পাশ থেকে ওই চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত অটোরিকশা চালকের নাম মো.রফিকুল ইসলাম (৫৫)। তিনি সিরাজপুর ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের ফজল হক মিয়ার বাড়ির আক্কেল আলীর ছেলে।
নিহতের পারিবার ও স্থানীয়রা জানান ,গত ২-৩ মাস আগে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনেন রফিকুল ইসলাম। সোমবার বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে যান তিনি। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করে বন্ধ পায়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সুবর্ণচর উপজেলার নুর ইসলাম মিয়ার বাড়ির পাশে স্থানীয় লোকজন তার মরদেহ পড়ে থাকতে দাখে। তার গলায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মরদেহ চরজব্বার ইউনিয়ন ৫নম্বর ওয়ার্ডে ফেলে অটোরিকশা ও মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে এলাকাবাসী মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।
চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন মিয়া বলেন, প্রাথমিক ভাবে এটিকে হত্যাকান্ড মনে হচ্ছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায় নি। মরদেহের গলায় গোলাকার দড়ি পেঁছানো কালো একটি দাগ আছে, বাম হাতের আঙুল থেতলানো, পিঠের পিছনে ফোলা জখম। মুখের মধ্যে কি দিয়ে, নাক-মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। অন্য কোন পদার্থ কিনা দেখা হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বেলাল হোসেন নামে এক টিস্যু ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই মামলায় আরও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মো. আমিনুল হক এই রায় দেন। রায় ঘোষণার সময়ে আসামি মোহন উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলেন সিদ্ধিরগঞ্জের বাঘমারা এলাকার মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে মো. নাদির ওরফে নাছির (৩৫)। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জের মোচাক এলাকার মৃত ইব্রাহীম খলিলের ছেলে মো. মানিক মিয়া (৪১) ও সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার মোশারফ হোসেনের ছেলে মোহন (২৫)। এদের দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হত্যা মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময়ে আসামি মোহন উপস্থিত ছিল, বাকিরা পলাতক ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে বেলাল হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন হোটেলে টিস্যু বিক্রি করতেন। ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে পাওনা টাকা সংগ্রহকালে সানারপাড় এলাকায় দুষ্কৃতিকারীরা বেলাল হোসেনকে ৬০০ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করার চেষ্টা করে। এসময় বেলাল হোসেনের সঙ্গে দুষ্কৃতিকারীদের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বেলালকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে হাসপাতালের নেওয়ার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় তার ভগ্নিপতি মো. কাজী জাহিদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় বিচারকার্য শেষে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জয়পুরহাটের কালাইয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইফতেকার রহমান।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, কালাই পাঁচশিরায় একটি বেকারির প্রতিষ্ঠানে ও নুনুজ বাজারে ৩টি দোকানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর আওতায় ৪টি মামলায় ৯৫০০ টাকা। এছাড়া খোলা বাজারে পেট্রোল বিক্রি করায় একটি দোকানিকে পেট্রোলিয়াম আইনে একটি মামলায় ১৫০০ টাকা এবং ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলায় ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে চারটি মামলায় ৯৫০০ হাজার টাকা ও খোলা বাজারে পেট্রোল বিক্রি করায় একটি মামলায় ১৫০০ টাকা এবং ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলায় ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। উপজেলায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সারাদেশে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত প্রযুক্তি সুবিধাপ্রাপ্ত লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় নীতিগত সুপারিশ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা একথা বলেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নারীদের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ সকল অপকর্ম প্রতিরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্রটি। মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে ছোট ছোট মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মেয়েরা অবুঝ এজন্য অভিভাবকদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী সহিংসতা শিকার না হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, নারী পক্ষ, হিউম্যান রাইটস বাংলাদেশ, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাকসহ বাইশটি সংগঠন আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
উপদেষ্টা বলেন এই ২২ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্মে যে সমস্ত শিক্ষিত তরুন যুবক যুবতীরা আছেন তাদেরকে টেকনোলজির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ও পরিবারের সচেতনতাই পারে একটি মেয়েকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। এজন্য সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ময়েনউদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সময়মতো শ্রেণিকক্ষে না আসার বিষয়ে মন্তব্য করায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন এক সহকারী শিক্ষক। এমন অভিযোগ ওঠায় সহকারী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বেলা পৌঁনে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক শাখার একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩০ জন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ক্লাস শুরু হলেও ৭ম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় দায়িত্বরত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার অনুপস্থিত ছিলেন। প্রায় ২৫ মিনিট পর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তিনি শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাশের নবম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বেরিয়ে বলে, স্যার তো কখনোই ঠিক সময়ে আসেন না, আজও দেরি করে আসছেন। ক্লাস কি হবে আর!
এই মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক নাফসি তালুকদার নবম শ্রেণির কক্ষে প্রবেশ করে জানতে চান মন্তব্যটি কে করেছে। কোনো শিক্ষার্থী জবাব না দিলে তিনি উপস্থিত ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করেন। এতে সবাই কমবেশি আহত হয়।
আঘাতপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রথমে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) কাছে অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করতে বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহানের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেন।
নবম শ্রেণির আহত শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বলেন, আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে একজন বলে নাফসি স্যার দেরিতে ক্লাসে যাচ্ছে একথা বলায় স্যার ক্লাসে এসে আমাদের ৩৩ জন সহপাঠীকে বেত্রাঘাত করতে শুরু করে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও ইউএনও স্যারের কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী আকিব হোসেনের বাবা আবু কালাম বলেন, শিক্ষক অপরাধ করবেন, আবার শিক্ষার্থীদের মারধর করবেন-এটা মেনে নেওয়া যায় না। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা অভিভাবকরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
কালাই ময়েনউদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বকুল বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারকে শোকজ করা হয়েছে এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বলেন, কোনো ব্যক্তিগত রাগ বা ক্ষোভ থেকে নয়, শাসনের উদ্দেশেই শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করেছি।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের অনেক স্থানেই রয়েছে ঐতিহাসিক অনেক অনেক নিদর্শন যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার একটি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের তেঁতাভূমি এলাকার তারেক রাজা চৌধুরী বাড়ি।
কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচুু করে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়িটি দেখার জন্য বহু মানুষ ছুটে আসে।
স্থানীয়দের অভিমত সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কালের সাক্ষী ওই বাড়িটি।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের আজও যে চোখে পরেনি এটাই জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। অবহেলা অযত্নের ফলে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো ইতিহাস।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়িটি তৎকালীন জমিদার তারেক রাজা চৌধুরীর। তারেক রাজা চৌধুরী তেঁতাভুমির জমিদার হিন্দু পরিবার ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ছিলেন। তিনি একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবে পার্শ্ববর্তী চড়ানলের স্থায়ী বসতীস্হাপন করেছিলেন। পরে একসময় সপরিবারে ভারতে চলে যান। তেতাভুমির পরিত্যক্ত ওই জমিদার বাড়ি তার নামেই তারেক রাজা চৌধুরীর বাড়ি নামে আজও পরিচয় বহন করছে।
ওই পরিত্যক্ত বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের দাবি এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাচীন এই অট্টালিকা থেকে সংরক্ষণের অভাবে ইট সুরকি খসে খসে পড়ছে। খসে যাওয়া দালানটির ইটের ফাঁকে ফাঁকে গজিয়েছে পরজীবি বৃক্ষ। জমেছে শেওলার আস্তরণ। বাড়ির বিভিন্ন কামরায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লোহার সিন্ধুক, আসবাবপত্র ও জমিদার পরিবারের ব্যবহারিক নানা সামগ্রী। কোথাও কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। বাড়িটির পাশের আরেকটি ভবন সংরক্ষণের অভাবে আগেই বিলীন হয়ে গেছে।
কথা হয় এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের সাথে, তিনি জানান, তারেক রাজা চৌধুরী জমিদার ছিলেন। তার জমিদারীর চিহ্ন আজও বহন করছে বাড়িটি। এই বাড়িটি সংরক্ষণ করলে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরা যাবে। সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, তারেক রাজা চৌধুরীর জমিদার বাড়িটি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটি সংরক্ষণ করা হলে আগামী প্রজন্ম এর ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হবে।
এ ব্যাপারে শশীদল ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, ঐতিহ্য ও ইতিহাস দেশের সম্পদ। প্রতিটি জাতি তাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস নিয়ে গর্ববোধ করে। আমাদের এ দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা পুরনো স্থাপত্য সংরক্ষণ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। তেঁতাভূমির এই জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আগামী প্রজন্ম এর থেকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে জানতে পারবে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা জাহান বলেন, আমি এইমাত্র আপনার কাছ থেকে শুনতে পেরেছি বাড়িটির কথা আমাদের সকলের উচিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হলে এসব পুরাতন স্থাপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে। আমি এই রাজার বাড়িটি পরিদর্শন করে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
বিএনপি চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা পরিষদ ও দলীয় সকল পর্যায়ের পদবী থেকে সদ্য স্থগিত হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে হত্যার হুমকি এবং তাঁর বাসার সামনে মব-সন্ত্রাস তাণ্ডবের প্রতিবাদে উত্তাল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল। হাওরের নেতাকর্মীরা হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকার যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে প্রয়োজন হলে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা অভিমুখে মার্চ করা হবে।
আজ (বুধবার) সারাদিন ফজলুর রহমানের পক্ষে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল ছিল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল। মঙ্গলবারও উত্তাল ছিল কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম। এদিন হাওরের আরেক উপজেলা ইটনাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে।
আজ বিকালেও উপজেলা সদরে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে যেকোন ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রওশন আলী রুশো, বীর মুক্তিযোদ্ধা নবী হোসেন তজু মিয়া, ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসএম কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি মো. হাবিবুল হান্নান, সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি এম এ ছালেক, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ, সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক নূরুল ইসলাম অপু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনসুর আলম, উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মুকুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আগে কয়েক হাজার ছাত্রজনতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্টিত হয়।
ইটনা পুরানবাজারে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি বাজার ও উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল থেকে ফজলুর রহমানের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এদিকে এর আগে দুপুরে অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপজেলা পরিষদ মাঠ থেকে মিছিল শুরু করে সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জামতলী মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করেন।
মিছিলে “মুক্তিযুদ্ধের ফজলু ভাই, আমরা তোমায় ভুলিনি”, “রণাঙ্গনের ফজলু ভাই, আমরা তোমায় ভুলিনি”, “মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা হুঁশিয়ার সাবধান”, “ফজলু ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে” এই ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফজলুর রহমান একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি। ৫ই আগস্টের পর থেকে জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপির পক্ষ থেকে একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য আসতে থাকে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ফজলুর রহমান এসব দেখে চুপ থাকতে পারেননি। এরপর থেকেই একটি স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এবং এনসিপি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অপপ্রচার চালায়।
বক্তারা অভিযোগ করেন, এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তাঁকে এখন হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা অবিলম্বে এসবে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বক্তারা হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকার যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে প্রয়োজন হলে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা অভিমুখে মার্চ করা হবে। বক্তারা আরও বলেন, হাওরের হৃদস্পন্দন ফজলুর রহমানকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ক্ষমতা কারও নেই। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরানোর যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ দাঁতভাঙা জবাব দেবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি জাকির হোসেন সাফি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম শাহীন, যুবদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনার, সাধারণ সম্পাদক আলী রহমান খান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এস এম জাভেদ, আহ্বায়ক তিতুমির হোসেন সোহেল, সদস্যসচিব আল মাহমুদ মোস্তাকসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
এর আগে সোমবার বিকালে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে অষ্টগ্রামে হাজারো নেতাকর্মী মিছিল করেন। মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিগত ১৭ বছর আমরা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যখন হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়েছি, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুর রহমান যোগ্য অভিভাবকের মতো আমাদের পাশে থেকেছেন, খোঁজখবর রেখেছেন। জামায়াত-এনসিপি’র ষড়যন্ত্রের কাছে যদি ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আমরা অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইনের বিএনপি নেতৃবৃন্দ ঘরে বসে থাকবো না। আমরা সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে আমাদের নেতাকে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বের করে নিয়ে আসবো।
মন্তব্য