বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে কিছু আয়োজন সময়কে ছাপিয়ে যায়। ‘নতুন কুঁড়ি’ তেমনই একটি নাম, একটি অনুভূতি, একটি আন্দোলন। একটি সময় ছিল, যখন শুক্রবার মানেই শিশু-কিশোরদের প্রাণের অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’। টেলিভিশনের পর্দায় সেই চেনা গান ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি’- এই গানটি শোনা মানেই নতুন প্রতিভা খোঁজার সূচনা। বাংলার ঘরে ঘরে এটি শুধু একটি শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা ছিল না, বরং হয়ে উঠেছিল এক সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বন্ধ থাকার পর সেই অনুষ্ঠান আবারও ফিরছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায়। এর ফলে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। নতুন কুঁড়ি হচ্ছে শিশু শিল্পীদের জন্য বাংলাদেশি রিয়েলিটি টেলিভিশন প্রতিযোগিতা।
নতুন কুঁড়ি বাংলাদেশ টেলিভিশনে শুরু হওয়ার প্রথম বছর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। শিশুদের কণ্ঠে আবৃত্তি, শুদ্ধ উচ্চারণে গান, মনোমুগ্ধকর অভিনয় আর হৃদয়ছোঁয়া নৃত্য- এসব যেন দর্শকদের নতুন আশায় ভরিয়ে তুলেছিল। এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা ছিল না, ছিল শিশুদের শিল্পী হয়ে ওঠার প্রথম পাঠশালা।
এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে উঠে এসেছেন অসংখ্য গুণী শিল্পী। আজ যারা বাংলাদেশের নাটক, সংগীত, নৃত্যসহ সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাদের অনেকেরই যাত্রা শুরু ‘নতুন কুঁড়ি’ থেকে।
নুসরাত ইমরোজ তিশা, রুমানা রশিদ ঈষিতা, মেহের আফরোজ শাওন, কনকচাঁপা, শামীমা ইয়াসমিন দিবা, রাহাত আজিম, আজাদ রহমান শাকিল, আজমিরী সুলতানা হলী, সিহান মনিরুল হাসান, শাহনাজ চৌধুরী লুনা, রুদাবা আদনীন কুমকুম, গায়ক সামিনা চৌধুরী, হেমন্তী রক্ষিত দাস, নৃত্যশিল্পী চাঁদনী- এমন অসংখ্য পরিচিত মুখ এই প্রতিযোগিতার পথ ধরে উঠে এসেছেন। কেউ সংগীতে, কেউ অভিনয়ে, কেউ আবার নৃত্যে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তাদের অনেকে আজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করছেন।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হতে যাওয়া নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানে আনা হয়েছে আধুনিক কাঠামোগত পরিবর্তন। এক্ষেত্রে পুরো দেশকে ভাগ করা হয়েছে ১৯টি অঞ্চলে। প্রতিটি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে আঞ্চলিক বাছাইপর্ব। এরপর নির্বাচিত প্রতিযোগীরা ঢাকায় এসে অংশ নেবেন চূড়ান্ত পর্বে। অংশগ্রহণকারীদের বয়সভিত্তিক দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে-‘ক’ (৬-১১ বছর) এবং ‘খ’ (১১-১৫ বছর)। প্রতিযোগিতা করা যাবে সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে।
প্রতিযোগিতার বিভাগগুলোকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। এবারের বিভাগগুলো হল- দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, হামদ-নাত, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্প বলা, কৌতুক, সাধারণ নৃত্য ও উচ্চাঙ্গ নৃত্য। প্রতিটি বিভাগে থাকবে অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য বিচারক প্যানেল। এছাড়া অনুষ্ঠানটি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্প্রচার করা হবে, যাতে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মানুষ অংশগ্রহণকারীদের সৃজনশীলতা দেখতে পান।
শিল্প-সাহিত্য একটি জাতির আত্মাকে গড়ে তোলে। ‘নতুন কুঁড়ি’ সেই আত্মগঠনের অন্যতম মাধ্যম। এটি শিশুদের মধ্যে শুধু প্রতিভা বিকাশই করে না, পাশাপাশি শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস ও জাতীয়তাবোধও গড়ে তোলে। শিশুরা শেখে দলবদ্ধভাবে কাজ করা, অন্যের প্রতিভাকে সম্মান করা এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভালোবাসা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মের অভাবের কারণে শিশুরা বিকল্প বিনোদন ও অনলাইন নির্ভরতায় ঝুঁকছে। ‘নতুন কুঁড়ি’র পুনর্জাগরণ তাই শুধু বিনোদনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং প্রজন্মকে সঠিক সাংস্কৃতিক চর্চায় ফিরিয়ে আনারও এক মহৎ উদ্যোগ।
১৯৭৬ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মনোয়ারের উদ্যোগে ‘নতুন কুঁড়ি’র যাত্রা শুরু হয়। অনুষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর নামক’ কবিতার অনুপ্রেরণায়। উদ্দেশ্য ছিল- দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিভাবান শিশুদের খুঁজে বের করে জাতীয় পর্যায়ের একটি মঞ্চে তুলে আনা, যেন তারা নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে।
তবে ২০০৬ সালে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় এই অনুষ্ঠান। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে এমন আয়োজনের অনুপস্থিতি শুধু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেই নয়, শিশুদের মানসিক বিকাশেও একটি বড় শূন্যতা তৈরি করে। দীর্ঘ এই সময়ে জাতীয় পর্যায়ের তেমন কোনো শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠেনি, যার ফলে অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিভা হারিয়ে গিয়েছিল নীরবে।
অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটে ২০২৫ সালের ১৭ আগস্ট। নতুন রূপে, আধুনিক কাঠামোয় এবং বিস্তৃত পরিকল্পনায় ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই আয়োজন আগামী প্রজন্মকে সৃজনশীল করে গড়ে তুলবে। এটি একটি নতুন যুগের সূচনা।’
প্রথম থেকেই এই আয়োজন জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিরে এসেছে নস্টালজিয়ার ঢেউ। প্রাক্তন প্রতিযোগীরা স্মৃতিচারণ করে লিখছেন- ‘শৈশবের শুক্রবারগুলো যেন নতুন কুঁড়িকে ঘিরেই ছিল।’ কেউ আবার বলছেন, ‘আমার জীবনের প্রথম মঞ্চে ওঠা, সাহস পাওয়ার জায়গা ছিল এই নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠান।’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিজের শৈশব স্মৃতির কথা বলেন, ‘১৯৭৮ সালে আমি মাত্র সাত বছর বয়সে নতুন কুঁড়িতে অংশ নিই এবং দেশাত্মবোধক গানে প্রথম স্থান অর্জন করি। সেই আনন্দ আজও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতিগুলোর একটি।’ তিনি বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি আগের মতোই শিশুদের স্বপ্ন গড়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। শুধু পুরস্কারের আশায় নয়, স্বীকৃতির জন্য এই প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।’
১৯৭৭ সালে ‘ক’ গ্রুপে একক অভিনয়ে প্রথম এবং ১৯৭৮ সালে ছড়াগানে প্রথম হয়ে ‘নতুন কুঁড়ি’র মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিলেন আজাদ রহমান শাকিল। সেই মধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বাসস’কে বলেন 'দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর আবারও ‘নতুন কুঁড়ি’ শুরু হচ্ছে এটা আমার জন্য এক অশেষ আনন্দের বিষয়। এই অনুষ্ঠান শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং প্রতিটি শিশুর ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা আবিষ্কারের এক মহামঞ্চ। আমি নিজেও এই মঞ্চ থেকে উঠে আসার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তাই খুব ভালোভাবেই জানি, একটি শিশুর জীবন ও ভবিষ্যৎ গঠনে ‘নতুন কুঁড়ি’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, আজকের শিশু, তারাই আগামী দিনের আলোকবর্তিকা। এই শিশুদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে আমাদের সোনালী ভবিষ্যৎ। তাদের চোখের স্বপ্ন, তাদের কণ্ঠের গান, তাদের অভিনয় আমাদের জাতির সম্ভাবনার প্রতীক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন কুঁড়ির এ নবযাত্রা আবারো জাতিকে দেবে অসাধারণ সব শিল্পী, যারা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম নতুন কুঁড়ির এই প্রত্যাবর্তনকে একটি ‘সাংস্কৃতিক জোয়ার’ হিসেবে অভিহিত করে বাসস’কে বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি কেবল একটি প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এটি সারাদেশের শিশু-কিশোরদের শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় যুক্ত করবে, প্রযুক্তির আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নতুন কুঁড়িকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতায় অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়, যা ছিল খুবই দুঃখজনক। তবে এখন আমরা নতুন করে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি, যাতে এই অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে হয় এবং আগামীর প্রতিভাবান প্রজন্ম সামনে চলে আসে।’
এছাড়া নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানের বিচারিক প্যানেলের বিচারপ্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিচারক নির্বাচনেও কঠোর মানদণ্ড বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কনকচাঁপা বলেন, ‘শিল্পচর্চা বাণিজ্যিক হলে তার মাধুর্য নষ্ট হয়। তাই নতুন কুঁড়িতে যোগ্যতাই হবে একমাত্র মাপকাঠি।
স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ যেন না থাকে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানটির উদ্দেশ্য কেবল জাতীয় পর্যায়ে শিল্পী তৈরি করা নয়, বরং দেশব্যাপী সংস্কৃতিমনা মানুষ তৈরির মাধ্যমে জাতির সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে মজবুত করা। ‘নতুন কুঁড়ি’র প্রথম আয়োজনেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯ হাজারের বেশি খুদে শিল্পী অংশ নিয়েছিল। তাদের অনেকেই পরে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সক্রিয় থেকেছেন।
নতুন কুঁড়ির মূল সাফল্য শুধু একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনে নয়, বরং সারাদেশে সাংস্কৃতিক চর্চার একটি বিস্তৃত ধারার সূচনা করা। এটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া, যা জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। শিশুরা যখন মঞ্চে উঠে, তখন শুধু গান বা আবৃত্তিই করে না- তারা আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব, জাতীয়তাবোধ ও দলবদ্ধ কাজের শিক্ষা গ্রহণ করে।
অভিভাবকরাও এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান ছোট শহরে বড় হচ্ছে। জাতীয় মঞ্চে ওঠার এমন সুযোগ ওর জীবনে বড় পরিবর্তন আনবে।’
প্রায় ২০ বছর পর ফিরে আসা ‘নতুন কুঁড়ি’ কেবল একটি অনুষ্ঠানের পুনরারম্ভ নয়, বরং একটি ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম। সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার। এটি হচ্ছে আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার মঞ্চ, যেখানে প্রতিটি প্রতিভা নিজেকে তুলে ধরতে পারবে
জাতীয়ভাবে। এই আয়োজন আবারও প্রমাণ করেছে, যে বীজ একদিন রোপণ করা হয়েছিল, তা এখনো শুকায়নি। বরং নতুন প্রজন্মের হাতে সেই বীজ আবারও অঙ্কুরিত হয়েছে, নতুন আলোয় ফুটবে বহু ফুল।
আশাবাদ ব্যক্ত করে বিটিভির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চাই নতুন কুঁড়ি আগামী শত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে হোক। প্রতিভা যেন হারিয়ে না যায়, বরং উৎসাহ পায়। এই অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির স্রোতধারাকে প্রবাহিত রাখবে।’
‘নতুন কুঁড়ি’ আজ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক। শিশুদের কণ্ঠে আবারও বাজছে সেই গান- ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি।’ এই আয়োজন আগামী দিনের কনকচাঁপা, তিশা, ঈষিতাদের জন্ম দেবে। আর আমাদের সাংস্কৃতিক ভুবনকে আলোকিত করবে নতুন নতুন তারায়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘ঠাকুরগাঁও মডেল’ অনুসরণ করে বরিশাল জেলাকে সম্পূর্ণরূপে শিশুশ্রম মুক্ত করা হবে। শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে নিয়োজিত না রাখার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর উপর জোর দেন তিনি।
শুক্রবার বরিশালের শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শিশু শ্রম নিরসনে তারুন্যের ভুমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সচিব এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন ১৮২ অনুস্বাক্ষর করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ ধরনের কাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। কোনো শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকবে না। তারা বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাবে।”
শ্রম সচিব আইএলও'র অর্থায়নে ইএসডিও কর্তৃক বাস্তবায়িত ঠাকুরগাঁও জেলার ‘চাইল্ড লেবার মনিটরিং সিস্টেম (সিএলএমএস)’ মডেলকে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ আখ্যায়িত করেন। তিনি জানান, জাতীয় পর্যায়ে এই মডেল অনুসরণ করে বরিশাল জেলাসহ অন্যান্য জেলাতেও শিশুশ্রম নিরসনের কার্যক্রমকে গতিশীল করা হবে।
শ্রম সচিব তরুণ সমাজ ও এনজিওগুলোর প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শিশুশ্রম নিরসনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সমাজকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে পারে। এখানে উপস্থিত সকলে যদি ১ জন শিশুরও দায়িত্ব নেন, তাহলেও বরিশাল জেলা অনেকাংশে শিশুশ্রম মুক্ত হবে।”
তিনি আরও জানান, শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন দুস্থ শ্রমিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫৭ জন শ্রমিক ও তার পরিবারকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশন হতে ২৫ লক্ষ টাকার অর্থ সহায়তার চেক প্রদান করা হয়।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো: রায়হান কাওসার। এছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুধীজন, এনজিও কর্মী ও তরুণরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলার কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে। বিশেষ করে পাহাড়ি কন্যারা তাদের দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে দেশ-বিদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। উপদেষ্টা আরও বলেন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ফলে এখন মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে এবং উৎপাদিত পণ্য সহজে পরিবহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন জীর্ণশীর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত মেরামত ও পুনঃনির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রাবাস নির্মাণের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন (পিবিএম) কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন পালি কলেজ প্রাঙ্গণ, ম্যাপল হাউস গার্লস হোস্টেল এবং অনাথালয় ভবন ঘুরে দেখেন। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপদেষ্টা এসব প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে অনাথালয় পরিচালনা কমিটি গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, সকল কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে আধুনিক ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ইংলিশ ভার্সনে রূপান্তরের পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (উপসচিব) খন্দকার মুশফিকুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য এডভোকেট মঞ্জিলা, সদস্য কংজপ্রু মারমা, সদস্য প্রফেসর আবদুল লতিফ, সদস্য অনিময় চাকমা, সদস্য শহীদুল ইসলাম সুমন, সদস্য প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা, সদস্য বঙ্গমিত্র চাকমা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুলের সাজা বাতিল ও নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান যুবদল নেতা বেনজির আহমেদ তাবরিজ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো.সেলিম মিয়া সেলিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কাউয়ুম মিয়া, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান বকু, যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন, বিএনপি নেতা শাহিন হক, জরিুলহক ঝন্টু, তামজিদ মোল্যা, বাচ্চু মোল্যা, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খাঁন বাবুলকে কারাগারে পাঠানোর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদুল ইসলাম বাবুলকে মুক্তি দেওয়া না হলে বৃহত্তর ফরিদপুরে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নে চুরির আপবাদে মাহিন (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুল শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চেঙ্গুয়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মানিক ও রাহাত নামে দুই কিশোরকে বেড়ধক পেটানো হলে, তারা গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মাহিন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়।
নিহত মাহিন স্থানীয় কাঞ্চন নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র এবং একই এলাকার সাগর আলী তালুকদার বাড়ির জনৈক লোকমানের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ভোরে মাহিনসহ তিন কিশোর চেঙ্গার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। সেসময় কয়েকজন কিশোর দৌড়ে এসে তাদের ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে তিনজন পাশ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ছাদে উঠে জোরপূর্বক তাদের নিচে নামিয়ে এনে ব্রিজের উপর বেধড়ক মারধর করে সটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মাহিনের মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত দুজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতদের পরিবারের অভিযোগ, মানিক ও রাহাত আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। চোর সন্দেহে তাদের উপর এমন নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি। ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনকভাবে নোমান ও আজাদ নামে দুইজনকে আটক করেছে। কেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশের পৃথক দুটি মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ইয়াবাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার সলিমগঞ্জ ও মিরপুর এলাকায় এ অভিযান দুটি পরিচালিত হয়।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীনগর থানার এএসআই শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল সলিমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদী-সংলগ্ন খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক পুরুষ ও চার নারীকে আটক করে। সেসময় তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন মো. আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তার স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩৭), বাড়ি: গৌরীপুর, ময়মনসিংহ নাজমা (২৬), বাড়ি: পঞ্চগড় মাইমুনা (২২), বাড়ি: আশুলিয়া, ঢাকাআমেনা (২৭), বাড়ি: বগুড়া । একই রাতে নবীনগর থানার এসআই শাহ আলমের নেতৃত্বে আরেকটি দল মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার মোল্লা (৪৮) কে আটক করে। তার দেহ তল্লাশি করে ২৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মাদক বিক্রির নগদ ৩,৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘দুটি পৃথক অভিযানে মোট ১২ কেজি গাঁজা, ২৬০ পিস ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আবাসন চাহিদা পূরনের জন্য কৃষি জমিতে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানীর বালি ভরাটের কারনে এ সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশু পালনে কৃষকদের এখন ভরসা নেপিয়ার জাতের ঘাস। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে গোখাদ্যর সংকটের বিষয়টি কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। গোখাদ্য সংকটে অনেকই কম দামে পশুগুলোকে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার কাঞ্চন, ভোলাব, দাউদপুর, মুড়াপাড়া, মাঝিনা নদীর পাড়, দেইলপাড়া, নদ্দাসহ অর্ধ শতাধিক গ্রামে এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। বেসরকারি দুগ্ধ খামারিরা তাদের বাড়িতে খরচ কমানোর জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষের দিকে ঝুকছে। আঁশযুক্ত, পুষ্টিকর, সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে চাহিদা ব্যাপক। একবার কেটে নিলে ঘাস মরে যায়না বরং কাটা অংশ থেকে পুনরায় কুঁড়ি জন্মে আবার তা পূর্নাঙ্গ ঘাসে পরিণত হয়।
সরজমিন ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে গোখাদ্য সংকট এবং নেপিয়ার জাতের ঘাসে কৃষকের ভরসার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
বারৈ গ্রামের কদম আলী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, অন্যের জমি চাষ করি। বাড়তি আয়ের জন্যে গরু-ছাগল পালি। কৃষক টিপু হায়দার বলেন, গরুর খাদ্য সমস্যার জন্যে আমাদের গরু কম দামে বিক্রি করে দিছি। নেপিয়ার জাতের ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল, ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই কেটে নেয়া ঘাসগুলো বড় হয়ে যায়।
উপজেলা পশু পালন কর্মকর্তা ডা. সজল কুমার দাস গোখাদ্যের সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, বর্তমানে পশু খাদ্যের আরেক নাম নেপিয়ার ঘাস। দ্রুত বর্ধনশীল, উৎপাদন খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় এলাকার চাষিরা দিনদিন নেপিয়ার জাতীয় ঘাস চাষে ঝুঁকছেন। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অপরদিকে গোখাদ্য সংকট নিরসনেও ভূমিকা রাখছেন। প্রতিমাসে খামারিদেরকে বিনামূল্যে নেপিয়ার ঘাসের বীজ কাটিং দেয়া হয়। নেপিয়ার ঘাস ১০/১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চাষের পদ্ধতিও সহজ।
নেত্রকোনার হৃদয়ে একসময় মানুষের স্বপ্ন, ভরসা আর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল লঞ্চ। নেত্রকোনা পৌর এলাকার মালনী রোড সংলগ্ন মগড়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা সেই পুরানো লঞ্চঘাট এখন শুধুই স্মৃতিচিহ্ন বহন করে যাচ্ছে। এই লঞ্চঘাট ঘিরে একসময় গড়ে উঠেছিল পাটপট্রি এলাকায় অসংখ্য পাট গুদাম ও ধানের বড় বড় গুদাম ঘর। বিভিন্ন এলাকা থেকে বড়-ছোট নৌকা আর লঞ্চ আসত এই ঘাটে। অপরিকল্পিত নৌযোগাযোগের কারণে আজ বিলীন হয়েছে এই লঞ্চ ঘাটটি। মগড়া নদী বয়ে গেছে সদর দেওপুর, লক্ষীগঞ্জ, আটপাড়া কোনাপাড়া, ব্রোজের বাজার, নাজিরগঞ্জ বাজার হয়ে মদন দেওয়ান বাজার ও মদন বাজার পর্যন্ত। আর এই রুটেই লঞ্চ দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পৌঁছাত নির্বিঘ্নে। তখনকার দিনগুলোতে সড়ক যোগাযোগের অবস্থা ছিলো খুবই দুর্বল, তাই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো লঞ্চ ভ্রমণ করতে। লঞ্চঘাটে ভিড় জমতো সকাল-বিকেলে। এখানে যাত্রী ওঠা-নামার ভিড়, নদীর ঢেউ আর হুইসেলের শব্দে সরগরম হয়ে উঠত পুরো এলাকা। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা নদীর পাড়ে দৌড়ে এসে লঞ্চ দেখত, আনন্দে হাত নেড়ে যাত্রীদের বিদায় জানাত ছোট-ছোট শিশুরা। সেইসব মুহূর্ত আজ কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। কালের আবর্তে সেই লঞ্চ সেবা হারিয়ে গেছে এলাকা থেকে। নদী নিয়মিত খনন না হওয়া, আর এর উপর অপরিকল্পিতভাবে নিচু ব্রিজ নির্মাণ করায় এখন নৌকা বা ট্রলারও চলাচল করতে পারছে না। ফলে একসময়কার নদীপথের প্রাণচাঞ্চল্য নিভে গেছে। এলাকার মানুষের এখন সড়কপথই প্রধান ভরসা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে সমষ্টিগতভাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি নদী পথটিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে যেমন বিকল্প সুবিধা মিলবে, তেমনি সড়কের চাপও কমবে। নেত্রকোনার লঞ্চঘাট তাই এখন কেবলই মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে আছে। পুরোনো দিনের সেসব কোলাহল, শিশুদের হাসি আর যাত্রীদের ভরসা সবকিছুই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।
মন্তব্য