টেকনো গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২,২৪০ কোটি টাকা) ব্যয় করে ১৬০টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে।
তবে এই সাইবার নজরদারি বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং গণবিক্ষোভের সময়। অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এসব প্রযুক্তি প্রায়শই অস্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতায় আনা হয়েছে।
এক বছর ধরে চলা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি ৭০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলা এবং ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে এই নজরদারির বিস্তার ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশিং ঐতিহ্য থেকে আধুনিক সাইবারভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যে ধরনের প্রযুক্তি আমদানি করেছে তার মধ্যে রয়েছে আইএমএসআই ক্যাচার, ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর অ্যান্ড সেলিব্রাইট, ফিনফিশার, প্রিডেটর-এর মতো উন্নত স্পাইওয়্যার। এসব প্রযুক্তি বিস্তৃত এবং প্রায়শই পরোয়ানা ছাড়া নজরদারি চালানোর সুযোগ করে দেয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ১৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে ইসরায়েলি-উৎস থেকে আসা প্রযুক্তিগুলোর জন্য। এই প্রযুক্তিগুলোর বেশিরভাগই বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বৈরাচারী শাসকরাও ব্যবহার করছেন।
র্যাব ও পুলিশ ওয়াই-ফাই ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ইন্টারসেপশন, সিগন্যাল জ্যামিং এবং বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করেছে।
এছাড়া তৎকালীন সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রাথমিকভাবে সেল নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ, ট্যাপ করা এবং সিগন্যাল জ্যামিংয়ের জন্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৫ সালে তারা সিটিজেন ল্যাব থেকে ফিনফিশার নামের একটি কম্পিউটার স্পাইওয়্যার কিনেছিল, যা ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে ডেটা চুরি করতে পারে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কাছে নজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করেছে। সবচেয়ে সমালোচিত বিষয় হলো, ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সেলেব্রাইট (Cellebrite), এনএসএ গ্রুপ (পেগাসাস), ইনটেলেক্সা, কোরালকো টেক এবং ইউটিএক্স টেকনোলজিস-এর মতো ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর তৈরি প্রযুক্তি সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও হাঙ্গেরির মতো তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এছাড়াও তুরস্কের স্পাইওয়্যার ফার্ম বিলগি টেকনোলজি টাসারিম (Bilgi Teknoloji Tasarim-BTT)-ও বাংলাদেশের কাছে নজরদারি সরঞ্জাম বিক্রি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থার এই বিস্তারের পেছনে রয়েছে আইনি দুর্বলতা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১, টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫ এবং ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন, ১৯৩৩-এর মতো পুরোনো আইনগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যাপক নজরদারির ক্ষমতা দেয়।
এই নজরদারি কার্যক্রমে কোনও সংসদীয় তদারকি, বিচারিক সম্পৃক্ততা বা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। ফলে, রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা জনগণের সুরক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নজরদারি প্রযুক্তির ক্রয় নাটকীয়ভাবে বেড়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে, এই প্রযুক্তিগুলো রাজনৈতিক ও নাগরিক আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রতিবেদনে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। যদি এই ধরনের সংস্কার না করা হয়, তবে দেশটিতে ডিজিটাল স্বৈরাচারী শাসনের মডেল আরও শক্তিশালী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যেখানে নজরদারি জনগণের স্বার্থ বা নিরাপত্তার বদলে রাজনৈতিক ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৫০১ নং কক্ষে জনসংযোগ দপ্তরের আয়োজনে এই সেমিনার হয়। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম, যিনি সংবাদ পরিবেশনে বস্তুনিষ্ঠতা, নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় অনেক সময় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় থাকে না। হলুদ সাংবাদিকতা ও ফেসবুকনির্ভর সংবাদ পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেক সংবাদকর্মী যেন গঠনমূলক সংবাদ উপস্থাপন করেন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ পরিবেশ গড়ে ওঠে।”
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতা রক্ষা ও সমাজের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
প্রায় অর্ধশতাধিক সংবাদকর্মীর অংশগ্রহণে আয়োজকরা ভবিষ্যতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
চোখের চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও তার সঙ্গে রয়েছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ফখরুল আবারও ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে যাচ্ছেন। এর আগে গত ১৪ মে একই হাসপাতালে তার চোখের রেটিনায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
ব্যাংকক যাওয়ার আগে গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফখরুল। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি তখন তারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবরও নেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউকেএম)।
আজ বুধবার কুয়ালালামপুরে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আনন্দঘন পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ নেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামের ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রফেসর ইউনূস।
আজ সকালে প্রফেসর ইউনূস অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তাঁকে স্বাগত জানান।
এসময় লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,নীতি-নির্ধারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ থেকে আগত প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীগণ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এবার সচিবালয়ের ভেতরে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সন্ধ্যা ৬টার পর সচিবালয়ে অবস্থান করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার বিধান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে সাতটি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ সচিবালয়ের অভ্যন্তরে প্রতিটি ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত প্রতিটি ভবন/প্রাঙ্গণের সার্বক্ষণিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো হলো— সচিবালয়ের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের মিছিল, সমাবেশ বা গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা, সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অননুমোদিত কোনো সভা বা সমাবেশ অথবা কোনো পেশাগত সংগঠন, সমিতির সভা, সম্মেলন, বৈঠক করা যাবে না।
এছাড়া সন্ধ্যা ৬টার পর সচিবালয়ের ভেতরে জরুরি দাপ্তরিক প্রয়োজনে অবস্থান করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে, সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা অন্য কোনো ছুটির দিনে সচিবালয়ের ভেতরে দাপ্তরিক প্রয়োজনে অবস্থান করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিতে হবে, সচিবালয়ের ভেতরে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাস দৃশ্যমান রাখতে হবে, সচিবালয়ের অভ্যন্তরের কোনো ভবন বা প্রাঙ্গণে কোনোরূপ লিফলেট বিতরণ, ব্যানার বা ফেস্টুন ঝোলানো বা স্থাপন করা যাবে না এবং সচিবালয়ে প্রবেশকালীন গাড়ি বা ব্যক্তির নিরাপত্তা তল্লাশি দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের সব মহল থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলছে এবং চূড়ান্ত চুক্তির আগে শুল্ক কমানো হতে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কারণে শুল্ক কমতে পারে, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় কারণ শুল্ক আরোপকারী পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের উপর বিষয়টি নির্ভর করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনও পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ ঘোষণার পরও এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। এ মাসের শেষে চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) চুক্তির খসড়া তৈরি করছে।
বাজারে পেয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আমদানি করা হবে কিনা এবং ভারত থেকে আমদানি হবে কিনা—এসব প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। শুধুমাত্র ভারত থেকেই নয়, ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে আমদানি করতে চান সেখান থেকেই অনুমতি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য পেঁয়াজের দাম কমানো ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এজন্য যেখান থেকে কম দামে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।
এ সময় বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আব্দুর রহিম খান, অতিরিক্ত সচিব (ডাব্লিউটিও) ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী এবং বিকেএমই এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশে সম্প্রতি কিছু ভুয়া সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে, যা এক ধরনের অনাচার। তিনি বলেন, অফিস-আদালতে এসব ভুয়া অনাচারকারীর প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘একাত্তর-পরবর্তী সময়ে যেমন সনদধারী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক তেমনি ২০২৪-পরবর্তী সময়েও ভুয়া কিছু সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে।
যা একটি মহান আন্দোলনের প্রকৃত সমন্বয়কারীদের অসম্মানের শামিল। তাই এদের প্রতিরোধ করে প্রকৃত সমন্বয়কারীদের সম্মান ফেরাতে হবে।’
তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দায়িত্ব পালনের সময় দুর্নীতি ঢাকতে উৎকোচ গ্রহণ নয়, বরং কর্মক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয় করুন। একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে দাপ্তরিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করুন।’
রংপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে রংপুর নগরীর স্টেশন রোডের আলমনগর এলাকায় ছয় তলাবিশিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা ও আঞ্চলিক সমন্বয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি ভবনের বিভিন্ন কাজ পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
দুদক চেয়ারম্যান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বলেন, শুধু শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তরিকতা ও সুসম্পর্কই পারে দুর্নীতি অনেকাংশে লাঘব করতে। দুদক সেবাদাতা ও গ্রহীতাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রম এই অঞ্চলে আরও বিস্তৃত হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দুর্নীতির বিপক্ষের মানুষ। তার উপদেষ্টা পরিষদের কেউ যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হন, সেক্ষেত্রেও তিনি তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের বিদ্যমান আইনানুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাত থেকে যেভাবে অর্থ লুট হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও এভাবে লুট করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আর্থিক খাতের বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় বা আইসিইউতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্থনীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মতে অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি সন্তোষজনক। আর্থিক খাতের বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব ছিল। এমনিতেই আমাদের আর্থিক সক্ষমতা কম, তার মধ্যে এগুলো। সে জন্য আমি খাদের কিনারা-ই বলি, আইসিইউতে ছিল বলি। সেখান থেকে আমরা একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে ব্যাংক খাতের লুটপাট করা হয়নি। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আমি জানতে চাইলাম। বলল ৯৫ শতাংশই খেলাপি। পৃথিবীর কোনো দেশে ব্যাংকের টাকা এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটা কিন্তু আপনার-আমার টাকা।
অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা একেবারে খারাপ অবস্থায় নেই। মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। খারাপ খারাপ বললে তো খারাপই হয়ে যাব। গ্রোথ হচ্ছে না, কর্মংস্থান হচ্ছে না, কিছুই হচ্ছে না, এভাবে বললে তো হবে না। গ্রোথ (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) তো নেগেটিভ নয়। আনুমানিক একটা তথ্য গ্রোথ ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আমরা আশা করছি বছর শেষে ৫ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে।
তিনি বলেন, হয়তো আপনারা যেভাবে প্রত্যাশা করেন, সেভাবে হয়নি। তবে অনেক কিছুই হয়েছে। আর একটু দ্রুত গতিতে হলে হয় তো ভালো হতো। আমরা আশা করছি, সামনে অর্থনীতি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।
কয়টি ব্যাংক একীভূত করা হবে এবং কবে নাগাদ করা হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে। কয়টা ব্যাংক হবে, তা আমি বলতে চাই না। তবে হবে।
যদি ব্যাংকের একীভূত করার বিষয়টি নির্বাচিত সরকারের অধীনে চলে যায় এবং তারা যদি না করে, সে বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে মোটামুটি আলোচনা হয়েছে। এখনো পুরোপুরি উল্টে গেলে তো কিছু করার নেই।
দেশ নিয়ে নিজের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে একটা কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। সেটা হয়তো পুরোপুরি করা সম্ভব হবে না। আমরা কিছু সংস্কার করে যাব, কিছু সংস্কার নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে যাবে। আমাদের ভালো কাজগুলো যেন বাদ দিয়ে দেওয়া না হয়।’
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য