মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কারের পাশাপাশি জুলাইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়—ন্যায়বিচার মানে এমন একটি রাষ্ট্র গঠন, যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা আর কখনও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের উপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাতির ত্যাগ, সাহস এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহায়তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আজ আমরা একত্র হয়েছি একটি গভীর তাৎপর্যময় ঘটনার—জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী—স্মরণে। এটি ছিল এমন এক মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ—যাদের অধিকাংশই তরুণ—অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিল। তাদের সাহস শুধু আমাদের জাতির জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই উচ্চারিত হয়েছিল।’
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক দিনে, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত জাতিসংঘের অবিচল সমর্থনের কথাও স্মরণ করতে চাই, যারা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টের অন্ধকার দিনগুলোতেও।’
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ সকল মানুষের—জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে—অবিচ্ছেদ্য অধিকার সংজ্ঞায়িত ও রক্ষার লক্ষ্য নিয়েছিল। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পৃথিবীর একটি নৈতিক দিকনির্দেশক হয়ে ওঠে, এবং তার মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও সুপ্রতিষ্ঠিত। তবুও গত ১৬ বছরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের এই অধিকার বারবার খর্ব করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে, স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছিল শাসনের মূল হাতিয়ার।
তবে গতবছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টতা, সংকল্প এবং অসাধারণ সাহসিকতার সাথে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গতবছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তরকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারায়। এই সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত, সংগঠিত এবং পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পরিচালিত। এই সহিংসতা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং তা মানবতা বিরোধী অপরাধ সম্পর্কেও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সত্য উন্মোচন শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, নিজেদের শোধরানোর জন্যও অপরিহার্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অনুসন্ধানকে আরও সমর্থন করেছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, যার মধ্যে বিবিসি এবং আল জাজিরার রিপোর্টও রয়েছে। জাতিসংঘের হাইকমিশনারের দপ্তরের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, তারা শুধু এই নিপীড়নের প্রামাণ্য নথি প্রস্তুত করেনি, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে, তার জন্য একটি বিস্তৃত সুপারিশমালাও প্রদান করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকার সুরক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন দণ্ডবিধির সংশোধন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগদান এবং জাতিসংঘের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। এই চুক্তির আওতায় ঢাকায় একটি সহায়তাকারী মিশন গঠিত হচ্ছে, যা সরকার ও সুশীল সমাজকে কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেবে।
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টার্কসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবিচল সহায়তা এবং একাত্মতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুরু থেকেই জাতিসংঘ আমাদের রূপান্তর প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য কাজ করছি—যার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সবাই শান্তি, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, গত বছরের ঘটনাগুলো আমরা স্মরণ করছি, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এই স্বপ্নের জন্য। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন—এই আশায় যেখানে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ দৃঢ়ভাবে থাকবে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেহেতু নিষিদ্ধ, সেহেতু তারা কোনো অপকর্ম করতে চাইলে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, পাঁচ আগস্ট ঘিরে দেশে কোনো ধরনের শঙ্কা নাই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সজাগ রয়েছে। তাছাড়া সাংবাদিকরা সহ সংশ্লিষ্ট সবাই যেভাবে এ বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তাতে কোনো শঙ্কা নেই।
আওয়ামী লীগের গুপ্তভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ও গোপন প্রশিক্ষণের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, সবাইকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এমনকি কোনো বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না। এসসময় তিনি বলেন, এটা তদন্তের বিষয়। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, মিডিয়া সত্য প্রচার করার কারণেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি সবসময়ই বলে আসছি- আমাদের সাংবাদিকরা সত্য প্রচার করছেন বলেই বিদেশি মিডিয়াগুলোর টোন আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে। তারা কিন্তু এখন আগের মতো সরব হতে পারছে না।
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী ৫ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।
জুলাই পুনর্জাগরণ উদযাপনের অংশ হিসেবে নওগাঁয় ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শণ, অভিভাবক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নওগাঁর সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এর আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদিয়া আফরিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবনুল আবেদীন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণের মা বেবি নাজনীন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সন্তানদের অনুপ্রেরনা দেওয়া মা হিসেবে তাসলিমা ফেরদৌস, নুর তাজসহ অন্যান্যরা।
এসময় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের পরিবারের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সন্তানদের অনুপ্রেরনা দেওয়া মায়েরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য জেলা প্রশাসক বলেন, জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে মমতাময়ী মায়েদের অবদান অনস্বীকার্য। আন্দোলনরে সময় মায়ের সামনে থেকে সন্তানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মা জানে না সে সন্তানকে মেরে ফেলা হবে কিনা গুম করা হবে। তারপরও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মায়েরা তাদের সন্তানদের সাহস জুগিয়েছেন, সমর্থন দিয়েছেন এবং প্রয়োজনে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। যাতে তাদের সন্তানরা একটি বৈষম্যহীন সমাজে বেড়ে উঠতে পারে। মায়েরা শুধু সন্তানদের সাহস ও সমর্থন দেননি, বরং আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আন্দোলনকে সফল করতে সহায়তা করেছেন। অনেক মা আন্দোলনকারীদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদেরকে খাবার সরবরাহ করেছেন। এ ঘটনা গুলোকে আমাদের হৃদয়ে পুনর্জাগরণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তোলে ধরতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।
এসময় জেলা প্রশাসক পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সব জায়গায় সমান অংশ গ্রহণ ও সমান মর্যাদা নিশ্চিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে পৃথক তিনটি অভিযানে মাদকদ্রব্য, কারেন্ট জাল ও আতশবাজি জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার ভোরে মহিষকুন্ডি আশ্রায়ন বিওপি এলাকার পুরাতন ঠোটারপাড়া পদ্মা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় ৮ হাজার ৮০ পিস ইয়াবা ও ৭৭ কেজি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এসব মালামালের বাজারমূল্য প্রায় ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
এর আগে শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণপুর বিওপির আওতাধীন মোহাম্মদপুর মাঠে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ২৪ বোতল মদ এবং ২৫৭ পিস ট্যাপেন্ডেবল ট্যাবলেট জব্দ করে বিজিবি। এসবের আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ ১৩ হাজার ১০০ টাকা।
একইদিন রাত ১১টার দিকে চিলমারী বিওপির আওতাধীন শান্তিপাড়া মাঠ এলাকায় আরও একটি অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা এক হাজার পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট এবং ১ হাজার ৮০ পিস আতশবাজি জব্দ করেন। যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ ২৭ হাজার টাকা।
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মালিক বিহীন এসব জব্দকৃত কারেন্ট জাল তাৎক্ষণিকভাবে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং মাদকদ্রব্যগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ধ্বংসের জন্য ব্যাটালিয়নের মাদক স্টোরে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, “সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে”
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে ট্রেনে কাটা পড়ে মো. হাছান (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের চুনতি হাফেজিয়া মাদ্রাসার উত্তরে রেলক্রসিংয়ের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে এবং আলী বাপের পাড়া এলাকার রেললাইন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হাসান চুনতি ইউনিয়নের পশ্চিম চুনতি হাদুর পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল মাবুদ রয়েল জানান, ঘটনাস্থলের পাশে রেললাইনের মাঝখানে সাড়ে দশটার দিকে হাসানের মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। তবে, ট্রেনের কাটায় তার লাশ চারদিকে ছিড়ে ছিটকে পড়েছিল।
লোহাগাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার মোঃ লোকমান বলেন , ট্রেনের কাটায় যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি।কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিল।
উল্লেখ্য এই ঘটনার মাত্র পাঁচ দিন আগে গত ২৬ জুলাই একই ইউনিয়নের নাজির পাড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় তাওসিফ আলম ওয়ালিদ নামে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একই এলাকার দুটি মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগান লেক থেকে রামলাল রবিদাস (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে উপজেলার শমশেরনগর দেওছড়া চা বাগানের ১২ নম্বর সেকশনের একটি লেক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত রামলাল রবিদাস শমশেরনগর চা বাগানের বজ্রনাথ রবিদাসের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামলাল গোসল করতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুজি করে কোথাও পায়নি। পরে লেকের পাড়ে দেখতে পাওয়া যায় রামলালের গামছা, জুতা ও সাবান। গোসল করতে গিয়ে লেকে ডুবে মারা গেছেন এমন ধারনা থেকে শুক্রবার শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরি সিলেট থেকে এসে লেকের পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মাসুদ আহমদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগানের লেকে রামলাল গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।পরে মরদেহ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে জানিয়ে পরিবারের কাছে মরদেহ দেওয়া হয়েছে।’
ভাঙ্গতে শুরু করেছে নড়াইলের নবগঙ্গা নদী । ইতোমধ্যে কালিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম, বাজার,ফসলিজমি,ঘরবাড়ি ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলিণ হয়েছে। এতে পাল্টে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। আতঙ্কে নির্ঘুম রাতযাপন করছে এলাকার মানুষ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারবৃন্দ।
জানাগেছে,গত ১৫ দিনের বিরামহীন বর্ষণে নদীতে পানি বৃদ্ধি এবং স্রোত বেড়ে যাওয়ায় কালিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া, মাহাজন বাজার, বড়দিয়া নৌবন্দর বাজার,গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ঝুকির মধ্যে রয়েছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাতযাপন করছেন নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী।
সরজমিন দেখা যায়, কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর ও কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। নদীগর্ভে চলে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসতভিটা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভেড়িবাধের ওপর নির্মিত সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে আশপাশের ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার একর ফসলী জমি। ভেসে যাবে কয়েক হাজার মাছের ঘের। এই পানি চলে যাবে লোহাগড়া ও সদর উপজেলার ৩০টি গ্রামে।
কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামের বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগমসহ ২০টি পরিবারের বাড়ীঘর,ফসলি জমি নদীতে বিলীণ হয়েছে। ঝুকির মধ্যে রয়েছে ৬০টি পরিবার। বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগম বলেন,আমাদের চোখের সামনে সবার বসতবাড়ি গাছপালা নদীতে চলে যেতে দেখেছি।রক্ষা করতে পারিনি। তারা বলেন,ঘরে খাবার নেই। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ক্ষুধার জালায় কান্নাকাটি করছে। তাদের কান্না দেখে পাশের গ্রামের কয়েকজন মানুষ শুকনা খাবার দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু শেখ বলেন,আমাদের পুরানো বাড়িঘর সব নদীতে চলে গেছে। ভেড়িবাধের পাশে মাথা গোজার মত একটা ছোট কুড়ে ঘর ছিল তাও চলে গেল ।এখন আমার পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি ।
একই এলাকার স্কুল শিক্ষক রোস্তম মোল্যা বলেন,নদীতে প্রচন্ড স্রোত বইছে। আমরা খুবই আতংকের মধ্যে দিন পার করছি। বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। ভেরিবাধের খুপড়ির মধ্যে বাস করছি।তিনি বলেন,এই বাধ ভেঙ্গে গেলে নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলার ২০টি গ্রামে পানি ঢুকে যাবে। এতে এলাকার প্রায় লক্ষাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়বে। তিনি বলেন,
বাড়িঘর,ফসলি জমিসহ এলাকার প্রায় ৩০ হাজার পুকুর,মাছের ঘের ভেসে যাবে । এ বছর আর ফসল উৎপাদন হবে না। আমাদের এলাকার প্রায় সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নদী ভাঙ্গনে বসতবাড়ি হারিয়েূ সর্বশান্ত লিপি বেগম। তিনি বলেন ,আমার বাড়ি নদীতে চলে গেছে। বসতবাড়ি হারিয়ে এখন আমি সর্বশান্ত । কোথায় থাকবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না । ওই বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা জমি ছিল না । একটু মাথা গোজার মত জায়গা পাবো কোথায় । এখন আমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকবো।
বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা শাবু শেখ আবেগঘন হয়ে বলেন, আমার সারাজীনের কষ্টের ফসল আমার এই বাড়ি টুকু তাও নদীতে চলে গেলো । অনেক কষ্টে আমি বাড়িটা করেছিলাম আমার আর কিছুই থাকলো না । জানিনা এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবো ।
আঙ্গিনার সবজি ক্ষেত ও বসতবাড়ি হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পথে আশ্রয় নেওয়া পান্নু শেখ। তিনি বলেন, আমার আর কিছুই নেই। সব নদীতে চলে গেছে । আশ্রয় নেয়ার মত এখন আমার রাস্তা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নেই । রাতে ঘুম নেই খাবার নেই, কিভাবে দিন পার করছি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না ।
সংবাদ পেয়ে নদী ভাঙ্গনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী অভিজিৎ সাহা । তিনি বলেন, কালিয়া পৌর এলাকার উথলি গ্রামে ৯৫ মিটার ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জরুরী ভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ১২০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে তাৎক্ষনিত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । নদী ভাঙ্গণ এলাকা প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মন্তব্য