১২ দফা মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ভালো কিছু ঘটছে। আমি আজ (মঙ্গলবার) পত্রিকায় দেখেছি, সব রাজনৈতিক দল ১২ দফা সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।’
তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ ও তার দলের কঠোর পরিশ্রমের জন্য প্রশংসা করেন, যারা সংস্কার ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে কাছাকাছি আনতে কাজ করেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই—সংস্কারগুলো বিলম্ব না করে সম্পন্ন করুন এবং অবিলম্বে (জুলাই জাতীয়) সনদ ঘোষণা করুন। দয়া করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যে তারিখে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সেই অনুযায়ী নির্বাচন দিন। জাতি সেখানে আশার আলো দেখেছে, অনুপ্রেরণা পেয়েছে। জনগণকে তাদের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে দিন।’
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শফিউল বারী বাবু স্মৃতি সংসদ এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, অনেকে বিএনপিকে সমালোচনা করে বলেন, দলটি নাকি সংস্কার চায় না। ‘কিন্তু সংস্কারের ধারণা আমাদের কাছ থেকেই এসেছে—আমরাই এটা শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাকশালের একদলীয় শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন এবং গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন, যা ছিল তার রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ।
অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান রুদ্ধ ও ব্যর্থ অর্থনৈতিক মডেল থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন, যার ফলে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও প্রবর্তন করেন এবং নারী ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়ন করেন।
‘তাই বিএনপি কখনো সংস্কারকে ভয় পায়নি—আমরা সবসময় সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছি,’ বলেন ফখরুল।
১২টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্য গঠনে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে কিছু প্রস্তাব নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে, যেমন—আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি। এটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত।’
তিনি বলেন, ‘সংসদের নিম্নকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মতো প্রস্তাব এসেছে—যা আমাদের জনগণ বোঝে না। তারা এখনো ইভিএম ভোটিং নিয়ে বিভ্রান্ত—তাহলে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বুঝবে?’
কিছু রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার শর্ত দেওয়ায় ফখরুল সমালোচনা করে বলেন, ‘এই ধরনের বিভ্রান্তিকর ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। জনগণকে এমন একটি ভোটিং ব্যবস্থা দিতে হবে, যা তারা বোঝে এবং যা তাদের যথার্থ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিদেশি ধারণা দিয়ে দেশের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত নয়।
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী ৫ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।
জুলাই পুনর্জাগরণ উদযাপনের অংশ হিসেবে নওগাঁয় ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শণ, অভিভাবক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নওগাঁর সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এর আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদিয়া আফরিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবনুল আবেদীন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণের মা বেবি নাজনীন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সন্তানদের অনুপ্রেরনা দেওয়া মা হিসেবে তাসলিমা ফেরদৌস, নুর তাজসহ অন্যান্যরা।
এসময় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের পরিবারের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সন্তানদের অনুপ্রেরনা দেওয়া মায়েরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য জেলা প্রশাসক বলেন, জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে মমতাময়ী মায়েদের অবদান অনস্বীকার্য। আন্দোলনরে সময় মায়ের সামনে থেকে সন্তানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মা জানে না সে সন্তানকে মেরে ফেলা হবে কিনা গুম করা হবে। তারপরও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মায়েরা তাদের সন্তানদের সাহস জুগিয়েছেন, সমর্থন দিয়েছেন এবং প্রয়োজনে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। যাতে তাদের সন্তানরা একটি বৈষম্যহীন সমাজে বেড়ে উঠতে পারে। মায়েরা শুধু সন্তানদের সাহস ও সমর্থন দেননি, বরং আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আন্দোলনকে সফল করতে সহায়তা করেছেন। অনেক মা আন্দোলনকারীদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদেরকে খাবার সরবরাহ করেছেন। এ ঘটনা গুলোকে আমাদের হৃদয়ে পুনর্জাগরণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তোলে ধরতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।
এসময় জেলা প্রশাসক পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সব জায়গায় সমান অংশ গ্রহণ ও সমান মর্যাদা নিশ্চিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে পৃথক তিনটি অভিযানে মাদকদ্রব্য, কারেন্ট জাল ও আতশবাজি জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার ভোরে মহিষকুন্ডি আশ্রায়ন বিওপি এলাকার পুরাতন ঠোটারপাড়া পদ্মা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় ৮ হাজার ৮০ পিস ইয়াবা ও ৭৭ কেজি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এসব মালামালের বাজারমূল্য প্রায় ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
এর আগে শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণপুর বিওপির আওতাধীন মোহাম্মদপুর মাঠে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ২৪ বোতল মদ এবং ২৫৭ পিস ট্যাপেন্ডেবল ট্যাবলেট জব্দ করে বিজিবি। এসবের আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ ১৩ হাজার ১০০ টাকা।
একইদিন রাত ১১টার দিকে চিলমারী বিওপির আওতাধীন শান্তিপাড়া মাঠ এলাকায় আরও একটি অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা এক হাজার পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট এবং ১ হাজার ৮০ পিস আতশবাজি জব্দ করেন। যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ ২৭ হাজার টাকা।
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মালিক বিহীন এসব জব্দকৃত কারেন্ট জাল তাৎক্ষণিকভাবে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং মাদকদ্রব্যগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ধ্বংসের জন্য ব্যাটালিয়নের মাদক স্টোরে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, “সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে”
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে ট্রেনে কাটা পড়ে মো. হাছান (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের চুনতি হাফেজিয়া মাদ্রাসার উত্তরে রেলক্রসিংয়ের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে এবং আলী বাপের পাড়া এলাকার রেললাইন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হাসান চুনতি ইউনিয়নের পশ্চিম চুনতি হাদুর পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল মাবুদ রয়েল জানান, ঘটনাস্থলের পাশে রেললাইনের মাঝখানে সাড়ে দশটার দিকে হাসানের মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। তবে, ট্রেনের কাটায় তার লাশ চারদিকে ছিড়ে ছিটকে পড়েছিল।
লোহাগাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার মোঃ লোকমান বলেন , ট্রেনের কাটায় যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি।কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিল।
উল্লেখ্য এই ঘটনার মাত্র পাঁচ দিন আগে গত ২৬ জুলাই একই ইউনিয়নের নাজির পাড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় তাওসিফ আলম ওয়ালিদ নামে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একই এলাকার দুটি মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগান লেক থেকে রামলাল রবিদাস (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে উপজেলার শমশেরনগর দেওছড়া চা বাগানের ১২ নম্বর সেকশনের একটি লেক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত রামলাল রবিদাস শমশেরনগর চা বাগানের বজ্রনাথ রবিদাসের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামলাল গোসল করতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুজি করে কোথাও পায়নি। পরে লেকের পাড়ে দেখতে পাওয়া যায় রামলালের গামছা, জুতা ও সাবান। গোসল করতে গিয়ে লেকে ডুবে মারা গেছেন এমন ধারনা থেকে শুক্রবার শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরি সিলেট থেকে এসে লেকের পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মাসুদ আহমদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগানের লেকে রামলাল গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।পরে মরদেহ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে জানিয়ে পরিবারের কাছে মরদেহ দেওয়া হয়েছে।’
ভাঙ্গতে শুরু করেছে নড়াইলের নবগঙ্গা নদী । ইতোমধ্যে কালিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম, বাজার,ফসলিজমি,ঘরবাড়ি ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলিণ হয়েছে। এতে পাল্টে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। আতঙ্কে নির্ঘুম রাতযাপন করছে এলাকার মানুষ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারবৃন্দ।
জানাগেছে,গত ১৫ দিনের বিরামহীন বর্ষণে নদীতে পানি বৃদ্ধি এবং স্রোত বেড়ে যাওয়ায় কালিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া, মাহাজন বাজার, বড়দিয়া নৌবন্দর বাজার,গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ঝুকির মধ্যে রয়েছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাতযাপন করছেন নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী।
সরজমিন দেখা যায়, কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর ও কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। নদীগর্ভে চলে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসতভিটা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভেড়িবাধের ওপর নির্মিত সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে আশপাশের ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার একর ফসলী জমি। ভেসে যাবে কয়েক হাজার মাছের ঘের। এই পানি চলে যাবে লোহাগড়া ও সদর উপজেলার ৩০টি গ্রামে।
কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামের বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগমসহ ২০টি পরিবারের বাড়ীঘর,ফসলি জমি নদীতে বিলীণ হয়েছে। ঝুকির মধ্যে রয়েছে ৬০টি পরিবার। বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগম বলেন,আমাদের চোখের সামনে সবার বসতবাড়ি গাছপালা নদীতে চলে যেতে দেখেছি।রক্ষা করতে পারিনি। তারা বলেন,ঘরে খাবার নেই। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ক্ষুধার জালায় কান্নাকাটি করছে। তাদের কান্না দেখে পাশের গ্রামের কয়েকজন মানুষ শুকনা খাবার দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু শেখ বলেন,আমাদের পুরানো বাড়িঘর সব নদীতে চলে গেছে। ভেড়িবাধের পাশে মাথা গোজার মত একটা ছোট কুড়ে ঘর ছিল তাও চলে গেল ।এখন আমার পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি ।
একই এলাকার স্কুল শিক্ষক রোস্তম মোল্যা বলেন,নদীতে প্রচন্ড স্রোত বইছে। আমরা খুবই আতংকের মধ্যে দিন পার করছি। বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। ভেরিবাধের খুপড়ির মধ্যে বাস করছি।তিনি বলেন,এই বাধ ভেঙ্গে গেলে নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলার ২০টি গ্রামে পানি ঢুকে যাবে। এতে এলাকার প্রায় লক্ষাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়বে। তিনি বলেন,
বাড়িঘর,ফসলি জমিসহ এলাকার প্রায় ৩০ হাজার পুকুর,মাছের ঘের ভেসে যাবে । এ বছর আর ফসল উৎপাদন হবে না। আমাদের এলাকার প্রায় সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নদী ভাঙ্গনে বসতবাড়ি হারিয়েূ সর্বশান্ত লিপি বেগম। তিনি বলেন ,আমার বাড়ি নদীতে চলে গেছে। বসতবাড়ি হারিয়ে এখন আমি সর্বশান্ত । কোথায় থাকবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না । ওই বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা জমি ছিল না । একটু মাথা গোজার মত জায়গা পাবো কোথায় । এখন আমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকবো।
বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা শাবু শেখ আবেগঘন হয়ে বলেন, আমার সারাজীনের কষ্টের ফসল আমার এই বাড়ি টুকু তাও নদীতে চলে গেলো । অনেক কষ্টে আমি বাড়িটা করেছিলাম আমার আর কিছুই থাকলো না । জানিনা এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবো ।
আঙ্গিনার সবজি ক্ষেত ও বসতবাড়ি হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পথে আশ্রয় নেওয়া পান্নু শেখ। তিনি বলেন, আমার আর কিছুই নেই। সব নদীতে চলে গেছে । আশ্রয় নেয়ার মত এখন আমার রাস্তা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নেই । রাতে ঘুম নেই খাবার নেই, কিভাবে দিন পার করছি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না ।
সংবাদ পেয়ে নদী ভাঙ্গনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী অভিজিৎ সাহা । তিনি বলেন, কালিয়া পৌর এলাকার উথলি গ্রামে ৯৫ মিটার ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জরুরী ভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ১২০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে তাৎক্ষনিত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । নদী ভাঙ্গণ এলাকা প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
পুলিশের বিতর্কিত সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের সময় অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সত্যানুসন্ধান কমিটি। ভর্তির যোগ্যতা পূরণ না করেও তার ডিগ্রি নেওয়ার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
গত ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে তথ্যানুসন্ধান কমিটি তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরে। পরে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টি উচ্চতর তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তার ডক্টরেট ডিগ্রি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে আহ্বায়ক এবং রেজিস্ট্রার মুন্সি শামস উদ্দিন আহম্মদকে সদস্য সচিব করা হয়। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম।
তাদের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি নেন বেনজীর আহমেদ। গত বছরের ১৪ জুন তার ডক্টরের ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ভর্তি যোগ্যতা না থাকলেও তিনি এই ডিগ্রি গ্রহণ করে নিজের নামের পাশে ড. পদবি ব্যবহার করছিলেন।
বেনজীর আহমেদ পুলিশের বিতর্কিত আইজিপি। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ব্যাপক জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বেনজীর পুলিশপ্রধান ও র্যাবপ্রধান থাকাকালে বিচারবহির্ভূত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডসহ নানা নিপীড়নের অভিযোগ সামনে আসে। তিনি বর্তমানে পলাতক।
মন্তব্য