রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বোন নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম (১৩) মৃত্যুর ১দিন পর মৃত্যু হয়েছে তার ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফির (৯)। সে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। বোনের মৃত্যুর ১দিন পরে ভাই চলে গেলো না ফেরার দেশে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মৃত্যু হয় নাজিয়ার ছোট ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফির। এরআগে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মৃত্যু হয় নাফির বড় বোন নাজিয়ার। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে নিঝুমের জানাজা নামাজ শেষে উত্তরার একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নাজিয়া ও নাফি ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম নিরবের কন্যা ও পুত্র। দুই সন্তানের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা ও পরিবারের স্বজনরা।
নাজিয়া ও নাফি বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তরার কামারপাড়ায় থাকত। নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও তার ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি ওই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন।
তাদের স্বজনরা জানান, সোমবার দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন লাগার সময় স্কুল চত্বরেই ছিল নাজিয়া ও নাফি। আগুনে তারা গুরুতর দগ্ধ হওয়ার পর তাদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়। নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ ছোট ভাই নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাদের হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার রাত ৩টার দিকে নাজিয়া চলে যায় আর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নাফি চলে যান না ফেরার দেশে।
তারা আরো জানান, নাজিয়া মারা যাওয়ার পর তার লাশ গ্রামের বাড়ি ভোলায় নেওয়ার কথা থাকলেও তার ভাই চিকিৎসাধীন থাকায় লাশ ভোলায় আনা হয়নি। জানাযা শেষে উত্তরায় দাফন করা হয়েছে।
এদিকে নাজিয়া ও নাফির মৃত্যুর খবরে ভোলায় তাদের গ্রামের বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয়দের মধ্যে চলছে শোকের মাতম কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস। নাতি নাতনীর শোকে গ্রামের বাড়িতে কান্নায় বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তাদের দাদা। বিলাপ করে কাদঁছেন খেলার সাথী চাচাতো ভাই বোনগুলো। একটি সুন্দর পরিবারে হঠাৎ ঝড়ের মতো নেমে আসা এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। দুই শিশু সন্তান হারিয়ে এক মুহূর্তেই যেন থেমে গেছে বাবা- মায়ের হাজারো স্বপ্ন ও সংসারের সমস্ত চলার গতি।
নাজিয়ার চাচা হাসান জানান, সন্তানদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য ভালো স্কুলে পড়ালেখা করাবেন বলে ১৫-১৬ বছর আগে ভোলা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান নিরব। বাসা ভাড়া নেন উত্তরার কামারপাড়া এলাকায়। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করেছিল উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তাদের বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। শেষ হয়ে গেলো একটি সুন্দর সংসার।
নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম ও তার ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি সর্বশেষ ২০২২ সালে বাবা মায়ের সঙ্গে ভোলায় দাদার বেড়াতে এসেছিলেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে পৃথক তিনটি অভিযানে মাদকদ্রব্য, কারেন্ট জাল ও আতশবাজি জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার ভোরে মহিষকুন্ডি আশ্রায়ন বিওপি এলাকার পুরাতন ঠোটারপাড়া পদ্মা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় ৮ হাজার ৮০ পিস ইয়াবা ও ৭৭ কেজি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এসব মালামালের বাজারমূল্য প্রায় ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
এর আগে শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণপুর বিওপির আওতাধীন মোহাম্মদপুর মাঠে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ২৪ বোতল মদ এবং ২৫৭ পিস ট্যাপেন্ডেবল ট্যাবলেট জব্দ করে বিজিবি। এসবের আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ ১৩ হাজার ১০০ টাকা।
একইদিন রাত ১১টার দিকে চিলমারী বিওপির আওতাধীন শান্তিপাড়া মাঠ এলাকায় আরও একটি অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা এক হাজার পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট এবং ১ হাজার ৮০ পিস আতশবাজি জব্দ করেন। যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ ২৭ হাজার টাকা।
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মালিক বিহীন এসব জব্দকৃত কারেন্ট জাল তাৎক্ষণিকভাবে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং মাদকদ্রব্যগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ধ্বংসের জন্য ব্যাটালিয়নের মাদক স্টোরে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, “সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে”
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে ট্রেনে কাটা পড়ে মো. হাছান (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের চুনতি হাফেজিয়া মাদ্রাসার উত্তরে রেলক্রসিংয়ের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে এবং আলী বাপের পাড়া এলাকার রেললাইন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হাসান চুনতি ইউনিয়নের পশ্চিম চুনতি হাদুর পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল মাবুদ রয়েল জানান, ঘটনাস্থলের পাশে রেললাইনের মাঝখানে সাড়ে দশটার দিকে হাসানের মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। তবে, ট্রেনের কাটায় তার লাশ চারদিকে ছিড়ে ছিটকে পড়েছিল।
লোহাগাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার মোঃ লোকমান বলেন , ট্রেনের কাটায় যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি।কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিল।
উল্লেখ্য এই ঘটনার মাত্র পাঁচ দিন আগে গত ২৬ জুলাই একই ইউনিয়নের নাজির পাড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় তাওসিফ আলম ওয়ালিদ নামে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একই এলাকার দুটি মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগান লেক থেকে রামলাল রবিদাস (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে উপজেলার শমশেরনগর দেওছড়া চা বাগানের ১২ নম্বর সেকশনের একটি লেক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত রামলাল রবিদাস শমশেরনগর চা বাগানের বজ্রনাথ রবিদাসের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামলাল গোসল করতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুজি করে কোথাও পায়নি। পরে লেকের পাড়ে দেখতে পাওয়া যায় রামলালের গামছা, জুতা ও সাবান। গোসল করতে গিয়ে লেকে ডুবে মারা গেছেন এমন ধারনা থেকে শুক্রবার শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরি সিলেট থেকে এসে লেকের পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মাসুদ আহমদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগানের লেকে রামলাল গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।পরে মরদেহ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে জানিয়ে পরিবারের কাছে মরদেহ দেওয়া হয়েছে।’
ভাঙ্গতে শুরু করেছে নড়াইলের নবগঙ্গা নদী । ইতোমধ্যে কালিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম, বাজার,ফসলিজমি,ঘরবাড়ি ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলিণ হয়েছে। এতে পাল্টে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। আতঙ্কে নির্ঘুম রাতযাপন করছে এলাকার মানুষ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারবৃন্দ।
জানাগেছে,গত ১৫ দিনের বিরামহীন বর্ষণে নদীতে পানি বৃদ্ধি এবং স্রোত বেড়ে যাওয়ায় কালিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া, মাহাজন বাজার, বড়দিয়া নৌবন্দর বাজার,গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ঝুকির মধ্যে রয়েছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাতযাপন করছেন নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী।
সরজমিন দেখা যায়, কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর ও কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। নদীগর্ভে চলে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসতভিটা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভেড়িবাধের ওপর নির্মিত সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে আশপাশের ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার একর ফসলী জমি। ভেসে যাবে কয়েক হাজার মাছের ঘের। এই পানি চলে যাবে লোহাগড়া ও সদর উপজেলার ৩০টি গ্রামে।
কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামের বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগমসহ ২০টি পরিবারের বাড়ীঘর,ফসলি জমি নদীতে বিলীণ হয়েছে। ঝুকির মধ্যে রয়েছে ৬০টি পরিবার। বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগম বলেন,আমাদের চোখের সামনে সবার বসতবাড়ি গাছপালা নদীতে চলে যেতে দেখেছি।রক্ষা করতে পারিনি। তারা বলেন,ঘরে খাবার নেই। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ক্ষুধার জালায় কান্নাকাটি করছে। তাদের কান্না দেখে পাশের গ্রামের কয়েকজন মানুষ শুকনা খাবার দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু শেখ বলেন,আমাদের পুরানো বাড়িঘর সব নদীতে চলে গেছে। ভেড়িবাধের পাশে মাথা গোজার মত একটা ছোট কুড়ে ঘর ছিল তাও চলে গেল ।এখন আমার পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি ।
একই এলাকার স্কুল শিক্ষক রোস্তম মোল্যা বলেন,নদীতে প্রচন্ড স্রোত বইছে। আমরা খুবই আতংকের মধ্যে দিন পার করছি। বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। ভেরিবাধের খুপড়ির মধ্যে বাস করছি।তিনি বলেন,এই বাধ ভেঙ্গে গেলে নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলার ২০টি গ্রামে পানি ঢুকে যাবে। এতে এলাকার প্রায় লক্ষাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়বে। তিনি বলেন,
বাড়িঘর,ফসলি জমিসহ এলাকার প্রায় ৩০ হাজার পুকুর,মাছের ঘের ভেসে যাবে । এ বছর আর ফসল উৎপাদন হবে না। আমাদের এলাকার প্রায় সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নদী ভাঙ্গনে বসতবাড়ি হারিয়েূ সর্বশান্ত লিপি বেগম। তিনি বলেন ,আমার বাড়ি নদীতে চলে গেছে। বসতবাড়ি হারিয়ে এখন আমি সর্বশান্ত । কোথায় থাকবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না । ওই বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা জমি ছিল না । একটু মাথা গোজার মত জায়গা পাবো কোথায় । এখন আমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকবো।
বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা শাবু শেখ আবেগঘন হয়ে বলেন, আমার সারাজীনের কষ্টের ফসল আমার এই বাড়ি টুকু তাও নদীতে চলে গেলো । অনেক কষ্টে আমি বাড়িটা করেছিলাম আমার আর কিছুই থাকলো না । জানিনা এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবো ।
আঙ্গিনার সবজি ক্ষেত ও বসতবাড়ি হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পথে আশ্রয় নেওয়া পান্নু শেখ। তিনি বলেন, আমার আর কিছুই নেই। সব নদীতে চলে গেছে । আশ্রয় নেয়ার মত এখন আমার রাস্তা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নেই । রাতে ঘুম নেই খাবার নেই, কিভাবে দিন পার করছি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না ।
সংবাদ পেয়ে নদী ভাঙ্গনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী অভিজিৎ সাহা । তিনি বলেন, কালিয়া পৌর এলাকার উথলি গ্রামে ৯৫ মিটার ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জরুরী ভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ১২০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে তাৎক্ষনিত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । নদী ভাঙ্গণ এলাকা প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
পুলিশের বিতর্কিত সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের সময় অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সত্যানুসন্ধান কমিটি। ভর্তির যোগ্যতা পূরণ না করেও তার ডিগ্রি নেওয়ার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
গত ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে তথ্যানুসন্ধান কমিটি তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরে। পরে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টি উচ্চতর তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তার ডক্টরেট ডিগ্রি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে আহ্বায়ক এবং রেজিস্ট্রার মুন্সি শামস উদ্দিন আহম্মদকে সদস্য সচিব করা হয়। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম।
তাদের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি নেন বেনজীর আহমেদ। গত বছরের ১৪ জুন তার ডক্টরের ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ভর্তি যোগ্যতা না থাকলেও তিনি এই ডিগ্রি গ্রহণ করে নিজের নামের পাশে ড. পদবি ব্যবহার করছিলেন।
বেনজীর আহমেদ পুলিশের বিতর্কিত আইজিপি। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ব্যাপক জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বেনজীর পুলিশপ্রধান ও র্যাবপ্রধান থাকাকালে বিচারবহির্ভূত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডসহ নানা নিপীড়নের অভিযোগ সামনে আসে। তিনি বর্তমানে পলাতক।
সরকারি বরাদ্দ পাওয়া সত্ত্বেও শুধু ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত ভুল, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) তথ্য বিভ্রাট এবং কে-ওয়াইসি আপডেট না থাকার কারণে ‘বিশেষ অনুদান’ পাননি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত এই সহায়তা কার্যক্রমে তথ্যঘাটতির জেরে অনেক প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দকৃত টাকাও জমা হয়নি নির্ধারিত হিসাবে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখা থেকে প্রকাশিত একটি স্মারকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অনুদান বাবদ মনোনীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের তালিকা গত ১৭ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল ১০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ক্যাটাগরিতে ২৫০ জন এবং ৭ হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী। তবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর মাধ্যমে অর্থ বিতরণের সময় দেখা যায়, ১০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত তথ্য ভুল ছিল। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে টাকা পাঠানো যায়নি।
এছাড়া শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রী ক্যাটাগরিতে ৬ হাজার ৯৯৯ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৪৬২ জনের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে কে-ওয়াইসি তথ্য হালনাগাদ না থাকায় তাদেরও অনুদানের টাকা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে- যেসব শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা তাদের আবেদনপত্রে দেওয়া নগদ মোবাইল নম্বরে এখনও অর্থ পাননি, তাদেরকে ওয়াইসি তথ্য আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে হালনাগাদ করতে হবে। আর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তথ্য ভুল রয়েছে, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বর, শাখার নাম, রাউটিং নম্বর, হিসাবের নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বাক্ষর এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির প্রতিস্বাক্ষরসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায় নির্ধারিত ই-মেইল ([email protected]) ঠিকানায় পাঠাতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না পাঠালে বা হালনাগাদ না করলে অনুদান বিতরণে বিলম্ব হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি নেই মধ্যবিত্তের। কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দামে। এতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডিম ও মুরগির দামেও স্বস্তি নেই। ব্রয়লার মুরগির দাম খুব বেশি না বাড়লেও সোনালি জাতের মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। এছাড়া সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি ইলিশের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সবজি বিক্রেতারা জানান, আলু ও পেঁপে ছাড়া বাকি সব সবজি ৬০ টাকার বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি সবজির চড়া দামকে আরও উসকে দিয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দামে খানিকটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেলেও বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। প্রতি কেজি সোনালি মুরগির ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।
গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সরবরাহ বাড়লেও ইলিশ এখনো মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। বাজারগুলোতে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা, ৩০০ গ্রামের ইলিশ হাজার টাকা ও ১৫০ থেকে ২০০ গ্রামের ইলিশ ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে এক কেজি শিং চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি শিং ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকায় ও পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে কয়েকদিন আগেও ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন দাম বেড়ে তা ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন, ঝিঙা, কচুর লতি, করলা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এসব সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও বৃষ্টির কারণে এখন সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ঢেঁড়স, পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
তবে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া বরবটি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচামরিচ প্রকারভেদে ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা।
প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান গাজর ১৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, কাঁচাকলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা পিস, কাঁকরোল ৮০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক আঁটি লালশাক কিনতে কমপক্ষে ২০ টাকা লাগছে। লাউশাক কিনতে খরচ হচ্ছে বাজারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কলমিশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত প্রতিআঁটি বিক্রি হচ্ছে। কলমিশাক ২ আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা ও ডাটা শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হওয়ায় সরবরাহ কমেছে ফলে। বেশিরবভাগ সবজির দাম বেড়েছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চালের দাম ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজিরশাইল রয়েছে, যা শুধু ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সব চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মন্তব্য