রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে সারা দেশে আজ পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক।
সোমবার (২১ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় রাষ্ট্রীয় শোক পালনের বিষয়টি জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, শোক পালনের উদ্দেশ্যে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
এ ছাড়া আহত ও নিহতদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
গতকাল দুপুরে দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে ওই প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় পাইলটসহ ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। তবে আহতদের অনেকের অবস্থাই গুরুতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুলের মাঠে আছড়ে পড়ে বলে সোমবার আইএসপিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক শোক প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি আজ থেকে তিন দিন জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে অনুষ্ঠেয় সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে সরকার।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক শোকবার্তায় বলেন, এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে হারালাম। আমি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শোকবার্তায় বলেন, এই দুর্ঘটনা আমাদের জাতির জন্য গভীর বেদনাদায়ক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।
মঙ্গলবার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তদশ দিনের বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
এর আগে, আলোচনার শুরুতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার হতাহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার। সে সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এই শোক প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও কমিশনের সদস্যরা।
নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত বছর এমন সময় আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি। এক বছর পর, আবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা জাতি শোকে মুহ্যমান। কোনো ক্ষতিপূরণই এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য যথেষ্ট নয়। তবুও আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, রাষ্ট্রকে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় দুর্যোগের এই সময়ে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উচিত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো। এই সংকটময় মুহূর্তে সবাই যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহমর্মিতা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
এর আগে, গতকাল দুপুর সোয়া তিনটায় দুর্ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করা হয়।
আজকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত প্রস্তাব তৈরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংক্রান্ত আলোচনা।
ড. আলী রীয়াজ জানান, প্রধানমন্ত্রীর পদে দলীয় প্রধান থাকা যাবে না, এ বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও কয়েকটি দল ভিন্নমত দিয়েছে। তারা জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত করতে পারবেন।
তিনি সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চাই।
বৈঠকে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভা বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যারা অর্থ সাহায্য করতে চান তারা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সেটি জমা দিতে পারবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, আর্থিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে টাকা জমা দেয়ার হিসাবের নাম: প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল।
চলতি হিসাব নম্বর- ০১০৭৩৩০০৪০৯৩
সোনালী ব্যাংক লি:, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কর্পোরেট শাখা।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রতি অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় যুদ্ধ চলমান রয়েছে এবং ২১ মাসের চলমান এই যুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্যারোট বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হোক, যাতে সেখানে কী ঘটছে তা দেখা যায় ও নিশ্চিত করা যায়।’
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক বলে মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এতে বলা হয়, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে নিহত ও আহতের তথ্য থাকছে। কেউ নিখোঁজ থাকলে সে তথ্য থাকছে। এখান থেকে তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। নিহত ও আহত পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনকালে কয়েকজন সেনা সদস্যের শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমান বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও আইন উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের জানান। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের বলেন, আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ নিয়মিত পরীক্ষা শেষে ঘোষণা করা হবে।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া হাটিকুমরুল মহাসড়কে পরপর দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে পথরোধ করে ওষুধ কোম্পানির দুই প্রতিনিধি’র কাছ থেকে নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়।
প্রথম ঘটনার শিকার হন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস-এর প্রতিনিধি মোঃ জমির উদ্দিন (৪৩)সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে তিনি পাটোয়ারী তেল পাম্প থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে লক্ষীকোল বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে একটি পালসার মোটরসাইকেল যোগে তিন যুবক তার গতিরোধ করে নিজেদের ডিবি সদস্য পরিচয় দেয়। তারা দাবি করে, তার কাছে অবৈধ মাদকদ্রব্য রয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেহ তল্লাশি শুরু করে।
জমির উদ্দিন জানান, “তল্লাশিতে কিছু না পেয়ে তারা আমার কাছে থাকা ৯৬০০ টাকা কৌশলে নিয়ে নেয় এবং একটি থাপ্পড় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থল ছিল ফাঁকা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাই জীবন বাঁচাতে আমি প্রতিরোধ করতে পারিনি।”
পরবর্তীতে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে বনপাড়া তদন্ত কেন্দ্রে যান এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ পান। ঘটনাস্থলের নিকটস্থ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এর মাত্র ১৫ মিনিট পর, সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে একই কায়দায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর প্রতিনিধি মোঃ সাইদুর রহমান (৩৫), এর কাছ থেকে ১০২০ টাকা ছিনতাই করে একই চক্র। ঘটনাটি ঘটে মাঝগাঁও ইউনিয়নের সুতিরপাড় বটতলা এলাকার কাছাকাছি, পুলিশ বক্সের সামনে থেকে।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সচেতন মহল এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে।
আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা কলেজ পরিদর্শনে আসেন। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তারা।
সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এখনও তারা ঘটনাস্থলে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। এ সময়ে তাদের ‘ভুয়া, ভুয়া’; ‘লাশ চোর, লাশ চোর, প্রশাসন, প্রশাসন’; ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম পরে কলেজের ৫ নম্বর ভবনের নিচতলায় কনফারেন্স কক্ষে যান। তাদের সঙ্গে কলেজের শিক্ষকেরাও ছিলেন।
সেখানে পাঁচ থেকে সাতজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। এ সময় বাইরে শত শত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ, আহত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা, শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু করা।
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল। সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সভা-সমাবেশ, দলবদ্ধ কর্মসূচি কিংবা অবস্থান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
সোমবার দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৭ জন নিহত হয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৭৮ জন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহত রজনী ইসলামের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল দশটায় কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
রজনী কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে এস এম জুমজুম। মেয়ে জুমজুম আনতেই স্কুলে গিয়েছিলেন রজনী খাতুন। তাদের আরেক ছেলে একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী এস এম রোহান অসুস্থ থাকায় সেদিন স্কুলে যায়নি। বড় ছেলে এস এম রুবাই অন্য একটি কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,প্রায় দুই দশক ধরে জহুরুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন। জহুরুল ইসলাম পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় জানাজা শেষে দশটার দিকে গ্রামের গোরস্থানে রজনীর লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাজাতে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রজনীর লাশ ঢাকার সামরিক হাসপাতাল থেকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। রাত দশটার দিকে পরিবার লাশ নিয়ে দৌলতপুরের গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। ভোরে মেহেরপুরের গাংনি উপজেলার বাওট গ্রামে রজনীর বাবার বাড়িতে লাশ নেওয়া হয়। সেখানে কিচ্ছুক্ষণ রাখার পর লাশ সকাল সাতটার দিকে দৌলতপুরের বাড়িতে রাখা হয়।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেল, বেলা একটার দিকে ক্লাশ শেষ করে জুমজুম ক্যান্টিনে ছিল। স্কুলে মায়ের সাথে তার দেখা হয়নি। কথাও হয়নি। বিমান দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে জুমজুমের খোজে পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য স্কুলে ছুটে যান।
জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যবসার কাজে চট্ট্রগ্রাম ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনার খবর জানার সাথে সাথে করে ঢাকায় আসেন। এরমধ্যে পরিবারের সদস্যরা জুমজুমকে স্কুল থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। কিন্তু তার মায়ের কোন খোজ মেলে না। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন হাসপাতালে খোজ করতে থাকে। একপর্যায়ে এক আত্বীয় ফোন করে জানায় রজনীর লাশ সামরিক হাসপাতালে রয়েছে। দ্রুত সেখানে ছুটে যান। একটু দূর থেকে শাড়ী দেখে চিনতে পারেন রজনীর নিথর দেহ সেটি।
তিনি আরও বলেন,‘যতটুকু দেখেছি তাতে রজনীর মাথার পেছনে আঘাত। শরীরের কোথাও পোড়া চিহৃ নেই। ধারণা করা হচ্ছে বিমান দুর্ঘটনার সময় বিমানের কোন অংশ তার মাথায় আঘাত লেগেছে। এটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। মেনে নেওয়া যায় না। আবার না মেনেও উপায় নেই।’
জহুরুল ইসলামের বড় ভাই আহসানুল ইসলাম বলেন,রজনী তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে খুবই আন্তরিক ছিল। মেয়েকে(জুমজুম) ক্লাশ থেকে আনতে গিয়েই দুর্ঘটনার পড়ে যায়। তার মাথার পেছনে খত দেখা গেছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন,‘সকাল দশটার দিকে লাশ দাফন হয়েছে। নিহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। একটা পরিবারে যে ক্ষতি হল সেটা কখনোই পুরণ হবার না। মায়ের কোন বিকল্প হতে পারে না। সন্তানেরা যাতে ভালো থাকে সেই দোয়া করা হয়েছে।’
মন্তব্য