গত বছরের পাঁচ আগস্টের আগে বাংলাদেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কিংবা মব জাস্টিসের সংস্কৃতি ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও বিএনপি-ঘনিষ্ঠ পেশাজীবী জোটের সমন্বয়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা মব জাস্টিসের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল না। এখন শিশুদের কাছেও এই শব্দগুলো পরিচিত। অনেকেই ২৮ অক্টোবর পল্টনের সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা বলবেন, কিন্তু মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায় লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন। সেদিন ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে অস্ত্র তুলে গুলি এবং মানুষ পিটিয়ে মারার ঘটনা গভীর আলোড়ন তুলেছিল। ২৮ অক্টোবরের আগের দিন এবং পরের দিনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংঘাত হয়েছিল।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ধরে চলা ভোট ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ নেয়। যেটি ফ্যাসিস্টদের পালাতে বাধ্য করে। জনগণকে দাবি আদায়ে আর রাস্তায় নামতে হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, আমরা লক্ষ করছি, ১১ মাস পার হয়ে গেলেও অনেকেই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা লালন করছেন। সুপরিকল্পিতভাবে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।
এ কারণে জনগণ ন্যায্য বিচার নিশ্চিতে বিগত সরকাররে আমলে ধ্বংসপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগকে দ্রুত পুনর্গঠন করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি গণতন্ত্রও বটে। আমরা বারবার বলেছি ৫ আগস্টের ঐক্য নষ্ট কোরো না। পালিয়ে যাওয়া পতিত ফ্যাসিস্টরা তোমাদের ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তোমরা শুনলে না। তাই অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে একদল মানুষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কুৎসিত ভাষায় কথা বলছে। এমনকি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গকারী আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়েও সামাজিকমাধ্যমে বিদ্রুপ করেছে। এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা নয়, এটা ফ্যাসিস্টদের ভাষা।
গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের হাতে প্রচুর লুটের টাকা আর অবৈধ অস্ত্র আছে। তাই তারা প্রকাশ্যে হামলা চালাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনের তারিখ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে জাহিদ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে লুকোচুরি খেলা বন্ধ করুন। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিন। জনগণ যাকে উপযুক্ত মনে করবে, তার হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেবে।
মেহেরপুর জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষা মান বেহাল অবস্থায় পরিণত হচ্ছে। দাখিল পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় এ বছর পাশের হার কমেছে ৪২ শতাংশ। ৩৩ পেয়ে পাশ করার মত ফলাফলও হয়নি ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায়।
জেলায় ২৫টি মাদ্রাসা থেকে ৬৯০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ২২৭ জন। পাশের হার মাত্র ৩২.৮৯ শতাংশ। যেখানে পাশ মার্ক নির্ধারণ হয় ৩৩ এ।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১টি মাদ্রাসা থেকে ৩২৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১০৫ জন। জিপিএ ৫ পায়নি কেউ। এ উপজেলায় পাশের হার ৩২ শতাংশ।
গাংনী উপজেলার ১০ টি মাদ্রাসা থেকে ২৮০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৮৮ জন। এ উপজেলায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ জন। পাশের হার আর কম ৩১.৪২ শতাংশ। এ উপজেলায় শতভাগ ফেল করেছে এমন মাদ্রাসাও আছে একটি।
সে হিসেবে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে মুজিবনগর উপজেলা। এ উপজেলায় ৪টি মাদ্রাসা থেকে ৮৪ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৩৪ জন। জিপিএ ৫ না পেলে পাশের হার ৪০.৪৭ শতাংশ।
গত বছর ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষায় জেলা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলো ৬৫৩ জন। পাশ করেছিলো ৪৮৫ জন। পাশের হার ছিলো ৭৪.২৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিলো ১১ জন।
মেহেরপুর জেলার ২০২৪ ও ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। ফলাফল বিপর্যয় ঠেকাতে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ, অভিভাবকদের সচেতনতা ও শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাদ্রাসা ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে সদর উপজেলার মেহেরপুর দারুল উলুম আহম্মদিয়া কালিম মাদ্রাসায় ৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জন পাশ করেছে। পাশ এর হার ৪৪ শতাংশ। আমঝুপি ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ৪৫ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ২৭ জন। পাশের হার ৬০ শতাংশ। গোভীপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৮ জন। পাশের হার মাত্র ২৯ শতাংশ।
নতুন দরবেশপুর দাখিল মাদ্রাসায় ৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৫ জন। পাশের হার মাত্র ১৩ শতাংশ। রাজনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬ জন।
পাশের হার ১৭ শতাংশ। তাঁতীপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩ জন। পাশের হার ১৩ শতাংশ। ইসলামনগর হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩ জন। পাশের হার ৬৫ শতাংশ। কুলবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৩ জন। পাশের হার ১৪.২৯ শতাংশ।
কোলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৮ জনের মধ্যে পাস করেছে ২ জন। পাশের হার ১১ শতাংশ। পিরোজপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩৩ জনের মধ্যে পাস করছে ১৪ জন। পাশের হার ৪২ শতাংশ। আশরাফপুর দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৫ জন। পাশের হার ২৪ শতাংশ।
মুজিবনগরের মানিকনগর ডিএসএ আলিম মাদ্রাসা থেকে ২৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১৩ জন। পাশের হার ৪৪.৮২ শতাংশ। দারিয়াপুর গাওছিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১৪ জন। পাশের হার ৫১.৮৫ শতাংশ। শিবপুর দারুল কুরআন দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৯ জনের মধ্যে পাশ করেছে ৩ জন। পাশের হার ৩৩.৩৩ শতাংশ।
আয়েশা নগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৪ জন। পাশের হার ২১.০৫ শতাংশ।
গাংনী উপজেলার কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬ জন। পাশের হার ২০ শতাংশ । সাহারবাটি কলোনিপাড়া আল মারকাজুল মাদ্রাসায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ২১ জন। পাশের হার ৫৬.৭৫ শতাংশ ।
গাংনী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৩৭.৫ শতাংশ । হাড়াভাংগা দারুল হাদি ফাজিল মাদ্রাসায় ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ জন। এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ১ জন। পাসের হার ১৯.৩৫ শতাংশ। করমদি দারুস সুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১০ জন। পাশের হার ৪৭.৬১ শতাংশ। বাদিয়াপাড়া মহসিনা দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ জন। পাশের হার ২৮.৫৭ শতাংশ। মানিকদিয়া আগারপাড়া আলিম মাদ্রাসায় ৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৪৬.৮৭ শতাংশ । পীরতলা দাখিল মাদ্রাসায় ১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ পাশ করে নি। আইদা কলিম দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮ জন। পাশের হার ২৬.৬৬ শতাংশ। বামুন্দী দাখিল মাদ্রাসায় ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ জন। পাশের হার ৫ শতাংশ।
শতভাগ ফেল করা গাংনীর পীরতলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শরিফুল ইসলাম বলেন, কেন যে কেউ পাশ করলো না বুঝতে পারছি না। গতবছর ১৮ জন পরীক্ষা দিয়ে ৭ জন পাশ করেছিলো। আমাদের আশা ছিলো এবারও ৬/৭ জন পাশ করবে।
সদর উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমঝুপি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মোহাম্মদ আলী লাল্টু বলেন, “সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত, দুর্বল সন্তানকে অভিভবাবকরা মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়ে অভিভাবকরা অসচেতন। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার সিলেবাস বেশি।
ফলে একেতো দুর্বল শিক্ষার্থী তার উপরে সিলেবাসের চাপ যে কারণেই মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে থেকেও শিক্ষকরা দুর্বল শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে চেষ্টা করছেন তাদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন করার। তবে কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রেজাল্ট বেশি খারাপ বলেও তিনি স্বীকার করেন।
মেহেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হযরত আলী বলেন,“শুধু মাদ্রাসা না জেলাতেই এবার এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে। আমি সকল মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের ডাকবো। কিভাবে আগামী বছর থেকে ভালো ফলাফল করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া এবং পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর সন্ত্রাসী বাহিনী আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা কাকন বাহিনীর আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। এসময় তিনটি বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদকদ্রব্য, একটি মাথার খুলি, ১২ লক্ষাধিক নগদ টাকা সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নানা সরঞ্জামাদী উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজি ও অবৈধ বালু মহলের টাকার ভাগবাটোয়ারার তালিকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈশ্বরদীর সাড়া ঘাট, লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেনাবাহিনীর পাবনা ও নাটোর ক্যাম্পের সদস্যরা এই অভিযান পরিচালনা করেন।
আটককৃতরা হলেন- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার সাতবাড়িয়ার দক্ষিন ভবানীপুরের মৃত আজিজুল হকের ছেলে ও আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের ভায়রা ভাই মেহেফুজ সোহাগ (৪০), ঈশ্বরদীর আরমবাড়িয়ার মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি (৩০), লালপুরের কাইগি মারির চর এলাকার ভাষানের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৫৫)। আটকৃতরা আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের লোক বলে জানা গেছে।
বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, পাবনার ঈম্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর, নাটোরের লালপুর সহ বিভিন্ন এলাকার বালু মহলের নিয়ন্ত্রণ করছেন লালপুরের সন্ত্রাসী বাহিনীখ্যাত ‘কাকন বাহিনী’। অধিকাংশ ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিলেও সাড়া ঘাটের বৈধ ইজারাদার থাকায় সেই ঘাট নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়। এই ঘাটে গত ৫ জুন ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী, যারা সারা দেশে ভাইরাল হয় এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কয়েকদিন থেমে ছিল। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত শনিবার সকালে আবারও ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী। স্পিডবোর্ড ও নৌকার মাধ্যমে এসে এলোপাথারি গুলি চালায়। এসময় ঘাস কাটতে গিয়ে গরুর রাখাল সোহান হোসেন গুলিবিদ্ধ হোন। এমন বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে সেনাবাহিনী আজকে বড় ধরেনর অভিযান চালায়।
অভিযানে বিদেশি তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, দেশী রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, নির্যাতনের স্টিমরোলার, গোলাবারুদ, পেন্সিডিল, ইয়াবা, গাজার গাছ, মোবাইল, সিমকার্ড, মাথার খুলি, ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও নাটোরে ডিসি, সার্কেল এসপি, নৌ পুলিশ, থানার ওসি, টহল পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাশোয়ারার টাকা কে কত পার্সেন্ট, প্রতিদিন, সপ্তাহে ও মাসে পান সেসবের দুটি ভলিউম বই ও উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতদের দেয়া তথ্য এবং উদ্ধার হওয়া তালিকায় দেখা গেছে, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশকে মাসে ৪ লাখ টাকা, নাটোরের ডিসিকে মাসে এক লাখ টাকা, সার্কেল এসপিকে ৫০ হাজার টাকা ও বাগাতিপাড়া থানার ওসিকে ২৫ হাজার টাকা, নাটোরের এখন টেলিভিশনের সাংবাদিককে ২৫ হাজার টাকা, এশিয়ান টেলিভিশনের পায়েল হোসেন রিন্টুকে সপ্তাহে ৫ হাজার করে দেওয়া হয়।
অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈশ্বরদী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-অপতৎপরতা নির্মূলে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আটক মেহেফুজ সোহাগ ও বাপ্পি বলেন, আমরা এখানে নৌকা চালাই ও ক্যাশিয়ারের কাজ করি। কাকনবাহিনী এই অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখানে রাতে মাদক সেবন ও বিক্রি, অস্ত্র কারবারি ও নারীদের নিয়ে এসে আনন্দ ফূর্তি করা হয়। কাকন বাহিনীর লোকজনের বাড়ি থেকে বিদেশি অস্ত্র, দেশী অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, নগদ টাকা সহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি পেয়েছে। এগোলো দিয়ে কাকন বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
রাজশাহীর বাঘার বালু মহলের বৈধ ইজারাদার মিজানুর রহমান সরকার বলেন, আমরা সরকারের থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে আসছি। কয়েক বছর ধরেই কাকনবাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিটি নৌকা থেকে জোরপুর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। টাকা দিতে না চাইলে নৌকা যেতে দেয় না। আজকে সেনাবাহিনীর অভিযান ঐতিহাসিক অভিযান বলে মনে করছি। সেনাবাহিনীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
নাটোরের লালপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিমুনজ্জান বলেন, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশ এজাহার দিলে মামলার মাধ্যমে গ্রেফতার দেখিয়ে নাটোরের কারাগারে পাঠানো হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আজিম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নেওয়া হবে বলে ফোন কেটে দেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন বলেন, আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। আমার সার্কেল অফিসার ও দুই ওসির ব্যাপারে যেটি বললেন ডকুমেন্টসগুলে দেন, এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জুলাই গণঅভ্যুন্থান দিবস উদযাপন উপলক্ষে ১৮ জুলাই শুক্রবার সকালে শেরপুরে প্রতীকী ম্যারাথন হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের তিনআনি বাজার কলেজ মোড় শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রতীকী ম্যারাথনটি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাধবপুর পৌরপার্ক সংলগ্ন নির্মাণাধীন জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। প্রতীকী ম্যারাথনের উদ্বোধন করেন জেলাপ্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো.মিজানুর রহমান ভুঁইঞা, প্রেসক্লাব সভাপতি কাকন রেজা, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এবিএম. মামানুর রশীদ পলাশ, জেলা জামায়াতের আমীর মো. হাফিজুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মামুনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে অতিথিরাসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের
সদস্য, আহত যোদ্ধা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনীতিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, ক্রীড়াবিদ ও সুধীবৃন্দ সহউপস্থিত সকলের অংশ গ্রহণে প্রতিকী ম্যারাথনটি অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় গোটা জেলায় কারফিউ জারির আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্র বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই দেখা যায়, জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। দু-একটি ছোট যানবাহন ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি।
বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় পুলিশের কাজে বাধা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আজ গোপালগঞ্জ থানার মামলাটি দায়ের করা হয়।
সূত্র জানায়, এ মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কারফিউ চলায় শহরের ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা এবং সেবাপ্রত্যাশীরা। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গোটা গোপালগঞ্জে এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
আজ সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের তৎপরতা বাড়তে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।
কারফিউ আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে। এরপর সন্ধ্যায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউ শিথিল অথবা বাড়ানো হতে পারে।
এর আগে, বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ শুরু হয়। চলে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে কারফিউর সময় আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউয়ের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
এ সময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, গোপালগঞ্জে বুধবারের (১৬ জুলাই) সহিংসতায় চারজন নিহত এবং ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত ৪ জনের লাশ পোস্ট মর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায় বলে জানান।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন যত অবস্থায় রমজান নামের আরও একজনের মৃত্যু হয় এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, সারা দেশে মাসব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে তারা এটিকে ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে নামকরণ করেন। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গোপালগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এটি প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে পথে বাধা পায়। সকালে পুলিশ এবং ইএনওর গাড়িতে হামলা চালানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের দায়ী করা হয়।
দুপুরে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। হামলার কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছান এনসিপির নেতারা। তারা সেখানে স্লোগান ও বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে তারা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলে তাদের গাড়িবহর ঘিরে হামলা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিবৃতি এই উদ্বেগ প্রকাশ করে দলটি।
এতে দলটি বলেছে, ‘চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে বিএনপি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সেখানে চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।’
দলটি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
একই সঙ্গে বিএনপি স্থানীয় প্রশাসনকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং মিথ্যা মামলা ও চাঁদাবাজি থেকে নিরীহ ব্যবসায়ীদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘রাজধানীর পরে, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর। বন্দর নগরী হিসেবে, চট্টগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য এখান থেকেই পরিচালিত হয়। তাই, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য এই শহরে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি অপরিহার্য।’
দলটি বলেছে, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে বর্তমানে মিথ্যা মামলা এবং ব্যাপক চাঁদাবাজি ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার করছে, যার ফলে চট্টগ্রামে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এমন খারাপ পরিস্থিতি ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদি এটি অব্যাহত থাকে—তাহলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়তে পারে।’
'আমের বাণিজ্যিক রাজধানী সাপাহার' স্লোগানে আম চাষে প্রসিদ্ধ নওগাঁর সাপাহারে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল (উৎসব)।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ, সাপাহার আল হেলাল ইসলামী একাডেমির অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও আমচাষী রফিকুল ইসলাম, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রায়হান আলম প্রমুখ।
ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালে রয়েছে দেশি-বিদেশি বাজারে আম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল, আমজাত খাদ্যদ্রব্য, প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চাষিদের প্রোফাইল এবং আমের নানা জাতের প্রদর্শনী। মেলায় মোট ৪০টি স্টল রয়েছে।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আম বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এ উৎসবের মাধ্যমে নওগাঁর আমকে আরও সুপরিচিত করে তোলা যাবে। সাপাহারকে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
আম চাষিদের দাবি, নওগাঁর অধিকাংশ বাগানে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় রপ্তানি হয় খুবই সামান্য। রপ্তানি বাড়াতে না পারলে আমের কাঙ্খিত দাম পাবেন না আমচাষিরা। তাতে ভালো আম উৎপাদনে আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব হবে।
আমচাষি সোহেল রানা বলেন, 'রপ্তানির আম দূষণমুক্ত করতে হয়। না হলে আম ফেরত আসার ঝুঁকি থাকে। এর জন্য দরকার ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (VHT)। আবার আম বাছাইয়ের জন্য প্যাকিং হাউস ও সহজে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টিন) সনদ পেতে নওগাঁতে কৃষি বিভাগের সঙ্গনিরোধ শাখা স্থাপন করা দরকার। সরকারিভাবে এই সুবিধাগুলো যেন করা হয় সেই দাবি জানাতে চাই প্রশাসন ও সরকারের আছে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম আহমেদ বলেন, আম উৎপাদনে সাপাহার দেশের শীর্ষস্থানে থাকলেও চাষিরা এখনও বঞ্চিত। এখানে অধিকাংশ বাগানে রপ্তানিযোগ্য আম চাষ হয়ে থাকে। এখানকার চাষিরা আমকে একটি শিল্পে পরিণত করেছে। বর্তমানে সাপাহারে ২০ হাজারের বেশি আমচাষি রয়েছেন এবং ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়। গত বছর এই অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আম লেনদেন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'রপ্তানিকারকদের উদ্দেশ্য আমি বলতে চাই, সাপাহারের আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও ভালো মানের। আপনারা সাপাহারের আম বিদেশে রপ্তানি করুন।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, 'আমের চাষকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে নওগাঁর। এ অঞ্চলে এখন সারা বছর আম উৎপাদিত হয়। সারা বছর আম খেতে চাইলে সাপাহারে আসতে হবে। আম চাষের চালেঞ্জ হলো রপ্তানির অভাব। বর্তমানে বিদেশে প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি আছে তাদের চাহিদাই পূরণ করতে পারি না। এমনকি বিদেশিদের মাঝেও বাংলাদেশের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর জন্য আম রপ্তানির যে বাধাগুলো আছে সেগুলো দূর করতে হবে। নওগাঁতে ভিএইচটি প্ল্যান্ট ও প্যাকিং হাউজ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠি পৌরসভাটি কাগজে প্রথম শ্রেনীর তালিকায় থাকলেও বাস্তবে তৃতীয় শ্রেনীর মতই। পৌর কর দেয়া বাসিন্দারা বৃষ্টির জলে খাচ্ছে হাবুডুবু। সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়েছে ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকা।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণকাঠিতে পানিবন্ধী হয়ে আছে প্রায় ২০০ পরিবার। এখানকার ঘরবাড়ি মাসব্যাপী পানিতে তলিয়ে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এমন ভোগান্তি দশ বছর ধরে পোহাতে হচ্ছে।
সেলিম তালুকদার, আলম হাওলাদার, মিল্টন তালুকদার, সাইদুল ইসলাম, এডভোকেট শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ির বাসিন্দারা দুর্ভোগের কথা সার্চ বিডি নিউজকে জানিয়েছেন।
পানিবন্দি বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি ডুবে যায়। বিশেষ করে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা পরিষদ ভবনের আশপাশ এলাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।
"বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যাচ্ছেনা। রান্নাঘরেও পানি উঠে গেছে। প্রাইভেট টিচার পানি পেরিয়ে ঘরে আসতে চায়না। পৌরসভাকে বারবার বলেও কোনো কাজ হয়নি। এমনটাই জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদা বেগম, সেলিম তালুকদার, সাইদুল ইসলামসহ অনেকে।
এলাকাবাসীর দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ যদি ড্রেন তৈরি বা পাইপ দিয়ে নদীতে পানি নামিয়ে দিতো অথবা সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না। সাবেক মেয়রদের গাফিলতির কারনেই আজ পানিবন্দি থাকতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ড্রেনেজ সমস্যা আমরা জানি। তবে সাবেক মেয়রদের আমলে বাজেট ও জনবলের সংকটের কারনে সময়মতো কাজ করা হয়নি না।'
ভুক্তভুগিদের মতে, পৌরসভা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করে, তবে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জনদুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে।
এদিকে বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছে পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা। তাদের দাবি দ্রুত সময়য়ের মধ্যে জলাবদ্ধতার টেকসই সমাধান করে দিতে হবে। অন্যথায় তারা পৌর কর দেয়া বন্ধ করা এবং পৌরসভা ঘেরাও সহ কঠোর কর্মসুচি দিবেন।
তবে অনেকটা আশার বানী শোনালের পৌর প্রশাসক কাওছার হোসেন। তিনি জানান, 'শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে রেকর্ডিও খালগুলো পুণ:খনন করা হচ্ছে। কৃষ্ণকাঠি এলাকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
মন্তব্য