দুই দিন বিরতি দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ রবিবার রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে।
রবিবার (২২জুন) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
এতে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। আগের আলোচনার সমাপ্তি টানতেই আজকের এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন-নিউজ সরাসরি সম্প্রচার করছে। বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এর আগে, গত ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর তার পরের দিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল দলটি।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
গত সপ্তাহের সংলাপের অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই বিষয়গুলোতে একদিকে রয়েছে বিএনপি এবং সমমনা পাঁচটি দল; তাদের কাছাকাছি অবস্থান বামপন্থি সিপিবি, বাসদের। বিএনপির বিপরীত অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ বাকি দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি, জেএসডির অবস্থানও বিএনপির বিপরীতে।
নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবের বিপক্ষে অনড় অবস্থান ধরে রেখেছে বিএনপি এবং সমমনা এলডিপি, এনডিএম, লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট এবং ১১ দলীয় জোট।
চার দিনের সংলাপে ৩০ রাজনৈতিক দল এবং জোট শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিলে শর্ত সাপেক্ষে ঐকমত্য হয়েছে। যদিও জামায়াত বলেছে, শুধু অর্থবিল এবং আস্থা প্রস্তাব নয়, সংবিধান সংশোধনেও এমপিরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। বিএনপি বলেছে, যুদ্ধাবস্থায়ও দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না এমপিরা।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশগ্রহণ করা সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ বারবার সরে যেতে বললেও স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ এবং প্রেসক্লাব ফাঁড়িতে বসেই তাদের কথা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভাইভায় রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীকে ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন তারা এনটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র- এমন আশঙ্কার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে রহস্যময় জাম্বো জেট। বিশালাকার সেই বিমানটি চোখে পড়তেই সাধারণ মার্কিনিদের চোখ কপালে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের একাংশের দাবি, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই কারণে গুপ্তঘাঁটি থেকে অতিশক্তিশালী ওই বিমানকে বের করেছে মার্কিন বিমান বাহিনী। যদিও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার রাজধানী ওয়াশিংটনের যুগ্ম সামরিক ঘাঁটি ‘অ্যান্ড্রুজ’-এ হঠাৎই অবতরণ করে মার্কিন বিমান বাহিনীর রহস্যময় জাম্বো জেট ‘ই-৪বি নাইটওয়াচ’। কেউ কেউ অবশ্য একে ‘ডুম্সডে’ (কেয়ামত) উড়োজাহাজ বলেও উল্লেখ করে থাকেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে’ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার সময়ে শেষ বার বিমানটিকে ওয়াশিংটনে উড়তে দেখা গিয়েছিল। প্রায় আড়াই দশক পর গায়ের ধুলো ঝেড়ে ‘নাইটওয়াচ’-এর প্রকাশ্যে আসাকে কেন্দ্র করে তাই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ‘৭৪৭-২০০’ মডেলের ‘নাইটওয়াচ’ বিমানটিকে দীর্ঘ দিন ধরেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে আসছে মার্কিন সরকার। এটি মাঝ-আকাশে ‘ন্যাশনাল এয়ারবর্ন অপারেশন্স সেন্টার’ বা এনএওসি হিসাবে কাজ করে থাকে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের কাছে এর পরিচয় ‘উড়ন্ত পেন্টাগন’। পরমাণু যুদ্ধ বা ওই ধরনের কোনো জরুরি অবস্থা তৈরি হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা এবং পারমাণবিক যুদ্ধের সময় কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশে এটি নির্মাণ করেছে বোয়িং।
পেন্টাগন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের হাতে মোট চারটি ‘নাইটওয়াচ’ বিমান রয়েছে। এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট কমান্ডের হাতে। সংশ্লিষ্ট বিমানটি সরাসরি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএমের (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল) ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম।
এদিকে বিমানটিতে অত্যন্ত কম এবং উচ্চ কম্পাঙ্কের দুধরনের অ্যান্টেনা রয়েছে, যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যোগাযোগ করতে পারেন পাইলট ও ক্রু সদস্যেরা। শুধু তাই নয়, এই বিমানটিকে সব সময় সর্বশেষ প্রযুক্তিতে আপডেট করার প্রক্রিয়া চালু রেখেছে পেন্টাগন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জাম্বো জেটের পারমাণবিক বিস্ফোরণ, তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র এবং যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক হামলা সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। সেই কারণে বিমানটিতে কোনো জানালা রাখা হয়নি। একবার জ্বালানি ভরলে ৭ হাজার মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে বিমানটি। তবে এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন আকাশেও থাকতে পারে, কারণ আকাশেই জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা রয়েছে এতে। এছাড়াও বিমানে রয়েছে আধুনিক ডিজিটাল যোগাযোগ ও সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা।
‘নাইট ওয়াচ’ সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা হলো, এটি একদিকে যেমন পরমাণু অস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে আবার পারমাণবিক যুদ্ধের সময় একে কমান্ড সেন্টার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে ওয়াশিংটন। আর ঠিক সেই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ইরানে হামলার জন্য বিমানটিকে কি পশ্চিম এশিয়ায় নিয়ে যাবে মার্কিন বিমান বাহিনী?
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে মার্কিন বিমান বাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজন পড়তে পারে বলেই ধারণা করছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, গত শতাব্দীতে ‘স্নায়ু যুদ্ধের’ সময়ে প্রথম বার পরমাণু হামলা সহ্য করার মতো উড়োজাহাজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে যুক্তরাষ্ট্র। সেইমতো ১৯৭০-এর দশকে বোয়িংয়ের হাত ধরে জন্ম নেয় ‘নাইটওয়াচ’। কারণ স্নায়ু যুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) থেকে পরমাণু হামলার আশঙ্কায় ভুগছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ধারণা ছিল- যেকোনো সময় পারমাণবিক হামলা চালাবে মস্কো। তখন পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রয়োজন হবে ‘ডুম্সডে’ বিমানের।
কিন্তু ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। তার পর থেকে আর কখনোই একে ওড়ায়নি মার্কিন বিমান বাহিনী। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মহড়ায় অংশ নিয়েছে ‘ডুম্সডে’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিদেশ ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’- এর ব্যাকআপ হিসেবেও মাঝেমধ্যে নাইটওয়াচকে ব্যবহার করেছে ওয়াশিংটন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
রবিবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও উপস্থিত ছিলেন।
এমন এক সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন ফখরুলসহ বিএনপির আরও আট নেতার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আজই বেইজিং সফরে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
নেত্রকোণার বিএনপি দলীয় জেলা কার্যালয় ভাংচুর ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে নেত্রকোণা জেলা শহরের উত্তর সাতপাই এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নেত্রকোণা সদর মডেল থানার সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেল ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পদে দ্বায়িত্বরত ছিলেন। বর্তমানে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও রাসেল তা অমান্য করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তাছাড়া শুক্রবার সকালে হওয়া আওয়ামীলীগের মিছিলে সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেল পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল বলেও জানায় পুলিশ।
এব্যাপারে নেত্রকোণা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) চম্পক দাম জানান, সৈয়দ ওয়াসিউল্লাহ্ রাসেলকে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর ও নাশকতার ঘটনায় পরবর্তীতে দায়ের করা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
দেশের কৃষি প্রধান খাদ্য উদ্বৃত্ত ও সর্ববৃহৎ ধান ও চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ। বোরোর মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফসল ভালো হয়েছে, আবার ফসল নষ্টও হয়নি। তারপরও নওগাঁয় অস্থির চালের দাম।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা। পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় স্থানীয় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। খুচরা বাজারে বেড়েছে ৫-৬ টাকা। এদিকে ঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু ব্যবসায়ী ও মিলার ধান সংগ্রহ করে কৃত্রিমভাবে চাল মজুদ করে, যার ফলে দাম বেড়ে যায় বলে দাবি খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের। এজন্য প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে দায়ি করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বড় চালের মোকাম শহরের আলুপট্টি চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে জিরাশাইল ৬৮-৭০ টাকা, শুভলতা ৬০-৬২টাকা, কাটারি ৭০-৭২, ব্রি আর-২৮ চাল ৬২-৬৪ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৫-৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও জিরাশাইল ৬৪-৬৬ টাকা, কাটারি ৬৬-৬৮ টাকা,শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ জাতের চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ চাল ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৭০-৭২ টাকা, কাটারি ৭৫-৮০ টাকা, শুভলতা ৬২-৬৪ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬৫-৬৬ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহে আগে জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, কাটারি ৭০-৭২ টাকা, শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫২-৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
চাল কিনতে আসা রিক্সা চালক আশরাফুল আলম ও গৃহিণী রেকেয়া বেগম বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ হঠাৎ এমনভাবে চালের দাম বাড়লে আমরা বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছি। শুধু চাল নয় আরও অনেক জিনিসপত্র কিনতে হয় সবমিলে কঠিণ হয়ে যাচ্ছে জীবন ধারণ।
কথা হলে পৌর ক্ষুদ্র চালবাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, বড় বড় বয়বসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছে। ছোট ব্যবসায়ীরা বড় বড় মিলারদের সাথে পেরে উঠতে পারছে না। এটা পুরো একটা সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে যে ধান আছে, তা দিয়ে একবছর চলে যাব। সরকারি নজরদারি না থাকার সুযোগে কৃত্রিম মজুদ করেছে তারা। তাই বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অভিযান দরকার।
বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে যার ফলে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে দাবি করে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, চালের দাম সাধারণ ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৬ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানির। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। যার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমরা বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ চাই। এই জন্য আমাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর দৃশ্যমানভাব যেসকল মিলে অতিরিক্ত মজুদ আছে সেখানে অভিযান চালনো উচিত। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে চাইলে ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার বলেন, চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি) কর্মসূচি সচল রাখা হয়েছে। অবৈধ মজুত খুঁজে বের করতে জেলার বিভিন্ন মিল পরিদর্শন করা হচ্ছে। কোথাও অবৈধ মজুত পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, চালের দাম কি কারণে বেড়েছে এই জন্য খাদ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। তারা যেন প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে যদি অপরাধ মনে হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে শনিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাইফুল ইসলাম এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বেলাল শিকদার।
এসব তথ্য জানিয়ে শাবি প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দেবো। এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রী বাদি হয়ে সিলেটের কতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আদনান ও পার্থকে বৃহস্পতিবার রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা দু'জনই শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসীূচতে তাকে দেখা গেছে। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড দল ‘নোঙর’-এরও সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী স্বাগত দাস পার্থ গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তার ফেসবুকে প্রোফইলেও জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে ছবি যুক্ত রয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পার্থ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দৃক থিয়েটার’-এর কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালের শৃঙ্খলা-বডি সূত্রে জানা যায়- গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করেন। পরে ওইসকল ভিডিও ও নগ্ন ছবি দেখিয়ে আদনান এবং পার্থ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং ঘটনা জানাজানি করলে ভিডিও ও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ আদনান এবং পার্থকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদেরকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বর্তমানে অপরাধীরা পুলিশ হেফাজতে আছে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে।'
মন্তব্য