মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষায় ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসায় পরিবেশের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। গতকাল সোমবার বিকালে অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই বাজেট পেশ করেন।
প্রথমবার বাজেট দিতে গিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ব্যয় কমিয়েছেন ৭ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের চেয়ে কমল। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রাখতেই ঘাটতি কমিয়ে বাজেটের আকার ছোটো রাখার কথা বলেছেন তিনি। উপদেষ্টা বলেছেন, আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যে নতুন বাজেটে স্বল্প আয়ের মানুষকে ‘স্বস্তি’ দেওয়ার চেষ্টার পরিকল্পনা থাকছে বাজেটে।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতার মতো অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু থাকছে; অল্প হলেও ‘বাড়বে’ ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা। ‘জুলাই আন্দোলনে’ সম্পৃক্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বড় আকারে ব্যবস্থা থাকা ‘দরকার’ মনে করছে সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। যার সংস্থান হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা । আর ঘাটতি বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা।
এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ এক লাখ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বা ৫.২৫ শতাংশ থেকে কিছুটা বেশি।
অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে ৩.৯৭ শতাংশ হয়েছে, যা চূড়ান্ত হিসাবে কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বৃদ্ধি পাবে এবং মধ্যমেয়াদে ৬.৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করছি।
সরকার আশা করছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত (সংশোধিত) প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ৬ শতাংশ এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।
গত বছর বাজেটের সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিলেন।
বাজেটে প্রথমবারের মতো যুব উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।তিনি বলেন, তরুণ-যুবাদের দেশের উন্নয়নে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য এই বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে সারা দেশে সফল যুব উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের সিলিং বৃদ্ধি করে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অর্থ বিল অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও অন্যান্য উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ না থাকায় আগামী ৩০ জুন রাষ্ট্রপতি বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন, ১ জুলাই কার্যকর হবে নতুন বাজেট। তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে ট্যাক্স ও কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়গুলো উপস্থাপনের দিন (২ জুন) থেকেই কার্যকর হবে।
এর আগে সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এটি প্রথম বাজেট।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ দুপুরে বাসস’কে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, পবিত্র ঈদ উল আযহা উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতুতে ট্রেনের ধাক্কায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৩ জন নিহতের ঘটনায় তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া, এ ঘটনায় ৪ জন রেল কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী।
বরখাস্ত হওয়া চার রেলকর্মী হলেন— পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা (হেড কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম), লোকো মাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকো মাস্টার আমিন উল্লাহ, এবং অস্থায়ী গেট কিপার (টিএলআর) মাহবুব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে ওই দুর্ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবহন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—চট্টগ্রাম বিভাগের ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো), ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার-১ ও পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ঢাকা অভিমুখী একটি ট্রেন সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে একটি শিশুসহ তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতুতে প্রবেশ করামাত্র অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এ ছাড়াও মোটরসাইকেলস আরও কয়েকটি ছিল যানবাহনে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি।
আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকায় নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীজুড়ে ৫০০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ঈদের নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে এবং সারাদেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
তিনি জানান, জাতীয় ঈদগাহে যারা নামাজ আদায় করবেন, তাদের নিজস্ব জায়নামাজ আনতে হবে না, কারণ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছুটির মধ্যেও সারাদেশে দায়িত্বে রয়েছে।’
ঈদের ছুটিতে প্রায় ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা শহরের অলিগলিতে ৫০০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো ঘটনা ঘটে—আমরা এমন ঘটনাও রোধে কাজ করছি।’
থানায় মামলা করতে না পারার অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,‘যদি কোনো কর্মকর্তা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রী হয়রানির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, আমরা এটির তদন্ত করছি।’
অপরাধী গ্রেপ্তার করার কয়েকদিন পরে বের হয়ে আরও বেশি অপরাধে জড়িয়ে যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনন, ‘এটা তো আর পুলিশের হাতে না। এটা আদালতের বিষয়। কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন, দুজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাড়া পাওয়ার পর আবারও অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এমন যদি কেউ অবৈধকাজে জড়িয়ে যায় তাহলে তাকেও ছাড়া হবে না, পুঁটিমাছ কিংবা রুই কাতলা হোক কাউকে ছাড় নেই। আইন সবার জন্য সমান।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার নিরাপত্তা নিয়ে আমি ১০০ ভাগ কনফিডেন্ট আছি।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের কৃষক সোহাগ মৃধার উপহারের কোরবানির গরু ‘কালো মানিক’ গ্রহণ করেননি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোহাগকে এলাকায় ফিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোরবানি ঈদ উদযাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ রাতে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ‘কালো মানিক’ নামের আদরের ষাঁড়টি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন সোহাগ মৃধা। রাজধানীতে পৌঁছানোর পর বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে গরুটি উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বেগম খালেদা জিয়া তা গ্রহণ না করে সোহাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে তার পরিবারের জন্য ঈদের বিশেষ উপহারও পাঠান।
ডা. জাহিদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোরবানির পশু উপহার দেওয়ার জন্য সোহাগ মৃধা ও তাঁর পরিবারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। দলীয় চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে তাকে ঈদের উপহারও পাঠানো হয়েছে।
সোহাগ মৃধার পরিবারের সদস্যরা জানান, কালো মানিক নামের ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। কুচকুচে কালো রঙের হওয়ায় স্থানীয়রা আদর করে নাম রেখেছেন ‘কালো মানিক’। ষাঁড়টির জন্য ১০ লাখ টাকা দাম উঠলেও সোহাগ তা বিক্রি করেননি।
সোহাগ মৃধা জানান, তিনি গণতন্ত্রের মাকে (বেগম খালেদা জিয়া) এই গরুটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে এক কৃষকের গরু উপহার দেন। ওই ঘটনা দেখে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তখনই তাঁর মনে ইচ্ছা জাগে, সুযোগ পেলে প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিনিও একটি গরু উপহার দেবেন।
২০১৮ সালের শেষ দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান গাভি কেনেন সোহাগ। সপ্তাহ না যেতেই গাভিটি একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভিটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাছুরটি পরিবারের সবাই মিলে ছয় বছর ধরে দেশীয় খাবার আর যত্ন দিয়ে লালন-পালন করেন। এই বাছুরই আজকের বিশালদেহী ‘কালো মানিক’।
বিএনপির আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোহাগ মৃধা একজন নিবেদিতপ্রাণ বিএনপি কর্মী। পরিবারের সহায়তায় ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি তিনি দীর্ঘদিন ধরে লালন-পালন করেছেন।
সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘ওর মন চাইছে, তাই ও উপহার দিতে চায়। আমরা খুশি। ওর বাবা নেই। সামান্য জমি চাষ করেই সংসার চালায়। ছোটবেলা থেকেই ও বিএনপিকে ভালোবাসে।’
সোহাগের স্ত্রী সুলতানা আক্তার পলি বলেন, ‘কালো মানিক আমার ছোট ছেলের বয়সী। দুজনকেই সমানভাবে স্নেহ-ভালোবাসায় লালন-পালন করেছি। ছেলের বাবার ইচ্ছা ছিল প্রিয় নেত্রীকে এটি উপহার দেবে, তাতে আমরাও খুশি।’
পদ্মা সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ টোল আদায়ের রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) গত বছরের একদিনে সর্বোচ্চ প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টাকার টোল আদায়ের রেকর্ড ভেঙে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা টোল আদায় করা হয়।
ঈদুল আজহার ১০ দিনের লম্বা ছুটির প্রথম দিনেই এই রেকর্ড হয়েছে। তবে ছুটি ছাড়াই আগের দিন বুধবার (৪ জুন) পদ্মা সেতুতে একদিনে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকারও বেশি টোল আদায় করা হয়েছে। এদিন ৩৭ হাজার ৪৬৫ গাড়ি পারাপার হয়েছে সেতুটি দিয়ে।
বৃহস্পতিবার মাওয়া প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে ৩৫ হাজার ৯৮৫টি যান। এতে মাওয়ায় টোল প্লাজায় টোল আদায় হয় ৩ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা।
আর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে ১৬ হাজার ৫০২টি যান। এসব যানবাহন থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে বলে জানান আলতাফ।
এর আগে, ২০২২ সালের ২৬ জুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু তিন বছর পূর্তি। এ পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৪৫২ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি । এই সময়ে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৪ হাজার ২১৮ যান পারাপার হয়েছে।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর সীমান্তে ঈদ-উল আযহাকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তায় পুশ-ইন, গবাদি পশু চোরাচালান ও পশুর চামড়া পাচার রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সর্বোচ্চ সতর্ক ও কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার প্রাগপুর বিজিবি ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, ৪৭ বিজিবি ব্যাটায়িলনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় খামারিদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বিজিবি ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় গরু চোরাচালান রোধে অতিরিক্ত টহল, অস্থায়ী চেকপোস্ট, গোয়েন্দা নজরদারি ও বিশেষ অপারেশন ব্যবস্থা চালু করেছে।
একইভাবে, ঈদের পর কোরবানির চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় স্থানে ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ও মোবাইল টিম মোতায়েন করে চামড়ার পাচার রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে।
এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধেও বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধের বিষয়ে প্রতিপক্ষ বিএসএফ’র সাথে পতাকা বৈঠক, লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে ।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দেশের জনগণকে একটি নিরাপদ ও স্বস্থিদায়ক ঈদ উদযাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি।
উপদেষ্টা তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, ‘মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।’
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন বা সাড়ে চার হাজার কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ছিলো চার হাজার ৮৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বাড়ার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনও তুলে ধরেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
মন্তব্য