সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় করা মামলায় সন্ত্রাসী ফরিদ উদ্দিন ওরফে এক্সেল বাবুসহ সাতজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
কারাগারে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- মো. রাকিব হোসেন, মো. যুবরাজ, মো. লিটন মিয়া, মো. আলম, মো. সোহেল হাওলাদার ও মো. সালাম।
তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি তাদের কারাগারে পাঠাতে গতকাল আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৭ মে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে এক্সেল বাবুসহ সাতজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, সামুরাই, নগদ দুই লক্ষাধিক টাকা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।এরপর তাদের বিরুদ্ধে আজ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে একটি মামলা করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজ্জাদ হোসেন।
পুলিশ জানায়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা উদ্যান, বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বছিলা ফিউচার টাউন, বছিলা গার্ডেন সিটি এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে আসছিল।
জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন ও কার্যক্রম চলমান।
গত ২৮ মে ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা থেকে রাজধানী ঢাকায় টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসন ও নাগরিক জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মহোদয়ের পরামর্শক্রমে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাকরাইলস্থ প্রধান কার্যালয়ের ২য় তলায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ২৯ মে ২০২৫ তারিখে স্থাপন করা হয়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ১৯টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে ৪২টি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ অভিযোগের সমাধান সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি অভিযোগসমূহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অদ্য ৩০ মে ২০২৫ বিকাল ৪:০০ ঘটিকায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী সরেজমিনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং বিভিন্ন এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেন। সচিব তাৎক্ষণিক জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান এবং উভয় সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর ১০, কালশি, ভাষানটেক, খিলক্ষেত, নাখালপাড়া, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া, শাহ আলী, বাউনিয়া, সাতারকুল, ভাটারা, উত্তরখান, উত্তরা (সেক্টর ১, ৬, ১২, ১৩), এয়ারপোর্ট এলাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ধানমন্ডি-২৭, গ্রিন রোড, শুক্রাবাদ, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, নিউ মার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনগর, বেইলি রোড, মগবাজার, আরামবাগ, ফকিরাপুল, মতিঝিল, গুলিস্তান ও সচিবালয় এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।
নগরবাসী নিম্নোক্ত হটলাইন নম্বরে কল করে জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে পারবেন:
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন: ০১৭৩৩৯৮২৪৮৬, ০১৯৬৬৭২৫৯১১, +৮৮০৯৬০২-২২২৩৩৩
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন: ০১৫৩৪৬৬৪৪৪০, ০১৯৪২৮৩১৪৪৯, ০১৭০৯৯০০৪৪৪
জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে এবং সার্বক্ষণিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন,বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’ (Google Pay) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এক মাসের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে।
আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যেই এই সেবা দেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এই সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের হাতে থাকা ডিভাইসকেই একটি পূর্ণাঙ্গ‘'ডিজিটাল ওয়ালেট’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।’
এর ফলে আলাদা করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমে যাবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের তৃতীয় দিনে শুক্রবার বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতা সংক্রান্ত ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
টোকিওতে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’ শীর্ষক একটি সেমিনারের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের উপস্থিতিতে এই সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।
প্রথম সমঝোতা স্মারকটি ছিল জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) এবং বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে।
এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে জেবিআইসি জ্বালানি খাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উভয়ের দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারকটি ছিল অনোডা ইনক ও বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের (বিএসইজেড) মধ্যে, এর আওতায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি জমি লিজ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে।
অনোডা ইতোমধ্যে জাইকার উদ্যোগে একটি গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং এখন সেখানে গ্যাস মিটারের অ্যাসেম্বলি, ইনেসফেকশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে।
তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি ছিল বাংলাদেশ নেক্সিস কো. লিমিটেড এবং বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি লিজ সংক্রান্ত।
এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ নেক্সিস কো. অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানায় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে।
চতুর্থ সমঝোতা স্মারকে গ্লাগিট, মুসাসি সিমিতিসু ইন্ডাস্ট্রি গ্লাফিট এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মধ্যে ব্যাটারি চালিত বাইসাইকেল ও বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল তৈরির একটি কারখানা স্থাপন বিষয়ক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পঞ্চম সমঝোতা স্মারকটি কিপার কোর কো. লিমিটেডের সঙ্গে, যারা বাংলাদেশে ২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে তথ্য নিরাপত্তায় তাকাতোসি নাকামোরা পুরস্কারপ্রাপ্ত’ পূর্ণাঙ্গ কিপার প্রযুক্তি’র ভিত্তিতে একটি জাতীয় পাইলট প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করা।
প্রযুক্তির প্রয়োগ ও বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের একচেটিয়া অধিকার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে।
ষষ্ঠ সমঝোতা স্মারকটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বিডার মধ্যে।
এই চুক্তির মাধ্যমে জাইকা একীভূত সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্মের (আইএসডব্লিউপি) প্রাথমিক উন্নয়নে কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করবে।
এই প্ল্যাটফর্মটি বিডার নেতৃত্বে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থার সেবাকে এক-দরজায় একত্রিত করা।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এমওইউ স্বাক্ষরকারী সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ এর বাস্তবায়ন করা। আমি অভিভূত।’
গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সময়ে দেশটিতে একের পর এক ভূমিকম্প হয়েছে, যার ফলে কিছুই অক্ষত ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে একজন ভালো বন্ধু এগিয়ে এলো। আর সেই বন্ধু হলো জাপান। আমি এখানে এসেছি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে।’
এই চ্যালেঞ্জকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই যে, এটি সম্ভব হয়েছে, তা-ও নিখুঁতভাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বেল্ট শক্ত করে ধরে বলেছি, আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। আপনাদের সহায়তায় এটা সম্ভব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘চলুন হাতে হাত মিলিয়ে বাস্তবায়ন করি। এটা শুধু অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়। এটা মানুষের জীবন পরিবর্তনের বিষয়।’
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় ভাইস মিনিস্টার শিনজি তাকেউচি অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ৩শ’ ছাড়িয়ে গেছে, যা ১০ বছর আগের তুলনায় তিন-চতুর্থাংশ বেশি।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) চেয়ারম্যান ও সিইও নোরিহিকো ইশিগুরো অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, যেখানে জাপান-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির (জেবিসিসিইসি) চেয়ারম্যান ও মারুবেনি কর্পোরেশনের বোর্ড সদস্য ফুমিয়া কোকুবু-ও বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন।
সামাজিক উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক উন্নয়নে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ইউনূসকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
ড. ইউনুস টোকিওর সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সুজুকিও বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা চার দিনের সফরশেষে আগামীকাল ৩১ মে সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিও ত্যাগ করবেন এবং সিঙ্গাপুর হয়ে রাতেই ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ইউনূস গত ২৭ মে জাপানে চার দিনের সরকারি সফরে টোকিও পৌঁছান।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আগামী রোববার ও সোমবার এক ঘণ্টার কর্মবিরতির পরিবর্তে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী ১ জুন রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, ফাওজুল কবির খান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেবেন তারা। পরের দিন সোমবার স্মারকলিপি দেবেন দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের কাছে। এছাড়া মাঠপর্যায়ে সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মাধ্যমেও স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থিত সচিবালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সাংবাদিকদের কাছে নতুন কর্মসূচি তুলে ধরেন ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদীউল কবীর, মুহা. নূরুল ইসলাম ও কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম।
কর্মসূচি ঘোষণার আগে সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। কর্মবিরতি শেষে ঐক্য ফোরামের নেতারা বলেন, আগামী রোববার ও সোমবার এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে না। এর পরিবর্তে রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, ফাওজুল কবির খান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। আর সোমবার স্মারকলিপি দেওয়া হবে দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের কাছে। মাঠপর্যায়ে সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মাধ্যমেও স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এখন জাপান সফরে আছেন। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর ‘ভালো সংবাদ’ পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছেন ঐক্য ফোরামের নেতারা। তাদের প্রত্যাশা, ‘ভালো সংবাদ’ নিয়েই তাঁরা ঈদুল আজহা পালন করতে পারবেন।
জাপান সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা শনিবার দেশে ফিরলে কর্মচারীদের দাবির কথা তার কাছে তুলে ধরবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিকে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা দ্বিতীয় দিনের মতো সারাদেশে কলমবিরতি পালন করেছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পৃথিবীর যেকোনো বাহিনীকে টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা রাখলেও অতীতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা তাদের জিম্মি করে রেখেছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের চৌরাঙ্গী মোড়ে এক পথসভা এ মন্তব্য করেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, ‘হাসিনার কারণে বিজিবি এত দিন ভারতের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করতে পারেনি। সীমান্তে পুশইনের ঘটনা বাংলাদেশবিরোধী ভারতের ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনো সন্তোষজনক নয়। যে ব্যক্তি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। তাই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রতিবেশীর মতো আচরণ করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত থাকবেন তত দিন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।’
সারজিস আলম বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে প্রতিবেশীর মতো শ্রদ্ধা ও সম্মানের সম্পর্ক হতে হবে। এখন পর্যন্ত ভারত যে আচরণ বাংলাদেশের সঙ্গে করেছে তা সন্তোষজনক নয়। এই আচরণ দিয়ে ভারত কখনোই প্রতিবেশীর মতো সম্পর্ক পাবে না।
সারজিস বলেন, ‘ভারত তাদের নাগরিক কিংবা এজেন্টদের বাংলাদেশে পুশইনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে শুধু বিজিবি নয়, এই অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিককেই সজাগ থাকতে হবে।’
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনই দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র দেখবেন, তখনই তা প্রতিহত করুন।’
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারের অধিক হত্যা ও লাখের অধিক মানুষকে রক্তাক্ত করার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে তারা (ভারত) আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে শেখ হাসিনা সরকার জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের শক্তি সামর্থ্যকে প্রকাশ করতে দেয়নি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে সবসময় ছোট করে রেখেছিল। অস্ত্রের সক্ষমতা নয়, কলিজার সক্ষমতা থাকতে হবে। ১৯৭১ সালে এ দেশ স্বাধীন করে বাংলাদেশ সেটার প্রমাণ দিয়েছে। এসময় তিনি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিন্দু মাত্র আপস না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা, কেন্দ্রীয় সংগঠক উত্তরাঞ্চলের রাসেল আহমেদ, লালমনিরহাট জেলা সমন্বয়ক রকিবুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাতে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিম্নচাপটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে আজ সন্ধ্যা ৭ টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলাসমূহের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসাথে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ নদী বন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, পাবনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দর সমূহকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
মন্তব্য