জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের সামনে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ মে) সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিআর কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা জেনেছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ এনবিআর চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আসার কথা রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ সরকারি, আধা-সরকারি অফিস, ব্যাংক, স্কুল-কলেজ খোলা রয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এর আগে, বুধবার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সব ধরনের অসহযোগিতাসহ একাধিক নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার সকাল থেকে এনবিআর ভবনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেয় কর্মকর্তারা।
সংগঠনের বিবৃতি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশের এনবিআর কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
আগামী ২৪ ও ২৫ মে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব কার্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে, কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশন বাদে। রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির বাইরে থাকবে।
২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা বাদে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব কার্যালয়ে পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অবিলম্বে অপসারণের নতুন দাবি যোগ করেছে সংগঠনটি।
এর আগে, সংগঠনের তিনটি প্রধান দাবি ছিল—প্রথমত, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; দ্বিতীয়ত, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে; এবং তৃতীয়ত, এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনার পর সব স্টেকহোল্ডার—অকাঙ্ক্ষী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই রাজস্ব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে, এনবিআরের কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের একটি অ্যাড হক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
টানা বৃষ্টি এবং আন্দোলন-অবরোধে রাজধানী ঢাকাবাসীর নগর জীবন বিষিয়ে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে যানবানবাহনের গতি কমে গিয়ে মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ঢাকায় চলমান বিভিন্ন আন্দোলন ও সড়ক অবরোধের কারণে যানজটের মাত্রা বেড়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র দাবদাহের পর গত কয়েক দিন থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেও ঢাকায় বৃষ্টি নামে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিন সকালে ঢাকায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে টানা মৌসুমি বর্ষণে ঢাকার অলিগলির পাশাপাশি প্রধান সড়কগুলোরও অনেকাংশ তলিয়ে যায়। কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমের পর এই বৃষ্টি স্বস্তি নিয়ে এলেও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এদিন সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে ধীর হয়ে গেছে যানবাহনের গতি।
এদিকে, বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার কয়েকটি স্থানে আন্দোলন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই রাজধানীর শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন।
একই সময়ে, সকাল ১০টা থেকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবন থেকে হাইকোর্ট এলাকা ও মৎস্য ভবন হয়ে কাকরাইল যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে তীব্র যানজট; সবকিছু মিলিয়ে নাকাল নগরবাসী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী ও অফিসফেরত, পথচারী, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। অফিসকর্মীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। ছাতা থাকলেও ভারি বর্ষণের কারণে আধভেজা হয়ে অফিসের পথে রওনা দিতে হয় অনেককে।
এদিন ভারি বৃষ্টিপাতে নিউমার্কেট এলাকার সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানযট সৃষ্টি হয়। এতে জনবহুল নিউমার্কেটের স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে আলী খান নামে নিউমার্কেট এলাকার এক হকার বলেন, ‘সকালে মাত্র দোকান খুলেছি, তার কিছু পরেই বৃষ্টি নামল। বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় পানি উঠে যায়, দোকানপাট খোলা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘গত ৪-৫ বছর ধরেই নিউমার্কেট এলাকার এই অবস্থা দেখে আসছি। সিটি করপোরেশন এই বিষয়ে অবশ্যই জানে, তারপরও তারা এ নিয়ে কোনো কাজ করে না। এ কারণে আমাদের কষ্টও আর ফুরায় না।’
আরেক ব্যবসায়ী আব্দুর রব আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘কোনো সরকারই আমাদের দিকে সুনজর দেয়নি। নিউমাকের্ট এলাকায় দ্রুততার সঙ্গে ড্রেন করে পানি বের করার ব্যবস্থা করা দরকার।’
পানি ওঠার কারণে ভোগান্তির কথা তুলে ধরে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন দুপুর ২টা বাজে, অথচ দিনের বেচাকেনা শুরু করলাম মাত্রই। এভাবে চললে তো আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে যাবে। আমাদের সব শেষ। ঋণ হতে হতে এমন অবস্থা যে, নিজের রক্ত বেঁচলেও ঋণ পরিশোধ হবে না।’
জরুরিভিত্তিতে সিটি করপোরেশন যাতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে সেই দাবি জানান নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার) ফের রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের হল পর্যায়ের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে এই কর্মসূচি পালন করে আসছে ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
গতকাল (বুধবার) সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থানের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নেই আজ আরও একবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে তারা।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টা থেকেই শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরই ঝুম বৃষ্টি নামে। তবে বৃষ্টি তাদের অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড করতে পারেনি। ১০টার পরপরই বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তা নেমে যান ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাদের অনুসরণ করেন আরও অনেকে।
এ সময় তারা ‘আর চাই না, আর চাই না, এনএসআইয়ের প্রক্টর’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ ঝোলে, প্রক্টর কী করে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই ,সাম্য হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আজ বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির রয়েছেন। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা রয়েছেন।
ছাত্রদল সাম্য হত্যার বিচারের কোনো আশ্বাস পায়নি জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্যকে হত্যার প্রকৃত খুনিদের আজকে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই মামলাটি পুলিশের পর ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা ডিবির সঙ্গেও কথা বলেছি। কিন্তু একজন প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে—এমন কিছু বলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। আবার যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের চার দিন পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখানে সময়ক্ষেপণের বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম ভূমিকা পালনকারী একজন শিক্ষার্থীকে যদি এভাবে হত্যা করা হয় এবং তার খুনিদের যদি প্রশাসন গ্রেপ্তারে এভাবে ব্যর্থ হয়, তাহলে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ঠিক কী ভূমিকা পালন করছে, তা এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি।
এর আগে (জাহিদুল ইসলাম) পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে, এখন সাম্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো জানিয়ে রাকিব বলেন, সাম্য হত্যার প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করে যাতে সঠিক আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচার হয়, সেই দাবিতেই আমরা আজকের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি।
ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। পরে ফার্মগেট-কারওয়ানবাজার হয়ে শাহবাগগামী যানবাহনগুলোকে বিকল্প সড়ক হিসেবে বাংলামোটর মোড় থেকে মগবাজারমুখি সড়ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট অবৈধ ঘোষণার দাবি এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
আদালতের এই আদেশের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এ রিট মামলার ওপর মঙ্গল ও বুধবার কয়েক দফা শুনানির পর বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে আদেশ দেয় বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ।
ইশরাককে মেয়রের চেয়ারে বসাতে এক সপ্তাহ ধরে তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে আদালতের এই সিদ্ধান্ত এল।
রাজধানীর হাজারীবাগের জাফরাবাদ পুলপাড় ঋষিপাড়া এলাকায় ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে হত্যা করে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের সবাই ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণ। টিকটক ভিডিও বানাতেই তারা ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়। পূর্বপরিকল্পনা অংশ হিসেবেই ওই ফটোগ্রাফারকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন— নাঈম আহম্মেদ (২০), শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), শাহীন চৌকিদার (২২), রহিম সরকার (১৯), নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), আনোয়ার হোসেন (১৯), শহিদুল ইসলাম (২০) ও মোহাম্মদ আরমান (১৮)।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নুরুল ইসলাম (২৬) একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করে বিভিন্ন ইভেন্টে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। গত ১৫ মে একটি অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে তার ফোনে কল আসে। অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি বিয়ের ইভেন্টে ছবি তোলার জন্য তাকে বুকিং দিয়ে ৫০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিমও পাঠান। পরের দিন (১৬ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে একই নম্বর থেকে ফোন করে তাকে শংকর চৌরাস্তায় অপেক্ষা করার কথা জানানো হয়।
পরে সহযোগী মোহাম্মদ ইমন ও নুরে আলমকে নিয়ে মতিঝিলের এজিবি কলোনির বাসা হতে বের হয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন নুরুল। সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি শংকর বাসস্ট্যান্ডে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা ওই ব্যক্তির কথামতো একটি অটোরিকশাযোগে জাফরাবাদ পুলপাড় ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন। এরপর রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপাড় ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছানোমাত্র দুষ্কৃতকারীরা তাদের রিকশার গতিরোধ করে।
ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যান। তবে নুরুল ইসলামকে ধরে ফেলেন দুষ্কৃতকারীরা। তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুলের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙুলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার কাছে থাকা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আহত নুরুলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নূরুল ইসলামের বড় ভাই ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
হাজারীবাগ থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তারা টিকটকে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করত। উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে তারা।
সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী খেলার মাঠে ফুটবল খেলার পর নাঈম আহম্মেদের নেতৃত্বে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম করে ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে কৌশলে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার নাঈম শংকর বাসস্ট্যান্ডে নূরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইমনের সঙ্গে দেখা করে।
নাঈম তাদের একটি অটোরিকশাযোগে ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যান। এরপর রাত ৮টার দিকে ঋষিপাড়ার ‘ক্ষণিকালয়’ নামক বাসার গেটের সামনে অটোরিকশাটি পৌঁছালে নাঈমসহ শাহীন, শাহীনুল, রহিম, নয়ন, রিদয়, রাজ্জাক, আনোয়ার, শহিদুল ও আরমান অটোরিকশার গতিরোধ করে নূরুল ইসলামের কাছ থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। ক্যামেরা না দিতে চাইলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরুলের শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন এবং ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেন।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলের ঢাকা মহানগর শাখার আয়োজনে বুধবার (২১ মে) দুপুর ১২টায় আগারগাঁও এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। তারা বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচি পালন করে।
বক্তব্যে এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেন, এই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে কোনো সংস্কার কার্যক্রম শুরুর আগেই। ফলে কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির গুলশান থানা শাখার নেতা নুর ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘এই কমিশন ইতোমধ্যে নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শাসনামলে প্রণীত একটি আইনের ভিত্তিতে এই কমিশন গঠিত হয়েছে। আমরা এই কমিশন চাই না, এটি রকিব কমিশনের মতো।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে এনসিপি নেতারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা যাচাই করা উচিত।
এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ উপায়ে গঠিত এ ইসি মেনে নেব না।’
দলটির পল্লবী থানা শাখার প্রতিনিধি রেহানা আক্তার রুমা বলেন, ‘আমরা এখানে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। এ ইসির পরিবর্তন চাচ্ছি।’
রমনা থানা শাখার নারী প্রতিনিধি ডা. ইশরাত জাহান বলেন, ‘বড় দলগুলোর ব্যর্থতায় আমরা এনসিপিতে যোগ দিয়েছি। এ ইসিকে ধিক্কার জানাই, একটি বড় দলকে তারা সাপোর্ট করছে।’
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে এনসিপি নির্বাচন ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করল।
মঙ্গলবার রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘অবিলম্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর শাহবাগ ছেড়েছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এতে আশেপাশের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকাল ৩টার দিকে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন। এরপর বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগ ছেড়ে যান তারা।
সাম্য হত্যার বিচার, ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ, নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ একাধিক দাবিতে শাহবাগ মোড়ে এই অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এর ফলে শাহবাগ এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে বৃষ্টির মধ্যে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ে।
অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদকের নাছির উদ্দিন নাছিরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং অন্যান্য ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, রবিবারও একই দাবিতে তারা দুই ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন।
মন্তব্য