ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর সামরিক জবাবদিহির বিষয়ে সেনাবাহিনীকে ‘পদ্ধতি, লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে এনডিটিভি গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে বৈঠকে এই বার্তা দিয়েছেন মোদি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি আবারও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক জবাব দেওয়াই আমাদের জাতীয় সংকল্প’ এবং তিনি ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি ‘সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা’ রাখেন।
এই বৈঠকের কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শিক অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভগবত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছন।
সূত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সবুজ সংকেত দিয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। তখন ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ পরিচালিত প্রশিক্ষণশিবিরে নিখুঁত বিমান হামলা চালিয়েছিল।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিচালিত সেই শিবিরগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
ছয় বছর পর এই হামলার সঙ্গে আবারও পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরই ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
এদিকে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও বলেছে, প্রাপ্ত প্রমাণ আবারও পাকিস্তানকেই ইঙ্গিত করছে।
এই প্রমাণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপান ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিদের দেখানো হয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রথম ধাপে নয়াদিল্লি পাকিস্তানিদের জন্য জারি করা ভিসা বাতিল করে দিয়েছে। তবে পাকিস্তানি হিন্দু ও দীর্ঘমেয়াদি অনুমোদনপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য নয়। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেওয়া ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।
গত রোববার সব কার্যকর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে, বিশেষ করে বিখ্যাত আটারি-ওয়াঘা চেকপয়েন্টে পাকিস্তানি নাগরিকদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। সেদিন থেকে প্রায় এক হাজার পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কূটনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস পানি চুক্তিও স্থগিত করেছে। এই পানি বণ্টন চুক্তির অধীনে পাকিস্তান তার প্রাপ্য মোট পানির প্রায় ৮৫ শতাংশ পেত। এই চুক্তি স্থগিত করাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদ ভারতের সব ভিসা বাতিল করেছে ও শত শত ভারতীয়কে বহিষ্কার করেছে। পাকিস্তান আরও কিছু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, যেমন ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিও স্থগিত রেখেছে।
এরই মধ্যে পাকিস্তানের এক শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া এক মন্তব্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেন, আগামী কয়েক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পেহেলগামে হামলা নিয়ে নিজের প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তার সরকার সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহ পরিকল্পনাকে সফল হতে দেবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘এবার সময় এসেছে সন্ত্রাসের আখ্যানের শেষ চিহ্নও মুছে ফেলার। ১৪০ কোটি মানুষের ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসের প্রভুদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে।’
এরপর তিনি একাধিক শক্ত বার্তা দিয়েছেন, যাতে তিনি বলেন, ভারত সন্ত্রাসকে ভয় পায় না এবং এই ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনাকারীসহ প্রত্যেক জড়িত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
সূত্র: এনডিটিভি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী একটা ফ্যাসিস্ট সরকার, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটেছিল। স্বৈরাচার সরকার জোর করে ১৬ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিল। মানুষের প্রতি এমন কোনো নির্যাতন নাই যে করে নাই। গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাট থেকে শুরু করে ভোটাধিকার হরণ, সন্ত্রাস এমন কোনো অপকর্ম নাই যে ফ্যাসিস্ট সরকার করে নাই। তিন-তিনবার দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। ফলে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। সীমাহীন জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল।
জুলাই পদযাত্রার ১৩তম দিনে রোববার জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) পিরোজপুর জেলা শাখার আয়োজনে স্থানীয় শহীদ মিনারে এসব কথা বলেন।
সকাল ১১টায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা পিরোজপুর সার্কিট হাউস থেকে পদযাত্রা শুরু করে পিরোজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পথসভায় বক্তব্য দেন। পদযাত্রাটি পিরোজপুর শহরের সিও অফিস থেকে সদর রোড সাধনা ব্রিজ ও পিরোজপুর মূল শহর প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে এসে পথসভায় মিলিত হয় ।
পথ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা সারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃরা।
পথসভায় অংশগ্রহণ করতে জেলার সাতটি উপজেলা থেকে এনসিপির নেতা-কর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে উপস্থিত হয় এবং বৃষ্টিতে ভিজে কেন্দ্রীয় নেতৃদের বক্তব্য শোনেন।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা যেন এখনো এক অসমাপ্ত স্বপ্ন। ৪১ বছর আগে যাত্রা শুরু করা এ হাসপাতালটি আজও পরিপূর্ণ রূপে দাঁড়াতে পারেনি। ২৫০ শয্যার মর্যাদা পেলেও হাসপাতালটি চলছে ১০০ শয্যার জনবল, যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো নিয়ে। এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। এ জেলার ২৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু হলেও সময়ের প্রয়োজনে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয় একাধিকবার। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। শয্যা উন্নীত হলেও হাসপাতালে কর্মরত জনবল, অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে ১০০ শয্যার কাঠামোতেই। জনবল সংকট এতটাই প্রকট যে, ১০০ শয্যার হিসেবেও যেখানে ৪৩ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন, সেখানে আছেন মাত্র ১৮ জন।
সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, চক্ষু, কার্ডিওলোজি, অ্যানেস্থেসিয়া, শিশু, চর্ম ও যৌন এছাড়া সিনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি, অর্থ সার্জারি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থপেডিক্সসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকদের পদগুলো দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে আছে। নেই পর্যাপ্ত নার্স, ওয়ার্ডবয়, ল্যাব টেকনিশিয়ান বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। প্রশাসনিক ও সহকারী পদগুলোতেও শূন্যতা ৬৩টি।
সরেজমিন দেখা যায়, নারী-পুরুষ একাকার হয়ে টিকিট কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে রোগী ও রোগীর স্বজনরা। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুসহ, নারী-পুরুষ গাদাগাদি করে নিচতলায় ও দ্বিতীয়তলায় চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চিৎকার আর গুমট পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। চিকিৎসা নিতে এসে দীর্ঘসময় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থেকে চমর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। পৃথক ফার্মেসি থাকলেও অব্যবস্থাপনার অভাবে নারী-পুরুষ একাকার হয়ে ওষুধও নিচ্ছেন একটি ফার্মেসি থেকেই।
এছাড়া আন্তবিভাগে শয্যা সংকটে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার বারান্দার মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের ভেতরে, বাহিরে এমনকি ওর্য়াড গুলোর মেঝেতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জানা। নিচতলা ও দোতলার শৌচাগারগুলো অপরিচ্ছন্ন। সেখানে দুর্গন্ধে নিশ্বাস নেওয়া দায়।
আরও জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনোযোগের অভাব দীর্ঘদিনের। যদিও মাঝে মধ্যে পর্যবেক্ষণ টিম আসে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যত নিষ্ক্রিয়।
সম্প্রতি প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার নয়তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয় এবং তা ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। অথচ ভবন বুঝে পাওয়ার ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি। কারণ- প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় আধুনিক এই অবকাঠামো পড়ে আছে অলসভাবে।
আন্তঃবিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গত ৬ মাসে গাইনি, শিশু, স্ক্যানু, মহিলা, পুরুষ ও ডাইরিয়া-এই ছয়টি বিভাগ থেকে রেফার্ড করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জন ভর্তি রোগীকে।
আর জরুরি বিভাগ বলছে, জনবল সংকটের কারণে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ জন রোগীকে রেফার করা হচ্ছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে, জরুরি বিভাগের তথ্য বিভ্রাটের চিত্র ভয়াবহ- কত রোগী রেফার্ড হচ্ছে, কোনো রোগে রেফার্ড হচ্ছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট রেকর্ড নেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।
জরুরি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ মোজাম্মেল হক সরকার বলেন, যেসব রোগীকে বাহিরে রেফার্ড করারা হয়। তাদের কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না বা সুযোগ থাকে না।
এদিকে, রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র। সেবা না পেয়ে রোগীরা যখন দিশেহারা, তখনই দালালদের দৌরাত্ম্যে নিঃস্ব হচ্ছেন গরিব মানুষগুলো। মাঝে মধ্যে কিছু দালাল ধরা পড়লেও শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে তারা আবার মুক্ত হয়ে ফিরে আসে আরও বেপরোয়া হয়ে।
হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজি ইনচার্জ ফজলুল বারী বলেন, চারটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে এখন শুধু একটি এক্সরে মেশিন চালু আছে। আর বাকি তিনটি নষ্ট। এছাড়া আলট্রাস্নোগ্রামের চারটির মধ্যে চারটিই নষ্ট।
গাইবান্ধার সচেতন নারী সংগঠক নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পি বলেন, চিকিৎসাসেবাকে গাইবান্ধায় স্থায়ী করতে হবে। দালাল নির্মূল, নিয়মিত ডাক্তার নিয়োগ, পর্যাপ্ত নার্স ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ৩ বছর ধরে ভবন তৈরি হলেও চালু হয়নি। ডাক্তার নেই, নার্স নেই- এটা সরকারের চরম অবহেলা। আমরা চাই দ্রুত চালু করা হোক।
হাসপাতালের আরএমও আসিফ উর রহমান নানা সংকটের কথা উল্লেখ করে দৈনিক বাংলাকে বলেন, চিকিৎসক সরঞ্জাম যথেষ্ট ঘাটতি। তবুও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আরও বলেন, বহুতল ভবনটি আমরা বুঝে নিলেও জনবল এবং সরঞ্জমাদির প্রয়োজনীয় কোনটিই এখনো দেওয়া হয়নি। আমরা নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখছি।
প্রাকৃতিক উপায়ে হাঁস, দেশি মুরগি, রাঁজহাস, টাইগার মুরগি, তিতির, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি, সোনালি মুরগির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ীর রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু। তার হাত ধরে বহু বেকার নারী-পুরুষ এখন হাস মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া বাজারের মৃত গিয়াস উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। এগুলো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও সহায়ক বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিজ বাড়িতে টিনের ঘরেই বসিয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর যন্ত্র ইনকিউবেটর। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষরা ডিম নিয়ে আসে হ্যাচারিতে বাচ্চা ফোটানোর জন্য। প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার ক্রেতারা ভিড় জমান হ্যাচারি পল্লিতে বাচ্চা সংগ্রহের জন্য। প্রতিটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে নেওয়া হয় মাত্র ৫ টাকা। আবার ফোনের মাধ্যমে অর্ডার করলেই নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় হাঁস বা মুরগির বাচ্চা। প্রাকৃতিক উপায়ে ডিমে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। ব্যবসার জন্য একসঙ্গে অধিক পরিমাণে ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরের বিকল্প নেই। আবার যদি কেও ডিম না দিয়ে বাচ্চা কিনতে চায় সেটারও ব্যবস্থা আছে এই হ্যাচারিতে। প্রকারভেদ অনুযায়ী স্বল্পমূল্যে এক দিন বয়সের প্রতিটি হাঁস, মুরগির বাচ্চা ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
এছাড়া বিক্রি করা হয় হাঁস, দেশি মুরগি, রাঁজহাস, টাইগার মুরগি, তিতির মুরগি, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিসরী ফাউমি, সোনালি মুরগির বাচ্চা। সেক্ষেত্রে ভালো জাতের হাঁস, মুরগি, রাঁজহাস, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিসরী ফাউমি, সোনালি মুরগির ডিম সংগ্রহ করেন হ্যাচারি মালিক ও কর্মচারীরা। সেগুলো পানিতে পরিষ্কার করে বাছাই করে কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বানানো ডিম রাখার পাত্রে সারিবদ্ধভাবে রেখে ফ্যানের বাতাশে রাখা হয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়।
হ্যাচারি থেকে বাচ্চা নিয়ে খামার করা রনি আহমেদ বলেন, আমি রাশেদুল ইসলাম রঞ্জুর হ্যাচারির কথা জানতে পারি। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন জাতের হাঁস মুরগির বাচ্চা দেখি। সেখান থেকে প্রথমে ২০টি মিসরী ফাউমি মুরগির বাচ্চা কিনে এনে বাড়িতে পালন শুরু করি। কিছুদিন পর মুরগিগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। সেই ডিমগুলো জমিয়ে হ্যাচারিতে গিয়ে আবার বাচ্চা ফুটিয়ে আনি। বর্তমানে আমি বাণিজ্যিকভাবে মিসরী ফাউমি জাতের মুরগি পালন করছি। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে আমার বাড়তি টাকা আসছে।
বয়ড়া কুলঘাট এলাকার কবির মাহমুদ নামে খামার মালিক বলেন, আমি আগে টিনের দোকান করতাম। এই হ্যাচারি হওয়ার পর ৭ মাস আগে আমি প্রথম আমার স্ত্রীকে ২০০ হাস ও মুরগির বাচ্চা কিনে দেই। সেগুলো বাড়িতে পালন করি। সেগুলো বড় হলে বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ হয়। সেখান থেকেই আমার হাস, মুরগি পালন শুরু।
ডিম নিয়ে বাচ্চা ফোটাতে আসা আব্দুল মান্নান, রহিমা বেগম, মারিয়া আক্তার বলেন, আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁস মুরগির ডিম সংগ্রহ করে মণ্ডল হ্যাচারিতে নিয়ে আসছি ফোটানোর জন্য। আমাদের বাড়িতে ডিম ফোটানোর জন্য কোনো মুরগি নেই। তা ছাড়া হাঁস কখনো বাচ্চা ফোটায় না। আগে মুরগি দিয়ে হাঁসের বাচ্চা ফোটানো হতো। এখন আর সেই ঝামেলা নেই। বাড়ির কাছে হ্যাচারি আর এখানে কম খরচে ঝামেলা বিহীনভাবে ডিম ফোটানো যায়।
মণ্ডল হ্যাচারির মালিক রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, আমি এলাকার বেকার নারী ও পুরুষের স্বাবলম্বী করা জন্য ব্যতিক্রমধর্মী একটি হ্যাচারি আমি তৈরি করেছি। ডিম থেকে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া স্বল্পখরচে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে ভালো লাভবান হতে পারবে। আমি এটাতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া বাচ্চা ফুটিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে তা বিক্রি করি। লাভজনক হওয়ায় উৎপাদন দিন দিন বাড়াতে থাকে। পরে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এসে আমার কাছ থেকে এক দিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা কিনে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, বয়ড়া বাজারের রঞ্জু মিয়া একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। তার এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তার এই উদ্যোগের কারণে সরিষাবাড়ীর খামারিরা উপকৃত হবে এছাড়া এলাকার বেকার যুবক ও নারীরা স্বাবলম্বী হবে। বাচ্চা ফোটানো, মুরগি লালন-পালন করার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন, চিকিৎসাসহ সরকারি যত সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন সবই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে প্রদান করা হচ্ছে।
নওগাঁর মান্দা ইউএনও শাহ আলম মিয়া দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সামান্য চেষ্টা আর সুন্দর মনোভাব, সেই সঙ্গে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বদলে গেছে নওগাঁ মান্দা উপজেলার চিত্র। উপজেলা সদর থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত অন্ধকার সড়কে যোগ হয়েছে আধুনিক সড়কবাতি, সেই সঙ্গে নওগাঁ রাজশাহী মহাসড়কের ফেরিঘাট ব্রিজের ওপরে যোগ হয়েছে আধুনিক রঙিন বাতি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আত্রাই নদীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা অন্ধকার রাস্তাটি আধুনিক এলইডি স্ট্রিট লাইটের আলোতে আলোকিত হয়ে গেছে। এখন সন্ধ্যার পর রাস্তাটি দিয়ে নির্বিঘ্নে গাড়ি-ঘোড়া ও হেঁটে চলাচল করেছে মানুষ। নদীর ওপাশ থেকে দেখলে মনে হয় এযেন এক অন্য রকম আলোর নগরী। উপজেলা সদরের চৌরাস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটেও রয়েছে স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা। মান্দার ইউএনও শাহ আলম মিয়ার উদ্যোগ ও তদারকির কারণে পুরোনো জরাজীর্ণ ভবণ টেন্ডারের মাধ্যমে ভেঙে উপজেলার নতুন ভবনে দপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে, চলছে ৫ তলা নির্মাণসহ উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরের রাস্তা নির্মাণের কাজ। ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নির্মিত হয়েছে সীমানা প্রাচীর, রাস্তা নির্মাণ, দিঘিতে নামার সিঁড়ি, ছাগল-মুরগি জবায়ের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে জবাইখানা, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লাগানো হয়েছে টাইলস, মসজিদে আসা মানতকারীদের রান্নার স্থান সংস্কার করা হয়েছে, এছাড়া দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বেশকিছু নিরাপত্তা কর্মী।
স্থানীয় সরকার ও পিআইও অফিসের সহায়তায় করা হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট সংস্কার কাজ, অচল ব্রিজ ব্যবহারের উপযোগী।
মোবাইল আসক্তি ও মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে ১৪টি ইউনিয়নকে সংগঠিত করে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন ও প্রথম পুরস্কার মোটরসাইকেল পুরস্কার বিতরণ করেছেন। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের উৎসাহ জোগাতে কাজের মূল্যায়ন ও পুরস্কারকের ব্যবস্থা করেছেন ইউএনও।
মান্দাকে বাংলাদেশ সকল মানুষের কাছে তুলে ধরতে তার লেখনিতে মান্দার নাম করণ করেছেন ‘মনোহরা মান্দা’ মান্দাকে ঘিরে লিখেছেন অনেক ছোট গল্প, কবিতা।
ইউএনও শাহ আলম মিয়ার বলেন, আমার কখনো মনে হয়নি মান্দা আমার না। আমি সব সময় চিন্তা করেছি মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের কথা শুনে কাজ করার। মান্দাকে আধুনিকভাবে সাজাতে যেটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। এমন কেউ নেই যে আমার অফিসে এসে আমার সঙ্গে দেখা না করে গিয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমি কাজ করেছি। মান্দা পথপ্রান্তর, নদী, বিল গ্রামের আকাবাঁকা রাস্তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। মান্দাতে দেখার মতো যা কিছু আছে তা অন্য কোথাও নেই। আমি যেখানেই থাকব মান্দার খবর রাখব।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিক সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনার কারণে এবার কোন হজ যাত্রীকে এয়ারপোর্টের কাঁদতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, কোন হজযাত্রী যেন হজে যাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়, এবার সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পেয়ে, কোন হজ এজেন্সির ওপরে একক নির্ভরতা না রেখে, মন্ত্রণালয় থেকেই সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ৮৭ হাজার হজ যাত্রীর সবাইকে সুষ্ঠুভাবে হজ করিয়ে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে সবাই পবিত্র হজ্ব পালন শেষে দেশে ফিরেছেন।
রবিবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা জানান, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যবসায়িক কোন উদ্দেশ্য নেই, হাজীদের সেবা করাই সরকারের একমাত্র ব্রত।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পরও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। তিনি হজের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, বরাবরই প্রধান উপদেষ্টার একটাই নির্দেশনা ছিল যাতে কোন হজ যাত্রী ভোগান্তি শিকার না হয়, কষ্ট না পায়। নির্দেশনা মতো, আমরা সেভাবেই কাজ করে গেছি এবং সফলতা পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে, ৮ জুলাই হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় এবং ১০ জুন থেকে হজের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়। ১০ জুলাই হজের ফিরতি ফ্লাইট শেষ হয়েছে। আজ (রোববার) সকাল পর্যন্ত ৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই ৯ জন বাদে সকল হাজী (৮৭,১৪৫ জন ব্যবস্থাপনাসহ) দেশে ফিরেছেন।
তিনি আরো বলেন, যে সকল হাজী সৌদি আরবে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদেরকেও দেশে পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ জনকে বিশেষ ব্যবস্থায় মেডিকেল বেডের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে আরো ৫ জনকে মেডিকেল বেডের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে, রোগীদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা সাপেক্ষে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রেরিত হজ যাত্রীদেরকে হজ প্যাকেজ অনুযায়ী প্রতিশ্রুত সকল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বছর ৮৯২ জন হজযাত্রী হারানো গিয়েছিলো, যার মধ্যে ৮৯১ জনকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। ৮২ বছর বয়স্ক একজন হজযাত্রীকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমাদের হজ মিশন এখনও তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর হজযাত্রী মৃত্যুর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। মোট ৪৫ জন হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের সকলেরই নানা ধরণের জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্তের পূর্ব ইতিহাস রয়েছে।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড় শালঘর ইউএমএ উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ নেতাকে বসানোয় স্কুলের অভিভাবকসহ এলাকাবাসির মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়- স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সহায়তায় এমন ঘটনা হওয়ায় এ নিয়ে আরও নেতিবাচক কথা জানা যায়।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আওয়ালের ছোট ভাই মাসুদুর রহমানকে স্কুলটির সভাপতি করা হয়েছে।
এলাকাবাসির মতে, যেই আওয়ামী লীগ নেতা বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যে দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করেছেন, তাকেই আবার এতো নামিদামি স্কুলের সভাপতি করা বেশ দুঃখজনক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মাসুদুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নানা কর্মসূচি পালন করেন। এমনকি তখন বিএনপি ও জামায়েতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির নানা অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাকেই আবার যখন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সহায়তায় স্কুলের কমিটির সভাপতি করা হয় তা নিয়ে বেশ ক্ষোভই প্রকাশ করেন অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা জানান, বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান লিটন আওয়ামী লীগ ঘেঁষা ব্যক্তিদের টেনে এনে কমিটিতে বসাচ্ছেন। এটি শুধু রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নয়, তা ত্যাগী ও আদর্শিক বিএনপি নেতাকর্মীদের অপমান বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দলীয় হাইকম্যান্ড এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূত্র জানিয়েছে, মাসুদুর রহমান তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলার সৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যাক্ষ হিসেবে ইসমাইল নামের এক দুর্নীতিবাজ শিক্ষককে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন অধ্যাক্ষ সৎ সাহসের সাথে তা প্রত্যাখান করেন।
এদিকে কমিটির নেতৃত্বে মাসুদুর রহমানকে নিয়ম মেনেই মনোনীত করা হয়েছে এবং এটি আওয়ামী লীগ- বিএনপি হিসাব করে করা হয়নি বলে তার পক্ষে একদল শিক্ষক জানান।
অন্যদিকে এমইউএ স্কুলের প্রাধান শিক্ষক আবু ইউসুফ বলেন, আমি কারও নাম দিইনি। কমিটির নাম সর্বসম্মতভাবে চূড়ান্ত করে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে মাসুদুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন স্কুলটির গভর্নিং বডির সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সর্ব সম্মতিক্রমে আমার নাম প্রথমে এক নাম্বারে ছিল। যেটা ইউএনও বরাবর ডিসি বরাবর যায়। হঠাৎ করে পরের দিন আমার নাম দ্বিতীয় নাম্বারে দিয়ে জেলা অফিস থেকে স্কুলে চিঠি আসে। প্রথমে নাম থাকে মাসুদুর রহমানের। যা দেখে আসলেই হতাশ হই। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি এটি আসলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বোর্ড অনুমোদন দেয়।’
ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যা চেষ্টা মামলায় রংপুর মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম শুভকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৩ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আরপিএমপি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান।
এর আগে শনিবার (১২ জুলাই) রাত ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর সিও বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত ইফতেখারুল ইসলাম শুভ রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ ধুমখাটিয়া এলাকার আশরাফুল ইসলামের ছেলে। তার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
আরপিএমপি কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে ছিলেন শুভ।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত শুভর বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে আহত মামুনুর রশিদ মামুন, আহত জয়নাল আবেদীন বাপ্পী, আহত রমজান আলী ও আহত শহিদুল ইসলাম পৃথক চারটি মামলা করেছেন।
এসব মামলায় শুভকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
মন্তব্য