প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে তুলবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই এবং আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের আহ্বান জানাই অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য, পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা অন্বেষণ করতে, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।’
প্রধান উপদেষ্টা আজ কাতারের দোহায় ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটি এমন এক সামাজিক চুক্তি যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়ন মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে একটি সহনশীল, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তবে এখন এমন নানা হুমকি রয়েছে যা আমাদের উন্নয়নকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক সময় পার করছি যেখানে বহুপাক্ষিকতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি এবং শাসন পদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে।’
এমন প্রেক্ষাপটে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আসুন আমরা সাহসী হই। একটি এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র না হয় যে সে স্বপ্ন দেখতে না পারে, এবং কোনো স্বপ্ন এত বড় না হয় যে তা অর্জন করা যায় না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয় যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু যা আমরা তৈরি করি। এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে একটি করে ভূমিকা রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের উদ্ভাবন, সহমর্মিতা এবং সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের সক্ষমতাও ব্যাপক।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কাতার যেভাবে আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেখাচ্ছে কীভাবে একটি দেশ উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ মোকাবিলা করতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর মূল বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের এবং ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে সময়োপযোগী ও চমৎকার এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
দোহায় আজ শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।
এই শীর্ষ সম্মেলন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও উদ্ভাবনী পন্থাগুলি আধুনিক টেকসই উন্নয়নে কীভাবে অবদান রাখতে পারে, তা অনুসন্ধান করা হয়—যা একটি আরও সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করবে।
তরুণদের উদ্দেশ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “ফ্যাসিবাদের মতো কঠিন রোগ বাংলাদেশ থেকে সড়াতে পেরেছি, তামাক দূর করতে পারব না কেন?” তিনি আরো বলেন, তরুণদের উদ্দেশ্য করেই তামাক কোম্পানিগুলো কূটকৌশল সাজায়। কারণ, ২০-২৫ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের যদি তামাকে আসক্ত করা যায়, তবে তারা অন্তত ৫০ বছর ধরে সিগারেটের বাজার নিশ্চিত করতে পারবে।
উপদেষ্টা আজ বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নারী মৈত্রী আয়োজিত "নারী, শিশু ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার গুরুত্ব" -শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীগুলো ক্যাবিনেটে তোলার জন্য। তবে রাজস্ব কমে যাবে-এ অজুহাতে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি হাই লেভেল কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দুই দফা বৈঠকও করেছে। কিন্তু তামাক কোম্পানির লবিং এতই শক্তিশালী যে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।” তিনি আরো বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সবসময় জুজুর ভয় দেখায় যে, তামাক থেকে রাজস্ব আহরণ ছাড়া সরকার চলতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রদেয় আয়করের মধ্যে বহু ফাঁকি রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা তরুণ সমাজকে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।" তরুণ প্রজন্ম সচেতন হলে কোনো তামাক কোম্পানি আর তাদের টার্গেট করতে পারবে না।
সভায় জানানো হয়, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা ।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম, শিক্ষক ফোরাম, ইয়ূথ ফোরাম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ।
একটি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন উর্মী খাতুন (২৫)। কিন্তু সেখানেই তিনি হারিয়েছেন তার শেষ সম্বল, সম্মান ও মানসিক শান্তি। প্রতারণা, যৌন হয়রানি ও জোরপূর্বক উচ্ছেদের হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন এই নারী। বুধবার শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উর্মী খাতুন জানান, পারিবারিক কিছু জটিলতার কারণে গত মার্চ মাসে শহরের ফরিদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া ওঠেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার পুরো বিষয়টি তদারকি করেন ফরিদের ভাগ্নে ইদ্রিস আলী। চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের অগ্রীম ভাড়ার পরিবর্তে উর্মী তার মায়ের দেওয়া শেষ স্মৃতি ৪ ভরি ওজনের একটি সোনার চেইন তোলে দেন ইদ্রিসের হাতে। কিন্তু চেইন হাতে পেয়েই বদলে যেতে থাকে ইদ্রিস ও তার মামা ফরিদের আচরণ। ভাড়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করে উর্মীকে বাসা থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করে তারা। শুধু তাই নয়, ইদ্রিস একাধিকবার উর্মীর একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উর্মী বলেন, ‘এই শহরে আমি কাউকে চিনতাম না। বিশ্বাস করে শেষ সম্বলটা তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বোঝতে পারছি, কত বড় ভুল করেছি। ইদ্রিস শুধু প্রতারণাই করেনি, সে আমাকে বারবার মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। থানায় জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো সুবিচার পাইনি। আজ আমি শঙ্কিত, আতঙ্কিত প্রাণনাশের ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।
বাড়ির মালিক ফরিদ হোসেন ও তার ভাগিনা ইদ্রিস আলী বলেন, অভিযোগুলো সঠিক নয়। উর্মীর কয়েক মাসের ভাড়া বাকি রয়েছে। যার কারণে এমনটা মিথ্যা ছড়াতে পারে। চেইন নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব মিথ্যা রটানোর কোনো মানে হয় না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে, কয়েক দশকের চিত্তাকর্ষক জিডিপি প্রবৃদ্ধি থেকে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি নতুন দৃষ্টান্তে রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত। যদিও দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য উল্লেখযোগ্য, প্রকৃত সমৃদ্ধি পরিমাণগত মেট্রিক্সের বাইরেও বিস্তৃত। এই নতুন পর্যায়ে কেবল কৌশলগত অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন নেই বরং আমরা কীভাবে অগ্রগতি পরিমাপ করি তার একটি মৌলিক পুনর্বিবেচনারও প্রয়োজন- যা প্রতিটি নাগরিকের জীবিত অভিজ্ঞতা, নিরাপত্তা এবং কল্যাণকে ধারণ করে। বাংলাদেশে অপরাধ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জাতীয় অগ্রগতির বিষয়ে আপনার প্রতিফলন কয়েক দশক ধরে চলমান গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে। এখানে বিবেচনা করার জন্য কিছু মূল বিষয় রয়েছে- জাতীয় অগ্রগতির সূচক হিসেবে রয়েছে ।
১ অপরাধের ধারণা: মোবাইল ফোন চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাই প্রায়শই একটি জাতির নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার সূচক হিসেবে দেখা হয়। উচ্চ অপরাধের হার অন্তর্নিহিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো প্রতিফলিত করতে পারে।
২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৮২ সালের আপনার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে অপরাধ কীভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় এবং রিপোর্ট করা হয় তা নিয়ে উদ্বেগ দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক ব্যবহৃত পরিভাষা জনসাধারণের ধারণা এবং মামলাগুলোর গুরুত্বকে প্রভাবিত করতে পারে।
দীর্ঘকাল ধরে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) জাতীয় সাফল্যের প্রাথমিক বারোমিটার হিসেবে কাজ করেছে। তবুও, এই সূচকটি একটি অসম্পূর্ণ বর্ণনা প্রদান করে। এটি অর্থনৈতিক উৎপাদন পরিমাপ করে কিন্তু বৈষম্য, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মানের বিষয়ে নীরব থাকে। একটি দেশ ক্রমবর্ধমান জিডিপি পরিসংখ্যান নিয়ে গর্ব করতে পারে যখন তার নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতা, সীমিত সুযোগ এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা ক্ষয় নিয়ে লড়াই করে। বাংলাদেশের এখন সুযোগ রয়েছে উন্নয়নের জন্য আরও সামগ্রিক এবং মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়ার- যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কল্যাণ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লক্ষ্য নয়, বরং একই মুদ্রার দুটি দিক।
উন্নয়নের সাধনা অর্থনৈতিক উৎপাদনের চেয়েও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে- এতে মানুষের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সুখ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এই কারণেই একটি নতুন উন্নয়ন সূচকের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন যা সামাজিক আস্থা, নিরাপত্তা এবং ন্যায়সঙ্গত সুযোগের হিসাব করে জিডিপির পরিপূরক হবে। কল্পনা করুন এমন একটি সূচক যা অন্ধকারের পরে বাড়ি ফেরার একজন মহিলার আত্মবিশ্বাস, আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারী একজন ছোট ব্যবসার মালিকের আস্থা, অথবা একটি পরিবার তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি যে সুরক্ষা বোধ করে তা প্রতিফলিত করে। এই ধরনের কাঠামো গ্রহণের মাধ্যমে, বাংলাদেশ প্রকৃত অগ্রগতির অর্থ কী তা পুনর্নির্ধারণে বিশ্বব্যাপী অগ্রগামী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আইন প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ- পুলিশিং কার্যকারিতা: আপনার মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ করার সময় পুলিশ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের অভাব সম্পর্কে আপনার বক্তব্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা সম্পর্কে চলমান উদ্বেগগুলো তুলে ধরে। প্রযুক্তির ব্যবহার: তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজের ওপর নির্ভরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অভিজ্ঞতা পুলিশ পদ্ধতির পর্যাপ্ততা এবং উপলব্ধ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য তাদের ইচ্ছা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে।
৩. জনসাধারণের আস্থা: যদি নাগরিকরা মনে করেন যে তাদের উদ্বেগগুলো পর্যাপ্তভাবে সমাধান করা হয়নি, তাহলে এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর আস্থা হ্রাস করতে পারে এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতিতে অবদান রাখতে পারে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো কেবল অতীতের অবশিষ্টাংশ নয়; এগুলো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় চলমান চ্যালেঞ্জগুলো প্রতিফলিত করে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজন: পুলিশিং অনুশীলনে সংস্কার: পুলিশ বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করা।
সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা: আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা তৈরি করা।
প্রযুক্তির ব্যবহার: অপরাধ প্রতিরোধ এবং সমাধানে সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার। ১৯৮২ সালের পর থেকে কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও, এই চ্যালেঞ্জগুলোর স্থায়িত্ব ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশে নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আরও কাজ করা প্রয়োজন। জাতীয় অগ্রগতি বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধির জন্য এই বিষয়গুলোর সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই নতুন সূচকের একটি প্রতিশ্রুতিশীল উপাদান হলো আলী (২০২৫) দ্বারা প্রস্তাবিত দৈনিক নিরাপত্তা সূচক (ডিএসআই), যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণকে ব্যাহত করে এমন অপরাধগুরো ট্র্যাক করবে- বিশেষ করে মোবাইল ফোন চুরি। আজকের ডিজিটাল যুগে, একটি স্মার্টফোন একটি যোগাযোগ যন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি; এটি আর্থিক পরিষেবার প্রবেশদ্বার, ব্যক্তিগত ও পেশাদার তথ্যেরভাণ্ডার এবং সম্প্রদায় এবং সুযোগের জন্য একটি জীবনরেখা। একটি ফোন হারানো বা চুরি কেবল বস্তুগত বঞ্চনা নয় বরং একজনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্থার ভাঙনের প্রতিনিধিত্ব করে। ডিএসআই হ্রাস এমন একটি সমাজের ইঙ্গিত দেবে যেখানে আইনের শাসন শক্তিশালী, সামাজিক আস্থা বেশি এবং নাগরিকরা ডিজিটাল অর্থনীতিতে অবাধে এবং নিরাপদে জড়িত হতে পারে। ব্যাংকিং খাতের চেয়ে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আর কোথাও এত স্পষ্ট নয়। আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন (২০২৪) অনুসারে, দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭.৫৬ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে- যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সমগ্র জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। এটি কেবল একটি চক্রাকার মন্দা নয় বরং গভীর কাঠামোগত সমস্যার লক্ষণ: অপর্যাপ্ত তদারকি, অযৌক্তিক ঋণদান পদ্ধতি এবং জবাবদিহিতার অভাব।
এই দুর্বলতাগুলো জনসাধারণের আস্থা হ্রাস করেছে, বেসরকারি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে রোধ করেছে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি ঘাটতি এবং রপ্তানি বৈচিত্র্যের অভাবের ফলে এই চ্যালেঞ্জগুলো দশকের অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিচ্ছে। তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যেই পুনর্বিকরণের সুযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংকিং সংকট ব্লকচেইন এবং রিয়েল-টাইম অডিটিং সিস্টেমের মতো স্বচ্ছ, প্রযুক্তি-চালিত সমাধান গ্রহণকে অনুঘটক করতে পারে। একইভাবে, জ্বালানি ঘাটতি পুনর্বিকরণযোগ্য উৎস এবং দেশীয় জ্বালানি স্থিতিস্থাপকতার দিকে উত্তরণকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বাংলাদেশ টাকা কোড সঠিক, কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে আমরা বাংলাদেশি টাকা ব্যবহার করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
স্বয়ংক্রিয় প্রতিবেদন, স্বাধীন তদারকি এবং ফিনটেক উদ্ভাবনের প্রবর্তন স্বচ্ছতা এবং আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে। একটি স্থিতিশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থা কেবল সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বরং উদ্যোক্তা, ছোট ব্যবসা এবং তৃণমূল পর্যায়ের উদ্ভাবকদের ঋণ প্রবাহকে সক্ষম করার জন্যও অপরিহার্য। ফিনটেক সমাধান গ্রহণের মাধ্যমে, বাংলাদেশ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে পারে, একটি দক্ষ এবং নিরাপদ আর্থিক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে পারে। এই রূপান্তর জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং ডিজিটাল আর্থিক সম্পদ রক্ষা করে একটি উচ্চতর দৈনিক নিরাপত্তা সূচক (DSI) তৈরিতে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং প্রবাসী সম্প্রদায়গুলো অমূল্য সম্পদ। রেমিট্যান্স, যা প্রায়শই অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণোদনা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে। তদুপরি, সামাজিক ব্যাংকিং মডেলগুলো বিকাশ করা- আর্থিক মধ্যস্থতাকারীরা যা ক্ষুদ্র-সঞ্চয়কে ক্ষুদ্র-বিনিয়োগে রূপান্তরিত করে- সম্প্রদায়গুলো ক্ষমতায়ন করতে পারে, মহিলা উদ্যোক্তাদের সমর্থন করতে পারে এবং নিচ থেকে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করতে পারে। এই পদ্ধতিটি নিষ্ক্রিয় সঞ্চয়কে সক্রিয় বিনিয়োগে রূপান্তর করতে পারে, সাম্প্রদায়িক বন্ধনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং দৈনিক নিরাপত্তা সূচককে উন্নত করতে পারে।
পূর্ববর্তী সরকারের আমলে, একজন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে শরীয়তপুর জেলায় আদালতে রিপোর্ট করার সময় তাদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্রের রেকর্ডের সাথে মিল রেখেছিলেন। এই ধরনের ব্যক্তিদের আইনের অধীনে জবাবদিহি করতে হবে, কারণ জনসাধারণকে এই ধরণের কাজের জন্য কষ্ট ভোগ করতে হবে না। অনেক সাধারণ নাগরিক সবসময় অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক নন। মনে হচ্ছে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তনের বিষয়ে আপনি একটি গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এই ধরনের অসদাচরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি অন্যদেরও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করতে পারে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এই ধরনের অসদাচরণ যাতে জনসাধারণের ওপর প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে সরে এসে ঐকমত্যভিত্তিক, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক কৌশলের দিকে অগ্রসর হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিগত পূর্বাভাসযোগ্যতা, প্রাতিষ্ঠানিক অখণ্ডতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। সুশাসনকে অগ্রাধিকার দিয়ে, বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে যা দেশীয় এবং বিদেশি উভয় বিনিয়োগকেই উৎসাহিত করে। ডিএসআই বাস্তবায়ন কেবল নিরাপত্তা পরিমাপের চেয়েও বেশি কিছু করবে- এটি এটি তৈরিতে সহায়তা করবে। ফোন-সম্পর্কিত অপরাধ হ্রাসের ওপর মনোযোগ দেওয়ার ফলে পুলিশিং, ন্যায়বিচার প্রদান এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার উন্নতি প্রয়োজন। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে উদ্ভাবনকেও উৎসাহিত করবে, নিশ্চিত করবে যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সকলের উপকার করবে। তদুপরি, ডিএসআই বৃহত্তর উন্নয়নমূলক লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ এবং বিশ্বস্ত ব্যাংকগুলো ভৌত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তায় অবদান রাখে। একইভাবে, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ অপরাধের জন্য প্রণোদনা হ্রাস করে। এইভাবে, ডিএসআই কেবল উন্নয়নের ফলাফল নয়- এটি এর জন্য একটি অনুঘটক।
আজ গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নির্ধারণ করবে যে বাংলাদেশ স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে কেস স্টাডি হয়ে ওঠে নাকি পুরোনো মডেল এবং মেট্রিক্স দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। দৈনিক নিরাপত্তা সূচকের মতো উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ, শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, বৈচিত্র্যকরণে বিনিয়োগ এবং জনগণের ক্ষমতা কাজে লাগানোর মাধ্যমে, বাংলাদেশ এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলতে পারে যেখানে সমৃদ্ধি কেবল অর্থনৈতিক উৎপাদনের মাধ্যমে নয়, বরং মানবিক মর্যাদা এবং নিরাপত্তার মাধ্যমেও পরিমাপ করা হবে।
আগামী যাত্রার জন্য দূরদৃষ্টি, সহযোগিতা এবং সাহসের প্রয়োজন। স্থিতিস্থাপকতা এবং উদ্ভাবনের ক্ষমতার ইতিহাসের সাথে, বাংলাদেশ একটি নতুন যুগের জন্য সমৃদ্ধিকে পুনর্নির্ধারণ করার জন্য অনন্য অবস্থানে রয়েছে- এবং বিশ্বকে দেখানোর জন্য যে প্রকৃত উন্নয়ন মানে প্রতিটি নাগরিক নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং অন্তর্ভুক্ত বোধ করে। তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি দূর করার ওপর মনোনিবেশ করে এবং কৌশলগত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে, বাংলাদেশ তার সকল নাগরিকের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করতে পারে, নিশ্চিত করে যে প্রতিটি ব্যক্তির একটি ন্যায়সঙ্গত এবং প্রাণবন্ত সমাজে উন্নতির সুযোগ রয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ এবং আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য অর্থায়নের সুযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি অবকাঠামো এবং যৌথ উদ্যোগের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক পদ্ধতি সহজীকরণ এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা জোরদার করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্কার, পাশাপাশি বৈচিত্র্যের সুযোগ চিহ্নিত করার জন্য বাজার গবেষণা উদ্যোগ অপরিহার্য। সবুজ প্রযুক্তি প্রণোদনা এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি অনুশীলনের মাধ্যমে টেকসইতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং স্থানীয় চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা কর্মসূচি তৈরি করতে হবে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নে। এই কৌশলগুলো গ্রহণের মাধ্যমে, বাংলাদেশ কার্যকরভাবে তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে পারে, একটি একক খাতের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে এবং আরও স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলতে পারে। ১৯৮২ সালের পর থেকে কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও, এই চ্যালেঞ্জগুলোর স্থায়িত্ব ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশে নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আরও কাজ করা প্রয়োজন। জাতীয় অগ্রগতি বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধির জন্য এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াত ইসলামীর আমীর ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) সংসদীয় আসনের জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশি। এখানে কেউ সংখ্যালঘু নই। দুর্গাপূজায় আমরা প্রত্যেকটা মণ্ডপে যাব। আপনারা নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে ও শঙ্কামুক্তভাবে ধর্ম-কর্ম পালন করবেন। আমরা আপনাদের পাশে থাকব।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার রাতে কোটালীপাড়া পৌরসভা এলাকায় সনাতন ধর্মালম্বীদের সাথে গণসংযোগকালে তিনি একথা বলেন।
কোটালীপাড়া সরকারি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন মসজিদে গত মঙ্গলবার আসরের নামাজ শেষে মুসল্লিদের সাথে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে গণসংযোগ। এ সময় দেরানীবাজার, বালিয়াভাঙ্গা, আলিঠাপাড়া, পশ্চিমপাড়, কয়খা-ফেরধারা ও ঘাঘর বাজারের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি পথচারী ও শ্রমজীবী মানুষদের আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। একই সাথে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
গণসংযোগকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর তিতাস আহমেদ, কোটালীপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর ছোলায়মান গাজী, সেক্রেটারি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, নায়েবে আমীর সেকেন্দার আলী, গোপালগঞ্জ পৌর সেক্রেটারি শওকত আলম, কোটালীপাড়া পৌর সভাপতি আক্তার দাড়িয়া, পৌর সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিচয় দেন ডাক্তার। প্যাডে লিখেন ডাক্তার। দিয়েছেন চেম্বার, নিয়মিত দেখেন রোগী। সঙ্গে রয়েছে ফার্মেসি। সেই ফার্মেসির দোকানের টেবিলের সামনে ডিজিটাল ব্যানারে পরিচালনায় লেখা চিকিৎসক। প্রেসক্রিপশনে লেখেন উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। অথচ তিনি কোনো এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রীধারী কেউ নয়। এমনই ভুয়া চিকিৎসকের দেখা মিলেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনটে।
জানা যায়, উপজেলার পুনট ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের তছলিম উদ্দিন বাচ্চুর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসাইন (৩৮)। তিনি কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ছয় মাস মেয়াদি প্যারামেডিকেল কোর্স করেই ডাক্তার ও চিকিৎসক পদবি ব্যবহার করছেন। বর্তমানে এ ধরনের কোনো প্যারামেডিকেল কোর্স হাসপাতালে হয় না।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোনালী ব্যাংক পিএলসি পুনটহাট শাখার নিচে তামিম মার্কেটে দুটি দোকান ঘর নিয়েছেন জাহাঙ্গীর হোসাইন। একটিতে দোকান ঘরে ফার্মেসি। সেখানে তাকে তাকে সাজানো অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের ওষুধ। ফার্মেসির সঙ্গে লাগানো আরেক দোকানে দিয়েছেন চেম্বার। সেই চেম্বারে দেখেন নিয়মিত রোগী। ওষুধ দেন ফার্মেসি থেকে, পরামর্শ ফি নেন প্রতি রোগী থেকে ৫০ টাকা। বুধবার সকালে তার চেম্বারে মাসুদুল ইসলাম নামে এক রোগী চিকিৎসা নিতে যান। তিনি চিকিৎসাপত্র সাদা কাগজে দিতে চাইলেও প্রেসক্রিপশন প্যাডে লিখে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অথচ এ বিষয়ে ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১২ মার্চ বিচারপতি রাজিক আল জলিল এবং বিচারপতি সাথীকা হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ রায় দেন।
গোবিন্দপুর গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের বাপের বেশি জমি-জমা ছিল না। এক-দেড় বিঘা। এই চার বছরে চার বিঘা জমি কিনেছে, দুই তলা ফ্ল্যাট বাড়ি করিছে। বড় বড় গেরস্থরাই জমি কি না পারুছে না। আর জাহাঙ্গীর প্রতি বছর জমি কিনে। আগে চলতো ছোট হোন্ডায়। এখন চলায় বড় হোন্ডা। এছাড়া ব্যাংকে তার অনেক টাকাও আছে। ব্যক্তিগত ক্লিনিক দেওয়ার জন্য এখন পুনট বাজারে জায়গা খুঁজতেছে।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, নামের আগে এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রী ছাড়া ডাক্তার বা চিকিৎসক লেখা যাবে না। হাইকোর্টের এ রায় সম্পর্কে অবগত আছি। আগে প্রেসক্রিপশন প্যাড বানানো হয়েছিল এজন্য সেসব প্যাডে ডাক্তার পদবি লেখা ছিল। এছাড়া রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। ডিজিটাল ব্যানারে চিকিৎসক লেখার উত্তরে বলেন, আমি যেখানে থেকে ট্রেনিং নিয়েছি তারা এভাবে লিখতে বলেছেন। আমার ভুল হয়েছে। আজকে দিনের মধ্যে সব সরিয়ে ফেলব।
জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডা. মো. আল মামুন বলেন, এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া কেউ ডাক্তার বা চিকিৎসক পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কেউ এ পদবি ব্যবহার করেন। তবে, সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুব উল আলম বলেন, আপনার তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারলাম। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আধুনিক চাষাবাদ মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করে বাজিমাত করেছেন কৃষক আব্দুল মান্নান। তার অভাবনীয় সাফল্যে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তার এমন সাফল্যে এলাকার নতুন আরও ৫-৬ জন চাষি টমেটো চাষ করেছেন। মূলত মালচিং পদ্ধতির টমেটোতে এ অঞ্চলের কৃষকের সুদিন এসেছে। এ টমেটোর চারা বা ফল প্রাকৃতিকভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও অনেক কম। তাই এ এলাকার কৃষকরা টমেটো চাষে মনোযোগী বেশি। এই পদ্ধতি এলাকায় জনপ্রিয় হলে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশাবাদ কৃষি বিভাগের।
কৃষি বিভাগ জানায়, এই পদ্ধতির চাষাবাদে জমি রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকে। এতে পানি, সার, ওষুধ খরচ সাশ্রয়ী হয়, পাশাপাশি ফলন হয় বেশি এবং গাছ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে। বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলি পেপার (পলিথিন)। বীজগুলো থেকে চারা গজানোর পর চারার স্থানগুলো থেকে মালচিং পেপার ছিঁড়ে দিতে হয়। যাতে করে চারাগুলো মাথা তুলে বড় হতে পারে। এই মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে জমি বিনষ্ট হয় না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিক কম লাগে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এতে করে কৃষক সবদিক থেকে লাভবান হয়।
জানা যায়, মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শুকুর উল্লার গ্রামের তরুণ কৃষক আব্দুল মান্নান এ বছর সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে আগাম টমেটো আবাদ করেছেন। ৫৫-৬০ দিনের ভেতরে টমেটো বাজারজাত করা যায়। এবার তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৩ লাখের ওপরে। আরও ১০-১২ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানা যায়। বর্তমান বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজারদর গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় এবার প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খরচ বাদে ৩০-৩৫ লাখ টাকা আয় হবে।
কৃষক আব্দুল মান্নান গত বছর ১০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের টমেটোর আবাদ করেন। তার উৎপাদন খরচ হয় ২০-২২ লাখ। খরচ বাদে তার লাভ হয় ২৫-২৬ লাখ টাকা। নতুন এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে কৃষক আব্দুল মান্নানের ব্যাপক সাফল্যে ও অধিক লাভবান হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে, প্রতি বছর তাকে দেখে উৎসাহিত হয়ে গ্রামে আরও ৫-৬ জন কৃষক ৩০-৩৫ বিঘা জায়গায় টমেটোর আবাদ করেছেন। তারাও সাফল্য পেয়েছেন। চারিদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার কৃষক এসে খোঁজ-খবর ও পরামর্শ নিচ্ছেন। তারাও আগামীতে এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটোর আবাদ ব্যাপকভাবে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, ‘মালচিং পদ্ধতিতে খরচ কমেছে কয়েকগুণ অপরদিকে অসময়ে টমেটো চাষ করে বাড়তি আয় এর সুযোগ হয়েছে। খরচ বাঁচাতে এবং উৎপাদন বাড়াতে মালচিং পদ্ধতিতে টমোটো চাষ করেছি। তা ছাড়া মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে চারা বিনষ্ট হয় না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিক কম লাগে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, আমার বাগানে বর্তমানে কাজের লোক আছে ১২-১৫ জন। পুরুষদের দৈনিক ৪৫০ টাকা ও মহিলাদের দেওয়া হয় ৩০০ টাকা।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় জানান, ‘কমলগঞ্জ উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের টমেটোর উৎপাদন হয়েছে। এই পদ্ধতিতে টমেটোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মালচিং পদ্ধতিতে করায় আর্দ্রতা বেশি থাকা সত্ত্বেও শেকড় অক্ষত থাকে, যা গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সফলতা এনেছে এবং কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
মন্তব্য