ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে:-
পাবনা: গাজা উপত্যকার বাতাসে এখন হাহাকার ও আর্তনাদ। ইসরায়েলের এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল পাবনার সড়ক। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে শহরের শহীদ চত্বরে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে পাবনা জিলা স্কুল, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহীদ চত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘গাজায় ১৮ মাস ধরে হামলা ও হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী। অসংখ্য মুসলিম হত্যা করেছে। শিশু, চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিক- কোনো কিছুই বাদ দিচ্ছে না। গাজাকে একটি ধ্বংস নগরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ রকম বর্বরতা বিশ্ব এর আগে দেখিনি। আমরা বিশ্ব মুসলিমের অংশ হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
এ সময় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের স্লোগান দিয়ে শহীদ চত্বরের পাশে লতিফ টাওয়ারের বাটা শোরুমে জুতা ও ঢিল নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা। উত্তেজনা বাড়তে থাকলে ছাত্রনেতারা তাদের নিবৃত্ত করেন। পরে গাজাবাসীর জন্য মোনাজাত করে কর্মসূচি শেষ হয়।
নরসিংদী: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের ন্যায় নরসিংদীতেও ব্যাপক সংখ্যক লোক বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। নরসিংদী শহরের শিক্ষা চত্বর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। নরসিংদী জেলখানা মোড়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা মুসলেহুদ্দীন, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা আমজাদ হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক মকবুল হোসেন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল লতিফ খান, ইব্রাহিম ভূঁইয়া, নরসিংদী সদর থানার আমির মাহফুজ ভূঁইয়া, নরসিংদী শহর আমীর আজিজুর রহমান ও জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রুহুল আমীনসহ নেতারা।
অন্যদিকে বেলা ১১টায় নরসিংদী পৌরসভা চত্বর থেকে সর্বস্তরের মুসলমান এক বিশাল মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে জেলখানা মোড়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ হয়। নরসিংদী শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জেলখানা মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশে একত্রিত হন। এতে করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
নেত্রকোনা: গাজায় হামলা ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সারা দিনব্যাপী জেলা সদরসহ ১০ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দল, ইসলামী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় বক্তারা অনতিবিলম্বে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে সর্বপ্রকার ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের দাবি জানান তারা।
রংপুর: ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের অংশ হিসেবে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সকালে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিছিল নিয়ে এসে টাউন হলের সামনে সড়কে অবস্থান করে। সেখানে সমাবেশে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। এ সময় ইসরায়েলের পণ্য বয়কটসহ জাতিসংঘকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
নওগাঁ: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদ এবং বিশ্বব্যাপী ডাকা হরতালের সমর্থনে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ করেছে নওগাঁ সরকারি কলেজ এবং নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ ফাহমিন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজ চত্বর প্রদক্ষিণ করে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘নেতানিয়াহুর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ স্টপ জ্যানোসাইডসহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও অংশগ্রহণ করেন।
নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সুলতান শাহরিয়া শাফি বলেন, ‘এই ইসরায়েল আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের কেন মারছে? কী উদ্দেশ্য তাদের? শুধুই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ভূমি দখলের জন্য? নাকি আমাদের দ্বীন, আমাদের ইমানের জন্য? তাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা কোথায়? তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পদক্ষেপ কেমন হওয়া উচিত। তারা আমাদের আকিদার শত্রু, দ্বীনের শত্রু। আমরা নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরায়েল পুনর্বহাল এবং ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘মিডিয়ায় যখন গাজার ধ্বংসস্তূপের ভিডিওগুলো দেখি তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। শত শত মরদেহ আকাশে উড়ছে। ছোট ছোট শিশুদের নিথর দেহ পড়ে আছে। আমাদের আর সহ্য হচ্ছে না। জাতিসংঘের কাছে এই হত্যার বিচার চাই।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের উপদেষ্টা রেশমা পারভীন বলেন, ‘দখলদার ইসরায়েল বাহিনী আমাদের ভাইদের ভূমি দখল করে তাদেরই উৎখাত করছে। অথচ বিশ্ব বিবেকের এটি নিয়ে কোনো কথা নেই। আমরা এই সমাবেশ থেকে দেশবাসীকে ইসরায়েলি সব পণ্য বয়কট করার জন্য আহ্বান জানাই।
বাগাতিপাড়া (নাটোর): ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বাউয়েট) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্লাজা প্রাঙ্গণে শত শত শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। তারা ফিলিস্তিনের শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের ওপর চালানো গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান জানান।
প্রথম পর্বের মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে উপজেলার দয়ারামপুর বাজারের প্রধান সড়ক এলাকায় প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।
বাউয়েটের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা মাছুদার রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ তূর্য্য ও গাজাবাসীর জন্য বিশেষ মোনাজাত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ আল আমিন প্রমুখ।
ঈশ্বরদী (পাবনা): গতকাল সোমবার বাদ জোহর ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হতে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘট কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ধর্মঘট-বিক্ষোভ করেছে ঈশ্বরদীর হাজারও সাধারণ মানুষ। জোহরের নামাজের আগেই বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে মসজিদের সামনে জড়ো হয়। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, যুবক, বৃদ্ধসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। শহরজুড়ে মিছিলটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মিছিল শেষে ঈশ্বরদী রেলগেট মোড়ে পথসভা হয়। বক্তারা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ): গাজায় ইসরায়েলি বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ত্রিশালের রাজপথ। গতকাল সোমবার বাদ জোহর গোহাটা মসজিদ থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ পৌর শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এতে হাজার হাজার জনতা অংশ নেন। পরে সরকারি নজরুল কলেজের সামনে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন মুফতি জহিরুল ইসলাম, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা এখলাস উদ্দিন, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল মালেক, মাওলানা তোফাজ্জল হক মুফতি মোশারফ হোসেইন প্রমুখ। এ ছাড়া সকালে গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ত্রিশাল পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে।
মৌলভীবাজার: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গতকাল কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা এবং ভারতের মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ করা হয়। সোমবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, ভানুগাছ, পতনঊষার, মুন্সীবাজার, আদমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এ বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
এসব মিছিল শেষে বক্তারা অবিলম্বে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের মানুষদের প্রতি সবাইকে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল সেনাবাহিনী কর্তৃক নারী, শিশু, স্কুল, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে জঘন্য ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি শোকের। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদী-তীরবর্তী কারবালার ময়দানে শহীদ হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)। শোকের দিন পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিল বের করেছেন শিয়া মুসলিমরা। রোববার সকাল ১০টায় হোসাইনী দালান ইমামবাড়া থেকে ১০ মহররমের প্রধান তাজিয়া মিছিল বের হয়েছে।
হোসাইনী দালান ইমামবাড়ার সুপারিনটেনডেন্ট এম.এম. ফিরোজ হোসেন জানান, তাজিয়া মিছিলটি সাজানো হয়েছে সামনে কালো ব্যানার, বেহেস্তা (লাল-সবুজ নিশান), পাঞ্জা আলম মাতম, দুলদুল ঘোড়া, খুনি ঘোড়া ও একটি জারি তাজিয়া দিয়ে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
তিনি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে আজ এ কথা বলেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পবিত্র আশুরা’র শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
তিনি বলেন, ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। ইসলামের এই সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সকলের প্রতি বেশি বেশি নেক আমল করার আহবান জানান। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে তিনি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তা অভিযানে ‘চরমপন্থি উগ্রবাদী’ আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওএফএ) বলেছে, ‘সন্ত্রাস-সংক্রান্ত তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুরে তাৎক্ষণিকভাবে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চেয়েছে।’
বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রেপ্তার বা আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনার হালনাগাদ তথ্যে বাংলাদেশ জানিয়েছে, বাকি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ সরকার ঘটনাপ্রবাহ ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করে যাবে।
মালয়েশিয়ার সরকার শুক্রবার জানায়, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি যে বাংলাদেশি চরমপন্থি গোষ্ঠী (জিএমআরবি) ভেঙে দিয়েছে, তা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগে লিপ্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ধারা ৬এ অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১২ (এসওএসএমএ)-এর আওতায় তদন্ত ও বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশির বিষয়ে দেশটি ইতোমধ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, তারা এখন মালয়েশিয়ার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ জন বাংলাদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি এবং এখন তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই করবে, তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
‘যদি তারা জড়িত থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে,’ বলেন উপদেষ্টা হোসেন। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো কিছুটা ‘ফ্লুইড’ বা অস্থির।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালয়েশিয়ান ভিসা ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ভিসা ইস্যুতে প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তারা একথা বলতে পারেন না যে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না।
তবে তিনি বলেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে প্রভাব কমানো সম্ভব।
মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক তান শ্রী মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, এই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক সদস্যপদ ফি হিসেবে জনপ্রতি ৫০০ রিংগিত এবং আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী অন্যান্য স্বেচ্ছা অনুদান গ্রহণ করে তহবিল সংগ্রহ করত।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন, যারা সবাই মালয়েশিয়ায় কারখানা, নির্মাণকাজ ও পেট্রোল পাম্পে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক।
তিনি বলেন, সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট অ্যাপ এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। গোষ্ঠীটি নতুন সদস্য নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করত।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, পুলিশ এখনো তদন্ত করছে ঠিক কত টাকা আইএস নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, গোষ্ঠীটি সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে আইএস-এর প্রচারণা ছড়াত, ‘বাইআহ’ (আনুগত্যের শপথ) সম্পন্ন করত এবং গোপন ধর্মীয় ক্লাস ও সদস্য সভার মতো কার্যক্রম আয়োজন করত।
তিনি বলেন, ‘যারা অনলাইনে আনুগত্যের শপথ করত, তাদেরকে সেল নেতা বানানো হতো, যাতে তারা গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। নতুন সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল ধাপে ধাপে—স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে অভিজাত দলের গঠন পর্যন্ত।’
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীতে কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে এই গোষ্ঠী মালয়েশিয়ায় প্রায় এক বছর ধরে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও গোষ্ঠীটি মালয়েশিয়ায় কোনো হামলার পরিকল্পনা করছিল না, তবে তারা দেশটিকে তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। তদন্তে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোল সহায়তা করছে।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, মালয়েশিয়ান আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আইএস মতাদর্শ ছড়াতে থাকা বাংলাদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়।
সিলেটে নতুন করে একজনের করোনা ও একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে চলতি বছর ২৭ জনের করোনা ও ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো।
আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। এই বছর ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা ধরা পড়েছে এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রেরিত ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জুলাই মাসে পাঁচজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো। বর্তমানে ২৫০ শয্যার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি বছর ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় তিনজন, মৌলভীবাজার জেলায় ১১ জন এবং হবিগঞ্জ জেলায় ১৪ জন। তবে, ডেঙ্গুতে সিলেট অঞ্চলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ জুলাই মাসের শেষে কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউসন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই মাসের শেষের দিকে কিংবা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে আমরা প্রসিকিউসনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করছি।’
এদিকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের মুখোমুখী করতে ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে আর্জি জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
গত ১ জুলাই বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানিতে বিচারের এই আর্জি জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় তিনি ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে সর্বত্র অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পরিমাণে, সংখ্যায় এবং স্থানের ব্যপকতায় এই অপরাধ ছিল বিস্তৃত-ব্যাপক। আর এই অপরাধ ছিল সিস্টেমেটিক (পদ্ধতিগত)। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে এবং নির্দেশের চেইন অব কমান্ড অনুসারে বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশ এবং অন্যান্য সহযোগী বাহিনী সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটন করেছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের সর্বত্র একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যে অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে এবং যে অভিযোগগুলো আমরা দিয়েছি পুরোটাই ছিল বিস্তৃত এবং পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রমাণ করে। ফলে আমাদের সবিনয় প্রার্থনা হচ্ছে, এই মামলায় যে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এনেছি, তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখী করা হোক।’
চিফ প্রসিকিউটরের এই শুনানির পর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন দুই সপ্তাহ সময় চাইলে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য রয়েছে।
এসময় ট্র্যাইব্যুনালে হাজির ছিলেন এই মামলায় গ্রেফতারকৃত পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল- মামুন। তার পক্ষে ট্র্যাইব্যুনালে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। অভিযোগ গঠন বিষয়ক সেদিনের শুনানি ট্র্যাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আগামী সাতদিনের মধ্যে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ট্র্যাইব্যুনাল ১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতা ১ জুলাই শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউসন। এদিন প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দু’টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
ভোলা জেলা শহরের কালিনাথ বাজারে ঢাকা থেকে আসা ভোলাগামী এস এ পরিবহনের পন্য বহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে আনা প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের ২০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৮০ কেজি পলিথিন, ৫ হাজার ৮৮৯ পিস আতশবাজি ও ১৯ হাজার ৬০০ শলাকা বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভোলা বেইস।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে কোস্টগার্ড ভোলা বেইসের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় কোস্টগার্ডের ভোলা বেইসের সদস্যরা শহরের কালিনাথ রায়ের বাজারে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে ওই এলাকায় ঢাকা থেকে ভোলাগামী এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে ৭ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ৩৬০ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, পলিথিন, আতশবাজি ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে জব্দকৃত কারেন্ট জাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিন ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুল্ক ফাকি দিয়ে আনা সিগারেট বরিশাল কাস্টমস ও আতশবাজি ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ২৪ ঘণ্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্টগার্ডের আওতাধীন উপকূলীয় এবং নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কতৃক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা চোরাচালানবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
মন্তব্য