টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাত বছর বয়সী মাদ্রাসাছাত্র ফাহিম। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এতিম হয়ে পড়ে সে।
ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন তার বাবা-মা, বড় ভাই ও খালাসহ পরিবারের চার সদস্য।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারে ফাহিমের পরিবারকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি দুটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরও ১৫ জন।
পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে ফাহিমের জীবন কঠিন হয়ে পড়ে। অনিশ্চয়তায় ঝুলে যায় তার ভবিষ্যৎও।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেট কারে থাকা একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন।
পরের দিন বাসচালক নুরুন্নবীকে আটক করা হয়। তবে তদন্তে জানা যায়, ওই চালকের বৈধ লাইসেন্স এবং বাসটিরও ফিটনেসের ছাড়পত্র ছিল না।
এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত হারানো প্রাণের একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র।
দুই বছর আগে ফরিদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী ভাইকে হারানো ঢাকার বাসিন্দা নুরুল হুদা বলেন, কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের ওপর দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। সব অংশীজনকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও জরুরি।’
উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৬ হাজার ৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা রেকর্ড করা হয়। এসব দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২৯৪ জন নিহত ও ১২ হাজার ১৯ জন আহত হন।
সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৩৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ পথচারী এবং ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ যানবাহন চালক বা তাদের সহকারী ছিলেন।
শুধু ঢাকায় ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত ও ৪৮২ জন আহত হন।
দুঃখজনকভাবে ১৩টি দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তান একসঙ্গে মারা যান। বছরজুড়ে দুর্ঘটনায় সব সদস্যের মৃত্যুতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অন্তত চারটি পরিবার।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আরেক সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ২০২৪ সালে সারা দেশে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত হন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও অস্পষ্ট।
সরকারি পরিসংখ্যানগুলো প্রায়শই কেবল ঘটনাস্থলে মৃত্যুর সংখ্যাটি রেকর্ড করে। তবে পরে হাসপাতালে প্রাণহানিগুলোর হিসাব প্রায়শই বাদ পড়ে যায়।
বিশ্বে ৩০ দিনের মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুগুলোর তথ্য রেকর্ড করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেই ধরনের ব্যাপক তথ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, সড়কে নতুন যানবাহনের প্রচলন দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, ‘আগে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের এতটা প্রচলন ছিল না। এটিকে গণপরিবহন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়, এখন যা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, অদক্ষ চালকের গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো রাস্তায় ব্যাপকভাবে চলাচল করছে। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ প্রায়শই ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়।
তালুকদার বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের ৮০ শতাংশই মাথায় আঘাত পেলেও হেলমেট ব্যবহারের হার বাড়েনি।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অতিরিক্তি গতি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দায়ী।
তিনি গাড়ির গতিতে প্রযুক্তিগত মনিটরিং, চালকদের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিকূল কর্মপরিবেশ, অনির্ধারিত মজুরি ও দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে তারা বেপরোয়া গাড়ি চালান। দুর্ঘটনা কমাতে তাদের পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।’
তিনি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার আহ্বান জানান।
পুরোপুরি কার্যকর হয়নি সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮
শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রবর্তন করা হয়। আইনটির উদ্দেশ্য ছিল বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রাণহানি ঘটলে অভিযুক্তের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।
২০১৯ সালে সরকার যখন আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিল, তখন পরিবহন সমিতিগুলো ধর্মঘট শুরু করে। এর ফলে বেশ কয়েকটি মূল বিধান প্রয়োগ করা যায়নি। ফলে নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ থেকে যায়।
অধ্যাপক তালুকদার বলেন, কোনো আইন বাস্তবায়নের আগে এর সম্ভাব্যতা, কার্যকারিতা ও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা নিরূপণের জন্য শুনানি করা উচিত। কিন্তু ২০১৮ সালের পথ নিরাপত্তা আইনের কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, আইনে একাধিক বিধান থাকলেও একসঙ্গে সবগুলো প্রয়োগ করলে পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমিক ও সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আরও ভালো আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। কারণ, অপরাধীরা প্রায়শই প্রভাব বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শাস্তি থেকে রক্ষা পায়।
তিনি সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষাকে অ্যাকাডেমিক পাঠ্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালুর সুপারিশ করেন।
বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ২০২৩ সালের সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন বলা হয়, বেশির ভাগ দেশে পথচারীদের সুরক্ষার চেয়ে মোটরগাড়ি অগ্রাধিকার পায়।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হলো সড়ক দুর্ঘটনা।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা একটি গুরুতর বিষয়। কারণ, দুর্ঘটনা কেবল জীবনই ধ্বংস করে না, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে।’
ফাহিমসহ অসংখ্য মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনের কঠোর প্রয়োগ, কাঠামোগত সংস্কার ও ব্যাপক জনসচেতনতা ছাড়া প্রতিরোধযোগ্য সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। আর এসব দুর্ঘটনা প্রাণহানির পাশাপাশি পরিবারগুলোকে তছনছ করে দেবে।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য