দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে সংঘটিত আগুনকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে সন্দেহ করছেন রাজনীতিক, প্রশাসন সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচিবালয় কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন তথা কেপিআইভুক্ত। সে স্থাপনায় মধ্যরাতে আগুন নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে গোটা দেশের মানুষ।
তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক ঘটনার ধারাবাহিকতায় সচিবালয়ের এ আগুন।
ভয়াবহ এ আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র। আগুন লাগার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ হতে পারে।
সচিবালয়ে মধ্যরাতে লাগা এ আগুনের ঘটনা জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। ফেসবুকে নানাজন বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন তুলে তার উত্তর খুঁজছেন।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে এই আগুনকে নাশকতা বলছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
এদিকে ২৫ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি করে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন আমলারা। প্রশাসনে এমন চলমান অস্থিরতার মধ্যে আগুনের ঘটনা ঘটল।
আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে বলে মনে করেন সচিবালয়ের কাছে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
তারা বলছেন, সচিবালয়ের ভেতরে শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ও সব গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকে। আগুন লাগার পর একজনের চোখেও পড়েনি, এমনটা কীভাবে সম্ভব।
অন্যদিকে সচিবালয়ে কর্মরত একাদিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই সময়ে দুই জায়গায় আগুনের সূত্রপাত দেখে সন্দেহ তৈরি হয়েছে এটি শর্টসার্কিট নাকি অন্য কিছু।
বিষয়গুলো নিয়ে অনেক প্রশ্ন জাগছে বলেও জানান তারা।
আগুনের ঘটনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যর্থতা ছিল। তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়ে আগুন লাগাতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্রকৌশলী আলী আহমেদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কেপিআইভুক্ত এলাকা। যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। পিডব্লিউ কাজও করেছে।
‘আবার কেন তাহলে আগুন লাগল? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনও দুর্ঘটনার আগুন লাগে না।’
তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায় তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এমন দুর্বৃত্তায়নের আগুন আমি আগেও দেখেছি। এখানেও তাই হয়েছে।
‘এটা শর্টসার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি ছিল। হয়তো দুর্বৃত্তরা এই ছুটির সুযোগে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে ফায়ার সার্ভিস ছিল। ভেতরে ফায়ার স্টেশন আছে। আর ক্যামেরা তো আছেই। সার্বক্ষণিক দেখভালের লোক আছে।
‘সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে এক বা দুজন লোক ছিল না। দেড়-দুই শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ছিল। তারা কি সবাই একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিল? সেটা তো হতে পারে না।’
এ ঘটনাকে নাশকতা বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ জানিয়ে আলী আহমেদ বলেন, ‘এটা ডিজ্যাস্টার। কেউ চান্স নিয়েছে মনে হচ্ছে। গুরুত্ব সহকারে নাশকতার ঘটনা কি না, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সচিবালয়ের আগুনকে সরাসরি নাশকতার অংশ হিসেবে দেখছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, “এই আগুন স্যাবোটাজ (নাশকতা)। অবশ্যই এটা সন্দেহের শুরুতে রাখতে হবে। লাগানো আগুন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটা কেপিআইভুক্ত এলাকা। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জিং সময় যাচ্ছে। এটা ধরে নিতে হবে যে, এই আগুনের মোটিভ কী হতে পারে? এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে সচিবালয়ের চারটা ফ্লোরে আগুন, যেখানে চারটা কমিশন চলছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্রের প্রয়োজন হবে।
“এই আগুনের টার্গেটই হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়া। কারণ কমিশনের জন্য বিভিন্ন সময় নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। যে উচ্চপদস্থ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের সবকিছুর আগে বিবেচনায় রাখতে হবে যে এটা স্যাবোটাজ। যদি প্রথমেই ‘স্যাবোটাজ’ না ধরে তদন্ত করা হয় তাহলে ভুল হবে।”
ফায়ার সার্ভিসের সম্ভাব্য ব্যর্থতাও তদন্ত দাবি
করেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) অবসরপ্রাপ্ত মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সচিবালয়ে লাগা আগুন নির্বাপণে ১০ ঘণ্টা সময় নেয়া অবিশ্বাস্য। সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। নাশকতার যথেষ্ট কারণ আছে।
‘যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ, সেসব জায়গায় আগুন লাগছে। আরেক ভবনে তো আগুনই লাগেনি।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল ছুটির দিন ছিল। রাত দেড়টায় আগুন লাগল, যেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই। এর মধ্যে একটা পক্ষের ৪০ ঘণ্টার আলটিমেটাম চলছে।
‘কারা আলটিমেটাম দিয়েছে, তাদের ধরতে হবে। মধ্যরাতে লাগা আগুন নেভাতে ১০ ঘণ্টা লাগল কেন, তাও দেখতে হবে।’
শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘যদি দুর্ঘটনাজনিত আগুন হয়, তাহলে এক জায়গায় লাগার কথা। একসঙ্গে তিন জায়গায় আগুন লাগার কথা নয়। লাগানো হলেই তিন জায়গায় আগুন জ্বলবে।
‘তো পুলিশ, আনসার, বিজিবি ছিল। চারদিকে লাইট বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিস কী করল? তাদের কী দুর্বলতা ছিল? বঙ্গবাজার ১০ গজের ভেতরে। সেই আগুনও তারা দ্রুত নেভাতে পারল না। সচিবালয় কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। সেখানেও তারা আগুন নেভাতে পারছেন না। এটা হয় না, মানা যায় না। তাদের ব্যর্থতাকেও তদন্তের বিবেচনায় আনতে হবে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ইউএনবিকে বলেন, ‘কী কারণে আগুনের সূত্রপাত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সবকিছু নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আছেন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সচিবালয়ে আগুনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। বিশেষ করে বড় গাড়িগুলো ঢোকানো কঠিন ছিল। সচিবালয়ের গেট ভেঙে দুটি বড় গাড়ি ঢোকানো হয়। রাত ১টা ৫২ মিনিটে আমরা মেসেজ পাই, সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লেগেছে।
‘১টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায়। মোট ১৯টি ইউনিট নিয়োজিত করা হয়। এর মধ্যে ১০টি ইউনিট সরাসরি কাজ করেছে। ৬, ৭, ৮ ও ৯ এই চারটি তলায় আগুন লেগেছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ইউএনবিকে জানান, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর ৭ নম্বর ভবনের প্রতিটি দপ্তরের সিসিটিভি ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিডিও দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে বিস্তারিত বলা যাবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেছিলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না, তা তদন্তের পর বলা যাবে।
সচিবালয়ের মধ্যরাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। এ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রধান। এ ছাড়া রয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বুয়েটের ড. কাদরী মনসুর ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ড. ইয়াসির আরাফাত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আমাদের ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না।’
আগুনের ঘটনা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।’
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ‘ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ে যেভাবে আগুন লেগেছে এবং এটার ধরন, অবস্থান যেমন, এটা কখনোই সাধারণভাবে বা ন্যাচারালি বা কোনো দুর্ঘটনাবশত আগুন হতে পারে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, ষড়যন্ত্র করে, প্ল্যান (পরিকল্পনা) করে এই আগুনটি লাগানো হয়েছে।’
অন্যদিকে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ‘সিমপ্যাথি গেইন’ ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই ক্যাম্পেইন না থামাতে পারলে আপনি শেষ। আজকে আমলা। আগামীকাল অন্য কেউ।’
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, “ফ্যাসিজমের এনাবলারদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা দেখানোর পরিণাম এ কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে। হাসিনার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ঘি খাওয়া ফ্যাসিস্ট এনাবলাররাই এখন মানবাধিকারের আলাপ দিয়ে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ‘সিমপ্যাথি গেইন’ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। এই ক্যাম্পেইন না থামাতে পারলে আপনি শেষ। আজকে আমলা; আগামীকাল অন্য কেউ।”
এদিকে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগা ও অনেক নথি পুড়ে যাওয়া দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, এ আগুনের ঘটনায় মানুষের মনে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর ভবনে ভয়াবহ আগুন এবং আগুন নেভানোর কাজে গিয়ে একজনের মৃত্যু ও দুই-তিনজন আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়া অস্বাভাবিক নয়।’
সচিবালয়ে বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সচিবালয়ে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটটি আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে রাত ১টা ৫৪ মিনিট থেকে। আগুনের তীব্রতা বেড়ে গেলে একে একে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ৮টি ইউনিট কাজ করলেও পরে আরও ১১টি ইউনিট যুক্ত হয়।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ছাই হয়ে যাওয়া চারটি ফ্লোরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ছিল। এ চারটি ফ্লোর একেবারে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিগুলোকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়েও আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শকরা (এসআই)।
আব্দুল গনি রোডে সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর গেটের বিপরীত পাশে সোমবার সকাল থেকে অবস্থান নেন তারা।
বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা দাবি পূরণে কোনো আশ্বাস না পেলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান।
অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদ ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আমরা ৩২১ জন সাব-ইন্সপেক্টর গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। আমাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব দেখা করে আমাদের দাবির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
‘এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় আমরা সবাই (৩২১ জন) আজ আবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
অব্যাহতি পাওয়া এসআই অম্লান মিত্র বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর ট্রেনিংয়ে অংশ নিই। অব্যাহতি দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর। আমাকে বলা হচ্ছে ক্লাসে অমনোযোগী এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। কিন্তু আমি অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় ৮০৪ জনে ১০০ জনের মধ্যে ছিলাম। অমনোযোগী থাকলে তো এমন ফলাফল হওয়ার কথা না।’
কর্মসূচিতে আসা আরেকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা এক বছর অনেক ত্যাগ স্বীকার করে প্রায় বিনা বেতনে ট্রেনিং করেছি। যখন চাকরিতে নিয়মিত হব, তখনই আমাদের বাদ দেওয়া হলো। এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।’
৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ৮২৩ জন ছিলেন। তারা গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
তাদের মধ্যে তিন ধাপে ৩১৩ জন এসআইকে মাঠে ও ক্লাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে শোকজ করে একাডেমি। এরই মধ্যে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া ছয় সদস্যের নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল হায়াত মো. রফিকের সই করা প্রজ্ঞাপনে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মকমিশনে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত নিম্ন বর্ণিত ছয় সদস্যের নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হলো।
নিয়োগ বাতিল করা ছয় সদস্য হলেন অধ্যাপক ড. শাহনাজ সরকার, মো. মুনির হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এ এফ জগলুল আহমেদ, ড. মো. মিজানুর রহমান, সাব্বির আহমেদ চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহিনা সোবহান।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এক বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানায়, চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে এ সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সেই সাথে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন: হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।’
পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে। কিন্তু রোগটি যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনা
১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
২. হাঁচি-কাশির সময় বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন
৩. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন
৪. আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন
৫. ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুইতে হবে(অন্তত ২০ সেকেন্ড)
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না
৭. আপনি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। প্রয়োজনে কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রোববার জানান, বাংলাদেশের এক নারী এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এইচএমপিভি না, নিউমোনিয়ার কারণে তার স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।
চীনের উত্তরাঞ্চলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এতে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় নাগরিকদের পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (সিডিসি)।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিয়াং জানান, শীত মৌসুমে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগটির সংক্রমণ বেশি ঘটে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কমই ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন রোববার এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তার স্বাস্থ্যের রুটিন পরীক্ষা প্রতিদিনই চলছে। তবে সোমবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশেষ কিছু পরীক্ষা করা হতে পারে। হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখেছেন বিখ্যাত হেপাটোলজিস্ট অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি। এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনেই তার চিকিৎসা চলছে।
‘হাসপাতালে ভর্তির পরই খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি করানো হয়েছে। এতে তার শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন বলেও জানান জাহিদ হোসেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডনে যান। ওই দিনই হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা এরই করা হয়েছে। সেই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে তার চিকিৎসা চলছে।
লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও কর বাড়ানো হলেও দেশের মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর জন্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা ভালো হবে। দেশের মানুষেরই উন্নয়ন হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অজনপ্রিয় হওয়ার কোনো কারণ নেই।
রাজধানীর ফরেন একাডেমিতে রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, ‘বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে ট্যাক্স আদায় সবচেয়ে কম। সরকার চায় ট্যাক্স, জিডিপি এমন জায়গায় থাক, যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটে। তাহলে সামনে দেশের মানুষেরও উন্নয়ন হবে।
‘ম্যাক্রো ইকোনমি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের চাহিদার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও তো ভালো অর্থনীতিবিদ আছেন। তাদের পরামর্শেই এটা করা হয়েছে। এটা করা না হলে ডলারের দাম ১২৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা হয়ে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেখেন দেশের ট্যাক্স আদায়ের পরিমাণ কেমন; অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যটা কতটা মজবুত।
‘এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও উচিত বিষয়টি নিয়ে জনগণকে বোঝানো।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘খরচ কীভাবে কমানো যায়, সরকার সে জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগের প্রধানমন্ত্রী ৩০০ লোক নিয়ে বিদেশে যেতেন। এখন প্রধান উপদেষ্টার বহরে ৫০ জন যাচ্ছেন। তারও একটি বড় অংশ থাকছে নিরাপত্তার জন্য।
‘আগে দেখা গেছে, একজন মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জন্য কর্ণফুলী টানেল করা হয়েছে। টানেল থেকে নেমে তার বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে সেভেন স্টার হোটেল বানানো হয়েছে।’
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘সেগুলো ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। গতকালও পূর্বাচলের একটি প্লট নিয়ে দুদকের মামলা হয়েছে। এগুলো সরকারের কোষাগারে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।’
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে বাজারে সরবরাহ চাহিদা মতো আছে কি না। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যটা ভালো থাকলে মূল্যস্ফীতিও কমিয়ে আনা যাবে।
‘যারা ভ্যাট-ট্যাক্সের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তারা অনেক বুঝে-শোনেই দিয়েছেন। মানুষের ভালোর জন্যই এটা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর জাগরণী সংসদ মাঠে রোববার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা ব্যাংকের কৃষিজ যন্ত্রপাতি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ওই সময় স্থানীয় ৩০ জন কৃষকের মাঝে শ্যালো মেশিন ও ট্রাক্টর বিতরণ করেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের কাউকে ছাড় না দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে আরও অগ্রসর হতে হবে সাংবাদিকদের।
উপদেষ্টা বিক্রমপুর কুঞ্জবিহারী সরকারি কলেজে তারুণ্য মেলায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার, জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার মোহন্ত, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মো. মারুফ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নরওয়েকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি এশিয়াতে নরওয়ের পণ্য বিপণনের জন্য বাংলাদেশ হাব উল্লেখ করে বলেন, এ দেশের যুবশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ গ্রহণ করতে পারে দেশটি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরল্যান্ড গুলব্রান্ডসেন রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নরওয়ে থেকে লোক আনতে হবে না। আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে আপনারা এশিয়ায় নরওয়েজীয় পণ্য বিপণনের জন্য বাংলাদেশকে হাব হিসেবে ব্যবহার করুন।’
সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে নরওয়ের টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরের প্রথম বিদেশি উদ্যোগ গ্রামীণফোনের উদাহরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে গ্রামীণফোন টেলিনর পরিবারের সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত গুলব্রান্ডসেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্তোরের একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শক্তিশালী সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে।
ওই সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন।’
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মানবাধিকার রক্ষা এবং পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত গুলব্রান্ডসেন জানান, বাংলাদেশে জাহাজ পুনর্ব্যবহার শিল্প এবং সবুজ জ্বালানি রূপান্তরে নরওয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নরওয়ের সহায়তা কামনা করেন।
তিনি রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘নরওয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে। তাই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন।’
প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে জানান, বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনকে ‘সর্বোত্তম ও ঐতিহাসিক’ করতে পরিকল্পনা করছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা এটি একটি উদাহরণ সৃষ্টিকারী, ঐতিহাসিক উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে চাই।’
রাষ্ট্রদূত গুলব্রান্ডসেন জানান, ফিলিস্তিন ইস্যু, আন্তর্জাতিক করব্যবস্থা এবং প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় নরওয়ে।
ওই সময় ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে নরওয়ের নেতৃত্বে জাতিসংঘের প্রস্তাব সমর্থন করায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইউরোপের দেশটির ডেপুটি হেড অফ মিশন ম্যারিয়ান্নে রাবে কানেভেলস্রুদ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য