আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই ডিজিটাল এবং পরে স্মার্ট বাংলাদেশের নামে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে (আইসিটি) একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয়। চটকদার নামে এসব প্রকল্প আর কর্মসূচি নেয়া হলেও সুফল মেলেনি আইসিটি খাতে। বরং অর্থনীতির শ্বেতপত্রে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইসিটি।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, ব্যক্তিস্বার্থে নেয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকার তথ্য-প্রযুক্তি প্রকল্প; যেখান থেকে লোপাট হয়েছে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের দুর্নীতি-অনিয়ম তদন্তে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটি গত ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতকে দুর্নীতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাসসকে বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি খাত (আইসিটি) বাংলাদেশের জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং আমাদের জন্য নতুন ক্ষেত্র। নতুনত্বের সুযোগ নিয়ে এবং অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে প্রকল্পের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে।
‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা রাজনৈতিক বিবেচনায় হাতেগোনা কিছুসংখ্যক ব্যক্তি এসব প্রকল্পের কাজ পেয়েছে, যারা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থ লোপাট করেছে।’
দেবপ্রিয় বলেন, ‘কেনাকাটার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার অধিক মূল্যে কেনা হয়। আর একটি বিষয় হলো অনেক প্রকল্প বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করার কথা বলে আরও বড় অঙ্কের প্রকল্প করা হয়েছে যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সেটাও যাচাই-বাছাই করা হয়নি।
‘প্রকল্পে যে ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন বা কাজের কথা বলা হয়েছে তা আদৌ হয়নি। এছাড়া আইটি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেশের সুরক্ষা, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আইসিটি খাতে প্রকল্প গ্রহণ করাটা জরুরি। তবে সেটা অব্যশই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।’
আইসিটি খাতে দুর্নীতি ও অপচয় রোধে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। পুনর্বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেয়ার তাগিদ দেন তিনি।
আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫৫টি প্রকল্প নেয়া হয়, যার ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। আর ৩৪টি কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১৭৩ কোটি টাকা। ব্যয়বহুল প্রকল্প আর কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও সুফল মেলেনি। তার প্রমাণ, আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা আইসিটি খাতের একটি প্রকল্পকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন, যেটিতে ৫২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও খরচ করা হয় ৭৭৪ কোটি টাকা।
দেবপ্রিয় অভিযোগ করেছেন, যাচাই-বাছাই ছাড়াই বড় বড় প্রকল্প পাস করা হয়েছে। সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বড় দুর্নীতির।
শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই ঘটনা যুবসমাজ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের হতাশ করে। কারণ জনগণের করের অর্থ অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থ অপচয় করা হয়। এসব প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং অভিযোগ ওঠে যে, এগুলো তৎকালীন শাসন ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনকালে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নির্মাণ এবং পরবর্তীতে ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্র প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
এই বাজেটের বেশিরভাগই পরিকাঠামো প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে, যা নিয়ে এখনও আইসিটি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যৌক্তিকতার প্রশ্ন উঠছে। উদাহরণ স্বরূপ, বড় শহরের বাইরে অবস্থিত হাই-টেক পার্কগুলো বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তরুণদের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্থানীয় অ্যাপ ও গেম উন্নয়ন প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও উদ্ঘাটিত তথ্য থেকে দেখা গেছে- এসব প্রকল্প মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের এবং তাদের পছন্দের সরবরাহকারীদেরই উপকৃত করেছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির পক্ষ থেকে চলমান প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করা হয়, যেখানে অনেক অযৌক্তিক প্রকল্প সংকোচন করার সুপারিশ রয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পগুলোতেও অসঙ্গতি খুঁজে বের করার জন্য আরও গভীরে অনুসন্ধান করবে।
সরকারি প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে কীভাবে যৌক্তিকতা দেখানো হয়েছে তার একটি উদাহরণ হিসেবে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- ২০১৩-১৮ সালের আইসিটি ডিভিশনের প্রকল্প ‘লেভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রজেক্ট’। এই প্রকল্পের ব্যয় ৫২১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার মূল বাজেট থেকে ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৭৪ কোটিতে পৌঁছেছিল।
শ্বেতপত্র অনুযায়ী, সক্ষমতা বৃদ্ধির এই উদ্যোগ তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে উন্নত করা এবং কর্মসংস্থানের জন্য ৩০ হাজার জনবলকে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ডিভিশনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রকল্পের সফলতায় উচ্চ মাত্রার সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়।
তবে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, এই প্রকল্পে খাতের অগ্রগতিতে অবদান রাখা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা উপেক্ষা করা হয়েছে।
অতিরিক্তভাবে মূল্যায়ন প্রতিবেদনের মান ছিল অপর্যাপ্ত। কারণ এটি ৩০ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে পুরো আইটি খাতে যে সীমিত প্রভাব পড়েছে, তা সঠিকভাবে আলাদা করে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়নে এই বিশ্লেষণমূলক দুর্বলতা বিভিন্ন আইসিটি এবং অন্যান্য প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ায় ভূমিকা রেখেছে, যেগুলো বাস্তবিক উপকারিতা প্রদানে অক্ষম।
শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘এটি ভবিষ্যৎ উদ্যোগগুলোকে আইটি খাতের ওপর তাদের প্রকৃত অবদানের পরিষ্কার ধারণার ভিত্তিতে পরিচালিত করার জন্য আরও শক্তিশালী মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।’
ডিজিটাল ও স্মার্ট জাতি গঠনের বর্ণনার পরও বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত সূচকের অনেক ক্ষেত্রে তুলনীয় দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানকে কৌশলে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীসহ স্থানীয় একাধিক রাজনীতিক ও কিছু ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট এ ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
জনসেবা অব্যাহত রাখতে নিয়ম অনুসারে ইউপি সদস্য সুমন রানাকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ করে বাকি প্যানেল গঠন করা হয়।
বর্তমানে ইউপিতে নাগরিক সেবা অব্যাহত থাকলেও প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কৌশলে অনাস্থা এনে এরশাদ আলীসহ অন্যরা পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় আছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি কৌশল জানাজানি হলে ইউনিয়নবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমন বাস্তবতায় যেকোনো সময় ওই ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের ‘কৌশল’
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রথমে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব এনে একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়। সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ৯ জন ইউপি সদস্য।
পরে সেই আবেদনের জের ধরে ১৩ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডের পাতায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ মো. এরশাদ আলী স্বাক্ষরিত এক পাতার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের রেজুলেশন ও অপর একটি পাতায় আটজন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর সংবলিত পাতা সংযুক্ত করা হয়। এ পাতায় সভার স্থান দেখানো হয় ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে।
ওই রেজুলেশনে বলা হয়, ‘অদ্যকার অত্র আলোচনায় শুকানপুকুরী ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে ইউপির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সভায় বিস্তর আলোচনা করা হয়। এরপর সভার সভাপতি প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীর উপস্থিতিতে সদস্যদের জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন, যা জেলা প্রশাসকের বরাবরে অনাস্থার প্রস্তাব আনয়ন করি।
‘তাই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখা একান্ত জরুরি মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
রেজুলুশনে উল্লেখ করা হয়, সর্বসম্মতিক্রমে পলাতক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে দুই ইউপি সদস্যের ভাষ্য
কারণ জানতে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করা দুজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে। তারা হলেন মো. আমজাদ ও ধর্ম নারায়ণ রায়।
ইউপি সদস্য আমজাদ বলেন, ‘৪ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে আমার বাড়ির সামনে স্থানীয় সাবেক দুজন সদস্য মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তারা আমাকে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অন্যান্য ইউপি সদস্যরাসহ বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত। রাতের খাবারের বিশাল আয়োজনও করা হয়েছে। আমি কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
‘পরে জানানো হলো, আমাকে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে স্বাক্ষর করতে হবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। তিনি খুব ভালোভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এসবই আলোচনা হচ্ছে। এরপর এক প্রকার জোর করেই আমাকে রাতের খাবার খাওয়ানো হলো এবং পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করতে হলো। কিন্তু আমি সিলমোহর দিইনি।’
ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘একই তারিখে স্থানীয় বাসিন্দা তোষর এবং রফিকুল আমাকে একটা জায়গায় সমস্যার কথা বলে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিএনপির অন্যান্য রাজনীতিক নেতাসহ অন্যান্য ইউপি সদস্যরা রয়েছেন। আমাকে রাতের খাবারের জন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কী কারণে এত আদর-আপ্যায়ন, বুঝতে পারছিনা। জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর পাই না।
‘সমাজ রক্ষার্থে সকলের সাথে রাতের খাবার খেলাম। এরপর আমাকে এক প্রকার চাপ দেওয়া হয় প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করতে। কিন্তু আমি তার সমর্থক। তিনি ভালো মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাক্ষর দিতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাক্ষর করেছে। আমি কেন করব না, এ কথা তোলে। অনেকক্ষণ তর্ক-বিতর্কের পর সই করে সেখান থেকে আসতে হয়েছে। পরে আমি লিখিত চিঠি দিয়ে বিষয়টি প্যানেল চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ভবেষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে অনাস্থা আনা হয়েছে, তা আমার কাছে ভিত্তিহীন মনে হয়েছে।’
সচিব আরও বলেন, ‘পরিষদে তিনি (সুমন রানা) সবার সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন এবং নাগরিক সেবা অব্যাহত রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে আমাকেও কেউ কোনো দিন কোনো মৌখিক অভিযোগ দেননি।’
সভার বিষয়ে যা বললেন ইউপি সচিব ও সদস্য
ইউনিয়ন পরিষদ সচিব বলেন, ‘৪ জানুয়ারি, ৭ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি কোনো সভা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমসহ পরিষদের কোনো স্থানে অনুষ্ঠিত হয়নি। যেসব সভার কথা বলা হচ্ছে, তা গোপনে বা প্রকাশ্যে অন্য কোথাও হয়ে থাকতে পারে। তা আমার জানা নাই।’
ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘১৩ তারিখ সকাল ১১টায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সভা ডেকেছিল। আমি সময়মতো পরিষদে আসলেও সভা হয়নি।
‘আমি জানতে চাইলে তিনি গোপনে স্থানীয় দুলাল নামের এক লোকের বাসায় মিটিং হবে বলে জানান। কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। পরিষদের কাজ শেষে বাড়ি চলে আসি।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যানের ভাষ্য
স্থানীয় বাসিন্দা জিলানি হোসেন বলেন, ‘যে চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, তিনি জনগণের কথা ভাববেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি আমাদের দুর্ভোগে ফেলে আজও পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। আমরা নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা তার পুনর্বাসন চাই না।
‘পরিষদ তাকে ছাড়া বেশ ভালো চলছে। আমরা সুন্দর সেবা পাচ্ছি। শুনছি অনেকে পলাতক চেয়ারম্যানের টাকার কাছে বিক্রি হয়েছে। আমরা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলী ইউনিয়ন পরিষদে সভা না করা এবং কোনো ব্যক্তির বাসায় বসে সভা করার বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরিষদে সভা করতে পারেননি।
তিনি কেন পলাতক ও বিতর্কিত চেয়ারম্যানকেই পুনর্বাসন করতে চান, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বর্তমান দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন।
অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পরিষদে নাগরিক সেবা অব্যাহত আছে কি না, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান।
ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে পরিষদের কোনো বৈঠক হয়নি; সিদ্ধান্তও হয়নি। আমার হাত ভেঙে যাওয়ায় আমি অসুস্থ। তাই রাজনীতিক নেতা ও পরিষদের সদস্যরা দেখতে এসেছিল। এর বেশি কিছু না।’
তবে চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘আবেদনসহ অন্যান্য কাগজ আমি পেয়েছি। উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
‘কোনো কৌশলগত বিষয় আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে নিয়ম-বহির্ভূত কাউকে পুনর্বাসন করার সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন:পল্লী বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে ডান হাত ও ডান পা হারানো শিশু রাকিবুজ্জামানের চিকিৎসায় জরুরি আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৩০ দিনের মধ্যে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুহম্মদ তারিক-উল ইসলাম ও ফরিদ হাসান মেহেদী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ, শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রিট আবেদনকারী পক্ষের দাবি সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার প্রতাপনগরের মো. আবদুর রাজ্জাকের বসতবাড়ির ওপর দিয়ে নকশা-বহির্ভূতভাবে টানা বিদ্যুতের লাইনে ২০২১ সালের ৯ মে বিদ্যুতায়িত হয় সাত বছরের শিশু রাকিবুজ্জামান। এতে শিশুটির হাড়-মাংস ঝলসে যায়। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ মে শিশুটির ডান হাত বগল থেকে ও ডান পায়ের হাঁটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২০২১ সালের ২৫ মে শিশুটির বাবা সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষতিপূরণ ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিশুটির অঙ্গহানির ঘটনায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি শিশুটির কী কী চিকিৎসার প্রয়োজন এবং এর সম্ভাব্য ব্যয় জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশ অনুসারে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দেন, যেখানে সর্বমোট খরচ নির্ধারণ করা হয় ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৮২ টাকা। একপর্যায়ে শিশুটির চিকিৎসায় জরুরি আর্থিক সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশনা চেয়ে ৫ জানুয়ারি সম্পূরক আবেদন করেন তার বাবা।
আবেদনের শুনানি শেষে আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন:গত বছরের জুলাই থেকে আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা মধ্য ফেব্রয়ারিতে প্রকাশ করা হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এমন তথ্য জানান।
স্থানীয় সময় বুধবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে এ বৈঠক হয়।
পরে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এমন তথ্য জানান।
এ সময় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সহায়তা চান ড. ইউনূস।
ভলকার তুর্ক বলেন, জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনটির প্রকাশনা সামনে রেখে বাংলাদেশের সঙ্গেও এটি শেয়ার করা হবে।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় অপরাধের তদন্ত করায় জাতিসংয়ের মানবাধিকার কমিশনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া ছয়টি স্বাধীন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও একই সময়ে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তাদের পর্যবেক্ষণ, এসব প্রতিবেদন একটি অন্যটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।
ওই সময় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সহায়তার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানের কাছে আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
এ ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তুর্ক বলেন, তিনি এ বিষয়ে মিয়ামারে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত জুলি বিশপসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলবেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতন আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে কাজ করেছে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশন।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে তারা।
অভিযোগের সত্যতা উদঘাটন, দায়-দায়িত্ব চিহ্নিতকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সুপারিশ করবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল।
আরও পড়ুন:স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মঙ্গলবার জারিকৃত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের নিমিত্ত বা পরামর্শ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে, এই অধ্যাদেশ উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইপূর্বক সুপারিশ করার জন্য একটি স্থায়ী কাউন্সিল থাকবে এবং তা সুপ্রিম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল নামে অভিহিত হবে।’
এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি এ কাউন্সিলের চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকবেন।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের দুজন বিচারক (একজন অবসরপ্রাপ্ত ও একজন কর্মরত), হাইকোর্টের দুজন বিচারক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়ে সাত সদস্যের এ কাউন্সিল গঠন করা হবে। অপর সদস্য হবেন এ কাউন্সিলের চেয়ারপারসন মনোনীত একজন আইনের অধ্যাপক বা আইন বিশেষজ্ঞ।
এ কাউন্সিল নিজ উদ্যোগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে যেকোনো মানুষ, যেকোনো আইনজীবী যাতে নিজের ইচ্ছায় আবেদন বা কারও নাম প্রস্তাব করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রয়েছে। এ কাউন্সিল প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার পর সাক্ষাৎকার নেবে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল পদাধিকার বলে কাউন্সিলের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং তিনি ও তার দপ্তর কাউন্সিলের কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন।
তবে রেজিস্ট্রার জেনারেল নিজে বিচারক পদে প্রার্থী হলে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রিতে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী তার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাউন্সিলের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং অনুরূপভাবে জ্যেষ্ঠ দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বা তৎপরবর্তী কর্মকর্তা প্রার্থী হলে গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী তার পরবর্তী কর্মকর্তা এ দায়িত্ব পালন করবেন।
কাউন্সিলের সব সভা চেয়ারপারসন নির্ধারিত স্থান ও সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুরোধপ্রাপ্ত হলে, প্রধান বিচারপতি এ উদ্দেশ্যে অবিলম্বে কাউন্সিলের সভা আহ্বান করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের কোনো অতিরিক্ত বিচারকের পদে নিযুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্যূন দুই মাস আগেই কাউন্সিলের সভা আহ্বান করতে হবে।
গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে সম্ভাব্য শূন্যতা অথবা বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তা অথবা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি অথবা এসব বিষয় সম্মিলিতভাবে বিবেচনাক্রমে কাউন্সিলের সভায় সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে, যা প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করবেন।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বা নিজ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে উল্লিখিতসংখ্যক বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ চাইলে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করার উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি কাউন্সিলের পরবর্তী সভা আহ্বান ও অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কাউন্সিলের সব সভায় চেয়ারপারসন সভাপতিত্ব করবেন এবং তার অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সভায় উপস্থিত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে প্রবীণতম বিচারক সভাপতিত্ব করবেন।
আরও পড়ুন:আগামী সাত দিনের মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি গায়েবি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মঙ্গলবার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গায়েবি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক আড়াই হাজারের বেশি মামলা শনাক্ত করতে পেরেছি। এসব মামলা সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করতে পারব বলে আশা করছি। ২৫টি জেলায় এসব মামলা হয়েছে।’
সাইবার নিরাপত্তা আইনে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোও প্রত্যাহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে।’
আগামী বৃহস্পতিবারের (২৩ জানুয়ারি) মধ্যে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকা খুলে দিয়ে প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সংবাদকর্মীরা।
এ সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সব সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে কাকরাইলের এইচআরটি ভবন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ভোরের কাগজের নির্বাহী সম্পাদক এ কে সরকার স্বাক্ষরিত নোটিশে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করা হয়েছে, এমন কোনো ঘোষণা আমরা দেখতে পাইনি। আমরা বিশ্বাস করি ভোরের কাগজের প্রকাশনা বন্ধ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোরের কাগজের প্রকাশনা অব্যাহত থাকবে। অনতিবিলম্বে প্রধান কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়ে ভোরের কাগজের প্রকাশনা পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেওয়া হোক। আমরা ভোরের কাগজকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে খোন্দকার কাওছার হোসেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরের কাগজের সম্পাদক গ্রেপ্তার হন। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এরপর আমরা দেখলাম ভোরের কাগজের মালিক সাবের হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরে এ কে সরকার ভোরের কাগজে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নিয়োগপত্র নিয়ে আমাদের অফিসে হাজির হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ কে সরকার মূলত সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন কর্ণফুলী গ্রুপের আবাসিক পরিচালক। গণমাধ্যম বিষয়ে তার কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা নেই বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন তিনি আমাদের জানালেন সাবের হোসেন চৌধুরী আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।
‘এক মিটিংয়ে আমাকেসহ আটজন বিভাগীয় প্রধানের নাম চূড়ান্ত করে উনাকে জানানো হলে, তিনি ৩০ নভেম্বর আমাদের সঙ্গে বসলেন। সেখানে অর্থ বিভাগের প্রধান আর্থিক সংকটের কথা জানালে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করলেন, গত ১৫ বছরে যে আয় হয়েছে, সেই টাকা কোথায়? অর্থ বিভাগ তার কোনো উত্তর দিতে পারেনি।’
প্রধান প্রতিবেদক আরও বলেন, ‘ভোরের কাগজ অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে ঘোষণা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ৯০০ টাকা কলাম ইঞ্চি হারে বিজ্ঞাপন বিলসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেনি; নিয়োগপত্র দেয়নি। যদি আমাদের ছাঁটাই করা হয়, তাহলে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের সব সার্ভিস বেনিফিটসহ এরিয়ার বেতন পরিশোধ করতে হবে।
‘যদি ছাঁটাই করা না হয়, তবে যেদিন থেকে আমি ভোরের কাগজে কাজ শুরু করেছি, সেই তারিখ থেকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে প্রাপ্য সব বকেয়া বেতন দিতে হবে। এখন থেকে ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনতিবিলম্বে ভোরের কাগজ খুলে দেওয়ার দাবি জানাই। পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি করছি। সঙ্গে আমাদের সব পাওনা পরিশোধ করার দাবি জানাই।’
ওই সময় ভোরের কাগজের ১১টি বিভাগের প্রধানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:তিন দিনের মাথায় অবশেষে মিয়ানমারে আটকে রাখা বাংলাদেশি তিন পণ্যবাহী জাহাজ ছেড়ে দিয়েছে আরাকান আর্মি।
মিয়ানমার থেকে পণ্য নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফ নদীর মোহনা থেকে বৃহস্পতিবার তিনটি কার্গো আটক করা হয়েছিল।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এতেশামুল হক বাহাদুর সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে আটক কার্গো জাহাজের মধ্যে দুটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদের জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। অন্যটি সেখানে ছিল।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা মিটিংয়ে বসেছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্যবাহী চারটি কার্গো জাহাজ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে আসার পথে আরাকান আর্মি আটক করে তাদের জিম্মি করে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুটি করে পর্যায়ক্রমে চারটি কার্গো আটক করে এ সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
আরাকান আর্মির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ছাড়পত্র নিয়ে গত শনিবার একটি কাঠবাহী কার্গো বন্দরে আসে। তিন দিন পর বাকি তিনটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্য দিয়ে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা দখলে নেয়। এ সংঘাতের প্রভাব পড়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্যে। বেশ কিছুদিন ধরে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
বিচ্ছিন্নভাবে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তাও ইয়াঙ্গুন শহর থেকে। এ শহর থেকে আসার পথে নাফ নদীতে প্রবেশ করতে রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত হয়ে আসতে হয়।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, কার্গো জাহাজগুলোতে ৫০ হাজার বস্তা শুঁটকি, সুপারি, কফিসহ বিভিন্ন পণ্যের আনুমানিক ৫০ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য