উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে দ্রুত নিষিদ্ধ করার দাবিতে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। এই দাবিতে বুধবার বন্দর নগরীর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অতি দ্রুত নিষিদ্ধ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করেছেন চট্টগ্রামে।
ভারতে বসে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয় সমাবেশ থেকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ নেতৃবৃন্দ সমাবেশে এই ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম নগরের টাইগার পাস মোড় চত্বরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনি জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নৃশংসভাবে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা শেষে বুধবার দুপুরে আয়োজিত শোক এবং সম্প্রীতি সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।
এ সময় টাইগার পাস চত্বরে উপস্থিত হাজারো ছাত্র-জনতাকে ‘ইসকন জঙ্গি, স্বৈরাচারের সঙ্গী’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
এদিন নগরীর বহদ্দারহাট, কোর্ট বিল্ডিং, ওয়াসা, নিউমার্কেট চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভুলে যাইনি আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় গত ১৬ বছরে এই ইসকন কিভাবে বেড়ে উঠেছে। এটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গী হয়ে ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের পর দাঁড়িওয়ালা-টুপিওয়ালারা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছে। তবু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠনটি সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইকে হত্যা করেছে।’
‘যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই চিন্ময়রা উসকানি দেয়। জঙ্গি ইসকনরা উসকানি দেয়। খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি। ছোটোখাটো কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- ভারতে বসে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা যত ষড়যন্ত্রই করুন না কেন, আমরা রুখে দেব। বাংলাদেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদিতার এখানে ঠাঁই নেই। ইসকনের বর্বরতা আইয়ামে জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। তাই অবিলম্বে জঙ্গি সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ করতে হবে।’
শোক সমাবেশে নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠন ইসকনের কর্মকাণ্ড আমাদের হতবাক করেছে। এ দেশের সাধারণ সনাতনি ভাইয়েরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার দালালরা ইসকনকে উস্কে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দেব না।’
তিনি বলেন, ‘যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই চিন্ময়রা উসকানি দেয়। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে খুনি হাসিনারা উসকানি দেয়। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে জঙ্গি ইসকনরা উসকানি দেয়। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতের কিছু প্রেতাত্মা উস্কানি দেয়।
‘আমরা ১৬ বছরের খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি। ছোটোখাটো কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা।’
প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে অভিযোগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘প্রশাসনের যেসব জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরেরা এখনও বিরাজমান তাদেরকে নির্মূল করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। ভারতীয় কোনো আগ্রাসন বাংলাদেশে চলবে না। যদি কেউ ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাহলে আমরা ছাত্র-জনতা তাদেরকে প্রতিহত করতে একবারও ভাববো না।’
ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এই বাংলাদেশে কোনো উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের ঠাঁই হবে না, কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এই বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
‘আমরা ১৫ দিনের মধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধকরণ চাই। ইসকনের সন্ত্রাসীরা গতকাল আমাদের ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, আমরা এর বিচার চাই। পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে।’
আরও পড়ুন:শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সারাদেশে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত প্রযুক্তি সুবিধাপ্রাপ্ত লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় নীতিগত সুপারিশ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা একথা বলেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নারীদের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ সকল অপকর্ম প্রতিরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্রটি। মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে ছোট ছোট মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মেয়েরা অবুঝ এজন্য অভিভাবকদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী সহিংসতা শিকার না হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, নারী পক্ষ, হিউম্যান রাইটস বাংলাদেশ, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাকসহ বাইশটি সংগঠন আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
উপদেষ্টা বলেন এই ২২ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্মে যে সমস্ত শিক্ষিত তরুন যুবক যুবতীরা আছেন তাদেরকে টেকনোলজির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ও পরিবারের সচেতনতাই পারে একটি মেয়েকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। এজন্য সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন একদিকে কমছে, এতে প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, মেঘনা নদীর অববাহিকায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি না হলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে পারে না। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকৃতিক কারণ ও তথাকথিত উন্নয়নের কারণে নদী ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। বরিশাল ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সাধন শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইলিশ একটি মাইগ্রেটরি মাছ এটি সমুদ্র থেকে নদীতে আসে এবং আবার ফিরে যেতে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঝাটকা নিধন। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান চালালেও এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের প্রাপ্যতা কমাচ্ছে। তবে এসবের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি জানান,খুব শীঘ্রই ঢাকায় একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নদী থেকে মাছ ধরে হাত বদলের সিন্ডিকেট বন্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি বাজারে মাছ পাবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ফরিদা আক্তার বলেন, উপকূল এলাকায় মহিষের চারণভূমি সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গরু, ছাগল ও মহিষ পালন অন্তত মানুষের খাদ্য ও জীবন রক্ষার জন্য জরুরি। চারণভূমি বিষয়ে আমরা দেখছি যে অনেক কিছু পরিকল্পনা বিহীনভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে মহিষের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক নীতি ও ব্যবস্থা নিলে এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জিজেইউএস নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. ওমর ফারুক, প্রেসিডেন্ট।
বক্তারা বলেন, নদী ও সমুদ্রের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। মৎস্যজীবী, প্রশাসন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিতভাবে কাজ করলে মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কার্যকর হবে।
এছাড়া তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মহিষ পালনের সম্ভাবনা অনেক, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, চারণভূমির অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা খাতটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। গবেষণা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিষ পালনকে লাভজনক ও টেকসই খাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে। আইএলও সংবিধান অনুযায়ী, অনুমোদিত ও অননুমোদিত উভয় ধরনের সনদের প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক। এই কমিটি আইএলও কনভেনশন ১৪৪-এর বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ নিশ্চিত করবে।
সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, আইএলও এর ১১টি কনভেনশন (C-01, C-14, C-19, C-81, C-89, C-100, C-106, C-111, C-118, C-138, MLC-2006) নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে C-81 (শ্রম পরিদর্শন), C-100 (নারী ও পুরুষের সমান পারিশ্রমিক), C-111 (কর্মসংস্থান ও পেশায় বৈষম্য) এবং C-138 (ন্যূনতম কাজের বয়স) বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন আইএলও সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জেনেভাস্থ প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে।
সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি নিরান রাজমুঠান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ইমপ্লোয়ার্স ফেডারেশন এর প্রতিনিধি , ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি , বেপজা প্রতিনিধি , NCCWE এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদিপশু পালন প্রোটিন ঘাটতি নিরসন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে চারণভূমির হ্রাস হচ্ছে, ফলে মহিষের মতো মূল্যবান সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আজ সকালে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত “উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) এবং কোস্টাল ভেট সোসাইটি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক নীতি নির্ধারণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এখনো অনেক চরাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব। মহিষ পালন বাড়াতে পারলে জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যাবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলায় বৃহৎ গরুর বাথান ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও উঠছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গরুর বাথান ধ্বংস করা দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? তিনি আরও বলেন, মহিষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় স্পিডবোটভিত্তিক ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই চারণভূমি উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ওমর ফারুক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, জিজিইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্হানীয় খামারীরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
শিশু জন্মের পরপরই মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেছেন, শিশু জন্মের দুই-তিন দিন পর যখন পর্যাপ্ত দুধ আসে না, তখন অনেক সময় চিকিৎসকরা ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেন। কিন্তু ডাক্তারদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিবেন। ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেবেন না। তিনি বলেন, একসময় শাল দুধ (কোলস্ট্রাম) খাওয়ানো নিয়ে নানা কুসংস্কার ছিল। এখন মানুষ সচেতন হয়েছে। তবুও উদ্বেগজনকভাবে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমছে। এখন মাত্র ৫৫ শতাংশ শিশু মায়ের দুধ পাচ্ছে, আগে এ হার আরও বেশি ছিল। তিনি মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার বাড়ানোর জন্য কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের আহৃবান জানান।
আজ রাজধানীর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৫’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে এ উপলক্ষে এক বর্নাঢ্য রেলির আয়োজন করা হয়।
মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনের প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে
উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, শিশু জন্মের পরপরই অনেকসময় পর্যাপ্ত দুধ আসে না। কাজেই প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হয়। গর্ভাবস্থার ছয় মাস পর থেকে মায়ের খাদ্যাভ্যাস ও যত্নের বিষয়ে নজর দিতে হবে। মা ভালো খেলে, তার শরীর থেকে সন্তানের জন্য যথেষ্ট দুধ তৈরি হবে।
কর্মজীবী মায়েদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, মাঠে-ঘাটে নানা কাজে যুক্ত মায়েরা সচেতনতার অভাব ও খাদ্যের ঘাটতির কারণে সন্তানকে পর্যাপ্ত দুধ খাওয়াতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের দিকেও আলোকপাত করেন। সরকারি হিসাবে দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের মতো, বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি। যদি এই ২০ শতাংশ মা পর্যাপ্ত খেতে না পারেন, তবে সন্তানও পর্যাপ্ত দুধ পাবে না। তাই দারিদ্র্য হ্রাসে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গৃহকর্মী নারীদেরও শিশু জন্মের পরপরই বাচ্চাকে কোলে নেবার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের বাসাবাড়িতে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক সময় সন্তানকে আনতে দিই না। বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুছ আলীসহ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে সারাদেশে জেলা-উপজেলায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর চলমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
চলমান ২৮ দিনব্যাপী ভিডিপি অ্যাডভান্সড কোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী ডিউটির প্রাকপ্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় অনুশীলন সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এই প্রশিক্ষণের আওতায় বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনে করণীয়, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন, কেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটারদের ভোটদানে সহযোগিতা করা, ব্যালট পেপার এবং ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কয়েকটি বিষয়ে হাতে কলমে মহড়া দেয়া হচ্ছে।
বাহিনীর সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করছেন।
মন্তব্য