বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেছে সর্বোচ্চ আদালত। খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। শুনানিতে বিএনপি প্রধানের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, ‘এই মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ফরমায়েশি রায় দিয়েছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এই মামলা ব্যবহার করা হয়েছে। মামলায় ইতোপূর্বে ন্যায়বিচার পাইনি।’
আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা সংক্রান্ত রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার আনা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে এই আদেশ দেয়া হয়। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে আপিলের ওপর শুনানি হবে।’
বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোনো টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে সর্বোচ্চ আদালতকে জানান দুদকের আইনজীবী।
শুনানিতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মো. আসিফ হাসান আদালতকে বলেন, ‘এই ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদে-আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে, কোনো টাকা ব্যয় হয়নি।’
দুদক আইনজীবী মামলায় এজাহার, অভিযোগপত্র ও সাক্ষ্যের অংশ তুলে ধরেন। তিনি মামলার ডকুমেন্টস থেকে বেগম খালেদা জিয়া এ মামলার অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন উপাদান পেশ করেন।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে লিভ মঞ্জুরের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
হাইকোর্ট রায়টি আদালতে পড়ে শোনান ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
আদালতের অনুমতি নিয়ে এ মামলায় বিচারিক আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া জবানবন্দি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জবানবন্দি ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বেগম খালেদা জিয়ার এই জবানবন্দি তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করে।’
জবানবন্দিতে বেগম খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে বিচারের প্রেক্ষাপট, হয়রানির বিষয় তুলে ধরেন। বিচার বিভাগের ওপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণের নানা দিক তুলে ধরা হয় এ জবানবন্দিতে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেয় হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রাজধানীর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। তার অংশ হিসেবে নিজের খরচে পেপারবুক (মামলা বৃত্তান্ত) তৈরির আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার পরও মামলা দুটি আইনগতভাবে লড়ার কথা জানিয়ে আইনজীবী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে তিনি আইনজীবীদের বলেছেন।’
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হলো।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এরপর আবু সাঈদকে গুলি করার দুটি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন মনিটরে ছেলেকে গুলির দৃশ্যের ভিডিও দেখে বার বার চোখ মুছছিলেন।
এরপর প্রসিকিউসনের আবেদনে আগামীকাল এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ৩০ জুলাই প্রসিকিউসনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করেন।
অন্যদিকে, আসামী পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়।
এরপর গত ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
এই মামলার যে ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়, তাদের মধ্যে গ্রেফতার ৬ জন আজ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
এরা হলেন-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৩০ জুন ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ।
২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে, সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন।
ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে, একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্জ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ৪১ জন জেলা জজসহ একযোগে জেলা আদালতের ২৩০ বিচারককে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা এসব বিচারকের মধ্যে রয়েছেন ৫৩ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ৪০ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং ৯৬ জন সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
গতকাল সোমবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলির আদেশ দেয়।
বদলি করা জেলা ও দায়রা জজদের আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে বর্তমান পদের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমলে নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ দিন ধরে ঘুরে মামলা দায়ের করতে না পারা ভুক্তভোগীকে পুলিশ লাইন্স থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে তাকে বাদী করে ধর্ষণ মামলা রুজু করানো হয়েছে। আর ওই মামলাতেই সাফিউরকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য নিজে বাদী হয়ে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলাতেই গত শুক্রবার রাতে সাফিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সকালে তাকে আদালতে চালান করা হয়। বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানতে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমান নামে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৬ মাস ধরে থানা ব্যারাকেই ওই নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে ওই পুলিশ সদস্য। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকেও সাফিউর থানা ব্যারাকের ওই নারীর রুমে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এর প্রতিকার চেয়ে গত ৫ দিন ধরে ঘুরেও থানায় মামলা করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
মন্তব্য