ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি দেশের পক্ষের সব শক্তিকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
‘৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করুন। জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সময় বিশ্বে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিল।
‘ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের পরাজিত অপশক্তি এবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। সুতরাং পরাজিত এই অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষের সব শক্তিকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত তথা বিচার বিভাগ শক্তিশালী, স্বাধীন ও কার্যকর থাকলে ফ্যাসিবাদ কখনও স্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না।
জনগণের আদালতের অর্থ কিন্তু বিচারিক আদালত কিংবা মব জাস্টিস নয়। জনগণের আদালতের অর্থ কোনো ব্যক্তি তার দলকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান, চূড়ান্ত ক্ষমতা হাতে ন্যস্ত থাকা।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ কিংবা প্রসিদ্ধ করার মতো অপ্রিয় কাজের দায়ভারও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না। জনগণ নিজেরাই তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে খুনি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ে আড়ালে থাকা মাফিয়া চক্রকে প্রত্যাখ্যান করবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার অবশ্যই হতে হবে রাষ্ট্রীয় আদালতে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা দলের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের ভার রাজনীতির মাঠে, অর্থাৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের আদালতে হওয়ার সংস্কৃতি চালু করা গেলে তা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতার যথানিয়মে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজেদের জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখবেন না। জনগণের কাছে পছন্দ নয়, এমন কোনো কাজ করা থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন। কারণ জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।’
তারেক রহমান বলেন, ‘সংস্কার একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি সংস্কার কার্যক্রমের পক্ষে। তবে বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রথাগত সংস্কারের চেয়ে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে, রাজনীতি, রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের গুণগত পরিবর্তন, সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘একদিন পরই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে। একটি সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য তিন মাস হয়তো যথেষ্ট সময় নয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রতিদিন যে মানুষগুলোকে হার মানতে হয়, তিন মাস সময় তাদের কাছে মনে হতে পারে তিন বছরের সমান।
‘তাই বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর বা স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত এমনকি অনেক মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে কঠোর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ব্যর্থ হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রম জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে।’
বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘৭ নভেম্বরের চেতনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবজ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের এদিন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র- সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের পথ সুগম হয়েছিল। এদিন থেকেই মূলত বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি জাতীয়তাবাদী ভিত্তির রাজনীতি রচিত হয়েছিল।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৭ নভেম্বর শুধু একটি দিন নয়, দিবস নয়। ৭ নভেম্বর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। নতুন সত্তা পেয়েছিল। নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল। সেই ইতিহাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত ১৬ বছর ৭ নভেম্বর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আমরা পালন করতে পারিান। এই দিবস জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা বিএনপির কোনো দিবস নয়। এটি দেশের জনগণের দিবস।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দানব উপস্থিত হয়েছিল। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আবার আন্দোলনে নেমেছিলেন। শেষ পর্যন্তও তিনি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াননি। সেই হাল ধরেছেন তারেক রহমান।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শক্তিশালী সমাজ বিনির্মাণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কথা বলছে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন সংস্কারের মধ্যদিয়ে যাবে। সেই সংস্কার যদি বর্তমান সরকারের কাছে একমাত্র কর্তব্য মনে হয় তাহলে ভুল হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার চাইলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সরকার এখনও নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠন করেনি। নির্বাচিত সরকারই পারে সংবিধান সংশোধন করতে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপি নেতা ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
সভায় এছাড়াও বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘নতুন পুরাতন বুঝি না, নির্বাচন নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামীতে যেকোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
শনিবার (৫ জালাই) সকাল সোয়া ৭টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যে শহিদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতা এসেছে। সে রক্তের সঙ্গে কাউকে বেইমানি করতে দেব না। আমরা শহিদদের রক্তের মূল্য দিতে চাই।’
‘যেনতেন নির্বাচন আমরা চাই না। নতুন পুরাতন বুঝি না, নির্বাচন নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামীতে যেকোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ইদানীং বেশকিছু রাজননৈতিক দলের দখল ও লুটপাট লক্ষ করছি। ওইসব দলগুলোকে বলতে চাই— নিজেদের সামলান, নয়তো জনগণই আপনাদের সামলাবে।’
ফেনীতে রুকন সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এদিন কুমিল্লায় পৃথক চারটি পথসভায় অংশগ্রহণ করেন জামায়াত আমির।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরী আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে মহানগরীর সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমানের পরিচালনা পথসভায় বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মোহাম্মদ মাসুম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ আমীর মোহাম্মদ শাজাহান অ্যাডভোকেট, উত্তর জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল মতিন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. মাহফুজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা-৮ বরুড়া আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. কামারুজ্জামান সোহেল, কাউন্সিলর মোশাররফ হোসাইন ও নাছির আহম্মেদ মোল্লা প্রমুখ।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি দেশকে আবার স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেন, সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসে, সে জন্য গণতান্ত্রিক ঐক্য দরকার।
এ সময়ে আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজন কী? এই ব্যবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে কোনো নেতা তৈরি হবে না, নেতৃত্বের বিকাশও হবে না। আমরা চিরায়ত গণতন্ত্রের পক্ষে, যেখানে বৈধ ভোটাররা ভোট দিয়ে নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
‘একজন মানুষ দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে নেতা হয়েছেন, অথচ আনুপাতিক ভোটে তাকে নয়; দলকে ভোট দিতে হবে। এরপর দল থেকে বাছাই করে এমপি ঘোষণা করা হবে—এটি আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে, সেই ১৮ কোটি মানুষের দেশে কেন এমন ভোট পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে? যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, বছরের পর বছর কারাবরণ করেছে, সেই গণতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে দেশের কোনো তরুণ শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। কখন কাকে ধরে নিয়ে যাবে, আর কার রক্তাক্ত লাশ তিস্তা, গঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে—এটাই ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই ভয়াবহ সময় পার করতে হয়েছে আমাদের। শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজির সঙ্গে বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়ানো চলবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের আচরণে যেন সাধারণ মানুষ কষ্ট না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন বিএনপির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পায়, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ যদি এসব অপকর্মে জড়িত থাকে, দল সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও ‘বিজয়ের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির আয়োজন করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন রংপুর (ড্যাব)।
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দেশ গঠনে জুলাই পদযাত্রার কার্যক্রম শুরু করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)’র নেতারা।
মোনাজাত শেষে আবু সাঈদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
আজ (১ জুলাই) দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা আবু সাঈদের বাড়িতে যান।
পরে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শুধু স্বৈরাচারী সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, নতুন বন্দোবস্তের জন্য ছাত্র আন্দোলন ছিল। এই আন্দোলনে যারা সংহতি প্রকাশ করেছেন, তাদের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিচার ব্যবস্থা, নতুন সংবিধান, জুলাই সনদসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি মাঠে থাকবে।
যৌক্তিক সংস্কারে প্রয়োজনে আবারো সংগঠিত হয়ে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন নাহিদ ইসলাম। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে কোনো টালবাহানা সহ্য করা হবে না। দরকার হলে আবারো রাজপথে নামবো। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরেই নির্বাচন দিতে হবে, অন্যথায় সেই নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না।
দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ন্যায়সঙ্গগত সংস্কার ও মানুষের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত এক পা পিছিয়ে আসবে না এনসিপি।
নেতারা জানান, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে এই কর্মসূচি চালু হয়েছে। তারা বলেন, জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে যেতে চায় এনসিপি, কারণ গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ। এই পদযাত্রার মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের মতামত ও প্রত্যাশা সরাসরি জানার সুযোগ তৈরি করতে চায়।
বিকালে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাস্থলসহ রংপুর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করবেন তারা।
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা ও পদযাত্রার সূচনা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি চলবে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত।
কবর জিয়ারতে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হবে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর শহীদ মিনার থেকে। পরে রংপুরে পার্কের মোড় থেকে বিকেল ৩টায় পদযাত্রা শুরু হয়ে লালবাগ-শাপলা-জাহাজ কোম্পানির মোড় হয়ে টাউন হল মাঠে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ডিসির মোড় হয়ে ধাপ হয়ে মেডিকেল মোড় হয়ে চেকপোস্টে সমাপনী হবে।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছর ১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদের সবাই সরে গেলেও আবু সাঈদ হাতে একটি লাঠি নিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান।
এই অবস্থায় পুলিশ আনুমানিক ৫০-৬০ ফুট দূর থেকে তার ওপর ছররা গুলি ছোড়ে। পুলিশের অবস্থানে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। তারপরও অবস্থান থেকে একচুল সরেননি আবু সাঈদ, সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন।
দীর্ঘ ২৩ বছর পর ২ জুলাই বুধবার সকাল ১০ টায় পটুয়াখালী ব্যায়ামাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পটুয়াখালী জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলন সফল করতে জোরে সোরে চলছে সকল ধরনের প্রচার- প্রচারণা ও প্রস্তুতি।
উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, সহ- প্রচার সম্পাদক মোঃ আসাদুল কবির শাহীন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান মামুন, সদস্য মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সদস্য ইঞ্জিঃ একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার, সদস্য মোঃ দুলাল হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া ও সঞ্চালনা করবেন সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি।
এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নসহ তৃণমূল বিএনপির নেতা- কর্মীদের মাঝে এক ধরনের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৩০ জনসহ ৮টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার প্রায় ১৪০০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ সিদ্দিকুর রহমান। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন (কমিটি নির্বাচন) বিকেলে পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে বলে জেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ তিনটি শীর্ষ পদে এক ডজন প্রার্থীর নাম নেতা-কর্মীদের মুখে চাউর হচ্ছে। এ তিনটি পদের মধ্যে সভাপতি পদে যাদের নাম উঠেছে, তারা হলেন বর্তমান জেলা বিএনপি কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া, সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও অন্যতম সদস্য মাকসুদ আহমেদ বায়জীদ পান্না মিয়া।
সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পিপি এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান টোটন, সদস্য মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান নান্নু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ্যাডঃ মোহসীন উদ্দীন, জেলা বিএনপির সদস্য জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি বশির আহমেদ মৃধা, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম লিটন ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ তৌফিক আলী খান কবির।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সদস্য জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ইমাম হোসেন নাসির, সাবেক জিএস আলমগীর হোসেন বাচ্চু, জেলা মৎস্য দলের সভাপতি ভিপি শাহীন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মশিউর রহমান মিলন ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ মাকসুদুর রহমান মাকসুদ।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ সম্মেলনে এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী সভাপতি ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মেয়াদউত্তীর্ন হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক এবং স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এন নাসির উদ্দীনের বৈঠকের পর বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণার প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের দিন নির্ধারণ ও সময়সূচি ঘোষণায় জনগণের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’
শনিবার (২৮ জুন) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন রিজভী।
প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকের পর বিএনপি কি নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ প্রত্যাশা করে—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই তা আশা করি।’
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিইসি নাসির উদ্দীন। বৈঠকটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা ও আলোচনার বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাস করে, অধ্যাপক ইউনূস ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কল্যাণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই কাজ করবেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তারাও বিশ্বাস করেন যে, প্রধান উপদেষ্টা একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে জনগণ তাদের জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক সংকট রয়েছে। মব কালচার আছে। এসব থেকে মুক্ত হতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। গত বছরেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২। এবার সেটি হয়েছে ৩.৯। আমরা সরকারকে সেটি দেখার জন্য বলব। আমরা তো সমালোচনা করবই। অবশ্যই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি— নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের অর্থ লোপাট করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে— যার অন্যতম নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া। তারা কখনও প্রকৃত গণতন্ত্র চায়নি। জনগণ মনে করে, ড. ইউনূস দেশবাসীর মনের প্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক, ‘মব জাস্টিস’ বা জনতার উচ্ছৃঙ্খল বিচার সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি বলেছেন, ‘গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নাটকীয় নির্বাচন। এসব নির্বাচনের সময়কার সকল নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধীই হোক, বিচার হতে হবে আইনের মাধ্যমেই, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়। মব জাস্টিস সমর্থনযোগ্য নয়।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা এবং মব জাস্টিসের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।
মব জাস্টিসের সাথে দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে আসামিরা হেনস্তা হন?
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য সাবেক তিন সিইসি দায়ী থাকলেও আইনসম্মতভাবেই তাদের অপরাধের বিচার চায় বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অভিযোগ করেন, দেশে আবারও করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে, কিন্তু সরকার কোনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া,নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ মাহমুদ হোসেন শ্যামল,সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ,সহ-সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, যুগ্ম-সাধারণ বেলাল উদ্দীন সরকার তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)।
সোমবার (২৩ জুন) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো সদস্য ও জাতীয় গণকংগ্রেস স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝং।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লি হংঝং ও অন্যান্য সিনিয়র সিপিসি নেতাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের শুরুতে সিপিসি নেতারা বিএনপি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান।
শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বৈঠককালে লি হংঝং আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভবিষ্যতে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, সিপিসি নেতারা আশা করেন যে, এই বৈঠক চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
তারা সিপিসি ও বিএনপির মধ্যে নিয়মিত আলোচনা এবং অব্যাহত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন বলে জানান শায়রুল কবির।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের নেতৃত্বের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। চীন বৃহত্তর বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে তার ইতিবাচক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে, দিনের শুরুতে বিএনপির প্রতিনিধিদল চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন এবং তারা অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই সফরকে বিএনপি ও সিপিসির মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্কের লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, উভয় দল ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার আশা করছে।
এর আগে রবিবার রাতে সিপিসির আমন্ত্রণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে।
তারা বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (বেইজিং সময়) ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে পৌঁছান।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্য আট সদস্য হলেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরউদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
মন্তব্য