জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা হয়েছে।
আইসিসি’র রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি করেছেন ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্সের ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মামলার বাদী ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
ব্যারিস্টার সারাহ ফোরে ও ব্যারিস্টার এমিল লিক্সান্দ্রু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ইতিহাসের এক পৈশাচিক নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আশরাফুল বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অযৌক্তিক হার পুনর্বহাল এবং সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
তাদের দাবি ছিল, এই কোটা ব্যবস্থা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অযাচিত অগ্রাধিকার প্রদান করে- যা দেশের মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য চাকরির পথ রুদ্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার। তবে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর মতো ঘটনার পর এটি দ্রুত বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। শিক্ষার্থীরা তখন কেবল কোটা সংস্কার নয়; বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন।
এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে।
এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র- যেমন বার্ডশট প্লেট ও তাজা গুলি ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়।
ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় এক হাজার চারশ’ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
আরও পড়ুন:ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়া থেকে আসা দুটি ফ্লাইটের পাঁচ যাত্রীর কাছ থেকে ওয়েল্ডিং মেশিনের কয়েলের ভেতরে লুকানো সাত কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টম হাউজ। জব্দ করা স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সোমবার রাতে এই পরিমাণ স্বর্ণসহ তাদেরকে আটক করা হয়। আটকরা হলেন- রুবেল হোসেন, দুলাল আহম্মেদ, সামিউল ইসলাম, সবুজ আলী ও সাগর মিয়া।
বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল আমিন মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া থেকে আসা এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট সোমবার রাত আড়াইটায় বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাটিক এয়ারের একটি ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টম হাউজের প্রিভেন্টিভ দল দুটি ফ্লাইটের পাঁচ সন্দেহভাজন যাত্রীর সঙ্গে আনা কম্বলে প্যাঁচানো অন্যান্য মালামালের সঙ্গে ওয়েল্ডিং মেশিন চিহ্নিত করে স্ক্যান করে। এ সময় প্রতিটি ওয়েল্ডিং মেশিনের কয়েলের ভেতরে মোট পাঁচটি স্বর্ণের চাকতি, দুটি স্বর্ণেরর টুকরো ও ১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জব্দ স্বর্ণের মোট ওজন প্রায় সাত কেজি এবং বাজার মূল্য সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা।
প্রাথমিক পরীক্ষায় সেগুলো স্বর্ণ বলে নিশ্চিত হলে জব্দ করা হয়। আটক যাত্রীদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় ফৌজদারি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণের উৎস শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের পল্লীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের রাড়ইল গ্রামে এই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ মুহিবুর রহমান চৌধুরী, আঞ্জু চৌধুরী, সোহেল চৌধুরী, জুয়েল চৌধুরী, আকমল চৌধুরী, কনর চৌধুরী, শুভ চৌধুরী, ইসলাম উদ্দিন চৌধুরী, জাবেদ চৌধুরী, তাসিম চৌধুরী, রাবেল চৌধুরী, জুবেদ চৌধুরী ও মুর্শেদ চৌধুরীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাড়ইল গ্রামে আনু মিয়া চৌধুরী ও নানু মিয়া চৌধুরীর সঙ্গে একই গ্রামের জসীম উদ্দিন চৌধুরী ও সুমন চৌধুরীর লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে একাধিকবার বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা-মোকাদ্দমাও দায়ের করেছে।
আনু চৌধুরীর করা একটি মামলায় মঙ্গলবার সকালে তদন্তে যায় দিরাই থানা পুলিশ। তদন্ত শেষ করে পুলিশ গ্রাম থেকে ফেরার পর উভয় পক্ষের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষে ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আহতদের দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রশান্ত দাস গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে রেফার করেন।
ডা. প্রশান্ত সাগর দাস বলেন, আহতদের শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি শুনেছি সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে গ্রামে অভিযান চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদেরকে আইনি সহায়তা দেয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতোমধ্যে ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মোট পাঁচ মামলার মধ্যে দুটিতে জামিন মিলেছে। তবে এখনই মুক্তি মিলছে না তাদের। অন্যান্য মামলা থেকে জামিন পেলেই তারা কারামুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
খুলনার মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার গত রোববার ওই দুই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান (রুকু)। মামলাটি পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
চার বছরেরও অধিক সময় ধরে কারাবন্দি ওই দু’জন হলেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক ও পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের মো. মোজাহিদুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খানজাহান আলী থানা কৃষক লীগ কার্যালয় ও ৫ ডিসেম্বর আড়ংঘাটা থানার গাড়ি রাখার গ্যারেজে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি এই দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে সোনাডাঙ্গা থানায় বিস্ফোরক আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আরও দুটি মামলা করা হয়। একই সময়ে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়।
মামলাগুলোর মধ্যে তাদের দু’জনকে সোনাডাঙ্গা থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপর মামলায় তাদের দুজনের ১০ বছরের সাজা হয়েছে।
এছাড়া খুলনার খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এবং ময়মনসিংহ জেলায় তাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা রয়েছে, যেগুলো আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানার মামলা দুটিতে তারা জামিন পেয়েছেন।
কারাবন্দী দুই শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ ১৭ দিন বগুড়া ডিবি হেফাজতে নিয়ে গুম করে নির্যাতন করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে।
তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিগত সরকারের দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলার কারণে এ প্রহসনের মামলার শিকার হয়েছেন। তারা এখন মুক্তি চান। মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তারা কারা অভ্যন্তরে অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনার জন্য সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহানকে নিযুক্ত করা হয়।
আইনজীবী গত ১ ডিসেম্বর জামিন শুনানিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দুই শিক্ষার্থীর বর্তমান শারীরিক অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরেন। পরে সার্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন আগামী ৭ ডিসেম্বরে মধ্যে অংশীজনদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট মতামত ও প্রস্তাব চেয়েছে।
কমিশনের সচিব মোহাম্মদ ফারুক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। বিচার বিভাগ সংস্কারের বিষয়ে অংশীজনদের মতামত সংগ্রহের জন্য কমিশন একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা: www.jrc.gov.bd
ওয়েবসাইটে বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠী, অংশীজনদের মতামত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পৃথক প্রশ্নমালা সন্নিবেশিত হয়েছে।
সাধারণ জনসাধারণসহ বিচারক, আইনজীবী ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মচারীদের অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন।
এছাড়া বিচার বিভাগ সংস্কারের বিষয়ে কারও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকলে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠানোর জন্য কমিশন অনুরোধ জানিয়েছে। প্রস্তাবের সফট কপি কমিশনের ই-মেইলে ([email protected]:,[email protected]) এবং প্রস্তাবের মুদ্রিত কপি কমিশনের ঠিকানায় (বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ১৫ কলেজ রোড, ঢাকা-১০০০) পাঠানো যাবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বা গায়েবি মামলার তথ্য চেয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের উপ-সলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
উপ-সলিসিটর জানান, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনীতিক এবং অন্যদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে সরকারি কৌঁসুলিদের।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলোর তথ্য পাঠাতে পাবলিক প্রসিকিউটর ও মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরদের বলা হয়েছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ই-মেইলে সলিসিটর বরাবর ওই মামলাগুলোর তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এ মামলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় প্রতিকারে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।’
আইন মন্ত্রণালয়ের তৈরি করে দেয়া ছকে ক্রম, সংশ্লিষ্ট জেলার নামসহ আদালতের নাম, মামলার নম্বর, এজাহারকারী/নালিশকারীর নাম ও পরিচয়, মোট আসামির সংখ্যা এবং এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা (যদি থাকে), এজাহার/নালিশে উল্লিখিত ঘটনার তারিখ, মামলাটি কোন আইনের কোন ধারায় দায়েরকৃত, মামলাটি কোন পর্যায়ে (তদন্তাধীন নাকি বিচারাধীন) আছে সেসব তথ্য সন্নিবেশ করতে বলা হয়েছে।
সানা মো. মাহরুফ হোসাইন স্বাক্ষরিত এ সম্পর্কিত চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৬ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে বিশেষত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বে এবং তৎপরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও অন্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা (যা অনেক ক্ষেত্রে গায়েবি মামলা নামে পরিচিত) দায়ের করা হয়। এসব মামলা সম্পর্কিত সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় আইনানুগভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় চিঠিতে উল্লিখিত ছক অনুসারে উক্ত মামলাগুলোর তথ্যাদি জরুরি ভিত্তিতে পাওয়া একান্ত আবশ্যক।
এমতাবস্থায়, চিঠিতে উল্লিখিত ছক অনুসারে সব জেলা/মহানগরে দায়েরকৃত রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার তালিকা আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সলিসিটর, সলিসিটর অনুবিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, ঢাকা বরাবর অথবা [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।
আরও বলা হয়েছে, মামলার তালিকা প্রণয়নে বিশেষভাবে যত্নবান ও দায়িত্বশীল হওয়াসহ সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রাপ্ত মামলার তালিকা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, গত ১৫ বছরে দেশে সার্বিকভাবে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে। বেশি দুর্নীতি হয়েছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়।
রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে মঙ্গলবার ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ-২০২৩’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে টিআইবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে অন্তর্ভুক্ত ঘুষদাতা খানার ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ বলেছে, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। ঘুষ আদায়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। জরিপবর্ষে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে (২০০৯ থেকে এপ্রিল-২০২৪) ঘুষ লেনদেনের প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকার।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় খানা জরিপ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর করে আসছে টিআইবি। এই জরিপ ধারণাভিত্তিক গবেষণা নয়, সেবা নিতে গিয়ে যে হয়রানি শিকার হতে হয়, তাদের অভিজ্ঞতাভিত্তিক।’
তিনি জানান, ১৫ হাজার ৫১৫টি খানার ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, বিআরটিএ, কর ও শুল্ক, এনজিও, পাসপোর্ট, বিমা, গ্যাস, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহায়তা এবং এনআইডি সেবা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে গড়ে ৫ হাজার ৬৮০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন সেবাগ্রহীতারা। বিচারিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় দুর্নীতি ও ঘুষের উচ্চহার অব্যাহত, যা সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বড় বাধা।
তিনি বলেন, ভূমি সেবা, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সেবায় উচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ বিদ্যমান, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সেবা প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, তদারকি জোরদার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, অভিযোগের ব্যবস্থা সম্পর্কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত সম্পদের হিসাব প্রকাশ ও নিয়মিত গণশুনানির আয়োজনের ওপর জোর দিতে বলেছে টিআইবি।
আরও পড়ুন:নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুরে জমি জবরদখল করে লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি হলেন আবদুল হামিদ, যার বাড়ি উপজেলার হরিরামপুর এলাকায়।
গত ৫ নভেম্বর সকাল ৯টায় জমিটি দখলে নেয়ার অভিযাগ রয়েছে আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান।
জমির মালিক দাবিদার রেজাউল মাসুদ স্বপনের বাড়ি নজিপুর সরদারপাড়ায়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর সরদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা কলিমুদ্দীন সরদার তার জীবদ্দশায় মোট ৪৬ শতক জমির মধ্যে আইয়ুব আলী দেওয়ানের কাছে ১৯৮৮ সালে ৪৬৫১ নম্বর দলিলে ১৪ শতক ও ৪৯৩৫ নম্বর দলিলে ১৪ শতক বিক্রি করেন। এ ছাড়া তিনি আছির উদ্দিনের কাছে ১৯৮৭ সালে ৮৯৯৫ নম্বর দলিলে ১৩ শতক, নজির হোসেনের কাছে একই বছরে ৯৬০৫ নম্বর দলিলে ২দশমিক ৫ শতক এবং ৯৬১০ নম্বর দলিলে ২ দশমিক ৫ শতক জমি বিক্রি করেন। এরপর দখলশূন্য অবস্থায় তিনি মারা যান।
আবদুল হামিদ মূলধনী কলিমুদ্দিন সরদারের মৃত্যুর ২৫ বছর পর তার ছেলে তৈফুর সরদারের কাছ থেকে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ৪৬৮৭ নম্বর দলিলে ১১৩ নম্বর খতিয়ানে হাল ২৮৪ নম্বর দাগে ৪৬ শতক জমির মধ্যে ৬ শতক জমি কবলা দলিল করে বিষয়টি গোপন রাখেন। দীর্ঘ ১২ বছর পর গত ৫ নভেম্বর সকাল ৯টায় নজিপুর সরদারপাড়া মৌজার হাল ২৮৪ দাগের জমির দলিল দেখিয়ে একই মৌজার হাল ২৮৫ দাগের (২৮৪ দাগের পাশের) ১০ শতক জমিতে থাকা বাগানের গাছ কেটে নিয়ে যান আবদুল হামিদ। তিনি ৮ শতক পরিমাণ জমি দখলে নেন। এরপর সেখানে ইট দিয়ে প্রাচীর দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জমির আসল মালিক দাবি করা রেজাউল মাসুদ স্বপন প্রতিকার চেয়ে আবদুল হামিদ ও তৈফুর সরদারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন, কিন্তু এরপরও জমিতে কাজ করছেন আবদুল হামিদ।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৪৮) বলেন, ‘জ্ঞান হওয়ার পর দেখে আসছি এই জমি রেজাউল মাসুদ স্বপনরা ভোগদখল করে আসছে। এক মাস আগে আবদুল হামিদ এই জমি দখল করে আম, কদম ও ইউক্যালিপটাসহ লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে ফেলে। এর আগে কখনও এই জমি নিয়ে ঝামেলা হতে দেখিনি।’
রেজাউল মাসুদ স্বপন বলেন, ‘আমার পৈত্রিক সূত্রে খতিয়ানভুক্ত ১০ শতক জমি ৬০ থেকে ৬৫ বছর থেকে ভোগদখল করে আসছি। এর মধ্যে দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে ৫ নভেম্বর জোরপূর্বক ৮ শতক জমি দখল করে লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে স্থাপনা নির্মাণ করেন আবদুল হামিদ।
‘তাদের নিষেধ করা হলেও বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়। সুরাহা পেতে আদালতে মামলা করেছি, কিন্তু তারপরও কাজ করছে।’
এ বিষয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘২০১২ সালে জমি কিনা ছিল। খাজনা-খারিজ সব ঠিক করা আছে। বিএনপি করায় ওই জমিতে নামতে পারিনি। এখন দখলে নিয়ে কাজ করছি।
‘৮৪ দাগে আমার জমি কিনা আছে এবং ওই দাগই দখল করেছি, কিন্তু আদালত ৮৫ দাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’
পত্নীতলা থানার ওসি শাহ মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘আদালত থেকে নোটিশ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো পক্ষই যেন কাজ করতে না পারে, নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালতে বিষয়টির সুরাহা না পর্যন্ত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য