বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ৭ নভেম্বরের সরকারি ছুটি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পাশাপাশি ওইদিনের সরকারি ছুটি পুনর্বহাল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা এবং জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, মুক্ত অর্থনীতি ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই দিনে বাংলাদেশ আধিপত্যবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তাই দিনটিকে নতুন প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে দ্রুততম সময়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করার ব্যাপারেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
যৌথ সভা
সংবাদ সম্মেলনের আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতা, ঢাকা বিভাগের সব মহানগর ও জেলার সভাপতি, আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক, সদস্য সচিব এবং ঢাকায় অবস্থানকারী কেন্দ্রীয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক, সদস্য সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় শনিবার সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শুক্রবার ডিএমপি কমিশনার ময়নুল হাসানের সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারা অনুযায়ী এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা’ ব্যানারে মশাল মিছিল বের হয়। জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে দলটির কার্যালয় ঘেরাও করতে বিজয়নগর এলাকায় মিছিল নিয়ে যায় ছাত্র-জনতা। এ সময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে থাকা নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা করেন। কার্যালয় থেকে মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন মিছিলকারী আহত হন।
পরে মিছিলকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাংচুর করে। এ সময় কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও আগামীকাল শনিবার কাকরাইলে জাতীয় পার্টি সমাবেশ করবে।’
জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ১৯৯০ সাল থেকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘মনে করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এটা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র থামেনি, এখনও চলছে।’
রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জরুরিভিত্তিতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, ‘জীবন গেলেও অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদ করে যাবো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও আগামীকাল শনিবার কাকরাইলে জাতীয় পার্টি সমাবেশ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর অপবাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা বিগত সরকারের কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।
‘দেশে আমরা কী রাজনীতি শুরু করেছি! আমি রাজনীতি করবো আমার দল নিয়ে। আমার দল বিবেচনা করবে কার সঙ্গে যাবো আর কার সঙ্গে যাবো না, নির্বাচন করবো নাকি করবো না।’
কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি জাতীয় পর্যায়ের একটি রাজনৈতিক দল। বার বার আমাদের কবরস্থ করার পরও আমরা কবর থেকে উঠে এসেছি। কেউ আমাদের ধ্বংস করতে পারেনি। আমরা সহাবস্থানের রাজনীতি করি, আমরা দখলদারি করিনি, সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না, হাট-মাঠ-ঘাট দখল করিনি, মানুষকে অত্যাচার-দলীয়করণ করিনি।
‘আমরা মানুষকে সুশাসন দিয়েছি, উন্নয়ন দিয়েছি, সংস্কার দিয়েছি, গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছি। মানুষ তা স্মরণ করে।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বার বার বলেছি, ২০১৪ সালের নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি। এরশাদ সাহেবকে জোর করে সিএমএইচে ভর্তি করে, দলের ভেতরে বিভক্তি সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র একটি অংশকে নির্বাচনে নেয়া হয়েছে।
‘বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও তারা একই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছে। এটাতে কি সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়নি? ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনও আমরা করতে চাইনি। কিন্তু নির্বাচনে যেতে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। এ ঘটনা অনেকে দেখেছেন এবং জানেন।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা’ ব্যানারে মশাল মিছিল বের হয়। জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে দলটির কার্যালয় ঘেরাও করতে বিজয়নগর এলাকায় মিছিল নিয়ে যায় ছাত্র-জনতা। এ সময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে থাকা নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা করেন। কার্যালয় থেকে মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন মিছিলকারী আহত হন।
পরে মিছিলকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাংচুর করে। এ সময় কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দফার আক্রমণ দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করলেও দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়ে দলটির কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে একদল লোক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর শাহবাগ থেকে মশাল হাতে একদল লোক এসে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে। তবে শনিবারের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচিকে ঘিরে আজ দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিলো। তাদের প্রতিরোধের মুখে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
‘আধ ঘণ্টা পর সংঘবদ্ধ হয়ে ফিরে তারা কার্যালয়ে আগুন দেয়। খবর পেয়ে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস এসেছিল। কিন্তু তাদেরকে আগুন নেভাতে দেয়া হয়নি।’
প্রসঙ্গত, ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। সেই মিছিলটি শাহবাগ হয়ে বিজয়নগরে যায়।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেঈমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেঈমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’
এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে ৮টায় মিছিল নিয়ে তারা বিজয়নগরে যাবেন। ‘জাতীয় বেঈমানদের’ নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একই রকম একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, ‘রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে যাচ্ছি।’
রাত সোয়া ৮টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আগুন নিভিয়ে ফেলে বলে জানান দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ব্যক্তিগত সহকারী আবু তৈয়ব। তিনি জানান, দলীয় কার্যালয়ের চারপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সংঘটিত ‘বেসামরিক-সামরিক অভ্যুত্থানকে’ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
তরুণ প্রজন্মের কাছে দিনটির তাৎপর্য ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এবার দিবসটি ব্যাপক আয়োজনে পালন করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর সকালে সারা দেশে দলের সব কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর সকাল ১০টায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে ৬ নভেম্বর আলোচনা সভারও আয়োজন করেছে দলটি। অনুষ্ঠানের স্থান পরে জানানো হবে।
৮ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনসাধারণের অসুবিধা এড়াতে কর্মসূচিটি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর পাশাপাশি দেশের প্রতিটি বিভাগে অনুরূপ সমাবেশ আয়োজন করা হবে।
তিনি জানান, বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় তুলে ধরতে বিএনপির সব সহযোগী সংগঠনসহ সব ইউনিট দেশব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সৈনিক ও বেসামরিক জনগণ যৌথভাবে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে, যা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসার পথকে সুগম করে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বের মেয়াদ চার বছর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। একইসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ তিন বছরে ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি।
বুধবার সচিবালয় গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মতামত তুলে ধরেন। পরে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদ আছে পাঁচ বছর। কিন্তু পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে মেয়াদ যদি চার বছর হতে পারে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদ চার বছর হতে অসুবিধা কোথায়?’
তবে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদের বিষয়ে তার বক্তব্যকে একান্ত ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি আবারও বলেন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে শিগগিরই পূর্ণ মেয়াদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ প্রসঙ্গে হাসান আরিফ বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ এক সময় তিন বছর ছিল। এই মেয়াদ বাড়িয়ে পাঁচ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধিতে লাভ কী হয়েছে তার কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কখনো কোনও মূল্যায়নও করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মেয়াদ তিন বছর হওয়া উচিত। কারণ তিন বছর মেয়াদ হলে ১৫ বছরে পাঁচবার নির্বাচিত প্রতিনিধি এখানে আসবেন। ফলে অধিকসংখ্যক জনপ্রতিনিধি এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।’
ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সময়সাপেক্ষে অবস্থা অনুযায়ী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে ১০টি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে৷
‘দেশে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট (আরঅ্যান্ডডি) নিয়ে খুব একটা কাজ হয় না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে জোর দিতেই বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে দল গঠন করা হয়েছে।’
বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি ফসিহ উদ্দিন মাহতাব।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আপাতত দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো স্থান নেই। দলটি ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্যই প্রদর্শন করেছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় না হওয়া পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু করবে না বাংলাদেশ।’
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘স্বল্প সময়ের জন্যও নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে তার কোনো স্থান নেই, আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই।’
ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলটির নেয়া বিভিন্ন কৌশলের সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল, তারা (রাজনৈতিক) ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল, তারা তাদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশে দলটিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হবে, সংস্কারের আদেশ দেয়া হবে নাকি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থেকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ভেঙে যেতে পারে বলেও ধারণা করছেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিশেষাধিকার হবে। কারণ তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘রাজনৈতিক সরকার’ নয়।
ড. ইউনূস বলেন, “আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘ঐকমত্যের’ ওপর। তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক করতে হবে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকে অনুসরণীয় কাজের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুপরিচিত। স্বঘোষিত ‘গরিবের ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ইউনূস এর আগে হাসিনার প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন।
ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করছে এবং পুলিশ, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের জন্য ১০টি কমিশন গঠন করেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সম্পৃক্ত করার আগে রাজনৈতিক দল গঠন বা রাজনীতিতে যোগ দেয়ার তার কোনো ইচ্ছা নেই বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তার (শেখ হাসিনা সরকার) প্রধান সমর্থক ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, তার সরকার শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার হস্তান্তর চাইবে। তবে তারা ট্রাইব্যুনালের রায়ের জন্য অপেক্ষা করবেন।
তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। রায় প্রকাশ হলে আমরা ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
রায় ঘোষণার আগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো কারণ আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য তার মায়ের দায়বদ্ধতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি বেআইনি কিছু করেননি। যেকোনো অভিযোগের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছেন।’
হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার অনেক সমর্থক প্রতিশোধমূলক সহিংসতার আশঙ্কায় আত্মগোপনে চলে যায়।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও তার সরকারের ওপর ভারতের উষ্ণ সমর্থনের প্রভাবের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বিদ্যুৎ, পানি ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দেশ নিবিড়ভাবে সংযুক্ত এবং তাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’
তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি...। আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরকে প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই সর্বোত্তম সম্পর্ক থাকতে হবে, যা যেকোনো দুই প্রতিবেশীর হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য