চুয়াডাঙ্গার আনসারবাড়ীয়ায় তেলবাহী ট্রেনের খালি কনটেইনার লাইনচ্যুতের ১১ ঘণ্টা পর খুলনার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
ঘটনার পরের দিন বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে জীবননগর উপজেলার আনসারবাড়ীয়া রেল স্টেশনের অদূরে একটি তেলবাহী ট্রেনের (এসকে টু ডাউন) আটটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
ওই ঘটনায় পাকশী বিভাগী প্রধান (পরিবহন) আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারী প্রকৌশলী চাদ আহমেদ বলেন, ‘সকাল থেকে খুলনা ও পার্বতীপুর থেকে আসা দুটি দল উদ্ধারকাজ শুরু করে। বেলা ১১টার মধ্যে লাইন থেকে আটটি বগি অপসারণ করা হয়।
‘এরপর উদ্বারকারী দল দুটি মালামাল গুছিয়ে চলে যায়। দুপুর ১২টার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।’
চাদ আরও বলেন, ‘এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান হিসেবে আছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তদন্তের পর জানা যাবে এ ঘটনায় চালকের কোনো গাফিলতি আাছে কি না।’
উথলী রেল স্টেশনের মাস্টার মিন্টু কুমার রায় জানান, আনসারবাড়ীয়া রেল স্টেশনটি ক্লোজ ডাউন স্টেশন। সেখানে কোনো স্টেশন মাস্টার নেই। রাতে তেলবাহী ট্রেনটি ঈশ্বরদী থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিল, তবে ট্রেনটি আনসারবাড়ীয়া রেল স্টেশনের ডাউন সিগন্যালের ১১ নম্বর পয়েন্টের কাছে পৌঁছালে বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর খুলনাগামী চিত্রা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়ে। খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
উদ্ধারকারী দলের প্রধান পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সবগুলো বগি উদ্ধার হয়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হুমকির পাশাপাশি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনা উল্লেখ করে জেলা শহরে সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেছেন ডালিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি।
বারহাট্টা উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটি গ্রামের মোহাম্মদ আলাউদ্দীন তালুকদারের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ডালিম মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত একই গ্রামের মো. মানিক শেখ।
সাংবাদিকদের কাছে রোববার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ডালিম মিয়া লিখিত অভিযোগে জানান, নৈহাটি গ্রামে তার বাড়িতে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আইরিন আক্তার, সাত বছরের ছেলে আল আদিয়াত আইয়ান ও বৃদ্ধ মা, বাবা থাকেন। ডালিম মিয়া কাজের সুবাদে নেত্রকোণা জেলা শহরে থাকেন। শুক্রবার রাত আটটার দিকে এলাকা থেকে ডালিমের মোবাইলে তার কাজের ছেলেকে জিম্মি করে আটকে রেখে অভিযুক্ত মানিক শেখ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
তিনি জানান, তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মানিক শেখ হুমকি দেন এবং মানিকের লোকজন নিয়ে রাতে ডালিমের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।
ডালিম মিয়া জানান, মানিক শেখ ও তার কিশোর গ্যাং বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের সময় ডালিমের আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আইরিন আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন। ওই সময় ডালিমের স্ত্রী আইরিন আক্তার অজ্ঞান হয়ে যান। পরে মানিক শেখ ডালিমের ঘরে থাকা তিন ভরি স্বর্ণ ও পারিবারিক কাজের জন্য ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে যান।
তিনি আরও জানান, মানিক শেখ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। এলাকার লোকজন তার ভয়ে আতঙ্কিত থাকেন। মানিক শেখের সঙ্গে জড়িত এলাকার কিছু মাদক কারবারি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মানিক শেখকে কল করে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে আবারও সংঘর্ষের ব্যাপকতা বেড়েছে।
রাজ্যটিতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত এলাকা থেমে থেমে কেঁপে উঠছে।
কখন গুলি এসে লাগে, গোলা এসে পড়ে, এমন ভয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা দিন কাটাচ্ছেন। একই পরিস্থিতি সেন্টমার্টিন ও উখিয়ায়।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে রোববার সকাল ১০টার দিকে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ার জানান, নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ গত সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। এতে এপারে গুলি-মর্টারের গোলা এসে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘ এক মাস পর সীমান্তের রাতভর গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে রাতভর গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। এতে সীমান্তের বাসিন্দারা ভয়ভীতির মধ্য আছেন।
‘গত এক মাস পর আমাদের সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে।’
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারের মংডুর আশপাশের এলাকায় শনিবার রাত আটটা থেকে রোববার সকাল সাতটা পর্যন্ত ব্যাপক গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়ার কথা জানান সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রেজাউল করিম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত রাতে সীমান্তের ওপার থেকে কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে বিকট শব্দ পাওয়া যায়। অনেক সময় যুদ্ধবিমান দেখা গেছে। বিকট শব্দে বাড়িঘর কেঁপে উঠেছে। গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে সাবরাং সীমান্তের আচারবনিয়া পাড়ার বাসিন্দা মো. নূর বলেন, ‘ওপারে মিয়ানমারে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। সংঘর্ষে ব্যবহার হচ্ছে মর্টার শেল ও ভারী গোলা। হামলা হচ্ছে আকাশপথে যুদ্ধ বিমান থেকেও, যার কারণে সীমান্তে বসবাসকারীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
‘এর আগে আমাদের এলাকায় গোলার বিকট শব্দে অনেকের ঘরবাড়ি ফাটল ধরেছে।’
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে রাতভর গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। আমরা সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষের খোঁজখবর রাখছি।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের সন্তোষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়িকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে রোববার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে, মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তাঅধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদের এ জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও জানান, অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের পলিথিন বেচাকেনা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করার ঘটনায় আনা আদালত অবমাননার মামলায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় সাত আইনজীবীকে অব্যাহতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালত অবমাননার রুল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা আইনজীবীকে ১ লাখ টাকা কস্ট করেছে সর্বোচ্চ আদালত। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে এ টাকা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিএনপির সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগকারী ও তাদের আইনজীবী আদালতে পরপর উপস্থিত না হওয়ায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আজ বিষয়টি নন প্রসিকিউশনের আবেদন করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ সাত আইনজীবীকে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দিয়ে অভিযোগকারীকে ১ লাখ টাকা কস্ট করে আদেশ দেয়।
আদালতে সাত আইনজীবীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।
আদালত অবমানার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ৭ শীর্ষ আইনজীবী নেতা হলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ জে মোহাম্মদ আলী, ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান।
আরও পড়ুন:জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক নিজ খরচে তৈরির অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
এ বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কোনো অনুকম্পা চান না। তিনি আইনিভাবে মামলা নিষ্পত্তি করতে চান।
‘এ কারণে আমরা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল শুনানি করতে চাই। আপিল শুনানির জন্য আদালত আমাদের নিজ খরচে পেপারবুক প্রস্তুত করার অনুমতি দিয়েছেন।’
২০১৮ সালের অক্টোবরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে অন্য তিন আসামিকেও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
খালেদা জিয়াসহ প্রত্যেককে জরিমানাও করা হয়। এ ছাড়া ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলে ৪২ কাঠা জমি বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া।
এ মামলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জামিন চেয়ে পাননি তিনি। একপর্যায়ে সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয়।
গত ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়। ওই দিন বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন:খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ডাকবাংলা মোড়ে অবস্থিত জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে ডাকবাংলা মোড়ে আসে। তারা ডাকবাংলা মোড় পার হয়ে জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে তারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মালামাল বাইরে এনে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে খুলনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তেজিত জনতা জাতীয় দালাল ও ফ্যাসিস্টের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর করে এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায় বলে আমরা খবর পেয়েছি। এগুলোর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।'
খুলনা জেলা জাপার সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, মাগরিবের নামাজের সময় পার্টি অফিসে কেউ ছিল না। তখন ৫০-৬০ জনের একদল ছাত্র-যুবক তাদের কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর তারা পার্টি কার্যালয়ে ঢুকে সাইনবোর্ড, চেয়ার-টেবিল, ফ্যান ও টিভি ভাঙচুর করে। তারা কয়েকটি ফাইল ও কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এছাড়া তারা কয়েকটি চেয়ার, ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে পার্টি অফিসের সামনের রাস্তায় আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা করে। তারা অফিসকে কেন্দ্র করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কার্যালয়ের ভেতর থেকে প্লাস্টিকের দুটি চেয়ার বাইরে বের করে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা এখনও জানা যায়নি।’
জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা হয়েছে।
আইসিসি’র রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি করেছেন ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্সের ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মামলার বাদী ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
ব্যারিস্টার সারাহ ফোরে ও ব্যারিস্টার এমিল লিক্সান্দ্রু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ইতিহাসের এক পৈশাচিক নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আশরাফুল বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অযৌক্তিক হার পুনর্বহাল এবং সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
তাদের দাবি ছিল, এই কোটা ব্যবস্থা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অযাচিত অগ্রাধিকার প্রদান করে- যা দেশের মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য চাকরির পথ রুদ্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার। তবে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর মতো ঘটনার পর এটি দ্রুত বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। শিক্ষার্থীরা তখন কেবল কোটা সংস্কার নয়; বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন।
এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে।
এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র- যেমন বার্ডশট প্লেট ও তাজা গুলি ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়।
ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় এক হাজার চারশ’ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য