কক্সবাজারের টেকনাফে ২১ কোটি টাকা মূল্যের সোয়া আট কেজির বেশি ওজনের বিক্রয় নিষিদ্ধ তিমি মাছের বমি বা অ্যাম্বারগ্রিসসহ এক পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি।
বিজিবি জানিয়েছে, বিক্রয় নিষিদ্ধ এই তিমি মাছের বমি বা অ্যাম্বারগ্রিস থেকে বিভিন্ন মূল্যবান পারফিউম ও ওষুধ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য জিনিসের চোরাচালান অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
রোববার বিকেলে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালানো হয় বলে জানান বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
আটক শামশুল আলম টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের নির আহমদের ছেলে।
লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘রোববার বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়া সীমান্ত দিয়ে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারিরা কিছু মালামাল পাচার করার খবরে বিজিবির একটি দল অভিযান চালায়। এতে সন্দেহজনক এক ব্যক্তি বস্তা কাঁধে করে বাজারপাড়ার দিকে আসতে দেখে বিজিবির সদস্যরা তাকে থামার নির্দেশ দেন।
‘লোকটি বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে সঙ্গে থাকা বস্তাটি ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় ধাওয়া দিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হন বিজিবি সদস্যরা।’
তিনি বলেন, ‘পরে পাচারকারীর ফেলে যাওয়া বস্তাটিতে বিক্রয় নিষিদ্ধ ৮ কেজি ৩৯৮ গ্রাম অ্যান্বারগ্রিস বা তিমি মাছের বমি পাওয়া যায়। উদ্ধার করা এসব অ্যাম্বারগ্রিসের আনুমানিক বাজারমূল্য ২০ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’
বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সোমবার সকালে উদ্ধার করা অ্যাম্বারগ্রিসগুলো বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বুরি) কক্সবাজারস্থ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরে সেখানে অ্যাম্বারগ্রিসের বৈশিষ্ট্য এবং শনাক্ত সম্পন্ন করা হয়।
‘উদ্ধার করা অ্যাম্বারগ্রিসগুলো কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারি শাখায় জমা দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, আটক পাচারকারীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের সন্তোষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়িকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে রোববার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে, মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তাঅধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদের এ জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও জানান, অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের পলিথিন বেচাকেনা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করার ঘটনায় আনা আদালত অবমাননার মামলায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় সাত আইনজীবীকে অব্যাহতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালত অবমাননার রুল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা আইনজীবীকে ১ লাখ টাকা কস্ট করেছে সর্বোচ্চ আদালত। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে এ টাকা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিএনপির সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগকারী ও তাদের আইনজীবী আদালতে পরপর উপস্থিত না হওয়ায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আজ বিষয়টি নন প্রসিকিউশনের আবেদন করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ সাত আইনজীবীকে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দিয়ে অভিযোগকারীকে ১ লাখ টাকা কস্ট করে আদেশ দেয়।
আদালতে সাত আইনজীবীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।
আদালত অবমানার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ৭ শীর্ষ আইনজীবী নেতা হলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ জে মোহাম্মদ আলী, ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান।
আরও পড়ুন:জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক নিজ খরচে তৈরির অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
এ বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কোনো অনুকম্পা চান না। তিনি আইনিভাবে মামলা নিষ্পত্তি করতে চান।
‘এ কারণে আমরা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল শুনানি করতে চাই। আপিল শুনানির জন্য আদালত আমাদের নিজ খরচে পেপারবুক প্রস্তুত করার অনুমতি দিয়েছেন।’
২০১৮ সালের অক্টোবরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে অন্য তিন আসামিকেও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
খালেদা জিয়াসহ প্রত্যেককে জরিমানাও করা হয়। এ ছাড়া ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলে ৪২ কাঠা জমি বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া।
এ মামলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জামিন চেয়ে পাননি তিনি। একপর্যায়ে সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয়।
গত ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়। ওই দিন বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন:খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ডাকবাংলা মোড়ে অবস্থিত জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে ডাকবাংলা মোড়ে আসে। তারা ডাকবাংলা মোড় পার হয়ে জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে তারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মালামাল বাইরে এনে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে খুলনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তেজিত জনতা জাতীয় দালাল ও ফ্যাসিস্টের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর করে এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায় বলে আমরা খবর পেয়েছি। এগুলোর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।'
খুলনা জেলা জাপার সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, মাগরিবের নামাজের সময় পার্টি অফিসে কেউ ছিল না। তখন ৫০-৬০ জনের একদল ছাত্র-যুবক তাদের কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর তারা পার্টি কার্যালয়ে ঢুকে সাইনবোর্ড, চেয়ার-টেবিল, ফ্যান ও টিভি ভাঙচুর করে। তারা কয়েকটি ফাইল ও কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এছাড়া তারা কয়েকটি চেয়ার, ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে পার্টি অফিসের সামনের রাস্তায় আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা করে। তারা অফিসকে কেন্দ্র করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কার্যালয়ের ভেতর থেকে প্লাস্টিকের দুটি চেয়ার বাইরে বের করে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা এখনও জানা যায়নি।’
জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা হয়েছে।
আইসিসি’র রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি করেছেন ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্সের ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মামলার বাদী ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।
ব্যারিস্টার সারাহ ফোরে ও ব্যারিস্টার এমিল লিক্সান্দ্রু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ইতিহাসের এক পৈশাচিক নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আশরাফুল বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অযৌক্তিক হার পুনর্বহাল এবং সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
তাদের দাবি ছিল, এই কোটা ব্যবস্থা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অযাচিত অগ্রাধিকার প্রদান করে- যা দেশের মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য চাকরির পথ রুদ্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার। তবে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর মতো ঘটনার পর এটি দ্রুত বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। শিক্ষার্থীরা তখন কেবল কোটা সংস্কার নয়; বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন।
এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে।
এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র- যেমন বার্ডশট প্লেট ও তাজা গুলি ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়।
ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় এক হাজার চারশ’ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
আরও পড়ুন:সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের আট সদস্য। রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের কার্যালয়ে শনিবার তারা এই সাক্ষাৎ করেন।
কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ ও মো. মুসতাইন বিল্লাহ।
ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে এই সাক্ষাতের সময় সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয় বলে জানান সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপ-পরিচালক মো. সাব্বির মাহমুদ।
এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ড. কামাল হোসেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানসহ উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ায় আস্থা প্রকাশ করেন। তিনি সংবিধানকে সমসাময়িক করার কথা উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন।
দেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে।
রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে শনিবার ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়।’
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা- এই ত্রিমুখী আঁতাত মূল ভূমিকা পালন করেছে।
‘সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে। গত ১৫-১৬ বছরে আমরা এর চূড়ান্ত রূপ দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ।’
‘যে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি তা যেন টেকসই হয়’, যোগ করেন তিনি।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি দৃষ্টান্ত আছে। সেটি হলো, সিঙ্গাপুর থেকে। দেশটি থেকে ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওইসব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর এ বিষয়ে সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়) উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। সে কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েক শ’ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। কিন্তু এই ঘটনা বরফখণ্ডের চূড়ামাত্র, এমন পাচারকারী আরও অনেকে আছেন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ- অর্থ পাচার বিষয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য