মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে চাচাত ভাই নুর আলমের সঙ্গে নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে ১০ বছরের উম্মে সালমা। তার ভাই, মা, বাবা ও বোনের মধ্যে কেউ বেঁচে আছে কি না, তা সে জানে না।
সে শুধু এতটুকু জানে, আরকান আর্মি তার পরিবারের সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
শিশুটির ভাষ্য, তার বাবাকেও গ্রামের অন্য পুরুষদের সঙ্গে ধরে নিয়ে যায় সেনারা। আর যখন ঘরে আগুন দেয়া হয়, তখন তার মা ঘরেই ছিলেন। উম্মে সালমা বাইরে উঠানে ছিল। ওই সময় ড্রোন এসে তার বাম হাতে লাগে।
চাচাত ভাই উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গা নিয়ে যায় উম্মে সালমাকে।
‘পালিয়ে আসার সময় গ্রামের পথে পথে ফাঁকা স্থানে শুধু রক্তের দাগ দেখেছি’, বলে রোহিঙ্গা শিশুটি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর সুয়েজা এলাকায় উম্মে সালমার বাড়ি। কখন তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছিল, তা সে বলতে পারে না।
উম্মে সালমা জানায়, গত ৮ সেপ্টেম্বরের আগে এক শুক্রবার আগুন দেয়া হয় তাদের বাড়িতে। এটাই মনে আছে তার।
বর্তমানে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুটি।
আরেক রোহিঙ্গা শিশু রহিমা, যার বয়স ৯ বছর। তার পাঁচ বছর বয়সী এক বোন আছে, যার নাম সাদিয়া। চাচা নুরুল করিমের সঙ্গে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এ পরিবারে দুই সহোদর ও চাচা ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই।
শিশুটি বলে, ‘বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে আরাকান আর্মি। পুড়িয়ে দিয়েছে সব। বাবা-মা মারা গেছে।
‘আমার পায়ে আগুন লাগছে। আর মৃত্যুর ভয় নিয়ে পালিয়ে এসেছি।’
আরেক শিশু সাত বছরের উম্মে কায়দা বলে, ‘বাবাকে নিয়ে চলে এসেছি। মা ড্রোন হামলায় মারা গেছেন।’
সে জানায়, তারা দুজন গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন।
উম্মে কায়দাদের বাড়ি মংডুর নলবাইন্যা এলাকায়। তার বাবা আছে, তবে পরিবারের অন্য কেউ বেঁচে আছে কি না, সে জানে না। বর্তমানে সে তার মামাতো বোন রাজিয়ার সঙ্গে আছে।
উম্মে কায়দা নিউজবাংলাকে বলে, ‘আরাকান আর্মি বাড়িতে আগুন দেয়ার পর সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’
মংডুতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ড্রোন হামলায় ১১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু নূর শাহেরা গুরুতর আহত হয়। সে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস তথা এমএসএফ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়, কিন্তু এখনও তার আঘাত থেকে সেরে উঠতে পারেনি।
নূর শাহেরার ভাষ্য, অনেক রোহিঙ্গা সম্প্রতি গুলি ও ড্রোন হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
উম্মে সালমা, রহিমা, উম্মে কায়দা কিংবা নূর শাহেরাই নয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আহত অনেক শিশু রয়েছে। এসব শিশু বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় আছে।
জীবিতদের মধ্যে আয়াশ নামে ৩৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা ছিলেন, যিনি তার মেয়েসহ আহত হন।
ভয়াল সেই দৃশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার বড় ছেলে ও খালাকে আমার সামনে আরকান আর্মি গুলি করে হত্যা করেছে। তখন আমি নদীর তীরে মারা যাওয়ার ভান করছিলাম।
‘আমার স্ত্রী, আমাদের ছোট ছেলেকে নিয়ে আলী পাড়ায় বেঁচে গেলেও তার পুরো পরিবার গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।’
কথা হয় ১২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা বালক মুহাম্মদ ত্বকির সঙ্গে। সে গত ২০ আগস্ট সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসার সময় নদীর তীরে আরাকান আর্মির ছোড়া ভারী মর্টার শেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়।
আহত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বিপুলসংখ্যক আহত রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের বেশি রোহিঙ্গা শিশু ছিল। কারও হাতে আঘাত, কারও পায়ে আঘাত। চিকিৎসা শেষে তারা বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।
‘তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারছি, অনেকেই ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন। তারা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। শিশু আইন অনুযায়ী, ৮ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের কাউন্ট করা হচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি তুলে ধরে আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জুবায়ের বলেন, ‘মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর লড়াই দেখিয়ে রোহিঙ্গা নির্মূল করা হচ্ছে। সে কারণে নিরস্ত্র, নিরীহ রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
‘তাদের দুই বাহিনীর নির্যাতনে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শিশু আহত হয়ে এপারে চলে আসছে বাধ্য হচ্ছে। তারা অবুঝ শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করছে। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আওয়াজ তুলতে হবে।’
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা ইয়ুথ কোয়ালিশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালের চেয়েও ভয়ংকর এ যুদ্ধ। রোহিঙ্গা এলাকায় আরাকান আর্মি ঘাঁটি করে যুদ্ধ করছে, যাতে করে রোহিঙ্গারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
‘এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। তাদের সঙ্গে মৃত্যুর বিভীষিকার দৃশ্য দেখে ২০ জনের ওপরে আহত রোহিঙ্গা শিশু উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।’
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু–দ্দৌজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা আহত আছে।
‘তাদের এনজিও সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’
কত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শানঘাট গ্রামে শনিবার দুপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আপন বোন এবং ভাইয়ের স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রধান।
কোপে আহত হন ওই ব্যক্তির ভাই ও আরেক বোন।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন জোসনা খাতুন ও তার ভাইয়ের স্ত্রী জাকিউল ইলমা।
আহত দুজন হলেন জাহিদ হোসেন ও শামীমা খাতুন।
নিহত জাকিউল ইলমা গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
ইলমাসহ দুজনকে ধারালো অস্ত্র (রামদা) দিয়ে কুপিয়ে মারধরের শিকার হন মহিবুল ইসলাম ওহিদ, যিনি শানঘাট পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক। খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ভাষ্য, পারিবারিক জমি নিয়ে শানঘাট গ্রামের মহিবুল ইসলাম ওহিদের সঙ্গে তার অপর দুই ভাই ও তিন বোনের বিরোধ চলে আসছিল। ওহিদ একাই প্রায় দেড় একর জমির পুকুর দখল নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। তিন ভাই এবং দুই বোন মিলে আজ সকাল থেকে পুকুর ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। অপর বোন অনুপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। ওই সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওহিদ তার ভাই-বোনদের ওপর আক্রমণ করেন। এতে ঘটনাস্থলেই বোন জোসনা খাতুন ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী জাকিউল ইলমা নিহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় মহিবুলের ভাই জাহিদ হোসেন ও ছোট বোন শামীমাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে জানান গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জোসনা খাতুনের স্বামী কুদরত-ই-হাফিজ জানান, ভাই-বোনদের মধ্যে জমি ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। মহিবুল ইসলাম ওহিদ বাড়ির পাশের ১ একর ২৮ শতক জমির একটি পুকুর দখল করে আছেন। ভাই-বোনদের ভাগ নির্ধারণ করার জন্য আজ সবাই মিলে আলোচনায় বসা হয়েছিল। এর একপর্যায়ে মহিবুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুজন।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, ভাই-বোনদের মধ্যে জমিজমার ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। এ নিয়ে এর আগেও একবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। দুই পক্ষই আদালতে মামলা করেছিল। স্থানীয়ভাবে অনেকবার আলোচনায় বসা হলেও সমস্যা সমাধান হয়নি। দুই ভাই এবং তিন বোন এক পক্ষে এবং মহিবুল একাই তাদের প্রতিপক্ষ। কোনোমতেই মহিবুল তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসেননি।
দীর্ঘদিনের বিরোধের জের শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডের পথে গড়ায়।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর প্রক্রিয়া করছে পুলিশ।
দুজনকে হত্যাকারী মহিবুল ইসলাম ওহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:রাজধানীর তাঁতীবাজারের একটি পূজামণ্ডপ এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ছিনতাইকালে ছুরিকাঘাতে আহত পাঁচজনকে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক খুদেবার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
খুদেবার্তায় বলা হয়, শুক্রবার রাত আটটার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকার ১৭ নম্বর পূজামণ্ডপের পেছনে একদল ছিনতাইকারী মণ্ডপে আসা এক নারীর গলার চেইন ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ওই সময় ওই নারীর চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে ছিনতাইকারীরা চাকু দিয়ে তাদের এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন আহত হন।
আহত পাঁচজনের মধ্যে কারও হাতে, কারও গলা, কারও বুকে আঘাত লাগে। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় পুলিশ তিন ছিনতাইকারীকে আটক করে।
আটককৃতদের কাছ থেকে একটি চাকু ও একটি চেইন এবং ঘটনাস্থল থেকে তরল পদার্থে ভরা একটি বোতল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের সহায়তায় আহত লোকজনকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে খুদেবার্তায় জানানো হয়।
আরও পড়ুন:নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় পূজার অঞ্জলি দিতে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলো হরিণধরা গ্রামের সঞ্জয় তালুকদার ও বাসন্তী তালুকদার দম্পতির মেয়ে ঋতু তালুকদার (১৮) এবং বিপ্লব তালুকদার ও রুপা চন্দ্র তালুকদার দম্পতির ছেলে অমিত তালুকদার (৮)।
ঋতু কলমাকান্দা সরকারি কলেজের বিএ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্যদিকে অমিত হরিণধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুজন সম্পর্কে ফুফু (পিসি) ভাতিজা হন।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে হরিণধরা গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে পশ্চিমপাড়ায় একই পরিবারের ছয়জন মিলে দুর্গাপূজার অঞ্জলির উদ্দেশ্যে ছোট একটি নৌকায় করে বের হয়। পথে কালীবাড়ি খাল পার হওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়। ওই সময় চারজন সাঁতরে খালপাড়ে উঠলেও ঋতু তালুকদার ও অমিত তালুকদার উঠতে পারেনি।
পরে দুজনকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামীম আরা নিপা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ফুফু ভাতিজার মৃত্যুর সংবাদে ওই গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৃতের স্বজন স্বপন তালুকদার জানান, ঋতু তালুকদার সাঁতার জানত, কিন্তু ভাইপো অমিত তালুকদারকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনই পানিতে তলিয়ে যায়। জীবিতদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন জানান, খবর পেয়ে হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল থেকে শুক্রবার এক পর্যটকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
শহরের হোটেল-মোটেল জোনের মরিয়ম রিসোর্ট নামের আবাসিক হোটেল থেকে দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফয়জুল আজীম।
নিথর অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অমিত বড়ুয়া (৩২) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা এলাকার রণজিত বড়ুয়ার ছেলে।
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বরাতে ওসি ফয়জুল আজীম জানান, গত ৮ অক্টোবর সকালে অমিত বড়ুয়া কক্সবাজার ঘুরতে আসেন। তিনি রিসোর্টটির ১০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন। শুক্রবার সকালে তার হোটেল কক্ষ ছাড়ার কথা ছিল।
তিনি আরও জানান, বেলা ১১টার দিকে অমিত বড়ুয়ার অবস্থান করা কক্ষটি ছাড়ার বিষয়ে হোটেলের এক কর্মচারী কথা বলতে যান। ওই সময় সেটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার ডাকার পরও সাড়াশব্দ না পাওয়ায় হোটেল কর্মচারীর সন্দেহ জাগে। পরে তিনি বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, খবর পেয়ে বাহিনীর একটি দল কক্ষটির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে রশি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই সময় তার পকেটে চিরকুট পাওয়া যায়।
তিনি জানান, চিরকুটটি খুলে পড়া সম্ভব হয়নি। তাই কী কারণে যুবক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন এবং চিরকুটে কী লিখেছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
ফয়জুল আজীম জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তারপরও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।
পুলিশ আরও জানায়, মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিন্দুদের কারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
খুলনার গল্লামারী হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দির ও বাগমারা গোবিন্দ মন্দির পরিদর্শন করে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসিফ বলেন, ‘ধর্মকে ব্যবহার করে অতীতে বিভিন্ন দল রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেখানে সকল ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবে।’
উপদেষ্টা চট্টগামের একটি পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা ও সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দিরে সোনার মুকুট চুরি যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রশাসন দোষীদের আটক করেছে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
গল্লামারী হরিচাঁদ মন্দিরে সাংবাদিকরা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম সংস্কার করে বিপিএলসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু আবু নাসের স্টেডিয়াম নয়, দেশের সকল স্টেডিয়াম খেলার উপযোগী করে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।’
আরও পড়ুন:চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার বিচার শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে শুক্রবার বিকেলে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এর আগে দেয়া বক্তব্যে আসিফ নজরুল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ও আমরা এই দেশে কেউ সংখ্যালঘু না। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক; সবার সমান অধিকার।
‘সবাই ধর্মের প্রতি সম্মান ও ভালবাসা নিয়ে থাকব ও শান্তিতে থাকবে। আমরা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াব। দূর্গাপূজা অনুষ্ঠান যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন দেব ও সকল প্রকার সহযোগিতা করব।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে সিরাজগঞ্জে আসা হয়েছিল। আবারও এসে ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর, সুশৃঙ্খলভাবে পাঁচ শতাধিক মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখনও কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই।
‘এখানে যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্বন্বয়করা রয়েছেন ও অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল মিলে পূজার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সাহায্য করছেন। সেনাবাহিনী,পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সবাই মিলে দিন ও রাত্রি পরিশ্রম করছেন। সবাই মিলে এক আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। এটা দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই, আগস্ট এই দেশে যে নৃশংস গণহত্যা হয়েছিল, এই বিচার আমরা অচিরেই শুরু করব। আমরা ন্যায়বিচার সম্পন্ন করতে ও নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমি আগেই বলেছি সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়ে যাবে।
‘আমাদের প্রসিকিউশন টিম গঠিত হয়েছে এক মাস হয়ে গেল। ইনভেস্টিগেশন টিম গঠিত হয়েছে দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। প্রচুর আলামত পেয়েছি। তখন আমাদের অনেক দ্বিধা, অনেক প্রশ্ন দূর হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম নগরের একটি পূজামণ্ডপে ইসলামি ভাবধারার সংগীত পরিবেশনের ‘পেছনের উদ্দেশ্য’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দীন শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
নগরের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য দুটি গান পরিবেশন করেন।
সংগঠনটির সদস্যরা শাহ আবদুল করিমের বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ গান দুটি পরিবেশন করে।
গান দুটির মধ্যে ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’ গানটির খণ্ডাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে সংগঠনটি মঞ্চে গান পরিবেশন করে। সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে বৃহস্পতিবার রাতে সজল দত্তকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পুলিশ জানায়, মণ্ডপে গান গাওয়ার ঘটনায় শহীদুল ইসলাম ও নুরুল করিম নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজনই মাদ্রাসার শিক্ষক।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে।
রইছ উদ্দীন বলেন, ‘এই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটক দুজন হলেন তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক শহীদুল করিম ও দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক নুরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতে নগরের পৃথক স্থান থেকে এই দুজনকে আটক করা হয়।
‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি সজল দত্তের আমন্ত্রণে তারা সেখানে সংগীত পরিবেশন করেছেন। সজলের অনুরোধে তারা ছয়জন মঞ্চে উঠে সংগীত পরিবেশন করেন।’
উপকমিশনার রইছ উদ্দীন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সজল দত্তের খোঁজ করছি। এখনও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা জানতে আমরা কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, এই সংগীত পরিবেশনের কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার বিষয়টি রয়েছে।’
রইছ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। যিনি গান গাইতে ডেকেছেন, পূজা কমিটির সেই নেতা সজল দত্তকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য