দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির উল্লেখ করে ভারতের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারবিষয়ক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে।’
তিনি প্রতিবেশী দেশকে উভয় দেশের জনগণকে রক্ষায় ‘জনবিরোধী নীতি’ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র: ইউএনবি
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘কোনো ধরনের পূর্ব সতর্ক-বার্তা ছাড়া এবং আমাদের প্রস্তুতির কোনো সুযোগ না দিয়েই বাঁধটি খুলে দেয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশে আকষ্মিক এই বন্যার কারণ জানতে চাইবেন।’
রিজওয়ানা বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের বন্যা এড়ানোর উপায় খুঁজতে অফিসিয়াল চ্যানেলে আলোচনা চলছে।’
নাহিদ বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে এবং অসহযোগিতার পরিচয় দিয়েছে।’
অন্যদিকে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। বন্যার কারণ ব্যাখ্যা করে দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে যা বলা হচ্ছে তা তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।’
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশের খবর পেয়েছি। এটি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।’
প্রতিবেশী দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী নদ-নদীতে বন্যা একটি অভিন্ন সমস্যা, যা উভয় পক্ষের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং এর সমাধানে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮ জেলায় বন্যায় ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফেনী ও কুমিল্লায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
নাহিদ বলেন, ‘ভারতের নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ এবং পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করছে।
‘বন্যা পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য সরকার সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানদের সঙ্গেও আলোচনা করছে।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় মানবিক কারণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে ভারত উল্লেখ করেছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর অববাহিকা এলাকায় গত কয়েক দিনে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশে এই বন্যা মূলত বাঁধের ভাটির দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে ঘটেছে।’
ভারত জানায়, যেহেতু দুটি দেশের ৫৪টি অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, তাই নদীর পানি-বিষয়ক সহযোগিতা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানিসম্পদ ও নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগসমূহের সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ডুম্বুর বাঁধ সীমান্ত থেকে বেশ দূরে। বাংলাদেশ থেকে ১২০ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত। এটি কম উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ত্রিপুরার এই গ্রিড থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ।
প্রায় ১২০ কিলোমিটার নদীপ্রবাহ বরাবর অমরপুর, সোনামুড়া ও সোনামুড়া-২ এ তিনটি পানির স্তর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
গত ২১ আগস্ট থেকে ভারতের ত্রিপুরা ও পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ভারী প্রবাহের কারণে স্বয়ংক্রিয় প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে। অমরপুর স্টেশন একটি দ্বিপক্ষীয় প্রটোকলের অংশ, যার অধীনে আমরা বাংলাদেশে তাৎক্ষণিক বন্যার তথ্য পাঠাচ্ছি।
‘বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্রবণতার তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ৬টার দিকে বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল। এর ফলে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয়।’
তারা আরও বলছে, ‘তবুও আমরা জরুরি ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহের জন্য অন্যান্য উপায়ে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।’
আরও পড়ুন:গণহত্যার সঙ্গে জড়িত কিংবা মামলার পলাতক আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের দোসরদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মামলার অনুসন্ধানে যে দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্য পাওয়া মাত্র ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার রাজধানীর উত্তরায় এপিবিএন সদর দপ্তরে শহীদ মীর মুগ্ধ স্মরণে সভা, মিলাদ মাহফিল, মীর মুগ্ধ ভবন ও এপিবিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রবেশ তোরণ উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনেকে আগেই পালিয়ে গেছেন। এরপর আবার ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট অনেকে পালিয়ে গেছেন। ওই তিনদিন সবকিছু ঢিলেঢালা ছিলো। এখন বর্ডার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তারা কোথায় আছেন এবং কেন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের তথ্য দিন। আমাদের দায়িত্ব তাদের গ্রেপ্তার করা। আপনাদের দায়িত্ব আমাদের তথ্য দেয়া।
‘আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আপনারাও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করুন। পলাতকদের তথ্য পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তথ্য প্রদানের জন্য প্রয়োজনে খরচের ব্যয়-ভাড়া বহন করা হবে।’
রাজধানীসহ সারাদেশে যেসব মামলা হচ্ছে তাতে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন অনেককেই আসামি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো মামলা পুলিশ বাদী হয়ে করছে না। এই মামলাগুলো করছে সাধারণ জনগণ। তারা (জনগণ) ১০ জনের নাম দিচ্ছে। হয়ে যাচ্ছে ১০০ জনের নামে মামলা। অনুসন্ধানে, যে দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসা সরকার করবে। প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নির্ভয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, এই উৎসবে নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনী মাঠে আছে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শনিবার দুর্গাপূজা উদযাপনে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসব কথা বলেন সেনাবাহিনী প্রধান। তিনি সেখানে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
সেনাপ্রধান এ সময় উপস্থিত মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জেলায় জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন থেকে পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সদা তৎপর রয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রত্যেক বাংলাদেশি অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করবেন। পাশাপাশি তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, টিকিট জটিলতায় মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার কর্মীকে সে দেশে পাঠানোর বিষয়ে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেছেন, দেশটিতে বন্ধ শ্রমবাজার চালু ও বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে কাজ চলছে।
প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বিজয়-৭১ মিলনায়তনে শনিবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সমঝোতা সইকে সে দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ সুনিশ্চিত করতে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেশের আর্সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী কর্মীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রবাসীরা বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের একেকটি পতাকা হয়ে কাজ করেন।
‘প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন, প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের কল্যাণমূলক সুরক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড এ কাজটি নিরলসভাবে করে চলেছে।’
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিনের উপস্থিতিতে চুক্তিতে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান এবং মালয়েশিয়ার পারকেসোর মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজমান আজিজ মোহাম্মদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, জাতি একজন বিশিষ্ট জনসেবক ও একজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদকে হারালো।
প্রধান উপদেষ্টা এক শোক বার্তায় বলেন, ‘আমি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে সুন্দর স্থান দান করুন।’
বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসক ও জনসেবক হিসেবে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দীর্ঘ ও বহুল সম্মানিত কর্মজীবনের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্যের বার্তা ছড়িয়েছেন। এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) তার উপস্থাপনায় প্রচারিত ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠানটি লাখ লাখ দর্শকের প্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। এ অনুষ্ঠানটি তাকে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি একই স্তরের একনিষ্ঠতা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। পাঁচবারের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ৯০-এর দশকে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংসদে তার বক্তৃতা সব মতের রাজনীতিবিদদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল।’
প্রধান উপদেষ্টা আশা করেন তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এই ক্ষতি বহন করার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন।
তিনি জনগণকে তার জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার এবং ‘জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার’ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আজ শনিবার ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকার উত্তরা উইমেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ সম্পর্কে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনি রোডম্যাপ চেয়েছি। এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া বিষয়ক আইন এবং সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছি।
‘ভুয়া নির্বাচনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। তাদেরকে সরিয়ে দিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করার কথা বলেছি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছি। বিচার বিভাগে ২০ জন বিচারপতি এখনও কাজ করছেন যারা আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি।
‘এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের যেন জামিন দেয়া না হয়। গায়েবি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভারত সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।’
সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:নির্বাচন বিলম্ব হলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে মন্তব্য করে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই।
রাজধানীর এফডিসিতে শনিবার গণতন্ত্র সুরক্ষায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখন নয়, সংস্কার করা যেতে পারে। পুনর্লিখন করলে বিপদ হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।’
বর্ষীয়ান এ সাংবাদিক বলেন, ‘এখনকার যুগে সেনা শাসন সম্ভব নয়। সেনা শাসন হলে উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা বন্ধ করে দিবে।
‘আমেরিকা, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেনা শাসনের বিপক্ষে, তবে বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। আর বাংলাদেশ ব্যর্থ হলে আমরা অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হব।’
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস একজন বিশ্বনন্দিত ভালো লোক, তবে প্রশাসন পরিচালনা করার জন্য আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য অনন্তকাল সময় দেওয়া যায় না।’
মানবজমিন সম্পাদক বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার বিলম্ব হলে ফ্যাসিস্টরা আবার ফিরে আসার ঝুঁকি রয়েছে। একই সাথে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রাপ্তিতেও সংশয় সৃষ্টি হবে।’
ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের সময় তাদের মতামত জানতে শনিবার থেকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সংলাপ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বেলা আড়াইটার দিকে শুরু হওয়া সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও কয়েকজন উপদেষ্টা অংশ নিয়েছেন।
বিএনপিকে দিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রথম দিনের সংলাপ শুরু হয়েছে।
আজকের সংলাপ রাত আটটা পর্যন্ত চলতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররে নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধি দল সংলাপে যোগ দিয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রতিনিধি দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা আছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের পরামর্শ নেয়া।’
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সংলাপ এটি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য