টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলও বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যানবাহন কম থাকায় বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবীরা।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। জারি করা হয়েছে পাহাড়ধসের সতর্কতাও। তবে ওই সতর্কতা জারি করেই যেন প্রশাসন দায়িত্ব শেষ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নগরের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গার সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার।
খবর নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দফা ডুবেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। নগরের শুলকবহর, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, জাকির হোসেন রোড, ওয়াসা রেবতী মোহন সড়ক, প্রবর্তক মোড় কাতালগঞ্জ, ডিসি রোড, ফুলতলা, কে বি আমান আলী রোড, চকবাজার, বাকলিয়া, দেওয়ানহাট, মোগলটুলী, পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ রোড, হালিশহরের ওয়াপদাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে গেছে। মঙ্গলবারও কোমর পানিতে ডুবে ছিল চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা।
নগরের মোহাম্মদপুর এলাকায় কোমর পানি জমে আছে। দোকান ও বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি যুক্ত হয়ে পানি আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। চকবাজার চক সুপার মার্কেট এলাকায়ও একই অবস্থা।
খুলশী বিজিএমইএ রেলওয়ে কলোনি এলাকায়ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এখানকার বাসিন্দা রবিন আজাদ বলেন, ‘এর আগে কখনও আমাদের বাসায় পানি ওঠেনি। এবার বাসার ভেতরে হাঁটু পানি। শিশুদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।’
চকবাজারের ফুলতলা থেকে বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোড পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন পথচারীরা। একই অবস্থা কাতালগঞ্জ এলাকায়ও। কোমর পানিতে তলিয়ে আছে পুরো এলাকা।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কয়েক দশকের পুরনো জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র ৩৬টি খাল ঘিরে নেয়া প্রকল্প। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় আরও ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
এদিকে জেলার কয়েকটি উপজেলাও পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফটিকছড়ি
বুধবার রাতেই উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের সবক’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধুরং ও হালদা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় অন্তত ছয়টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমির। বন্যার কারণে ফটিকছড়ি থেকে হেঁয়াকো রামগড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ডুবে আছে উপজেলার মাইজভান্ডার-রাউজান সড়কও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজ্জামেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফটিকছড়ি দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী ও বেশকিছু খালের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। লাখো মানুষ পানিবন্দি।’
রাউজান
হালদার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তলিয়ে গেছে রাউজানের পশ্চিম নোয়াপাড়া, মোকামীপাড়া, সাম মাহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা ও বৈইজ্জাখালি, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, গহিরা, নোয়াজিশপুর, চিকদাইর ও ডাবুয়া। এসব গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
নোয়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকার কয়েকশ’ একর চাষাবাদের জমি ৫ থেকে ৬ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের কয়েকটি খুঁটি। এতে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রাম।’
মিরসরাই
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার সাধারণ মানুষদের। এছাড়াও মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙে কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা।
স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা আমলীঘাট, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘মিরসরাইয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের সন্তোষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়িকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে রোববার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে, মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তাঅধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদের এ জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও জানান, অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের পলিথিন বেচাকেনা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর গঠিত মনিটরিং কমিটির উদ্যোগে তদারকি চালানো হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন সুপারশপে শুক্রবার এ কার্যক্রম চালানো হয়।
মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাজার করতে আসা মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয় এবং পরবর্তী অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) তপন কুমার বিশ্বাস ওই সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর হতে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সকল জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১ ও ২ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকলেও মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
এ কর্মকর্তা নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ওই সময় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির সদস্য হিসেবে যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, উপসচিব রুবিনা ফেরদৌসী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রাজিনারা বেগম ও পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:গত দুই দশকে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোতে ভারী ধাতুর কারণে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে।
এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিপূরণের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।
চলতি বছরের ১২ জুলাই এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০টি ভারী ধাতুর (এএস, পিবি, সিডি, সিআর, এফই, এমএন, সিইউ, সিইউ, সিও, এনআই, জেডএন) দূষণের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেশের জলপথের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ একটি অ্যাকাডেমিক জার্নাল। এটি জার্মানিভিত্তিক স্প্রিংগার নেচারের শাখা স্প্রিংগার প্রকাশ করে।
দেবাশীষ পণ্ডিত ও মোহাম্মদ মাহফুজুল হকসহ একদল বিশেষজ্ঞ প্রিজমা ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে পদ্ধতিগতভাবে ৫৫টি নথি পর্যালোচনা করেন।
গবেষণার ফলে দেখা যায়, ২০০১-২০১০ সালে যে পরিমাণ দূষণ হয়েছিল, সেই তুলনায় গত দশকের (২০১১-২০২০) দূষণের মাত্রা অনেক খারাপ ছিল। লক্ষণীয় বিষয় হলো ঢাকার বুড়িগঙ্গা বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল
গবেষণায় প্রধানত তিনটি বিভাগের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম। এসব এলাকার নদীগুলোর বেশির ভাগে ভারী ধাতুর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইউএসইপিএ) এবং বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আর্সেনিক (এএস), সীসা (পিবি), ক্যাডমিয়াম (সিডি), ক্রোমিয়াম (সিআর), লোহা (এফই) ও ম্যাঙ্গানিজের (এমএন) গড় ঘনত্ব তিনটি ঋতুতেই গ্রহণযোগ্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সর্বাধিক দূষণ হয়।
ট্যানারি, টেক্সটাইল ও ইলেক্ট্রোপ্লেটিং কারখানাসহ শিল্প কারখানার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা।
এসব শিল্প কারখানা ভারী ধাতুসম্পন্ন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়। এটি পরিবেশগত মারাত্মক সংকট তৈরি করে এবং যা বছরের পর বছর ধরে খারাপ হয়ে চলেছে।
দূষণের প্রধান উৎস
গবেষণায় ভারী ধাতু দূষণের একাধিক উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলোর পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কৃষি থেকে সার ও কীটনাশক, খনন, ইলেকট্রোপ্লেটিং, বস্ত্রশিল্প, কয়লা খনি ও শিল্প বর্জ্য, যেমন ব্যাটারি ও রং নদীর পানির দূষণের গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
এসব দূষক বাস্তুতন্ত্রে জমা হয়, যা জলজ জীববৈচিত্র্য, মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে।
জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান
গবেষণাটি দূষণ রোধে শক্তিশালী আইন এবং আরও কার্যকর প্রয়োগের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
এসব দূষণ রোধে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে পানিসম্পদ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিল্প সংশ্লিষ্ট ও জনগণকে শিক্ষিত করতে অব্যাহত পর্যবেক্ষণ, ব্যাপক গবেষণা এবং সচেতনতামূলক প্রচার।
বিশেষজ্ঞরা নদী অববাহিকা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন, যা টেকসই সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করে।
দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের নদীগুলো অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণার অন্যতম গবেষক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোতে বিশেষ করে ঢাকার মতো অঞ্চলে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ভারী ধাতু জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:বন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাহসের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বন ভবনে বৃহস্পতিবার ‘নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক’ প্রতিপাদ্যে আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বন রক্ষায় বন কর্মকর্তাদের সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কাজের গতি বাড়াতে হবে এবং যেকোনো সমস্যা হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।’
তিনি জানান, বন কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য তার দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
ওই সময় তিনি ঝুঁকি ভাতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান।
উপদেষ্টা বলেন, দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো বন বিভাগের প্রধান দায়িত্ব।
গাছ কাটার বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বনরক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডলফিনের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের নদী ও জলাশয়ে মিঠাপানির ডলফিনের উপস্থিতি আমাদের পরিবেশের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। ডলফিন টিকিয়ে রাখতে নদী ও জলাশয়ের দূষণ রোধ এবং পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে।
‘এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারের পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ডলফিন রক্ষায় স্থানীয় জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।’
পরিবেশ উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে সাইটিস সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করার ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।
তিনি ডলফিন জরিপের ফল ঘোষণা করেন।
এ সমীক্ষার ফলে প্রায় ৬৩৬টি দল বা ১ হাজার ৩৫২টি গাঙ্গেয় ডলফিনের উপস্থিতি নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন:পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-এ পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘৩ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত চলার সঙ্গে সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রাখতে বলা আছে। একইসঙ্গে সাগরে মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে চলতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার ভোর থেকে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তবে দুপুরে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালী জেলায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। এ কারণে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশান লেকের ওপর এবং তৎসংলগ্ন স্থানে নির্মিত অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ অভিযান চালিয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বিশেষ নির্দেশনায় মঙ্গলবার এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে লেক দখলের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা, তৎসংলগ্ন নার্সারি, টিনশেড রুম ও লেকের মধ্যে জমি দখলের জন্য পুঁতে রাখা বাঁশ ও নেট উচ্ছেদ এবং ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষিত গুলশান-বারিধারা লেক দখলমুক্ত করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুজ্জামান।
এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়জুন্নেছা আক্তারসহ পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা মহানগর কার্যালয় টিম, রাজউক টিম এবং গুলশান সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসরাত জাহান উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর প্রভাবে আগামীকাল বুধবার থেকে টানা তিনদিন সারা দেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
লঘুচাপটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর এবং ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর এবং ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিন সারা দেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
উপকূলের জেলাগুলোতে বুধবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে- খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
আগামী বৃহস্পতিবার সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার দেশের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই কয়েকদিন উপকূলে ভারী বৃষ্টির আভাস রয়েছে। একইসঙ্গে বাতাসের গতি বেশি থাকতে পারে। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চল ও ঢাকা জেলায় বৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য