‘ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারও ঝামেলা করলে আওয়ামী লীগের পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘ঝামেলা-ষড়যন্ত্র না করে আত্মসমর্পণ করুন। কারণ ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।’
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যাকারী এবং শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদল অবস্থান কর্মসূচি করে। একই সময়ে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের ১ নং গেটে অবস্থান করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু।
বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নয়াপল্টনে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারও ঝামেলা করলে আওয়ামী লীগের পরিণতি শুভ হবে না। সুতরাং এখনও সময় আছে আপনারা আর ঝামেলা কইরেন না। কারণ ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।’
এছাড়া বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমণ্ডি ও হাজারীবাগ থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম। কর্মসূচি শেষে শান্তির পদযাত্রা বের করেন নেতাকর্মীরা।
পদযাত্রাটি সাইন্সল্যাব থেকে শুরু হয়ে কলাবাগান,পান্থপথ মোড়, ধানমণ্ডি ৩২ ও ২৭ হয়ে শংকর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইতিহাস বড় নির্মম, আল্লাহর বিচার বড় নির্মম। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষণস্থায়ী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার (শেখ হাসিনার) মুখ দিয়ে প্রতিশোধের জিঘাংসা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
‘আল্লাহর কী হুকুম দেখেন, সেই তাকেই পালিয়ে যেতে হলো। আবারও সেই জায়গায়, যেখানে তার গোঁড়া পোতা আছে। আমি সেজন্য আওয়ামী লীগারদের বলছি, এখনও সময় আছে আপনারা আর ঝামেলা কইরেন না। কারণ ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট চেষ্টা করেছিলেন যে আপনারা ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেবেন। কারও তো আপত্তি ছিলো না। কিন্তু ছাত্ররা তা হতে দেননি। হতে দেননি কেন? এই মানুষটাকে কেউ দেখতে চায় না।
‘খুনি হাসিনার চেহারা কেউ আর দেখতে চায় না। এক হাসিনা থেকে সারা বাংলাদেশে যত আওয়ামী লীগার ছিলো তারা ক্ষুদে হাসিনা তৈরি হয়েছে। সারাদেশে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তারা।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সৃদৃঢ় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আজকের সমাবেশের ব্যানারে লেখা আছে, এই যে গণহত্যা, হাসিনা যে খুনি ও তার দোসরদের আমরা বিচার চাই। বিচার আল্লাহ করছে, আরও করবে। আমরা বিচার চাই এই সরকার কাছে; যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের ওপরে জনগণ আস্থা রেখেছে। একটু স্বস্তি ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দেবে, একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেবে- সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে। আমরা সেটাই চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হোক। আমরা যৌক্তিক সময়ও দিতে চাই। একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। এই গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করছি। আমরা লড়াই করেছি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওরা নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে। এখন নতুন একটা ধুয়া তুলেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। সেটা কি? সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আমাদের ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) খুব সুন্দর করে বলেছেন যে বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই, এখানে সবাই বাংলাদেশী নাগরিক। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আমরা সবাই মিলে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। সেই সূত্রে যারা আজকে হিন্দু সম্প্রদায়কে আলাদা করে দেখতে চায়, আমরা তাদের সঙ্গে একমত নই। তারা সবাই এক, বাংলাদেশের নাগরিক।’
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই- যারা এখনও বাইরে আছেন, এদিক-ওদিক করছেন, তারা এসব ঝামেলা আর ষড়যন্ত্র না করে ভালোয় ভালোয় আত্মসমর্পণ করুন।
‘আমাদের নেতা-কর্মীদের কোর্টে যেভাবে নেয়া হয়েছিলো এবং তারেক রহমান সাহেবকে ওইভাবে হেলমেট পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদের বিচার করতে হবে। এদের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিরোধী আইনে।’
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে আমরা সাহায্য করব। এটা ছাত্র-জনতার সরকার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেব যতক্ষণ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।’
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:ঐক্য ধরে রাখতে পারলেই ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় সুসংহত হবে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘বিজয় তখনই সুসংহত হবে যদি এটা আমরা ধরে রাখতে পারি। সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা চলছে, সেটিকে রুখে দিতে হবে।’
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
ফ্যাসিস্ট সরকারের দীর্ঘ অপশাসন, দুঃশাসন, গুম, খুন, নির্যাতন ও প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউসে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, জাস্ট নিউজের সম্পাদক এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুল ফজল আনসারীর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও সাংবাদিক সমবায় সমিতি লিমিটেড।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে অনেকেই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। মুশফিকুল ফজল আনসারী তাদের মধ্যে অন্যতম। অনেকেই দেশে থাকতে পারেননি ফ্যাসিবাদী হাসিনার কারণে। অনেকে দেশের বাইরে থেকে সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। আমরা দেশের ভেতরে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম।’
বিএনপি মহাসচিব বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পেছনে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর অনন্য ভূমিকার উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি মুশফিকুল ফজল আনসারীকে বাংলাদেশের ‘রিয়েল হিরো’ বলে আখ্যা দেন।
এ সময় সব সাংবাদিককে পেশাদারত্ব বজায় রেখে, নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ, তৈরি ও পরিবেশনের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া ফুলেল সংবর্ধনা শেষে বক্তব্য দেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
মজলুম এই সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন নোবেল লরিয়েটকে সরকার প্রধান হিসেবে পেয়েছেন। তিনি আপাদমস্তক একজন নির্লোভ ব্যক্তি। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।’
একইসঙ্গে সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মুশফিকুল ফজল বলেন, ‘কোনো গণমাধ্যম বন্ধ হোক এটা আমরা চাই না। তবে পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী দোসররাই এখনও বেশিরভাগ মিডিয়া চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে জনগণের পক্ষের এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের দায়িত্ব দিতে হবে- যাতে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষার ভাষা প্রতিফলিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেকটা নিরাপদ স্থানে থেকেই আমরা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছি। যদিও নানাভাবে আমাদের পরিবারকে হেনস্থা করা হয়েছিলো। তবে আমাদের ত্যাগের চেয়েও দেশে অবস্থান করে যারা লড়াই করে গেছেন তাদের অবদান ভোলার নয়।
‘শেখ হাসিনা সরকার নানাভাবে আমাকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছিল। প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করাটাই নিজের ব্রত মনে করেছি।’
এ সময় সংবর্ধনার ছবি ফেসবুকে না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সময়টা আনন্দ-উৎসবের নয়। দয়া করে এসব ছবি দিয়ে শহীদ পরিবারগুলোর মনের কষ্ট বাড়িয়ে দেবেন না। এটা আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ। আল্লাহ যেন তাদের সবাইকে শহীদি মর্যাদা দান করেন।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদেরে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, সাংবাদিক নেতা কবি আবদুল হাই শিকদার, এলাহি নেওয়াজ খান সাজু, মুরসালিন নোমানী, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দৈনিক আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী ও ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাঈদ খান। সূচনা বক্তব্য দেন সাংবাদিক শফিউল আলম দোলন।
অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. কামরুল আহসান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোসলেহ উদ্দিন তারেক, সাবেক জাসাস নেতা মোশারফ হোসেন ঠাকুর, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা, সরকারি কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির নেতা ড. নেয়ামুত উল্ল্যাহ, গণঅধিকার পরিষদ নেতা তারেক রহমান, কবি রেজা উদ্দিন স্টালিনসহ বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া শিক্ষক, আইনজীবী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ নানা পেশার ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার অনেক সাংবাদিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সে সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুশফিকুল ফজল আনসারীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা।
আরও পড়ুন:জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার যে ভাষণ দিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তার এই ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিশন স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে যেসব সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছেন সরকার তা দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। এটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
‘গতকাল (বুধবার) জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সংস্কার (বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার) নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করেন।
‘তিনি (ইউনূস) জাতির উদ্দেশে এই ভাষণের মাধ্যমে তার সরকারের ভিশন ব্যাপকভাবে তুলে ধরেছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সংস্কারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আমরা আশা করছি, এসব সংস্কার খুব দ্রুত সম্পন্ন হবে। সরকার দ্রুত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন ও জনগণের সংসদ প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেবে।’
তিনি বলেন, ‘গণআন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসায় আমরা তাদের সাফল্য কামনা করছি। গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটতে পারে। আমরা আশা করি, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। তবে তা করতে হবে জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটা অনুধাবন করবে এবং তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে- যাতে জনগণ উপকৃত হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে তিনি কমিশনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নামও জনগণের সামনে তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ হলো নাটকবাজ দল। তারা রাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কালনাগিনী হয়ে ছোবল মারে আর দিনে ওঝাঁ হয়ে বিষ নামানোর নাটক করে।
বৃহস্পতিবার মাদারীপুর জেলায় নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা আসছে। এ পূজায় তাদের সহযোগিতা করতে হবে। কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা করা যাবে না। আগে আওয়ামী লীগ হিন্দুদের নিয়ে নাটক করেছে। এখন আর এদেশে আওয়ামী লীগ নেই। আমাদের কোনো ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে হবে।’
খেলাফত মজলিসের এই নেতা আগস্ট-বিপ্লবের চেতনা ধরে রাখতে সমমনা সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আগস্টের বিপ্লব মানেই মুক্তির বিপ্লব।’
মামুনুল হক পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়াটা কাপুরুষোচিত আচরণ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাবীন আহমাদ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্ডিবর্দীর পীর মাওলানা আলী আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মুফতি শারাফাত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসানাত জালালী, কার্যকরী সদস্য মাওলানা রুহুল আমিন খান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বুধবার রাত একটার পর রওনা হয়ে একটা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাসসকে বিষয়টি জানান।
শায়রুল বলেন, ‘মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দেয়া এবং এসব নির্যাতনের তথ্য সংরক্ষণে পৃথক দুটি সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বুধবার সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই দুটি সেলের নাম ‘শিক্ষার্থী নির্যাতন বিষয়ক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ সেল’ ও ‘আইনি সহায়তা সেল’।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সেল দুটি ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া বিরোধী মত ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে।’
এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও ছাত্রদল সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে।
শিক্ষার্থী নির্যাতন বিষয়ক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ সেলের সদস্যরা হলেন- আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, এ বি এম ইজাজুল কবির রুয়েল, মনজুরুল আলম রিয়াদ, খোরশেদ আলম সোহেল, আরিফুল ইসলাম, গণেশ চন্দ্র রায় ও নাহিদুজ্জামান শিপন।
আইনি সহায়তা সেলের সদস্যরা হলেন- মো. সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, এইচ এম জাহিদুল ইসলাম, মো. আল আমিন, মো. রফিকুল ইসলাম হিমেল, মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী এবং এস এম সাইফ কাদের রুবাব।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘ছাত্রলীগ ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের জন্য হলে হলে টর্চার সেল গঠন করেছিল। সেখানে প্রতিনিয়ত মুক্ত মতকে বাধাগ্রস্ত করতে ও বিরোধী মত দমনে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মাধ্যমে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। সেসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই সেল গঠন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের এসব নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে জাতির সামনে উন্মুক্ত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে ছাত্র-রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ন্যূনতম সুযোগ কেউ না পায়।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘স্বৈরাচার সরকার প্রধান পালিয়ে গেলেও তার প্রেতাত্মারা আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারে। এজন্য আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সুতী ভিএম মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বুধবার আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুসহ সব রাজবন্দির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গোপালপুর উপজেলা ও শহর বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করতে সক্ষম হয়েছি। এতে সমস্যার আংশিক সমাধান হয়েছে। আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
‘জনগণের ভোটে বিএনপি যাতে সরকার গঠন করতে পারে সেজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সরকার গঠন হলেই দেশের মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করবে। আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। সমাবেশ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
অন্যদের মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উবায়দুল হক নাসির।
এতে সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রুবেল।
সমাবেশের শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু বলেন, বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন বিনিময় কর্মসূচি ও সহায়তাসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজকর্ম এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়েও তারা আলোচনা করেছেন।
মন্তব্য