সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারসহ চার দাবিতে সারা দেশে সর্বাত্মক অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এ কর্মসূচির আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহস্পতিবার সকাল দশটা থেকে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে একই সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বুধবার রাতে ছাত্রদল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ছাত্রদলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনাবাহিনীর অফিসার হত্যা, ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডব, শাপলা চত্বরে অসংখ্য নিরীহ আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্র হত্যা, গত ১৫ বছরে গুম-খুন, রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে দানবে পরিণত করার মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নৃশংসতার হোতা পলাতক খুনি হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের যথাযথ বিচারের দাবিতে ছাত্রদল এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।’
আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সপ্তাহব্যাপী রেজিস্ট্যান্স উইকের অংশ হিসেবে আমরা সারা দেশে এই সর্বাত্মক অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার দাবি হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দ দলসহ যারা পরিকল্পিত ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় যারা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা এবং হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদ বারংবার কায়েমের চেষ্টা করেছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও বিচার নিশ্চিত করা এবং প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে আশপাশের এলাকাগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
‘টেকনিক্যাল স্টুডেন্ট মুভমেন্ট’-এর ব্যানারে ছয় দফা দাবি আদায়ে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে ফার্মগেট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত বাস, প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাসহ সব ধরনের গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি গাজী শামীমুর রহমান ইউএনবি-কে বলেন, ‘অবরোধের কারণে সড়কের দুপাশে যানবাহন আটকা পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সড়ক অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া সব ‘বিতর্কিত’ কারুশিল্প প্রশিক্ষককে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান থেকে অবিলম্বে বদলি করা, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি সেমিস্টার পূর্ণ মেয়াদের অর্থাৎ ছয় মাসের করা।
তারা আরও দাবি করেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে (দশম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনো জনবল থাকতে পারবে না।
শিক্ষক সংকট দূর করতে শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সব শূন্য পদে কারিগরি জনবল নিয়োগের দাবি জানান।
এছাড়াও উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ আসন নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
আরও পড়ুন:মেট্রো রেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।
এর আগে ডিএমটিসিএল এমডির পদে থাকা এমএএন ছিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
সোমবার প্রথমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এমএএন ছিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটি বাতিল করা হয়। আরেক অফিস আদেশে মোহাম্মদ আব্দুর রউফকে এমডির চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এম এ এন ছিদ্দিক ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত এই পদে থেকে অবসরে যাওয়ার পর তাকে ডিএমটিসিএলের এমডি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।
ডিএমটিসিএলের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আব্দুর রউফ এর আগে কোম্পানি সচিব ছিলেন। এরপর তাকে এমআরটি ৫-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালতের দায়িত্ব দেয়া হয়।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শনিবার শিপইয়ার্ডে বিস্ফোরণে দগ্ধ একজনের মৃত্যু হয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
৩৮ বছর বয়সী আহমাদুল্লাহর মৃত্যু হয় রোববার সকাল সোয়া ছয়টার দিকে, যিনি শিপইয়ার্ডের প্রজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন।
এর আগে বিস্ফোরণে দগ্ধ আটজনকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হওয়ায় এখন হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন সাতজন।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া দগ্ধ অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৮), আবুল কাশেম (৩৯), বরকাতুল্লাহ (২৩), আনোয়ার হোসেন (৪৫), খাইরুল ইসলাম (২৩), আলামিন (২৩) ও হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩৫)।
দগ্ধদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা নাজমুল ইসলাম জানান, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সীতাকুণ্ডে এস এন করপোরেশনের শিপ ইয়ার্ডে জাহাজের সিট কাটার সময় তেলের ট্যাংকারে বিস্ফোরণে এক কর্মকর্তাসহ ১২ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আটজনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়। রোববার সকালের দিকে প্রজেক্ট ম্যানেজার আহমাদুল্লাহর মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, হাসপাতালে থাকা অন্যদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ আটজন পেশেন্ট (রোগী) চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালের দিকে একজন মারা যান।
‘বাকি সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাতজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসার জন্য ভর্তি রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আগারগাঁওয়ের হাসপাতালটিতে শনিবার সকালে পরিদর্শনে যান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আট শিক্ষার্থীসহ গুরুতর আহত অন্তত ১১ জন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালটির পরিচালক কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন চার শিক্ষার্থীর অবস্থা তিনি (ইউনূস) দেখেছেন।’
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘চারজনেরই মাথায় গুলি লেগেছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।’
ওই সময় ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলমসহ হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ৩৫ প্রত্যাশী সমন্বয় পরিষদ।
এ পরিষদের ভাষ্য, অনেক দেশে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বা তারও বেশি। তাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশেও চাকরির ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে।
এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে চাকরিপ্রত্যাশীদের এ সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে বক্তাদের একজন বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। আজকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ছি না।’
চাকরিপ্রত্যাশীদের এ সমাবেশে এসে সংহতি প্রকাশ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের কোনো বয়সীমা থাকা উচিত নয়।
কেউ যাতে বয়সের কারণে বৈষ্যমের শিকার না হয়, সেটি নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম চালু করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
ওই সময় আন্দোলনকারীরা ‘এক দুই তিন চার, ৩৫ আমার অধিকার’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, ৩৫ আমার ঠিকানা’, ‘৩০ না ৩৫, ৩৫, ৩৫’, ‘বয়স না মেধা, মেধা মেধা’, ‘বয়স না যোগ্যতা, যোগ্যতা যোগ্যতা’ স্লোগান দেন।
সমাবেশে নোমান নামের এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমরা আজকে ভালো নেই। রাষ্ট্রের কর্তারা আমাদের ভালো থাকতে দেয়নি। আমরা যেহেতু ফ্যাসিবাদ দূর করতে পেরেছি, ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের এই দাবিও পূরণ করে ছাড়ব।
‘আমরা চাই অনতিবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নেয়া হোক। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আজকে আমরা ঘরে ফিরব না।’
তিনি বলেন, ‘ঘরে গিয়ে আমরা কী করব? ঘরেই তো আমরা বোঝা হয়ে আছি।’
দেশে অনেক ভারতীয় চাকরি করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘হয় এই ভারতীয়দের চাকরিচ্যুত করুন নয় আমাদের ক্রসফায়ার দিন। আমরা আর বাঁচতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলে মানুষ। আমাদের মেরুদণ্ড আছে, কিন্তু এই সমাজ আমাদের মূল্য দেয় না।
‘আগের সরকার আমাদের মূল্যায়ন করেনি। আমরা চাই নতুন সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে।’
আলী নামের আরেক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে চাকরির ন্যূনতম বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন চলছে। সরকার আমাদের বারবার আশ্বাস দিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে।
‘এই বছরের শুরুতেও যখন আমরা আন্দোলন করি, তখন আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে মামলাও, কিন্তু আমরা দমে যাইনি। আজকেও আমরা দমে যাব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা আশা করব আজকেই আমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য ইঙ্গিতপূর্ণ এবং উস্কানিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার রাজধানীর রামপুরায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিকশাচালক সাগরের পরিবারকে আর্থিক অনুদান হস্তান্তর শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। সূদ্র: বাসস
‘আমরা বিএনপি পরিবারে’র আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাহিদুল কবির, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ডা. আব্দুল আউয়াল, আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটি বিষয় আমি অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার দেশের সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের সাথে বৈঠকে বলেছেন, যুদ্ধের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা তাদের দেশের ব্যাপার, তাদের দেশের নিরাপত্তার ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগের বিষয়, যা আমাদের আশঙ্কা তৈরি করেছে। তিনি (রাজনাথ সিং) বলেছেন, রাশিয়া, ইউক্রেন, হামাস ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে তো কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না। এখানে শতাব্দীর সেরা গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। এটা আমাদের নিজেদের বিষয়।
‘আমাদের ওপর দানব চেপে বসে রক্ত চুষে খাচ্ছিল, জনগণের পকেট কেটে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে দানব সরকারের প্রধান স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এখন বাংলাদেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিদ্যমান।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। রাজনাথ সিং রাশিয়া, ইউক্রেন, ইসরাইল, হামাসের সাথে বাংলাদেশের নাম বলা ইঙ্গিতপূর্ণ এবং উস্কানিমূলক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সব ছাত্র-জনতাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দেশে এখনও নানা ধরনের দুরভিসন্ধি চলছে। যারা পরাজিত হয়েছে, তাদের আছে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা। বিগত ১৬ বছরে এই কালো টাকা তারা কামিয়েছে। এখন তারা এই কালো টাকা ব্যবহার করে নানা ষড়যন্ত্র করছে।
‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের তারা নানাভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে দেশকে দুর্যোগের মধ্যে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করছে। দেশবাসীকে এই বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। আশুলিয়ায় শ্রমিকদেরকে উস্কানি দেয়া এই অশুভ শক্তিকে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকরা মিলে প্রতিরোধ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার নাহিদ হাসানের ওপর হওয়া হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে।
থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার এ মামলা গ্রহণ করে। এর আগে বুধবার মামলার আবেদন করেন আল সাদী ভূঁইয়া।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সাহাবুদ্দিন শাহীন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ ঘটনায় আসামি করা হয়েছে শাহবাগ থানা বিএনপির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম স্বপন, শাহবাগ থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ ইউসুফ, আবুল হোসেন টাবুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে।
মামলার এজাহারে বাদী লিখেন, ‘গত মঙ্গলবার আমি ও নাহিদ হাসান বঙ্গ ইসলামীয়া সুপার মার্কেটে কেনাকেটার জন্য গেলে সেই মার্কেটের মালিকের ছেলে সৈয়দ আসিফুল ইসলাম সজলের সাথে আমাদের পূর্ব পরিচিত থাকায় আমরা মার্কেটের চতুর্থ তলায় তার অফিসে যাই। সে সময় আসামিরা হাতে লাঠিসোটা, রড, জিআই পাইপ, রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেখানে যায় এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়।
‘তখন আমরা নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আসামিরা আমাদের মাথায় ইট এবং বাঁশ দিয়ে আঘাত করে এবং লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়।’
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘এরপর তাদের হাতে থাকা অস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম করে ও আমাদের সাথে থাকা তিনটি মোবাইল ও নগদ ১৫ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাঁচটি এটিএম কার্ড, অফিস আইডি কার্ড ও বাইকের চাবি নিয়ে যায়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের ওপর হামলার খবর পেয়ে সাংবাদিক সমিতির অন্যান্য সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল থেকে আমাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য