দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগেন। আমাদের এটা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার দলটির আয়োজনে এক বিশাল সমাবেশে ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যে তারেক রহমান এই আহ্বান জানান।
বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশবাসীসহ সব রাজনৈতিক দলকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে সারাদেশে বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন ধর্ম ও দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাশে দাঁড়ান।’
দেশবাসীকে আইন হাতে তুলে না নেয়ারও আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির নামে কেউ ভাঙচুর ও সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ধরে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারলে ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া যাবে না। আর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। ভোট যাতে হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শনিবার কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ১০ নভেম্বর থেকে আগামী তিন মাস প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশের ঘোষণা দেন।
কৃষক দলকে কৃষকনির্ভর করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তারেক রহমান বলেন, কৃষক সমাবেশে কৃষকদের সমস্যা শুনতে হবে। তারপর সেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে শহীদ জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি শুরু করা হবে। আমাদের দেশে অনেক এলাকা আছে যেখানে কৃষক প্রয়োজনীয় পানি পায় না। ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। খাল খননের মাধ্যমে শহীদ জিয়া পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যেখানে একটি ফসল হতো সেখানে পানি সরবরাহ সুবিধার কারণে দুটি হয়েছিল, দুটি ফসলের জায়গায় তিনটি ফসল হয়েছিল।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২০ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে হলে কৃষির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এতো মানুষের জন্য খাদ্য আমদানি করা সম্ভব নয়। তাই মৌলিক খাদ্য দেশেই উৎপাদন করতে হবে। তাই কীভাবে কৃষিজমি বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কিছু পদক্ষেপ আছে যেগুলো নিলে কৃষিজমি বাড়ানো যাবে। আর তা করা সম্ভব একমাত্র ক্ষমতায় গেলে।
তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীদের বড় একটা অংশ কৃষির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষির প্রতি নজর দিতে হবে। আমরা প্রতিবার চেষ্টা করেছি কৃষি সমস্যার প্রতি নজর দিতে।
‘খালেদা জিয়ার সময়ে সরকার পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মওকুফ করে দিয়েছিল। ফসলের মৌসুমে বিদ্যুৎ বিল সরকার বহন করত। এসবের মধ্য দিয়ে কৃষকদের কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেন দিবসে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ সবাইকে সমবেত হওয়ার ডাক দিয়েছে দলটি। আগামীকাল রোববার রাজধানীর জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে নেতাকর্মীদের সমবেত হতে বলেছে আওয়ামী লীগ।
শনিবার আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই ডাক দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি একটি পোস্টারের ছবিও শেয়ার করা হয়েছে।
তাতে লেখা হয়েছে, ‘১০ নভেম্বর আসুন জিরো পয়েন্টে, নূর হোসেন চত্বরে। আমাদের প্রতিবাদ দেশের মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে।
‘অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপনিও অংশ নিন।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে তিনি নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস পালিত হয়। ১৯৮৭ সালের এই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকালে নূর হোসেন পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন যে কর্মসূচির অনুমতি দেয়া হবে না। কারণ আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। দলটি বাধা না মেনে কর্মসূচি পালন করতে চাইলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার অর্থবহ হবে না। আর তা হতে হবে সংসদীয় ব্যবস্থায়। সে জন্য নির্বাচন দরকার। এবার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন আমরা হাতছাড়া না করি। এই সুযোগ হারিয়ে গেলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।’
হাইকোর্ট অডিটোরিয়ামে শনিবার বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে আছেন তাদের আমরাই সমর্থন দিয়েছি। ছাত্ররা, রাজনীতিবিদরা- আমরা সবাই। এই প্রত্যাশায় সমর্থন দিয়েছি, ১৫ বছর আওয়ামী লীগ যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে তারা সেগুলো সরিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই তরুণ-যুবকদের যে চাওয়া- নতুন বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ যেন আমরা তৈরি করতে পারি।’
তরুণদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কাজ করেছে। এই সরকারকে সময় দিতে হবে। সংস্কারের জন্য অনেক কমিশন করেছে, ফ্যাসিবাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সুযোগ আমাদের হাতছাড়া করা যাবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথার কারণে ফ্যাসিবাদীরা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাচ্ছে। কোনো কোনো মিডিয়া সেটিকে আবার প্রমোট করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। অবাক হয়ে যাই, এই মিডিয়া! তারা এই সরকারের কোনো সাফল্য দেখতে পায় না। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, সরকার তিন মাসে অনেক কাজ করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনেকে জিজ্ঞাসা করেন- ‘আপনারা এত নির্বাচন-নির্বাচন করেন কেন।’ আমি বরাবরই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন মানুষ। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার বা উদ্যোগ কখনও সম্ভব হতে পারে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই সম্ভব।
“সমস্যা ওই জায়গায়, দেশে গণতন্ত্র চর্চা না হওয়ায় যে সংস্কৃতি, সেটি গড়ে উঠেছে। প্রত্যেকের মধ্যে একটা স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী চিন্তা-ভাবনা একেবারে বাসা বেঁধে আছে। আমরা দ্রুত অসহনশীল হয়ে যাই। গণতন্ত্র মানেই সহনশীলতা।”
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ কিছু কিছু জায়গায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। দুর্ভাগ্য, কিছু মিডিয়া তাদের প্রমোট করছে। এটি জনগণের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এ ধরনের প্রচারণা চালানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।’
আরও পড়ুন:শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ছাত্রলীগকে আর ফিরতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’ শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ছাত্রলীগ কেন নিষিদ্ধ হয়েছে, অনুষ্ঠানে সে ব্যাখ্যা দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে কিছু লোক প্রশ্ন তুলেছেন, সমালোচনাও করেছেন।
তিনি ছাত্রলীগের গত ১২ বছরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম তুলে ধরে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ওই সময় শফিকুল আলম বলেন, ‘এই গবেষণাই প্রমাণ করে ছাত্রলীগ কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কতটা উগ্র ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগকে আর ফিরতে দেয়া যাবে না। ক্যাম্পাস সন্ত্রাসীমুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য দরকার সুস্থ ধারার কার্যক্রম পরিচালিত করা।’
শফিকুল বলেন, নতুন করে রাষ্ট্র মেরামত করতে হলে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ৩১ দফা নিয়ে সেমিনার করবে বিএনপি।
আগামী ২৩ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে এ সেমিনার হচ্ছে।
সেমিনারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যরাসহ
যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচন বর্জন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনরা অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি সেমিনারের বিষয়ে শুনেছি।’
যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে গত বছরের ১৩ জুলাই সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা’ ঘোষণা করে বিএনপি।
গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর প্রতি বিএনপির প্রতিশ্রুতি ছিল এই ৩১ দফা।
এর আগে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা করেন।
তারও আগে ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন করেন, তবে তার রাজনৈতিক ঘোষণাটি মূলত আসে আগেই ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে খালেদা জিয়া জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তার দল জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা নিরসনে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক ক্ষমতা দূর করতে সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিএনপি।’
বিএনপির ৩১ দফায় এসব সংস্কারের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের সমালোচনা করে দেশে বৈষম্যহীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিুর রহমান।
শুক্রবার সকালে নীলফামারীর বড় মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছরে দেশবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। সব ধরনের, সব বর্ণের মানুষ তাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
‘তারা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলো সিলগালা করে দিয়েছিল। ঘরে বসেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা শান্তি পায়নি। ঘর থেকে তুলে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধীর মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে বিচারের নামে খুন করা হয়েছে।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পরই ঝাল মিটিয়েছিল আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। তারা তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭জন চৌকস, সাহসী ও দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। হত্যা করেছিল নির্মমভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের।’
তিনি বলেন, ‘রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘাতকদের পিলখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সুষ্টি করা হয়েছিল। ঘাতকদের পরিচয় জাতিকে জানতে দেয়া হয়নি। সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকারীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।’
জামায়াত আমির বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামী। মিথ্যা মামলায় তাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে হত্যার অভিযোগ করেন ডা. শফিকুর।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের শাসনামলে ১৯৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। যুদ্ধপারাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যে মামলা হয়েছিল, সেখানে একটি মামলাও তাদের বিরুদ্ধে ছিল না।
‘এছাড়া শেখ মুজিব সরকার সে সময় যাচাই-বাচাই করে ১৯৫ জনের যে তালিকা করেছিল তাদের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের সীমানার ভেতরের কোনো নাগরিক ছিল না।’
ডা. শফিকুর বলেন, ‘৫ আগস্ট যখন পরিবর্তন এলো আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীকে অনুরোধ করেছি ধৈর্য্য ধরার জন্য। দেশবাসী আমাদের কথা শুনেছে।
‘আওয়ামী লীগ নির্দয় হতে পারে, খুনি হতে পারে। কিন্তু দেশের ১৮ কোটি মানুষ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক।’
জামায়াত আমির বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন পালাবেন না। তিনি চলে গেলেন তার প্রিয় দেশে। তারা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা তাদের সম্মান করি। আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে অনুরোধ করব- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫০টির অধিক মামলা হয়েছে। আমাদের বিচারালয় যখন তাকে চাইবে তখন তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেবো না। আমরা ঘুষ খাবো না, কাউকে খেতেও দেবো না। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই- যে সমাজে লেখাপড়া করার পর ‘আমরা শিক্ষিত বেকার’ শব্দটি আমাদের কানে আসবে না।
‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সমাজের উন্নয়নে নারীরা অবদান রাখতে পারেন। নারীরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ও মর্যাদার সঙ্গে জাতি গঠনে অবদান রাখবেন।’
নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি আন্তাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল প্রমুখ।
আরও পড়ুন:‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভা করেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এটি কাকরাইল মোড়, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, শোভাযাত্রায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে। এর আগে নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকার অলিগলিতে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও এসেছেন নেতা-কর্মীরা। আর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন নেতা-কর্মীরা।
কামান, ধানক্ষেত, কৃষক ও কমান্ডো সাজে নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রা মাতিয়ে রাখেন। এছাড়া ঢাক-ঢোল, ট্রাক নিয়ে ও বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট পরে তারা শোভাযাত্রাকে বর্ণময় করে তোলেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শোভাযাত্রায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য