ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও বেগম সেলিমা রহমান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তথা আপামর জনসাধারণের উত্থাপিত এক দফা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করছে। জাতির এই চরম ক্রান্তিলগ্নে দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্রপ্রিয় আপামর জনসাধারণ এবং বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রাজপথে নেমে এসে ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি। শত শত শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ইনশাআল্লাহ ছাত্র-জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে ছাত্রদের এই যৌক্তিক, ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। আজ আমরা তাদের নতুন ঘোষণাকে সমর্থন জানাচ্ছি এবং এই ভয়াবহ দানবীয় খুনি শাসকগোষ্ঠীর পতনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ আড়াল করতেই তথাকথিত তৃতীয় পক্ষ আবিষ্কারের জন্য সরকারের বিরামহীন প্রচেষ্টা চলছে, যা জনসাধারণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘সরকার প্রথম থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবি অস্বীকার করে দমন করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশকে ধ্বংস ও নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেছে। ছাত্র আন্দোলন বলপূর্বক দমন করতে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে চলছে নজিরবিহীন তৎপরতা। দেশে আজ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
‘জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। চারদিকে শুধু অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। এর সম্পূর্ণ দায় রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকারের।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে গণহত্যা, নৈরাজ্য, ধ্বংস, দমন, নিপীড়ন দেখে সারা বিশ্ব স্তম্ভিত। সরকার ছাত্র, যুবক, শিশু, নারীসহ জনতাকে নির্বিচারে নির্দয়ভাবে হত্যা করে মানবতাকে হত্যা করেছে। সরকারের মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয়েছে। দেশ-বিদেশে সরকার ধিকৃত ও ঘৃণীত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকল জনপদ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ বিদ্রোহে মুখরিত। সমগ্র দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শ্রমজীবী মানুষসহ ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে শামিল হয়ে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছে। গড়ে উঠেছে অভাবনীয় জাতীয় ঐক্য, জনগণের ঐক্য। সমগ্র দেশ আজ গণহত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে একাট্টা। গ্রাম ও শহরের ঘরে ঘরে আর্তনাদের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে আজ এক গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছে। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাঈদ, মুগ্ধসহ শত শত নিরীহ ছাত্র-শিশু ও জনতার রক্তে অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর হাত রঞ্জিত হয়েছে। জনগণ এই ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে।
‘ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, মা বোন, পিতা-মাতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক আজ এক কাতারে। দলমত, বয়স, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ ফুঁসে উঠেছে ক্রোধে। দ্রোহের মিছিলে শরিক হচ্ছে সব স্তরের, সব শ্রেণির, সব বয়সের মানুষ। আমি তাদের অভিবাদন জানাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস করেছে, নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। এখন ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলনকে নির্মম, নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে শত শত তাজা প্রাণের রক্ত ঝরিয়েছে। শত শত মায়ের বুক খালি করেছে, শত সন্তান পিতাকে হারিয়েছে। এমনকি চার বছরের শিশুও রেহাই পায়নি।
‘গণহত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের আন্দোলনকে দমনে ব্যর্থ হয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ছাত্র-জনতার ঐক্যের মধ্যদিয়ে যে আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, তাকে স্তব্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই।’
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সংকট সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজিএমইএ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।
বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা বিএনপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী গার্মেন্ট শিল্পে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সব জায়গায় তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির স্থানীয় নেতাসহ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সার্বক্ষণিক আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। কোথাও কোথাও তারা পাহারা দিচ্ছেন।’
তারা বলেন, ‘বিএনপির স্থানীয় নেতারা আমাদের জানিয়েছেন যে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা গার্মেন্টস শিল্প রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং গার্মেন্টস শিল্পের নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন।
এ সময় বিজিএমইএ নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সংকট সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিজিএমইর সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহ-সভাপতি রকিবুল আলম, পরিচালক শোভন ইসলাম, নুরুল ইসলাম ও আবসার হোসেন, সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, কাজী মুনির, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন, আবুল কালাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নওগাঁ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সোমবার বিকেল ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক।
ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই আব্দুল মালেক অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি স্ত্রী শাহানাজ মালেক ও মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
আব্দুল মালেকের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার চন্ডিপুর। তার স্ত্রী শাহানাজ মালেক জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
জানা যায়, আব্দুল মালেক বেশ কিছুদিন থেকে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার মারা যান তিনি।
জনদুর্ভোগ এড়াতে সাংগঠনিক সফরের সময় দল ও সহযোগী সব সংগঠনের নেতাদের গাড়িবহর পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। বলা হয়েছে, এসব মোটর বহর সাধারণ মানুষের যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে ভয়ানক বিঘ্ন ঘটায়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিএনপি এবং দলের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দলের অধস্তন কোনো শাখায় সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল, গাড়ি বা অন্য যানবাহনসহ সব ধরনের গাড়ির বহর পরিহার করতে হবে।’
জেষ্ঠ নেতাদের জন্য মোটর শোভাযাত্রা ব্যবহারের নিন্দা জানানো হয়েছে। কারণ এটি তীব্র যানজট সৃষ্টি করে। এছাড়াও এটি সাংগঠনিক সভা বা দলীয় কর্মীদের সভা বা এমনকি জনসমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য মারাত্মক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
বিএনপি যেহেতু জনবান্ধব রাজনৈতিক দল, সেহেতু মোটরসাইকেল বা অন্য যানবাহন নিয়ে মোটরসাইকেল বহর এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ এগুলো জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন থেকে বিরত থাকুন
বিএনপি নেতা-কর্মীদের নিজস্ব ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শনকে অপ্রীতিকর আখ্যা দিয়ে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়েছে।
দলের কিছু অতিউৎসাহী নেতা তাদের ছবি দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়াকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দলের শৃঙ্খলাপরিপন্থী বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাবের সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আধিপত্যবাদের রাজনীতি করে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি রাজনীতি ও আচরণের কারণগুলো তারা ভালোভাবেই বোঝে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে সোমবার শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল। তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে- শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে।
‘আমার মতে এর প্রধান কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের ধারাবাহিক আধিপত্যের রাজনীতি। এই দৃষ্টিভঙ্গি ভারত বা তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা উচিত।’
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং শান্তি বজায় রাখতে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছর পর দেশ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। এই বিপ্লবে বহু ছাত্রের পাশাপাশি নারী ও শিশু তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলনে নারীর অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনে অর্জিত স্বাধীনতা সুসংহত করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশে আইনের শাসন ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার শপথ নিয়েছি।
‘একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করছি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দুবার সাক্ষাৎ করেছি। সংস্কার প্রস্তাবগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং একটি সময়সীমা নির্ধারণের অনুরোধ করেছি, যাতে সুনির্দিষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়।’
আরও পড়ুন:সিলেট মহানগরের ৭ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদসহ দুজনকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত অপরজন হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রুমেল আহমদ। তাদের বাসা বনকলাপাড়ার লাল-সবুজ আবাসিক এলাকায়।
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের বনকলাপাড়ায় একটি গলিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত মনজুর আহমদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা মনজুরের হাত ও পায়ের রগ কেটে ফেলেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আহত রুমেল আহমদ দাবি করেন, গত সিটি নির্বাচনের সময়ের বিরোধের জের ধরে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কিছু নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা করেছে।
তবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ সোমবার সকালে বলেন, ‘মনজুর আহমদ ও রুমেল আহমদের ওপর বনকলাপাড়ার ভেতরেই তাদের বাসার সামান্য দূরে হামলা হয়েছে। মনজুর গুরুতর আহত। তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ওসি মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘হামলার খবর শুনেছি। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে স্ক্র্যাপবাহী একটি ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সেনা সদস্যদের হাতে আটকের পর দলীয় পদ হারালেন সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. ফজলুল করিম চৌধুরী।
শনিবার যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দফতর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. ফজলুল করিম চৌধুরীকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
এর আগে চট্টগ্রামে আমদানি করা লোহার স্ক্র্যাপ বহনকারী ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ফজলুল করিম চৌধুরীসহ দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে সেনাবাহিনী। শনিবার দুপুরে হালিশহর এলাকার ওয়াপদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর থেকে খালাস করে পোর্ট কানেক্টিং রোড দিয়ে আমদানি করা লোহার স্ক্র্যাপ নিয়ে যাচ্ছিল আবুল খায়ের কোম্পানির (একেএস) একটি ট্রাক। চলন্ত ট্রাকের পেছনে উঠে কিছু পথশিশু ও কিশোর সেখান থেকে লোহার স্ক্র্যাপ রাস্তায় ফেলছিল।
চালক ও হেলপার বিষয়টি খেয়াল করলে ওয়াপদা এলাকায় থামেন তারা। ট্রাক থেকে নেমে তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সেখানে হাজির হন ফজলুল করিম। তিনি ট্রাকচালককে আবুল খায়েরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এসে তার সঙ্গে কথা বলতে চাপ দেন। এ সময় তিনি চাঁদা দাবি করেন।
কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সেখানে হালিশহর থানার টহল পুলিশ আসে। পুলিশের সঙ্গেও বাগবিতণ্ডায় জড়ান ফজলুল। এ অবস্থায় পুলিশের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়। সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে ফজলুলকে আটক করে। পরে তাকেসহ দুজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুজনকে আটক করে থানায় দিয়ে গেছেন। আমরা রাজনৈতিক পরিচয় জানি না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
শুক্রবার রাতে শহরের পুরান বাজারে বউবাজার এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি মীমাংসার কথা থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ভাঙচুর করা হয় দোকানপাট।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ৩৫ জন চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জরুরি বিভাগ জানায়।
আহতদের দাবি, চাঁদাবাজিতে বাধা দেয়ায় স্থানীয় বিএনপি দু’শতাধিক মানুষ লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা অনেককে বেদম পিটিয়ে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে।
সংঘর্ষে আহত চাঁদপুর পৌর ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলম খান বলেন, ‘স্থানীয় রব মিজি ও তার ছেলে রানা মিজি এক নিরীহ ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা চেয়ে তাকে মারধর করেন। এ সময় এলাকার এক যুবক বাধা দিতে গেলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় এলাকার গণ্যমান্যরা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।
‘ইতোমধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রব মিজি ও তার সহযোগীরা অস্ত্র নিয়ে আমাদের এলাকার দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় বাধা দিতে গেলে ৫০ জনকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করা হয়।’
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন রনি ইউএনবিকে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুরানবাজারে দুপক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য