× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
57 killed in violence in 11 districts of the country
google_news print-icon
অসহযোগ

সহিংসতায় দেশের ১৯ জেলায় ১৪ পুলিশসহ নিহত ৯৬

সহিংসতায়-দেশের-১৯-জেলায়-১৪-পুলিশসহ-নিহত-৯৬
কিশোরগঞ্জে সহিংসতার সময় সড়কে পুড়তে থাকা টায়ার। ছবি: নিউজবাংলা
নিউজবাংলার প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য এবং বার্তা সংস্থা ইউএনবির খবর অনুযায়ী, ঢাকায় ১৪জন, সিরাজগঞ্জে ২৩ জন, কিশোরগঞ্জে পাঁচজন, সিলেটে পাঁচজন, পাবনায় তিনজন, নরসিংদীতে ছয়জন, ফেনীতে আটজন, রংপুরে চারজন, মুন্সীগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় চারজন, বগুড়ায় দুজন, শেরপুরে দুজন, কুমিল্লায় তিনজন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, জয়পুরহাট, ভোলা, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার ও বরিশালে একজন করে নিহত হয়েছেন।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে রোববার দেশের ১৯ জেলায় সহিংসতায় ১৪ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। হামলা, সংঘর্ষ, গুলিসহ সহিংসতায় সারাদেশে আহত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।

নিউজবাংলার প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য এবং বার্তা সংস্থা ইউএনবির খবর অনুযায়ী, ঢাকায় ১৪জন, সিরাজগঞ্জে ২৩ জন, কিশোরগঞ্জে পাঁচজন, সিলেটে পাঁচজন, পাবনায় তিনজন, নরসিংদীতে ছয়জন, ফেনীতে আটজন, রংপুরে চারজন, মুন্সীগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় চারজন, বগুড়ায় দুজন, শেরপুরে দুজন, কুমিল্লায় তিনজন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, জয়পুরহাট, ভোলা, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার ও বরিশালে একজন করে নিহত হয়েছেন।

ঢাকা

ঢাকায় ধানমন্ডি, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সাভারের আশুলিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নয়জনের মরদেহ আনা হয়েছে। তাদের একজন হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএ দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও এবং অপরজন তাহিদুল ইসলাম।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, হাসপাতালে আনার পর বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে আব্দুল্লাহ ও ৫টা ২৫ মিনিটে তাহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

আব্দুল্লাহ জিগাতলা এলাকায় এবং তাহিদুল ফার্মগেটে গুলিবিদ্ধ হন।

মিটফোর্ড হাসপাতালের আনসার কমান্ডার আব্দুল আহাদ জানান, দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তান এলাকা থেকে রেজাউর রহমান নামে এক যুবককে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়। রেজাউরের বুকে গুলি লেগেছে। তার বাড়ি কুমিল্লায়।

উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নিহত হন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুর রহমান জানান, ওই হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। কেরানীগঞ্জে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় রোববার দুপুরে হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান এবং সিরাজগঞ্জে সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা এনায়েতপুর হাট থেকে কেজির মোড়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে এবং ছড়রা গুলি ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হন।

ওই খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় এবং প্রথমে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে একেক করে তারা ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে।

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, ‘সন্ত্রাসী হামলায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৩ জন এবং কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার একজন পুলিশ সদস্যসহ এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।’

বার্তা সংস্থা ইউএনবি জেলায় আরও ১৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছে, তবে কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সংবাদমাধ্যমটি।

কিশোরগঞ্জ

জেলার বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় নারীসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সৈয়দ টিটুর বাসায় দেয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুজন।

এ ছাড়া এক যুবলীগ নেতাকে হাত-পা বেধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারী একজন স্ট্রোক করে এবং বাজিতপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে শহরের পুরান থানা মোড় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নি সংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুর করেন। পরে অফিসের সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন তারা।

ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র ‍যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা পাল্টা হামলা চালান। দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কিছুটা পিছু হটেন। ওই সময় আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের পাশেই সৈয়দ টিটুর ছয় তলা বাসভবনের নিচ তলায় আগুন ধরিয়ে দেন।

পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনেও আগুন দেয় তারা। ভাঙচুর করা হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসাও।

আগুন সৈয়দ টিটুর বাসার তিন তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সৈয়দ টিটুসহ তার বাসার ভাড়াটিয়ারা বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

রাস্তায় ব্যারিকেড থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কিছুটা দেরিতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তারা বাসার গেট ভেঙে আগুনে পোড়া এক নারীসহ দুজনের লাশ এবং আহতদের উদ্ধার করেন।

কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. একরাম উল্লাহ জানান, এ হাসপাতালে আগুনে পোড়া অঞ্জনা (৩০) নামে এক নারীসহ দুজনের লাশ আনা হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ২০ জনকে।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন জানান, এ হাসপাতালে ৩০ বছর বয়সী একজনের মরদেহ আনা হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ৬৫ জনকে। গুরুতর আহত দুজনকে ময়মনসিংহে রেফার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের অভিযোগ, সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মবিনকে (৩০) হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করেছেন আন্দোলনকারীরা। তার মরদেহটি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।

কিশোরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন ফরহাদুল ইসলাম রুবেল (৩২) নামের এক আন্দোলনকারী। তিনি তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে।

চর শোলাকিয়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে দেড় শর মতো আহত লোকজনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা শহরের পুরান থানা মোড় ও কাচারীবাজার বটতলা মোড়ের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে।

বেলা ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে।

এদিকে কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা এলাকায় ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী কামরুল হাসানের বাসায়ও ভাঙচুর হয়েছে। এ ছাড়া জেলার বাজিতপুরে আন্দোলনকারীরা দুটি বাস ও সাতটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং গণনাট্য সংসদের অফিসে আগুন দেয়।

ওই সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুদ্দুস (৩২) নামের একজন স্থানীয় একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বাড়ি বাজিতপুরের দিঘিরপাড় এলাকায়।

সিলেট

জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিজিবি ও পুলিশের আলাদা সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় তিনজন ও উপজেলা সদরের চৌমুহনীতে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন। এতে আহত হয়েছেন অনেকে।

চৌমুহনীতে সংঘর্ষে আহত দুজনকে রোববার সন্ধ্যায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক ।

এই দুজন হলেন ঢাকা দক্ষিণ দত্তরাইল গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন (২৪), পৌর এলাকার ঘোষগাঁও গ্রামের গৌছ উদ্দিন (৪০)।

সিলেটের ওসমানী মেডিক্যালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, তাদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

এর আগে উপজেলার ঢাকা দক্ষিণে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও তিনজন মারা যান। রোববার দুপুর ২টা থেকে এ সংঘর্ষ বাধে।

ঢাকা দক্ষিণে সংঘর্ষে নিহতরা হলেন উপজেলার বারকুট গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩), উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮) ও ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্ত গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম (২২)। তিনি ঢাকা দক্ষিণ বাজারের তানজিনা সুজের সত্বাধিকারী।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদর্শন সেন সংঘর্ষে তাজ উদ্দিন ও সানি আহমদের মৃত্যুর তথ্য মিশ্চিত করেছেন, তবে তাদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। আর নজমুলের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বাবা তৈয়ব আলী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থী ও জনতা ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সংঘর্ষে পুলিশ-বিজিবি সদস্য ও বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা খবর পাওয়া গেছে।

নিহত তাজ উদ্দিনের আত্মীয় জাবেদ মাহমুদ জানান, বেলা দুইটার দিকে ঢাকা দক্ষিণ রোডের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

পাবনা

পাবনা শহরে গুলিতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। শহরের ট্রাফিক মোড়ে বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, পাবনার ট্রাফিক মোড়ে দুপুরে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ওই সময় অতর্কিত এসে কে বা কারা গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অপর দুজনকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত বলে জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ট্রাফিক মোড়ে পাবনা সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদের অতর্কিত গুলিতে অন্তত ১০ বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হন, যাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়।

তারা আরও জানান, গুলির ঘটনার পর বিক্ষোভকারীরা আবু সাঈদকে ধাওয়া দিলে তিনি দুটি গাড়ি রেখে চলে যান। এর মধ্যে একটি জিপে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। অপর গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়।

নরসিংদী

জেলা সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এর জের ধরে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন উত্তেজিত জনতা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা ইউএনবিকে জানান, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের করলে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা তাদের প্রতিহত করতে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে চারজন গুলিবিদ্ধ হন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সুমন মিয়া, সোহেব ও আল আমিনকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল এবং মীর জাহাঙ্গীরকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়।

বার্তা সংস্থাটি আরও জানায়, গুলি উপেক্ষা করেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয় চার থেকে পাঁচ হাজার বিক্ষোভাকারী। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দৌড়ে পালাতে শুরু করলে ধাওয়া করেন আন্দোলনকারীরা।

ওই সময় ছয়জন মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেন। উত্তেজিত জনতা মসজিদ থেকে তাদের বের করে এনে মসজিদের সামনেই পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন, নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ওরফে নাতি মনির, শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল, মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের।

মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ছয়জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

নরসিংদী শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় চত্বরে রোববার সকাল থেকেই ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে শুরু করেন। দুপুর ১টার দিকে তারা জেলখানা মোড় থেকে নরসিংদী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন।

ফেনী

জেলায় সহিংসতায় আটজন নিহত ও ২৫ জন আহত হন।

সকাল থেকে জেলার মহিপাল এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের সংযোগস্থল মহিপাল সিক্স লেইন ফ্লাইওভার এলাকায় অবস্থান করে মিছিল করেন।

দুপুর দুইটার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় গুলিতে আটজন নিহত হন বলে জানান ফেনী সদর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল।

তিনি জানান, নিহত সবার বয়স ১৭ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হাসপাতালের আরএমও গুলিতে আটজন নিহত হয়েছেন বলে জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেল তিনটা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মরদেহগুলো নিয়ে আসার পর কিছু সময় সেখানে পড়ে ছিল। পরে খবর পেয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে থাকা মরদেহ নিজেরা শনাক্ত করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই জোরপূর্বক নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। ফলে হাসপাতালে এসব মৃত ব্যক্তিদের কোনা হিসাব থাকল না।

সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ এভাবে বিনা ময়নাতদন্তে স্বজনদের দিয়ে দেয়ার কোনা নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজি মুঠোফোনে বলেন, ‘মরদেহগুলো মর্গে নিতে বাধা দেয় কিছু লোক। তারা হাসপাতালের মর্গেও হামলা করার চেষ্টা করে।

‘এ সময় হাসপাতালের পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা পুলিশরাও চলে যায়। নিরুপায় হয়ে তারা মরদেহগুলো স্বজনদের দিতে বাধ্য হয়েছেন।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মরদেহ নিতে আসা স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, নিহত লোকজন হলেন ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদ, ফেনী সদর উপজেলার কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা দোকান কর্মচারী শিহাব উদ্দিন, সোনাগাজী উপজেলার মান্দারী গ্রামের বাসিন্দা পথচারী সাকিব, ফেনীর ফাজিলপুর এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ, ফেনী সদর পৌরসভার গাজী ক্রস রোডের বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সাইদুল হক। অপর দুজনের নাম জানা যায়নি।

হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে গুলিতে ও ইট-পাটকেলে আহত ২৫ জনকে ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত আরও কিছু লোকজন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিকেলে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের একাধিকবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের অবস্থা থমথমে দেখা যায়।

পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল থাকলেও তাদের কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বা অন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারবার কল দিয়েও কথা বলা যায়নি।

রংপুর

জেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ মর্গের দায়িত্বে থাকা আবদুল জলিল দুজন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও দুজন নিহত হওয়ার তথ্য জানান।

মুন্সীগঞ্জ

জেলায় আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে টানা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে রোববার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মুন্সীগঞ্জ শহরের থানারপুল চত্বর। এতে তিনজনের প্রাণহানি হয়।

সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা হয় অর্ধশত দোকানপাট ও বিএনপির কার্যালয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় পাঁচটি মোটরবাইক, একটি কাভার্ডভ্যান ও একটি পিকআপ ভ্যান।

তিনজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও সিরাজদীখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে।
নিহত তিনজনই শ্রমিক বলে জানা গেছে।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল দুজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

জেলার সিরাজদীখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার একেএম তাইফুল হক একজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, নিহতের নাম মো. সজল। তিনি আলী আকবরের ছেলে। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়।

এ ব্যাপারে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান জানান, উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায় পুলিশ। ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়েন বাহিনীর সদস্যরা।

মাগুরা

মাগুরায় অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দুই শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন।

তারা হলো সদরের বরণাতৈল বিশ্বাসপাড়ার প্রয়াত ময়েন উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বী (২৬), যিনি জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। অপর তিনজন হলেন শ্রীপুরের নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে ফরহাদ হোসেন (২২) ,মহম্মদপুর সদরের ইউনুস আলীর ছেলে আহাদ আলী বিশ্বাস (১৯) ও মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের কানু মোল্যার ছেলে সুমন শেখ (১৭) ।

নিহত ফরহাদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থী ও আহাদ আলী বিশ্বাস মহম্মদপুর আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এ সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে।

সকাল থেকে মাগুরা শহরের নতুন বাজার, কেশব মোড়, চৌরঙ্গী মোড়, ঢাকা রোড়,পারনান্দুয়ালী ব্রিজ ও ভায়না এলাকায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।

সকাল ৯টায় মাগুরা-ঢাকা মহাসড়কের পারনান্দুয়ালী ব্যাপারীপাড়া জামে মসজিদ এলাকায় ছাত্রদের কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। ওই সময় পারনান্দুয়ালী এলাকার ৫ শতাধিক মানুষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমবেত হন।

বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ওই এলাকায় পৌঁছে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। মুহূর্তের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে যায় চারদিকে।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে টিয়ার শেল ও কয়েকটি গুলি ছোড়ে। ওই সময় পুলিশের গুলিতে মেহেদী হাসান রাব্বী (২৬) আহত হন। পরে গুলিবিদ্ধ রাব্বীকে মাগুরা সদর হাসপাতালে আনলে কতর্ব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুপুরে পারনান্দুয়ালী এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।

সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের গুলিতে ফরহাদ (২২) গুলিবিদ্ধ হন। পরে আহত অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে আনলে তিনি অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

অন্যদিকে মহম্মদপুর উপজেলায় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলাকালে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তারা মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের মৃত্যু হয়।

বগুড়া

জেলায় অসহযোগ আন্দোলনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়া শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থান অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। ওই সময় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মাঝে।

আন্দোলনকারীরা তিন থানায় হামলা, টিঅ্যান্ডটি, পিবিআই, সদর ভূমি অফিস, আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

এ ছাড়া বিটাক বগুড়া কার্যালয়ের ফটকসহ কম্পিউটার হিউ মেডিকেল কন্ট্রোল রুমের দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন।

ছাত্রদের এই আন্দোলনে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের রাজপথে দেখা যায়। তারাও ছাত্রদের সাথে বিক্ষোভে যোগ দেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত দুজনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মুনিরুল ইসলাম (২২)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়।

মুনিরুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অপর জনের পরিচয় (৬০) এখনও পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া সংঘর্ষে আহত হয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামসুন্নাহার জানান, মুনিরুলের মাথায় গুলি লেগেছিল।

শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা সাজিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, এখানে যারা আহত অবস্থায় এসেছেন তাদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ। তাদের কমপক্ষে ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর থানায় হামলা করা হয়েছে। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করা হয়। জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাতেও হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা

পুলিশ সদরদপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, সন্ত্রাসী হামলায় কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি জেলাটিতে আরও দুজন নিহত হয়েছেন জানালেও কীভাবে তারা নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।

লক্ষ্মীপুর

জেলা সদরের উত্তর স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে বিক্ষোভকারী ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হন।

আহত লোকজনকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুরুতে একজন প্রাণ হারান। হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয় তিনজনকে।

অন্যদিকে জেলার বাগবাড়ি ও ‍ঝুমুর এলাকায় দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হন। গুলিতে নিহত চারজনের নাম জানা গেছে, যারা হলেন সাব্বির, মিরাজ, কাউসার ও আফনান।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বাকি চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানা গেলেও এ নিয়ে কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর বাইরে শেরপুরে দুজন, কুমিল্লায় তিনজন, জয়পুরহাট, ভোলা, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার ও বরিশালে একজন করে নিহত হওয়ার খবর জানায় ইউএনবি, তবে তারা কীভাবে নিহত হন, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি বার্তা সংস্থাটি।

আরও পড়ুন:
সিলেটের গোলাপগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অনেকে
রাজধানীসহ ১১ জেলায় নিহত কমপক্ষে ৩২, আহত শতাধিক
ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়েছে ৮০ আহতকে, এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু
নাশকতাকারীদের শক্ত হাতে দমনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Condemn not in cell before finalization of death sentence Appeal hearing on October 28

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে কনডেম সেলে নয় : আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে কনডেম সেলে নয় : আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না, হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

রোববার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে ২০২৪ সালের ১৫ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না, এ রায় স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে ২০২৪ সালের ১৩ মে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার ধাপগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে সারা দেশে যত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে, তাদের দুই বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সাধারণ সেলে রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে, বিশেষ কারণে (স্বাস্থ্যগত কারণ, সংক্রামক রোগ) কোনো ব্যক্তিকে নির্জন কারাকক্ষে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারোয়ার পায়েল, নাসিম ইসলাম রাজু।

আইনজীবীরা বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়।

২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয় সেদিন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

এর আগে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনকারীরা হলেন– চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Sheikh Hasina Asaduzzaman Khan Kamals death sentence appeal

শেখ হাসিনা-আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন

শেখ হাসিনা-আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) চেয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ আবেদন জানান তিনি। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয় আদালতের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালকে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানুষকে হত্যার জন্য যদি একবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে ১৪০০ মানুষকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু আইনে এটা সম্ভব নয়। এজন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমরা তার চরম দণ্ড দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। যদি তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয় তাহলে ন্যায়বিচার পাবে দেশের জনগণ।

পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে অপরাধ সংঘটনের পর পালিয়ে গেলেও ভারত থেকে ক্রমাগত আন্দোলনকারীদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যারা বিচার চেয়ে মামলা করেছেন তাদেরও নির্মূলের কথা বলেছেন। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে এত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার পরও তার মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। তিনি একজন হার্ডনট ক্রিমিনালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সুতরাং এই ট্রাইবুনালের মামলায় তিনি যেহেতু সব অপরাধীদের প্রাণভোমরা ছিলেন, তাই তাকে আইনানুযায়ী চরম দণ্ড দেওয়া শ্রেয়। তাকে যদি চরম দণ্ড না দেওয়া হয় এটা অবিচার করা হবে।

আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্যাং অব ফোরে’র সদস্য ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার বাসায় বসে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ড্রোন ওড়ানোসহ হেলিকপ্টার থেকে মারণাস্ত্র ছোড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি নিজে গ্রাউন্ডে গিয়ে গিয়ে দেখেছেন সঠিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে কি না। তাকে ভিডিও দেখানো হয়েছে। তিনি কমান্ড স্ট্রাকচারে দ্বিতীয় পজিশনে ছিলেন। এ কারণে তার ব্যাপারেও চরম দণ্ড চেয়েছি ট্রাইব্যুনালে।

তবে রাজসাক্ষী হয়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন যেহেতু আইন অনুযায়ী আদালতকে তথ্য দিয়ে বা সত্য উদঘাটনে সাহায্য করেছেন তার ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তারা হয়তো পরিবারের আলোর প্রদীপ ছিলেন। ভবিষ্যতে পরিবারের দায়িত্ব নিতেন তারা। সুতরাং এসব পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য আসামিদের সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে আদালতের কাছে আমরা আদেশ চেয়েছি।

গতকাল বুধবার এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে চতুর্থ দিনের মতো প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক চলে। এদিন নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। এর আগের দিন মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো দিনভর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তিনি। ওই দিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয়। একইসঙ্গে এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষীর বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়।

তার আগের দিন ১৩ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। ওই দিন বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যা এ মামলার বিচারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানায় প্রসিকিউশন। ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছিল। ওই দিন দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলের ইতিহাস তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। একইসঙ্গে গুম-খুনসহ নারকীয় সব ঘটনার বর্ণনা দেন।

গত ৮ অক্টোবর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মোট ২৮ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Police will be arrested in court within 24 hours Chief Prosecutor

গ্রেপ্তার করবে পুলিশ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে: চিফ প্রসিকিউটর

গ্রেপ্তার করবে পুলিশ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে: চিফ প্রসিকিউটর

কোন জায়গাকে কারাগার ঘোষণা করা হচ্ছে, সেটা তাদের বিবেচ্য বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আসামিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন। ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকেরা।
এ সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত জানি না যে আদৌ কোনো সাবজেল ঘোষণা হয়েছে কি না। কোনো ডকুমেন্ট আমার হাতে নেই, যেহেতু আপনারা বলছেন। যদি সরকার কোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে সাবজেল ডিক্লেয়ার (উপকারাগার ঘোষণা) করে, সরকারের সেই ক্ষমতা আছে। কোন জায়গাটাকে তারা জেল ঘোষণা করবেন, প্রিজন অথরিটির আওতায় নিয়ে আসবেন, সেটা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। সুতরাং এটা আমাদের কোনো কনসার্ন হওয়ার কোনো বিষয় নয়।’
সরাসরি কাউকে জেলে নেওয়ার বিধান নেই উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইন হচ্ছে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনতে হবে। আদালতে আনার পর আদালত যদি ফারদার অর্ডার (পরবর্তী আদেশ) দিয়ে বলেন—কারাগারে পাঠান, তখন কারাগার বলতে সেটা কেন্দ্রীয় কারাগারও হতে পারে, সেটা জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যেও হতে পারে, এমপি হোস্টেল হতে পারে বা অন্য কোনো জায়গাকেও যদি সরকার কারাগার ঘোষণা করেন, সে জায়গায় পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু সেটা জেল বা কারাগার হিসেবে গণ্য হবে।’

সুতরাং কোন জায়গাকে কারাগার ঘোষণা করা হচ্ছে, তা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) বা তদন্ত সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আইন অনুযায়ী কাজটা করতে হবে। আসামিকে গ্রেপ্তার যদি করা হয়, করা মাত্রই উইদিন টোয়েন্টি ফোর আওয়ার্স (২৪ ঘণ্টার মধ্যে) তাকে আদালতে আনতে হবে। এটা হচ্ছে মোদ্দাকথা। সেটা সংবিধানে যেমন আছে, আইসিটির আইনে আছে, সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) আছে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানেই পুলিশ উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আর্মির (সেনাবাহিনী) হাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

ওই সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই আদেশ (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) পালনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসকে অবহিত করা হয়েছে। তারা কিন্তু গ্রেপ্তার করবে না। তারা অবহিত থাকার অর্থ হচ্ছে যখন পুলিশ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে যাবে, তারা অবহিত থাকলে এই পরোয়ানা তামিল করতে তাদের সাহায্য করবে। সুতরাং অ্যারেস্টিংয়ের পাওয়ার (গ্রেপ্তারের ক্ষমতা) কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, অন্য কারও নয়।

তাহলে হেফাজতে থাকার ব্যাখ্যা কী, এ প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, যখনই গ্রেপ্তার দেখানো হবে, গ্রেপ্তার করা হবে, তখন থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই তাকে আদালতে আনতে হবে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Twenty four mass uprising became inevitable Chief Prosecutor

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল : চিফ প্রসিকিউটর

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল : চিফ প্রসিকিউটর চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্বে বিগত প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ছবি: বাসস

গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হওয়ার কারণেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্বে বিগত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি একথা বলেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হয়েছিল। প্রথমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ডটাকে ভেঙ্গে দেয়। পরবর্তীতে গুম-খুনের কালচার চালু করে। এরপর তারা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়। দেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ পায়। এ সবের মাধ্যমেই তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্রমান্বয়ে একটা দানবীয় সরকারে পরিণত হয়েছিল।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘জনগণকে নির্যাতন করা, হত্যা করা ও একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা ছিলো তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) টার্গেট। এই দানবীয় শাসকই একটা পর্যায়ে ২০২৪ সালে আমাদের তরুণ-তরতাজা প্রজন্মের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়।’

আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আগে গত বুধবার এই মামলার শেষ সাক্ষী (৫৪তম) তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা শেষ হলে, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন সাক্ষী।

এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন।

সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত থাকেন।

পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে।

এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে।

অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে। সূত্র: বাসস

মন্তব্য

বাংলাদেশ
A fine of 2 unemployed in a mobile court operation

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২ বেকারিকে জরিমানা

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২ বেকারিকে জরিমানা

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২টি বেকারিকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারাশী গ্রামের লোকনাথ বেকারি ও শ্রী দুর্গা বেকারিতে এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ।

জানা যায়, বেকারি ২টিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছিল। শ্রমিকরা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই কাজ করে আসছিল। উৎপাদন কক্ষে খোলা জায়গায় পাওয়া যায ময়লা-আবর্জনা ও ধুলাবালিযুক্ত কাঁচামাল এবং ছত্রাকযুক্ত ট্রে ।

এ অবস্থায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও খাদ্য নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী লোকনাথ বেকারিকে ৮০ হাজার টাকা এবং শ্রী দুর্গা বেকারিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে। কোনোভাবেই খাদ্যপণ্যে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বরদাশত করা হবে না। ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রেখে খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করতে হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The husband of the husband to kill a wife without getting dowry

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

সুনামগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়ে়ছে। রোববার সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এই রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহীন মিয়া (৪৮)। তিনি পলাতক আছেন।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামছুর রহমান।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ছাতক উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের শাহীন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল একই উপজেলার মৈশাপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী ছবদর আলীর মেয়ে সুহেনা বেগমের। বিয়ের পর থেকেই শাহীন মিয়া ব্যবসার জন্য বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে সুহেনা বেগম চাপ দিতে থাকেন। বিভিন্ন সময় এ জন্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। শাহীন ও সুহেনার দুই সন্তান আছে। সুহেনার বাবা ছবদর আলী মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময় টাকাও দিয়েছেন। এক পর্যায়ে শাহীন পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু সুহেনা বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকার করেন। ২০১২ সালে ২০ মার্চ সন্ধ্যায় সুহেনা বেগম তার মা হালিমা বেগমকে ফোন করে জানান যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী তাকে মারধর করেছেন। এরপর রাত ২টার দিকে শাহীন মিয়া হালিমা বেগমেক ফোন করে বলেন, সুহেনাকে পাওয়া যাচ্ছে না। হালিমার স্বামী তখন প্রবাসে। পরদিন সকালে তিনি পৈলনপুর গ্রামে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাননি। তখন শাহীনও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে তিনি থানায় একটি জিডি করেন। এর দুদিন পর গ্রামের পাশের সুরমা নদীতে সুহেনার লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় সুহেনার মা হালিমা বেগম ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আটজন সাক্ষ্য দেন। মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রোববার রায় ঘোষণা করেন আদালতের বিচারক।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The tribunal took three charges against Inu

ইনুর বিরুদ্ধে ৮ অভিযোগ আমলে নিল ট্রাইব্যুনাল

মানবতাবিরোধী অপরাধ
ইনুর বিরুদ্ধে ৮ অভিযোগ আমলে নিল ট্রাইব্যুনাল

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
তার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে উসকানি, ষড়যন্ত্র, হত্যা, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগ ও নিপীড়নমূলক কৌশলে সমর্থনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। শুনানির পর তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এই ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি ৩৯ পৃষ্ঠার। চারটি ভলিউমে এক হাজার ৬৭৯ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টারি এভিডেন্স আমরা দাখিল করেছি। সঙ্গে তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও দাখিল করা হয়েছে। এই মামলায় ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি হাসানুল হক ইনু। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখাতে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
প্রথম অভিযোগ (গণমাধ্যমে প্ররোচনা): জুলাই আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমন এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামি হাসানুল হক ইনু জাসদের প্রধান হিসেবে গত বছর ১৮ জুলাই ‘মিরর নাও’ নামের একটি ভারতীয় গণমাধ্যমে উসকানি দিয়েছেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ (দেখামাত্র গুলি) : গত বছর ১৯ জুলাই গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইনু উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি এবং আন্দোলনকারীদের ‘শুট অ্যাট সাইট’ অর্থাৎ দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসানুল হক ইনু ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাস্তবায়নে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি তাতে সহায়তা করেছেন।

তৃতীয় অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় দমন-পীড়ন): গত বছর ২০ জুলাই হাসানুল হক ইনু তার নিজ জেলা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে ফোন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র-জনতার ছবি দেখে তালিকা তৈরি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের ফলে কুষ্টিয়া পুলিশের একটি অংশ এবং ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র ক্যাডাররা গত বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালালে ছয়জন নিহত হন।
চতুর্থ অভিযোগ (লিথাল উয়েপন): সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার, ছত্রীসেনা নামিয়ে ও হেলিকপ্টার দিয়ে বোম্বিং করে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও নির্যাতনের ষড়যন্ত্র করেন ইনু। গত বছর ২০ জুলাই তিনি এ নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

পঞ্চম অভিযোগ (টিভি চ্যানেলে উসকানি): গত বছরের ২৭ জুলাই আসামি হাসানুল হক ইনু নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলে আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ওইসময় তিনি দেশে সরকারের কারফিউ জারি, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার ও নির্যাতনের কৌশলকে সমর্থন করেন তিনি।

ষষ্ঠ অভিযোগ (জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব): গত বছর ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের সভায় হাসানুল হক ইনু আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী জোটের ক্যাডারদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনকে বৈধতা দেন।

সপ্তম অভিযোগ (কারফিউ ও গুলিবর্ষণে সমর্থন): গত বছর ৪ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের সিদ্ধান্ত সমর্থন ব্যক্ত করে তার দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন ইনু।

অষ্টম অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় আন্দোলনে হত্যা): সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাসানুল হক ইনুর ষড়যন্ত্র ও নির্দেশে গত বছর ৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পুলিশের উপস্থিতিতে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। তাদের গুলিতে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ শহীদ হন।

মন্তব্য

p
উপরে