অব্যাহত ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে খাল ও ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কাও।
পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা শহরে সাংগু নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি, ইসলামপুর, আর্মিপাড়া, শেরে বাংলা নগর, মেম্বার পাড়াসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢল ও নাফ নদীর উপশাখার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার।
এদিকে প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যেতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া ঘুমধুম ইউনিয়নে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের স্রোতে বাড়িঘর,রাস্তাঘাট ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে ভাইস চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনকে সভাপতি করে উপজেলা প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করে স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রুমায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার।
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে ও বন্যায় সাঙ্গু নদীর তীরের বন্যাকবলিত সাধারণ মানুএক আশ্রয় দিতে রুমা উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নের ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, দুর্যোগকালীন সাধারণ মানুষের জরুরি তথ্য ও সেবা দিতে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। তাছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করা মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সাতটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যাদুর্গত এলাকায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে এশিয়ান গ্রুপ। সম্প্রতি দুর্গত এলাকায় মানবিক সহায়তার পর এমন উদ্যোগ এশিয়ান গ্রুপের।
শিল্প গ্রুপটি ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, নগরীর কালুরঘাট ও মোহরা এলাকায় বন্যার্তদের খাবার, কাপড় ও নগদ অর্থ বিতরণ এবং মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। এছাড়া বন্যা-পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
মানবিক এসব কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ সালাম ও পরিচালক ওয়াসিফ আহমেদ সালাম।
এ পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ ও মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে বানবাসী মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। কাপড় দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে।
এছাড়া নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের কাছে। অন্যান্য মানবিক কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে এশিয়ান গ্রুপের পরিচালক ওয়াসিফ আহমেদ সালাম বলেন, ‘এসব আমাদের ধারাবাহিক ও নিয়মিত মানবিক কার্যক্রমের অংশ। সাম্প্রতিক আকষ্মিক বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ অন্যান্য জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ। ব্যাপক প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জীবনযাপন।
‘আমরা চেষ্টা করেছি বন্যার্ত এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এখন আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর মেরামতের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের এসব মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন:সুপারশপে আগামী ১ অক্টোবর থেকে কোনো পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ রাখা যাবে না এবং ক্রেতাদেরকে তা দেয়া যাবে না। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা এর সামনে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের কেনার জন্য রাখতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় এই নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ১ অক্টোবর শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচার হবে। এখানে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে সব সুপারশপের সঙ্গে সভা করে পাটের শপিং ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
কক্সবাজারের টেকনাফ শীলখালী বন বিভাগের জায়গাটির নামই পরিবর্তন হয়ে গেছে। মানুষ এখন এলাকাটিকে চেনে বনকর্তা শাফিউলের সাম্রাজ্য হিসেবে। বন বিভাগের প্রায় ৮০ বিঘা জমি দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে দু’শতাধিক ঘরবাড়ি।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে সরকারি জায়গায় এই ‘গ্রাম’ গড়ে তুলেছে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। আর পুরো কাজটিরই ‘নাটের গুরু’ বন কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম, যিনি নিজেকে এক সচিবের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ শীলখালী রেঞ্জ বিটে প্রথম দিকে বাগান গড়ে তুললেও পরে সেগুলো কৌশলে বিনষ্ট করে জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেন বনকর্তা শাফিউল। আর সে সুবাদে বনের ওই জমি এখন হয়ে গেছে এই রেঞ্জ কর্মকর্তার।
সব মিলিয়ে দু’শতাধিক ঘর তোলা হয়েছে বন বিভাগের ওই জমিতে। আর সেসব ঘরের বাসিন্দাদের কাছ আদায় করা হচ্ছে মাসোহারা। ভাড়ার নামে এভাবে শফিউল মাসে ২০ লাখ টাকা আদায় করে আসছেন।
বনবিভাগের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব বাড়ি থেকে মাসিক ভাড়ার নামে চাঁদা আদায়ের জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউলের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধিও এই দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকে হুমকি দেয়া হয়। দেখানো হয় মামলার ভয়।
তবে এবার শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার পর ভুক্তভোগী সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার টেকনাফের রাজার ছড়া, হাবির ছড়া, কচ্ছপিয়া, করাচি পাড়া, বড় ডেইল, মাথা ভাঙ্গা, জাহাজ পুরা ও শীলখালী এলাকায় বন বিভাগের গাছ কেটে ফেলে ঘর তৈরির জন্য বনবিভাগ থেকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিছু অংশে গাছপালা রোপণও করা হয়েছিল। তবে সেখানকার প্রায় ৮০ বিঘা জমির মধ্যে এখন আর তেমন গাছ নেই। নির্মাণ করা হয়েছে ঘর-বাড়ি। আর এসব ঘর-বাড়ির ভাড়াটেদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
ভাড়াটেদের একজন নুর উদ্দিন বলেন, ‘বনের লোকজন আমাদেরকে এ জায়গা বিক্রি করছে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে এবং মাসে ১০ হাজার টাকা করে নেয়। আর টাকা দিতে দেরি হলে ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয়।
‘বনবিভাগের জায়গায় এমন দুই শতাধিক বাড়ি আছে। এসব ঘর থেকে আদায় করা ভাড়ার একটা অংশ প্রতি মাসে সেখানে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে একপর্যায়ে চাপে পড়ে বন বিভাগ নিজেদের দায় এড়াতে মামলা করেছে।’
এ বিষয়ে বাহারছড়া ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য মুবিনা বেগম বলেন, ‘বন রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে এসব অপকর্ম করে বেড়ায় তাহলে আমরা জনপ্রতিনিধিরা যাব কোথায়। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখন সে আমার বিরুদ্ধেই লেগে যায়।’
তিনি বলেন, ‘বন কর্মকর্তা শাফিউলকে আমি বলেছি- আমার এলাকায় জনগণকে এভাবে হয়রানি করছেন কেন? তখন তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি।’
প্রশ্ন তুলে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘যাদের খতিয়ানভুক্ত জমি আছে তাদের ওপর পর্যন্ত এই বন কর্মকর্তা নির্যাতন করেন, গাছপালা কেটে দেয়। এতো সাহস তিনি কীভাবে পান? ওসি প্রদীপের চেয়েও ভয়ঙ্কর এই বন কর্মকর্তা। তার আমলে বন বিভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আগে এরকম ছিল না।’
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বনভূমি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো উদাসীন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বনভূমির সঠিক তথ্য নিয়েও চলছে লুকোচুরি। সে সঙ্গে দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারেও কোনো মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। ফলে কমছে বনভূমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।
কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু টেকনাফ নয়, কক্সবাজার জেলা জুড়ে বন বিভাগের জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। অথচ সরকারি হিসাবে দখল হয়েছে মাত্র ৮৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে, দখল হচ্ছে; অথচ কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
টেকনাফ বাহারছড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইলিয়াস জানান, কক্সবাজার জেলার মধ্যে বাহারছড়া একটি পর্যটন কেন্দ্র। চারদিকে পাহাড় এবং বনভূমি। সেই প্রাকৃতিক সম্পদে দখলদারদের থাবা পড়েছে।
‘এক কথায় বলতে গেলে শীলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলামের নেতৃত্বে গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে বৃহৎ এই বনভূমি। নানাভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে বন। এক সচিব তার আত্মীয়- এমনটা প্রচার করে এই বন কর্মকর্তা সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছে অবৈধভাবে।’
এ বিষয়ে টেকনাফ শীলখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলামকে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয়ে দিলে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে ফোন দিলেও আর যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সরোয়ার আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। বেদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার করে আবার সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হবে।’
পানি আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বিশিষ্টজনেরা। নদীর বাঁধ কেটে দিয়ে ফেনীসহ দেশের ১১টি জেলাকে বন্যায় ডুবিয়ে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাবি তুলেছেন তারা।
শুক্রবার ফেনীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘আমরা ফেনীবাসী’র ব্যানারে ‘স্ট্রাইক ফর ওয়াটার জাস্টিস’ কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়।
দেশের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
কর্মসূচি থেকে ‘১১ দফা ফেনী ঘোষণা’তুলে ধরেন দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন।
আয়োজক প্লাটফর্ম ‘আমরা ফেনীবাসীর অন্যতম উদ্যোক্তা বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় স্ট্রাইক কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ এজাজ, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাপা যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, নারী নেত্রী নুর তানজিলা রহমান, ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম, দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফ রিজভী, ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এমদাদ হোসাইন, কবি ও সমাজকর্মী ফজলুল হক, সমাজকর্মী আমের মক্কি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনী জেলার সমন্বয়ক আব্দুল আজিজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ইমাম হোসেন, কবি ও সমাজকর্মী আলাউদ্দিন আদর।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এসে এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভুইয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা ফেনীবাসী প্লাটফর্মের অন্যতম উদ্যোক্তা কেফায়েত শাকিল। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আরেক উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ হাসান।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এই বন্যা শুধুই প্রাকৃতিক নয়। ভারত কোনোভাবে এর দায় এড়াতে পারে না। এই বন্যায় ফেনীসহ ১১টি জেলার মানুষ মানসিক, শারীরিক ও আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে সব অভিন্ন নদীতে ড্যাম বা বাঁধ অপসারণের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ভারত চাইলেই যে এক দিনে বাঁধ কেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিপদে ফেলে দিতে পারে এবারের বন্যা তার উদাহরণ। বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদীতে ৬৮টি বাঁধ দিয়েছে ভারত। প্রতিটির হিসাব ভারতকে দিতে হবে।’
এই পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভারত দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ফাঁরাক্কায় বাঁধ দিতে পারেনি। শেখ মুজিবের শাসনামলে ভারত এই বাঁধ দিতে সক্ষম হয়। ফেনী নদীর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে। এ দেশে দিল্লির আধিপত্যবাদের প্রোডাক্ট ছিলেন শেখ হাসিনা। দেশে উন্নয়নের বয়ান হাসিনার ছিল না, এটি ছিল মোদির শেখানো বুলি। উন্নয়নের নামে নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা।’
মিহির বিশ্বাস বলেন, ‘ফেনীর মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে জানে। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও ফেনীবাসী হারবে না।’
ভারতকে পানি নিয়ে বৈষম্যহীন আচরণের আহ্বান জানান তিনি।
হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, ‘দেশের এবারের বন্যা যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। পানি আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার করতে হবে।’
সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ভারত শুধু পানি-সন্ত্রাস নয়, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা, এ দেশের ভোটাধিকার হরণ ও বাণিজ্য আগ্রাসন চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন। আচরণ না পাল্টালে ভারতকে এর মূল্য দিতে হবে।’
‘১১ দফা ফেনী ঘোষণার মধ্যে রয়েছে-
১. আন্তঃসীমান্তীয় সব নদী থেকে ড্যাম/ব্যারেজ বা যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তা অপসারণ করতে হবে;
২. এবারের বন্যার জন্য ফেনীর পরশুরামে ভারতের ইচ্ছাকৃত বাঁধ কেটে দেয়া বহুলাংশে দায়ী। এজন্য জাতিসংঘের সহায়তায় ভারতকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে;
৩. মুহুরীর চরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের কেটে দেয়া সুরক্ষা বাঁধটি অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ করতে হবে;
৪. বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে এবং ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি উত্তোলন চলবে না;
৫. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি নাগরিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;
৬. কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে;
৭. শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে অতিদ্রুত তা মেরামত করতে হবে;
৮. নদীভাঙন রোধে এখনি কার্যকর ব্যবস্থা চাই। মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণে কালবিলম্ব না করে পদক্ষেপ নিতে হবে;
৯. বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনেরও দায় আছে। এজন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। এবং বাংলাদেশ সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;
১০. উন্নয়নের নামে জলাধারে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। ভরাট করা খাল ও নদীর নাব্য ফিরিয়ে দিতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
১১. নদী ও পরিবেশ দূষণ রোধ এবং বনভূমি উজাড় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা চাই।
‘স্ট্রাইক ফর ওয়াটার জাস্টিস’ কর্মসূচিতে স্থানীয় কিছু যুব সংগঠন অংশ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবার, ইয়ুথ নেট গ্লোবাল ফেনী শাখা, ইকো রেভ্যুলেশন, ফেনী ছাত্র ও যুব সমিতি, লস্করহাট ব্লাড ডোনেট অ্যাসোসিয়েশন, মির্জা ফাউন্ডেশন, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ), প্রয়াস, আমরাই আগামী ও ফেনী ফ্লাড রেসপন্স টিম।
আরও পড়ুন:আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের নদীর সঠিক সংখ্যা চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়েছেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ এবং সংকটাপন্ন নদ-নদীগুলোর দখল ও দূষণমুক্তকরণ নিয়ে বুধবার রাতে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
৬৪ জেলায় অন্তত ৬৪টি নদী চিহ্নিত করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে আগামী দুই মাসের মধ্যে সময়ভিত্তিক, ব্যয়সাশ্রয়ী, কর্মপরিকল্পনা দাখিল এবং পরবর্তী সময়ে সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে দখল উচ্ছেদ করার কথা জানান পানিসম্পদ উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, যৌথভাবে প্রণয়নকৃত তালিকা জনমত ও আপত্তি দাখিলের সুযোগ দেয়ার জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত আপত্তি গ্রহণপূর্বক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শুনানি গ্রহণ করতে হবে।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীর তালিকা প্রণয়ন করবে এবং দূষণকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান ও তদারকি করবে। প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর তালিকা করে দূষণ থেকে পরিত্রাণে কর্মপরিকল্পনা করবে। পরিবেশ অধিদপ্তর সব নদীর জন্য ‘হেলথ কার্ড’ প্রস্তুত করবে, যা নদীর প্রাণসত্তার পরিচয়।
চলমান বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। দুই জেলার ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে ৪৮ শতাংশ বাড়ি-ঘর। এছাড়াও দুই জেলার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির সুবিধা শতভাগ অচল হয়ে গেছে।
চলমান বন্যা নিয়ে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ প্রকাশিত জরুরি চাহিদা নিরূপণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করায় বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর ক্ষতচিহ্ন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দুর্গতদের মধ্যে জীবিকা হারানো এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফেনী ও নোয়াখালী জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ৭২ শতাংশ প্রতিদিন দুবেলা খেতে পারছে, যা পর্যাপ্ত নয়। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খোলা জায়গায় মলত্যাগ বাড়ছে, যা ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব রোগে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যাদুর্গত হোসনে আরা নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘বন্যার সময় পরিবার নিয়ে আমরা ছাদে থাকতাম। আমাদের কাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি বা খাবার; কিছুই ছিল না। টয়লেটও ডুবে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না। আমরা কেবল রাতের বেলা শাড়ি দিয়ে ঘিরে টয়লেটের কাজ সারতাম। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যেত। কিন্তু এছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এই বন্যা আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’
ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর আব্দুল করিম জীবিকা ও ঘরবাড়ি সব হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবারের মতো ভয়াবহ বন্যার পানি আগে দেখিনি।’
হোসনে আরার মতো করিমও চলমান বন্যায় পরিবার নিয়ে ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার ছোট একটি সবজির দোকান ছিল, যা তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। সেটি নষ্ট হয়ে গেছে বন্যায়। এখন সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে তাকে।
অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে বাংলাদেশের বন্যা সম্পর্কে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ডুবে গেছে। জীবিকা হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি, দুর্গত জনগোষ্ঠীকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’
গত ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ ১১ জেলার বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো, বাড়িঘর, কৃষি ও মৎস্য খাত।
এসব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দুর্গত জনগোষ্ঠীর জরুরি ও ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
বিশেষ করে দুর্গত জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরিভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানি, নগদ অর্থ সহায়তা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর প্রয়োজন।
মধ্যমেয়াদে ঘরবাড়ি মেরামত, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং খাদ্য উৎপাদনে কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও টেকসই সমাধানে ওয়াশ সুবিধা (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা) নিশ্চিত করা, কমিউনিটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং আয়মূলক কার্যক্রম প্রচার করা জরুরি।
বন্যার শুরু থেকেই অক্সফ্যাম বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বন্যাকালে দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার, ওরস্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ এবং মোবাইল চার্জিং স্টেশন সহায়তা দিয়েছে।
এই মুহূর্তে অক্সফ্যাম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান এবং খাদ্য সরবরাহ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির অবস্থার তুলনায় তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজন মেটাতে আরও বেশি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।
আশিষ দামলে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের মতো সংস্থাগুলো যদি বন্যাকবলিত এসব মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে সংস্থাগুলোর অস্তিত্বই অর্থহীন। আমাদের যতটুকু আছে তা নিয়েই বন্যার্তদের সহায়তা করতে হবে।
‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। বিশেষ করে বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনঃনির্মাণ এসব ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনরুদ্ধারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন:দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা একদিনে আরও ৫ জন বেড়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭০২ জন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে শনিবার এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যায় মৃতের সংখ্যা শনিবার পর্যন্ত ৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৪১, নারী ৬ ও শিশু ১২ জন। এদের মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ২৩, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, কক্সবাজারে ৩ ও মৌলভীবাজারে একজন। এছাড়া মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এছাড়া বর্তমানে মোট ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৫টি পরিবার পানিবন্দি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, সিলেট, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এদিকে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় দিতে মোট ৩ হাজার ৯২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন বানভাসি আশ্রয় নিয়েছেন।
এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩৬ হাজার ১৩৯টি গবাদি পশু আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৫১৯টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সংগ্রহ করা মোট কে লাখ ৪০ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন। বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য